অ্যাডর্নোর সংগীতের সমাজতত্ত্ব

অ্যাডর্নো (১৯০৩-৬৯) সংগীতের ক্ষেত্রে সমাজতাত্ত্বিক অবদানের জন্য বিংশ শতাব্দীর এক অবিস্মরণীয় নাম। জার্মানির এই ব্যক্তিত্ব একজন দার্শনিক, একজন সমাজবিজ্ঞানী, একজন সংগীতবিজ্ঞানী এবং একজন সংগীত ও সাহিত্য-সমালোচক বটে। এছাড়া তিনি নন্দনতত্ত্ব, চলচ্চিত্র এবং সংস্কৃতি-সমালোচক। তিনি আরো অনেক বিষয়ে পারদর্শী, যা আমাদের মন ও মনন গঠনে বিরাট অবদান রেখেছে। মহাঘাতক হিটলার তাঁকে অর্ধ-ইহুদি বলে গণ্য করতেন। জীবন রক্ষার খাতিরে তিনি যুক্তরাজ্য হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন। তবে যুদ্ধোত্তর জার্মানিতে ফিরে এসে তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক প্রণোদনার অবারিত বিকাশ ঘটান এবং নিজ বক্তব্যের গুণে বিতর্কেরও সৃষ্টি করেন। সমাজ-সমালোচনার ক্ষেত্রে তাঁর সুস্পষ্ট ধারণা ছিল। আমরা আধুনিকতার নামে এক বিভ্রান্তিকর আত্মপ্রতারণার শিকার হচ্ছি। তিনি বিশ্বাস করতেন, মানবমুক্তির জন্য এবং সব অধিবাসীর জন্য একটি নিরাপদ বিশ্ব সৃষ্টির সামর্থ্য মানুষের থাকলেও ভয়ংকর দুর্বিপাকে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না।

অ্যাডর্নো মনে করতেন, বিমূর্ত উপায় ছাড়া সংগীত তেমন কিছু বলে না এবং কোনো ধারণাও ধারণ করে না। এ-সত্ত্বেও অ্যাডর্নো সংগীতের বুদ্ধিবৃত্তিক তাৎপর্যের কথা তুলে ধরেন। সংগীতের সম্ভাবনা সম্পর্কে তাঁর তেমন সন্দেহ ছিল না বটে, কিন্তু দর্শন ও সংগীতের সমস্যাসংকুল সম্পর্কের কথা বিবেচনা করে তিনি আলাদাভাবে সংগীত সমালোচনায় অবতীর্ণ হন। এক্ষেত্রে সংগীত, চলচ্চিত্র, নন্দনতত্ত্ব, শিল্প, দর্শনের মতো বিষয়গুলোকে সংস্কৃতির বৃহত্তর কাঠামোবদ্ধ রূপরেখায় আলোচনা করতে ব্রতী হন।

অ্যাডর্নো সংগীতকে শুধু বিনোদনের বিষয় ভাবতে পারেননি, বরং সামাজিক ও দার্শনিকভাবে অর্থপূর্ণ ভেবেছেন। একইভাবে তিনি শিল্পকলাকেও ব্যক্তিক রুচির আওতাধীন ভাবতে পারেননি। শিল্পকলার দার্শনিক তাৎপর্য তাঁর দর্শনের নিজস্ব ধারণার সঙ্গে একীভূত হয়ে গেছে। অ্যাডর্নো সংগীতবিদ্বেষী নন, বরং গভীরভাবে সংগীতপ্রেমিক হিসেবে দর্শনকে সংগীতের মতো সংগীত কম্পোজিশন ও সংগীতকে দর্শনের মতো দর্শন-সমৃদ্ধ ভাবতে চেয়েছেন।

আধুনিক সমাজে আনন্দকে কর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে, যা কর্ম এবং আনন্দ উভয়কেই ব্যর্থ করে। এ-প্রসঙ্গে কার্ল মার্কসের বিচ্ছিন্নতাবোধ প্রত্যয়টি স্মরণীয়। পণ্য থেকে শ্রমের বিচ্ছিন্নতা, উৎপাদন থেকে উৎপাদকের বিচ্ছিন্নতা একসময় নিজের থেকে নিজের বিচ্ছিন্নতাকে অনিবার্য করে তোলে। আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজ সম্পর্কে কার্ল মার্কসের ভাবনা অ্যাডর্নোর আনন্দ ও কর্মের বিচ্ছিন্নতার মধ্যে প্রতিধ্বনিত হয়েছে। অ্যাডর্নো আধুনিক সমাজে সংগীতের মতো দর্শন, সমাজতত্ত্ব ও সাহিত্য-সমালোচনা এবং ইতিহাসের আত্মপ্রবঞ্চনামূলক নিঃসঙ্গচর্চা একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা বলে মনে করেন।

সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব যে আধিপত্যশীল ধারণাগুলো উপস্থাপন করেছে, যেমন ধর্মের বস্ত্তনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠার অবক্ষয় বা প্রাক-পুঁজিবাদী অবশেষসমূহের বিলুপ্তি বা প্রযুক্তিগত ও সামাজিক বিভাজন ও বিশেষায়ন প্রকৃতপক্ষে সাংস্কৃতিক নৈরাজ্যের জন্ম দিচ্ছে – এমন ধারণাগুলো সর্বাংশে টেকে না যখন আমরা দেখতে পাই সংস্কৃতি জীবনের সর্বত্র ছাপ রেখে চলেছে।

অ্যাডর্নো মনে করেন, সব সংগীত, সে যতই ব্যক্তিকেন্দ্রিক হোক না কেন, বাস্তবত সামষ্টিক অধ্যায় সংবলিত। প্রতিটি একক শব্দ আমাদের নির্দিষ্ট করে। সংগীতের সমাজতত্ত্ব বিষয়ক বারোটি বক্তৃতা প্রদানের ঠিক তিন বছর পূর্বে তিনি এমন ধারণা ব্যক্ত করেন। ১৯৬১-৬২ সালে অ্যাডর্নো যখন ফ্রাংকফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বক্তৃতাগুলো দিয়েছিলেন, তখন তিনি পরিণত চিন্তার মধ্যসাগরে উপস্থিত। এর ত্রিশ বছর আগে তিনি ‘On the social situation of music’ শীর্ষক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। সুতরাং সংগীত-ভাবনা তাঁর বুদ্ধিবৃত্তির সমস্ত বিষয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল। অর্থাৎ চার দশকব্যাপী তিনি সংগীতের সমাজতত্ত্ব বিষয়ে প্রধান ব্যক্তিত্ব হিসেবে কর্মক্ষম ছিলেন। ইতোমধ্যে ১৯৬৮-এর জার্মান সংস্করণ হিসেবে তিনি প্রথম বইটি প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থ একদিকে সংগীতের সমাজতত্ত্ব, অন্যদিকে ফ্রাংকফুর্ট স্কুলের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে। জার্মানিতে সংগীতের সমাজতত্ত্ব নিয়ে কাজ করার একটি ঐতিহ্য থাকলেও বহির্বিশ্বে বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুপস্থিত ছিল। তবে ১৯৬৩ সালে লন্ডনে আলফন্স সিলভারম্যান সোশিওলজি অব মিউজিক শীর্ষক একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। অ্যাডর্নোর রচনা সহজ অনুধাবনীয় নয়, কিন্তু সিলভারম্যানের রচনা সহজবোধ্য ছিল। ১৯৭৩ সালে পল হানিংশাইমের রচনার সংকলন মিউজিক অ্যান্ড সোশালিটি প্রকাশিত হয়। হানিংশাইম একজন জার্মান, যিনি হিটলারের আমলে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। তিনি জার্মানিতে ফ্রাংকফুর্ট স্কুলের সঙ্গেই সম্পৃক্ত ছিলেন। অ্যাডর্নো ও হর্কহাইমার Dialectic of Enlightenment প্রকাশ করেন ১৯৭৯ সালে, যেখানে তাঁরা কালচার ইন্ডাস্ট্রির ধারণা ব্যাখ্যা করেন। এছাড়া ছিল Philosophy of Modern Music, on popular Music, Culture Industry, Culture Industry Reconsidered। সুতরাং সংগীতের বক্তব্য বা অন্তর্নিহিত ধারণা নয়; বরং কম্পোজিশন অ্যাডর্নোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। কিন্তু অ্যাডর্নোর সংগীত সম্পর্কীয় পূর্ববর্তী ধারণা বলে যে, সংগীত শুধু বিনোদনের বিষয় নয়, বরং সামাজিক ও দার্শনিকভাবে অর্থপূর্ণ।

