অন্য এক সিমন দ্য বভোয়ার আবিষ্কার : একটি পাঠ-প্রতিক্রিয়া

সি মন দ্য বভোয়ার নামটি উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গেই যে-ফরাসি নারীটির ছবি আমাদের মানসপটে ভেসে ওঠে তা কোনোভাবেই কোনো কোমলমতি নারীর ছবি নয়। বরং সে-ছবিতে সিমনের চেহারায় নারীর কোমলতার চেয়ে একজন প্রতিবাদী নারীকেই আমরা সবসময় খুঁজে পাই। ফরাসি দার্শনিক লেখক জ্যঁ পল সার্ত্রের সঙ্গে তাঁর জীবন একাট্টা হয়েছিল বটে; কিন্তু সে-সম্পর্কটাও গতানুগতিক সামাজিক সম্পর্কের আদলে গড়া কোনো সম্পর্ক ছিল না। সার্ত্রে একবার সিমনকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন; কিন্তু সিমন সে-প্রস্তাবে সাড়া দেননি। সিমন দ্য বভোয়ার এবং জ্যঁ পল সার্ত্রে তাঁদের জীবনের একান্নটি বসন্ত কাটিয়েছিলেন পারস্পরিক বন্ধু হিসেবে, কখনো প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্কের দাবি নিয়ে, আবার কখনো তৎকালীন প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর ফরাসি সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সহযোদ্ধা হিসেবে। প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, তাহলে জ্যঁ পল সার্ত্র এবং সিমন দ্য বভোয়ারের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক কেমন  ছিল? সিমন দ্য বভোয়ারের ব্যক্তিগত জীবনীকার কেরোল সেইমর জনসের ভাষায়, ‘সিমন এবং সার্ত্রে তাঁরা দুজনেই দুজনের ব্যক্তিস্বাধীনতা, ভাবনার ওপর জোর দিতেন। শারীরিক সম্পর্কের চেয়ে তাঁদের মানসিক সম্পর্কটাই ছিল বেশি জোরালো।’ বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তাদের সম্পর্কের এই জটিল রাসায়নিক জটটির অনেকাংশ এখনো কুয়াশায় ঢাকা পড়ে আছে। প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, তাহলে সিমন দ্য বভোয়ারের ব্যক্তিগত জীবনে প্রেমিক সার্ত্রের অস্তিত্ব কতখানি জড়িত ছিল? সিমন কি সে-শূন্যতাকে বুকে নিয়েই সার্ত্রের সঙ্গে তাঁর গোটা জীবনের গাঁট বেঁধেছিলেন?

ধারণা করি, সিমন জীবন সম্পর্কে এতই স্বাধীনচেতা ছিলেন যে, হয়তো সে-কারণেই সামাজিক লৌকিকতাকে তিনি ভয় পেতেন না। সার্ত্রের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটাও তাই ছিল। তারা বিয়ে করেননি। আবার একসঙ্গে একঘরে যে ছিলেন তাও নয়। তারপরও তাদের মধ্যে এক ধরনের কমিটমেন্ট ছিল। লক্ষ করলে দেখা যাবে, সিমন এবং সার্ত্র যে যাঁর মতো করে জীবন কাটাতেই অভ্যস্ত ছিলেন। আমাদের সমাজের গতানুগতিক রীতিনীতিতে তাঁদের কোনো আস্থা ছিল না। এমনকি প্রেমের ক্ষেত্রেও নয়। সার্ত্রের বয়স যখন ষাটের কাছাকাছি, তখন তিনি ফ্রান্সের শহরতলিতে সতেরো বছরের এক ফরাসি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। সে-খবরও আমাদের অজানা নয়। সিমনের এক জীবনীকারের মতে এমনও হতে পারে, সিমন এবং সার্ত্রের সঙ্গে শুধুই একটি বন্ধুত্বপূর্ণ ‘ইনটেলেকচুয়াল’ সম্পর্ক ছিল। তাঁদের মধ্যে কোনো প্রেম ছিল না। হয়তো সার্ত্রের মধ্যে সেই না-পাওয়া প্রেমটিই তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন নেলসনের মধ্যে।

সম্প্রতি সিমন দ্য বভোয়ার : এ ট্রান্সআটলান্টিক লাভ অ্যাফেয়ার : লেটার্স টু নেলসন আলগ্রিন গ্রন্থটি পাঠ করে সে-রহস্যের ঝাঁপিটি ধীরে ধীরে আবিষ্কার করতে শুরু করি। সেসঙ্গে আবিষ্কার করি অন্য এক সিমন দ্য বভোয়ারকে, যিনি একজন কোমলমতি নারী শুধু নন, সেসঙ্গে একজন নিমগ্ন এবং নিবেদিত প্রেমিকাও। আবিষ্কার করি, জ্যঁ পল সার্ত্রের সঙ্গে সিমনের সম্পর্ক থাকাকালেই সিমন এক আমেরিকান লেখকের ভালোবাসায় নিমজ্জিত হয়েছিলেন। সে যেন অন্যরকম এক মানুষ সিমন দ্য বভোয়ার।

১৯৪৭ সালে সিমন দ্য বভোয়ার যখন আমেরিকায় ভ্রমণ করেন, তখন তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল আমেরিকার কথাসাহিত্যিক এবং কবি নেলসন আলগ্রিনের সঙ্গে। প্রথম দেখাতেই তাঁরা একজন আরেকজনের প্রেমে পড়লেন। তাঁদের সেই প্রেম টিকেছিল দীর্ঘ কুড়ি বছর।

সন্দেহ নেই, গ্রন্থটির বিষয় সিমন দ্য বভোয়ার এবং আমেরিকার কবি, সাহিত্যিক নেলসন আলগ্রিনের প্রেমপত্র নিয়ে। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে দি নিউ প্রেস নিউইয়র্ক। বলা যায়, তিনশোর বেশি নেলসন আলগ্রিনকে লেখা সিমন দ্য বভোয়ারের প্রেমপত্র নিয়ে এ-গ্রন্থটি  এক প্রেমিকা সিমন দ্য বভোয়ারকে পাঠকের সামনে হাজির করেছে। গ্রন্থের শুরুতেই সম্পাদক সাহেব জানিয়ে দিলেন সিমন ইংরেজি জানতেন এবং চিঠিপত্রগুলো তিনি ইংরেজিতেই নেলসনকে লিখেছিলেন। যদিও সিমন দ্য বভোয়ার ইংরেজিতে ততটা দক্ষ ছিলেন না, তারপরও গ্রন্থটির সম্পাদক সিমনের চিঠিতে কোনো কাঁচি না চালিয়েই সেটি প্রকাশ করেছেন, যাতে পাঠককুল সিমনের হাতের লেখার ‘মূল নির্যাস’ থেকে বঞ্চিত না হন।