অ্যাডর্নো বলেন, [It] should take its bearings from the social structures that leave their imprint on music, and on what we call material life in the most general sense. অসাবধানে পণ্ডতরা সংগীতের বহিরাবরণ, পুনরুচ্চারণ ও সংগীত গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন। অন্যদিকে, Adorno in sharp contrast, insists that the social complexion of music is found on its own interior, not simply in its effective links with society. He demands the social deciphering of musical phenomena as such with close attention to the objective social constitution of music in itself. সংগীতের কম্পোজিশনে সামাজিক ছাপ পড়ে থাকে এবং সংগীতের সমাজতত্ত্বকে এই সামাজিক ছাপ বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হয়। যখন সংগীতের অন্তর্নিহিত এই জগৎ উন্মীলিত করা যাবে তখনই সমাজবিজ্ঞানী উৎপাদনশক্তি ও সংগীত উৎপাদনের পরিস্থিতির আমত্মঃক্রিয়াকে অর্থবহভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবেন। সংগীতের অভিজ্ঞতা ও কল্পনাশক্তির গুরুত্ব অ্যাডর্নো সংগীতে সামাজিক ডিকোডিংয়ের জন্য আবশ্যিক মনে করেন।

বেস্নামস্টারের মতে, অ্যাডর্নোর সংগীত নিয়ে আলোচনার মর্মমূলে সনাতন মানবিকতাবাদী ধারণা কাজ করে, যার কারণে তিনি শিল্পকলার ক্ষেত্রে পরম স্বাধীনতার পক্ষপাতী। তিনি সংগীতের বুর্জোয়াকরণের ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি সমাজ ও সংগীতের মধ্যে বিরোধিতার ধারণা এবং ব্যাপক উৎপাদনের কারণে শিল্পকলার বিচ্ছিন্নতা মেনে নিতে পারেননি। তাঁর মতে, সংগীতের অন্তর্নিহিত শক্তিকে নিবৃত্তকরণ এবং মতাদর্শ ও ভুল-সচেতনতার ধারক বানাতে গিয়ে সংগীতের উদ্বুদ্ধকরণ শক্তি নষ্ট করা হয়।

অ্যাডর্নোর ‘কালচার ইন্ডাস্ট্রি’ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়, যা আমাদের সার্বিকভাবে সংস্কৃতি ও সংগীতের পুঁজিবাদী রূপান্তরকে বুঝতে সাহায্য করবে। Dialectic of Enlightenment গ্রন্থের প্রথম অধ্যায় ‘The Culture Indusry : Enlightenment As Mass Deception’-এ অ্যাডর্নো ও হর্কহাইমার সুস্পষ্টভাবে সংস্কৃতির এই সর্বব্যাপী প্রাধান্য ও রূপগত বৈচিত্র্যের ধারণা দিয়েছেন। তাঁরা চলচ্চিত্র, রেডিও ও পত্রিকাসমূহের মধ্যে একটি সমন্বিত সিস্টেম বিরাজমান বলে দাবি করেছেন। জাঁকজমকপূর্ণ শিল্প-ব্যবস্থাপনা ভবন ও প্রদর্শনী কেন্দ্রসমূহ দেশভেদে একই রকম কর্মকা- দৃষ্টিগ্রাহ্য করে। পুঁজিবাদের পরম ক্ষমতার বদৌলতে একটি এলাকার অধিবাসীরা প্রযোজক অথবা ভোক্তা হিসেবে সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোতে সংযুক্ত হতে থাকে। এসব কেন্দ্রের সাহায্যে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ পরিসরে মানুষ সংস্কৃতির একই মডেল আয়ত্ত করে চলেছে।