সিমন দ্য বভোয়ারকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তাঁর সেকেন্ড সেক্স, ফেমিনিজম, শি কেম টু স্টে, দি ম্যান্ডারিন, দি এথিক্স অব এমবিগিউটির জন্য তিনি জগদ্বিখ্যাত। অন্যদিকে নেলসন গ্রিন দি মেন উইথ দি গোলডেন আর্ম লিখে ১৯৫০ সালে আমেরিকায় ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড পান। তাঁর অন্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে নেভার কাম মর্নিং, নোটস ফ্রম এ শি ডায়েরি, এ ওয়াক অন দি ওয়াইলড সাইড বিখ্যাত। আমরা আগেই জানি, সিমন দ্য বভোয়ারের সঙ্গে ফরাসি লেখক দার্শনিক জ্যঁ পল সার্ত্রের সম্পর্ক প্রায় একান্ন বছরের পুরনো। ১৯২৯ সাল থেকে শুরু করে সার্ত্রের মৃত্যু পর্যন্ত সিমন তাঁর সঙ্গেই ছিলেন। সিমন দ্য বভোয়ারের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে তাঁর অনেক জীবনীকার যে-প্রশ্নটি সবসময় তোলেন তা হলো, ‘যে সিমন দ্য বভোয়ার কখনোই জ্যা পল সার্ত্রকে বিয়ে করে গৃহিণী হতে চাননি, সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন সেই সিমন নেলসনকে বিয়ে না করেও ‘আমার প্রিয় স্বামী’ সম্বোধন করে চিঠি দিয়েছেন। তাহলে কি এ কথা বলা যায় যে, সিমন কখনোই সার্ত্রকে ভালোবাসতেন না? বা এমন কিছু কি হয়েছিল তাদের মধ্যে, যে-কারণে সিমন এবং সার্ত্রের সম্পর্কের মাঝে একটা চির ধরেছিল?’ আবার সিমনের আরেকপক্ষ সমালোচকদের ধারণা হলো, ‘সিমন দ্য বভোয়ার সবসময়ই কঠোর মনের এক মানুষ। তিনি হাসতেন না। পুরুষদের প্রতি তাঁর কোনো ভালোবাসা ছিল না। তিনি ছিলেন স্বাধীনচেতা।’ কিন্তু কথাটা আংশিক হলেও যে মিথ্যা তা সিমন-নেলসনের প্রেমপত্র পড়লেই বোঝা যায়। সার্ত্রে সম্পর্কে তিনি তাঁর আত্মজীবনী গ্রন্থ অল সেইড অল ডানে বলেছিলেন, ‘সার্ত্রে আমার প্রেমিক এবং সেসঙ্গে একজন ভালো বন্ধুও।’ স্মরণ করিয়ে দিই, সার্ত্রের সঙ্গে সিমন একসঙ্গে থাকলেও ‘বিবাহবন্ধন’ নামে কোনো সামাজিক প্রথায় তিনি বিশ্বাসী ছিলেন না। কেন ছিলেন না, এ নিয়েও তিনি তাঁর আত্মজীবনীতে বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তবে সে-আলোচনায় না গিয়ে আপাতত চোখ রাখা যাক নেলসনকে লেখা সিমনের প্রেমপত্র-সমৃদ্ধ গ্রন্থটির ওপর। গ্রন্থিত প্রতিটি প্রেমপত্রেই সিমন দ্য বভোয়ারের অসাধারণ ভাষাশৈলী, নারী-পুরুষ সম্পর্কের গভীর পর্যবেক্ষণ এবং প্রেমিককে কাছে পাওয়ার আকুলতা ফুটে উঠেছে। তখন মনে হয় সিমন দ্য বভোয়ার কত গভীরভাবেই না নেলসনের প্রেমে পড়েছিলেন! দেখা যায়, চিঠিপত্রে  তিনি কখনো নেলসনকে সম্বোধন করেছেন ‘প্রিয় স্বামী নেলসন’, ‘আমার ভালোবাসা নেলসন’, ‘প্রিয় ভালোবাসা নেলসন’, ‘আমার একান্ত নেলসন’ আবার কখনো লিখেছেন ‘শুধুই আমার নেলসন’। সিমনের প্রেমপত্র পড়ে মনে হয় নেলসনকে লেখা তাঁর এই চিঠিপত্রগুলো অবলীলায় পৃথিবীর সবচেয়ে রোমান্টিক প্রেমপত্রের তালিকায় জায়গা করে নিতে পারে।

এবার কয়েকটি চিঠিপত্রের ওপর চোখ রাখি। প্রেমের বিষয়ে সিমন কতটুকু আবেগপ্রবণ ছিলেন তা নিচের এ-চিঠিটি পড়লেই বোঝা যায়।

 

প্রিয়,

আর মাত্র তিন সপ্তাহের মাথায় সকাল ৯টায় আমি শিকাগোতে থাকব। যখন সকালে আমি আমার চোখটি খুলব এবং তখন দেখতে পাব আমার ‘ভালোবাসার মানুষ’টি ঠিক আমার পাশে শুয়ে আছে। আমি প্রথমবারের মতো ওয়াবেনসিয়া ঘরটিতে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই দেখতে পাব পাঠাগারে কিছু বই। আমি কিছু আমেরিকান বই আমার ট্রেন ভ্রমণের সময় তোমার জন্য কিনেছিলাম : থমাস উলফ, ফিটজারেল্ডসহ আরো মিস্টেরিয়াস জাতীয় কিছু গ্রন্থ। জীবন সম্পর্কে যে তোমার অগাধ একটা লোভ আছে আবার সেই লোভের লাগামকে ধরে রাখতে তুমি কতই না শান্ত, এবং ধৈর্যশীল। তুমি জীবন থেকে খুব একটা চাও না অথচ জীবন থেকে সবটুকু নির্যাস ঠিকই নিয়ে নাও। তুমি এত মানবীয় এবং জীবন্ত যে সবকিছুতেই তুমি সব খুঁজে পাও। আমি তোমার হাসিগল্প এবং সজীব মনটাকে নিয়ে ভাবছিলাম, যা আমি তোমার এবং তোমার বইয়ের মাঝেই খুঁজে পেয়েছি এবং আমি আরেকবারের মতো তোমার ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছি, আমার প্রিয়জন।