চলচ্চিত্র বা রেডিওকে আর শিল্পকলা হিসেবে ভণিতা করতে হয় না। তারা ব্যবসাকে মূল লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং উপস্থাপনের গুণে ব্যবসাভিত্তিক এক সংস্কৃতিচর্চার আদর্শকে গ্রহণ করেছে। একই সংস্কৃতি ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত এমন ভাবনা তাদের প্রলুব্ধ রাখে। প্রযুক্তির এ-ভূমিকা প্রযুক্তি বিকাশের আইনগত পরিণতি নয়; বরং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এর অনিবার্য কার্যক্রম বলা হয়। অ্যাডর্নো মনে করেন, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ হয়তো টেনে ধরা যেত, কিন্তু ব্যক্তির সচেতনতা ইতোমধ্যেই এই নিয়ন্ত্রণের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। টেলিফোন ও রেডিওর পার্থক্য লক্ষ করলে ব্যাপারটি সহজেই অনুধাবন করা যায়। টেলিফোনে ব্যক্তির যতটা নিয়ন্ত্রণ আছে, রেডিওতে সম্ভবত তা নেই। প্রথমটি ব্যক্তির ভূমিকার ওপর নির্ভরশীল, যেখানে ব্যবহারকারী পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করেন। দ্বিতীয়টি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে শ্রোতা হিসেবে গণ্য করে কর্তৃত্বপূর্ণভাবে এদেরকে রেডিও কর্মসূচির সাধারণ ভোক্তা হিসেবে গণ্য করে। যদিও কিছু বেসরকারি রেডিও-কার্যক্রম দেখা যায়, কিন্তু তারাও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের বাইরে যেতে পারে না এবং ওপর মহলের নীতিগত পরিবেষ্টনে আবদ্ধ থাকে।

এসব প্রচারমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে যাঁরা জড়িয়ে থাকেন, তাঁরা নিঃসন্দেহে যথেষ্ট প্রতিভাবান এবং জিনিয়াস। এবং তাঁরা রেডিও কার্যক্রম পরিচালনায় বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং পেশাজীবীদের দ্বারা নির্বাচিত। সুতরাং তাঁরা ‘কালচার ইন্ডাস্ট্রি’র সঙ্গে মননগতভাবে, মনস্তাত্ত্বিকভাবে একধরনের একাত্মতা অনুভব করেন। এবং পাবলিক সেন্টিমেন্ট, পাবলিক কনজাম্পশন এবং পাবলিক চয়েসকে তাঁদের অনুষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে যথেষ্ট পারদর্শিতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে একটি বিষয় উলেস্নখ্য, বিটোফোন বা জ্যাজ বা তলস্তয়ের একটি উপন্যাসকে তাঁরা তাঁদের প্রয়োজনমাফিক অনুষ্ঠান সময়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন এবং সেক্ষেত্রে সাধারণত তেমন উচ্চবাচ্য থাকে না। এটি সম্ভব হয় এ-কারণে যে, সাধারণ মানুষ দেখে সমাজের কৃতীজন ও বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ এই প্রচারণার সঙ্গে জড়িত। এছাড়া আরেকটি জিনিস লক্ষণীয় যে, রেডিওর কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পেশাজীবীরা এমন কোনো বিষয়বস্ত্ত বা দৃষ্টিকোণকে প্রশ্রয় দেন না, যা তাঁদের স্বার্থের পরিপন্থী হয়, প্রচারমাধ্যমের পরিপন্থী হয়।

আরেকটি চমকপ্রদ বিষয় যা আজকের দিনে আমরা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচারণা, অনুষ্ঠান এবং নীতিনির্ধারণ ইত্যাদির মধ্যে দেখতে পাই। সেটি হলো, তাদের সঙ্গে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক শিল্পসাধনা, পাবলিক বিজনেসের সঙ্গে একটি সুন্দর সম্পর্ক থাকে; এ-সম্পর্ক অবশ্যই অর্থনৈতিকভাবে পরস্পর নির্ভরশীল। অ্যাডর্নো উদাহরণ দিয়ে সে-সময়ের রেডিওর প্রেক্ষাপটে বলেছেন যে, একটি ইলেকট্রিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে একটি রেডিও কোম্পানির নির্ভরশীলতার সম্পর্ক লক্ষ করা যায়। আবার একটি মোশন পিকচার ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীলতা দেখা যায়। এবং এক্ষেত্রে তাদের সম্পর্কটি সম্পূর্ণ প্রকাশ্য নয়; এবং গভীর বিবেচনা ছাড়া এ-সম্পর্ক আলাদা করাও কঠিন। আজকে আমরা টিভি অনুষ্ঠানগুলোর বিজ্ঞাপনের দিকে লক্ষ করলে দেখতে পাই যে, মূল অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তিকালে তার একটি বিরাট অংশ জুড়ে যেসব প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়, তারা বহু সুন্দর অনুষ্ঠানের স্পন্সর করে। একাধিক শিল্প-ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সম্মিলিতভাবে সাংস্কৃতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান স্পন্সর করছে। সেটি শুধু টেলিভিশন, রেডিওর ক্ষেত্রেই নয়; এর বাইরেও এখন পাবলিক যে-কোনো অনুষ্ঠানের, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও তারা স্পন্সর হিসেবে এগিয়ে আসছে। এই আসার পেছনে একটি অর্থনৈতিক কারণ অবশ্যই আছে। যেমন ধরা যাক, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমাবর্তন অনুষ্ঠানের একটি ইভেন্ট তারা করতে চান। সে-ব্যাপারে তারা যে- বাজেট তৈরি করেছেন, সে-বাজেটের সিংহভাগ কোনো বহুজাতিক কোম্পানি বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান দিতে রাজি আছে। কিন্তু তারা তার পরিবর্তে অনুষ্ঠানের প্রচারণা, উপস্থাপনা এবং অনুষ্ঠানসূচি তৈরি করার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে চান। এমনও প্রস্তাব আসে যে, ‘নাইনটি পার্সেন্ট কন্ট্রোল’ তাদের থাকবে। প্রধান অতিথি হিসেবে তাদের প্রতিষ্ঠানের লোক থাকবে, স্পন্সরের লোক থাকবে এবং বিশেষভাবে মঞ্চ তৈরির ক্ষেত্রে ও সাজসজ্জায় কোম্পানির লোগো এবং দ্রব্যাদির প্রচার প্রাধান্য পাবে। এমন প্রস্তাব সংস্কৃতির স্বাধীন বিকাশের যে প্রচলিত পন্থা, তাকে ব্যাহত করে এবং সংস্কৃতির যে ‘শিল্পায়ন’ সেটিকে উজ্জীবিত করে।

সমস্ত বিষয় এখন ‘কালচার ইন্ডাস্ট্রি’র ভেতর দিয়ে প্রস্ফুটিত হতে বাধ্য হচ্ছে। আগের দিনে একজন চলচ্চিত্র দর্শক দেখতে চাইতেন যে, তাঁর দেখা চলচ্চিত্রটি আসলেই বাস্তব জীবনের একটি অংশ কিনা। অর্থাৎ বাস্তব জীবন বিরাট বিসত্মীর্ণ; তার একটি অংশ নিয়ে এই চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। অন্য কথায় বলা যায়, বাস্তবতা চলচ্চিত্রের একটি সম্প্রসারিত রূপ। কিন্তু বর্তমানে চলচ্চিত্র একটি শিল্প হিসেবে গণ্য হওয়ার পর যান্ত্রিক এবং অন্যান্য কৌশলগত প্রযুক্তির সাহায্যে এত বেশিভাবে বাস্তবতার অনুরূপ চলচ্চিত্র তৈরি করছে যে, মানুষ বা দর্শক সেই চলচ্চিত্র দেখে মনে করছে যে, সেটিই বাস্তবতার সম্প্রসারিত রূপ।

‘কালচার ইন্ডাস্ট্রি’র একটি বড় ধরনের সাফল্য যে, তারা প্রচারিত সাধারণ এবং ঐতিহ্যবাহী শিল্প-উপাদানগুলোকে গ্রহণ করে এমন একটি শিল্প উপহার দিচ্ছে, যাকে দর্শক-শ্রোতারা মনে করে অনেক বেশি বাস্তব, অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। আর দর্শক-শ্রোতাদেরও যেন কল্পনাশক্তি লোপ পাচ্ছে। তারাও মনে করছে, বাস্তব জীবনকে চলচ্চিত্রের জীবন থেকে আলাদা করা সম্ভব নয়। এবং অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, চলচ্চিত্রের প্রদর্শিত জীবনভঙ্গি, দর্শন, আলাপচারিতা, সংগীত তারা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে চায়। সাধারণ মানুষের মধ্যে এই বিষয়টি বেশি করেই দেখা যায়। এক্ষেত্রে একটি বিষয় বলে রাখা ভালো যে, চলচ্চিত্রের এমন প্রতিক্রিয়া সাধারণ্যে অনেক সামাজিক জটিলতা সৃষ্টি করছে।