 

নেলসনকে লেখা অনেক চিঠিতেই সিমন স্বাভাবিকভাবেই সার্ত্রের উল্লেখ করেছেন। সিমন লিখছেন,

 

প্রিয় নেলসন,

স্টকহোমে আমার সুন্দর একটা সময় কেটেছে। শুক্রবারে আমার জন্য খুব সুন্দর একটি বিকেল অপেক্ষা করছিল। আমাকে সার্ত্রেসহ প্রিন্স উইলহেম তাঁর রাজপ্রাসাদে আমন্ত্রণ জানালেন। প্রিন্স উইলহেম হলেন রাজার দ্বিতীয় পুত্র। প্রিন্সের সাথে সার্ত্রের ভালো জানাশোনা ছিল এবং অতীতে সার্ত্রের সব কাজে ভালো একটি সময় দিয়েছিল, আর সে-কারণে আমাদের সেখানে যেতে হলো। সময়টা খুব ভালো কেটেছিল কারণ প্রিন্সের আচরণে খুব সাধারণ ভাব বজায় ছিল এবং তিনি মোটেও বোকা ধরনের কোনো লোক ছিলেন না। সেখানে সত্যিকার অর্থে খানদান বলতে যা বোঝায় আমি সেটির সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম, যা আগে কখনো আমার দেখা হয়ে ওঠেনি।

 

আরেকটি চিঠিতে তিনি লিখেন,

 

নেলসন, আমার ভালোবাসা,

রোববার আমি সার্ত্রে, ক্যামু এবং বুড়ো আন্দ্রে জিঁতসহ আরো কিছু লেখক একসঙ্গে আফ্রিকার সমস্যা নিয়ে আলোচনায় গিয়েছিলাম। তুমি তো জানো, ফরাসি দেশের নিগ্রোরা আমেরিকার নিগ্রোদের চেয়েও আরো বেশি অধঃপতিত জীবন যাপন করছে।

 

আরেকটি চিঠি পড়ে মনে দেখা যাচ্ছে, সার্ত্রেও সম্ভবত নেলসনের সঙ্গে সিমনের সম্পর্কটা জানতেন। চলুন চিঠির ওপর চোখ রাখি,

 

আমার একান্ত নেলসন,

তোমার ‘শিকাগো লেটার’ পুস্তিকাটি পাঠানোর জন্য ধন্যবাদ। খুব আকর্ষণীয় এবং সেই সাথে কৌতূহলোদ্দীপক। বলতেই হবে তুমি হলে পুস্তিকায় লেখার জন্য ওস্তাদ। তুমি যখন রেগে যাও অথবা মানুষের ওপর বিরক্ত হও তা আমি খুব উপভোগ করি। অবশ্য সেটি যদি আমার ঘাড়ে এসে না পড়ে। আমি আমার টি. এমকে তোমার এজেন্টকে কিছু টাকা পাঠাচ্ছি (খুব বেশি নয়)। সার্ত্রে তোমার পাঠানো এই পুস্তিকাটি দেখে খুব উপভোগ করেছে এবং হেসেছেও।

 

নেলসনের কাছ থেকে চিঠির অপেক্ষার প্রহর গুনতেন সিমন দ্য বভোয়ার ঠিক আমাদের আটপৌরে বাঙালি প্রেমিকাদের মতোই।

 

নেলসন, আমার ভালোবাসা,

হোটেলে আজ আমি তিনবার গিয়েছিলাম। কিন্তু খোদা এ সপ্তাহেও আমার সহায় হলো না। কোনো চিঠি নেই।

 

আরেকটি চিঠিতে সিমন লিখছেন, ‘আজ সকালে দাঁত মাজতে মাজতে এবং চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে তোমার ভালোবাসা অনুভব করলাম। লক্ষ করলাম সিঁড়ির নিচে একটি চিঠি। চিঠি দেখলে মনটা প্রশান্তিতে ভরে যায় কারণ তখন আমি বুঝতে পারি যে তুমি জীবন্ত আছ এবং আমাকে কত ভালোবাসো।’

আরেকটি চিঠিতে সিমন দ্য বভোয়ার লিখছেন,

 

আমার একান্ত নেলসন,

তোমার কাছ থেকে চিঠি না আসুক আমি তা চাই না। স্টকহোমে থাকতেই আমার এটা বলা উচিত ছিল যে চিঠি তুমি সেখানকার ঠিকানাতেই লিখ কিন্তু আমি জায়গা সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলাম না এবং আমি চাইনি যে, তোমার কোনো চিঠি আমি হারিয়ে ফেলি। সুতরাং, তোমার কাছ থেকে কোনো উত্তর শুনতে আমার আরো এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।

 

চিঠি হাতে পেলে অন্যান্য সাধারণ মেয়ের মতো তিনিও হয়ে যেতেন যেন অনন্য এক প্রেমিকা।

 

আমার ভালোবাসার নেলসন,

তোমাকে পোষমানা কবুতরের মতো ঘরে আবদ্ধ থাকতে দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। শুক্রবারে পোস্ট করা সবক’টা চিঠি সোমবার এসে পৌঁছেছে। সবকটা চিঠি দেখতে খুব প্রাণবন্ত এবং সজীব। সে এক আনন্দঘন মুহূর্ত।

 

শুধু প্রেমিকার ভালোবাসা নয়, কখনো কখনো সিমন তাঁর চিঠিতে নেলসনকে আরো বেশি কৃচ্ছ্র হতে উপদেশ দিতেন। তাতে করে বোঝা যায় যে, নেলসন হয়তো ব্যক্তিগত জীবনে টাকা-পয়সার বিষয়ে উদাসীন ছিলেন।

 

নেলসন আমার ভালোবাসা,

তুমি খুব শিগগিরই আমার নিউইয়র্ক ম্যাগাজিন থেকে সম্মানী পাওয়া ২৫০ ডলার গ্রহণ করবে। দয়া করে টাকাটি পোকার গেম খেলে নষ্ট করো না অথবা মদ খেয়ে উড়িয়ে দিয়ো না। আমার অনুরোধ, আমাদের ভবিষ্যৎ ভ্রমণের জন্য টাকাটা রেখে দিয়ো। আমি আশা করি খুব শিগগিরই আমি আরো কিছু টাকা উপার্জন করব।

 

সিমনের প্রতিটি চিঠি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে যে সত্যটি প্রকাশিত হয় তা হলো, তিনি তাঁর জায়গায় কোনো রকম ভণিতা বা ভ-ামির আশ্রয় নেননি। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য কোনো ছলনার আশ্রয় তিনি নেননি। প্রতিনিয়তই তিনি ছিলেন নেলসনের একজন ভালো প্রেমিকা, বন্ধু এবং সেসঙ্গে লেখার সমালোচকও।

সিমন দ্য বভোয়ার এবং নেলসনের প্রেম শেষ পর্যন্ত টিকেছিল ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত। জানা যায়, নেলসন গ্রিনের দিক থেকেই সস্পর্কটি বন্ধ হয়ে যায়। কেন নেলসন তা করলেন? কেন সিমনের সঙ্গে সম্পর্কটির ছেদ পড়ল? ১৯৫৯ সালে সিমনের সঙ্গে লাজম্যানের সম্পর্ক হওয়ার কারণে? হবে হয়তো। জানা যায়, নেলসনও পরবর্তীকালে তাঁর ডিভোর্স দেওয়া স্ত্রীর সঙ্গে আবার ফিরে গিয়েছিলেন। সিমন দ্য বভোয়ারের যখন মৃত্যু হয়, তখন তাঁর আঙুলে ছিল নেলসনের দেওয়া আংটিটি।