সংগীতের ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যাচ্ছে যে, একটি বিশেষ ভঙ্গির বিশেষ শিল্পীর, বিশেষ গায়কি তারা গ্রহণ করে সেটাকে এমন ধরনের ইফেক্ট দিচ্ছে, যা পরবর্তী সময়ে ‘আইডল’ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। সার্বিকভাবে ‘কালচার ইন্ডাস্ট্রি’ মানুষের শিল্প-ভাবনা এবং শিল্প-সমালোচনার পথ অনেকটা সীমিত করে দিচ্ছে। কারণ, তারা যা তৈরি করছে, তাদের যা ‘ফিনিশ্ড প্রোডাক্ট’, সেটিকে গ্রহণযোগ্য করার সর্বতো আয়োজন তাদের মধ্যে থাকছে। এক্ষেত্রে অ্যাডর্নোর একটি বক্তব্য স্মরণ করা যেতে পারে। আসলে মানুষের মনের মধ্যেই, বিশেষ করে, শিল্পসমাজের মানুষের মনের মধ্যেই বিনোদন শিল্প একটা আস্থা অর্জন করতে বসেছে। এবং ক্রেতারা অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের মতো সেই শিল্প উৎপাদনটি কিনছে, উপভোগ করছে।

‘এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি’ তার নিজস্ব ভাষারও আবির্ভাব ঘটিয়েছে। নিজস্ব শব্দাবলির বাক্য তৈরির ক্রমাগত চাপ শিল্পীরা বা পারফরমাররা অনুভব করছেন। স্টার পারফরমাররা যখন কিছু তৈরি করেন বা পুনর্নির্মাণ করেন, তখন তাঁরা এসব ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক-প্রযোজকদের ভাষা, শব্দাবলি অত্যন্ত সাধারণভাবে এবং সচ্ছলভাবে গ্রহণ করছেন; যেন এটিই শিল্পের ভাষা।

ষাটের দশকে অ্যাডর্নো যেমন আমেরিকা বা পশ্চিমা দেশগুলো নিয়ে যা লিখেছেন আমরা আজকে তা প্রত্যক্ষভাবে উপলব্ধি করছি। এবং এক্ষেত্রে অ্যাডর্নো আমাদের দারুণভাবে তাঁর ‘কালচার ইন্ডাস্ট্রি’র ধারণার মাধ্যমে শিল্পকলা এবং সংস্কৃতিচর্চায় ব্যবসায়ী ও বাহারি শিল্প-প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রভাব উপলব্ধি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই কালচারাল ইন্ডাস্ট্রির নিজস্ব আদর্শ, ভাবনা বা স্টাইল এতটাই দুরন্ত এবং দুর্বিষহ হয়ে ওঠে যে, অনেক সময় সৃজনশীল আর্টিস্ট বা কম্পোজার-প্রোডিউসারদের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। এই দ্বন্দ্বের ফলে স্বাভাবিকভাবেই একটি অসম দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটে। কারণ কালচারাল ইন্ডাস্ট্রির যে শক্তি, সামর্থ্য এবং সাংগঠনিক প্রভাব এবং শ্রোতা সাধারণের সঙ্গে তাদের যে-সমঝোতা, তার বিপক্ষে এই দ্বন্দ্ব খুব একটা কাজে আসে না।

আমত্মঃশাস্ত্রীয়তা বিশেষ প্রত্যক্ষণ অ্যাডর্নোকে দর্শনের সাহিত্যিকতা, সাহিত্যের দার্শনিকতা বা সমাজপাঠে সাহিত্য ও দর্শনের অমোঘ প্রভাবকে স্বীকার করতে প্রলুব্ধ করে। মোট কথা, অ্যাডর্নোর সাহিত্য-সমালোচনা ও শিল্প-সমালোচনাকে দর্শন থেকে আলাদা করা যায় না। আবার সমাজ থেকেও আলাদা করা যায় না। আবার সবকিছুকেই তাঁর সময় থেকে আলাদা করা যায় না। পরস্পর সংলগ্নতাকে তিনি যেভাবে দেখেছেন তা এক অর্থে নতুন; আর সেটি করতে গিয়ে বিশেষ শাস্ত্রকে তুচ্ছজ্ঞান করেননি। সাহিত্যের দার্শনিকতা অ্যাডর্নোর কাছে কোনো পাঠের অনুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ, সাধারণভাবে কী লেখা হলো তা নয়। কালচার ইন্ডাস্ট্রির আলোচনায় অ্যাডর্নো দেখাতে চেষ্টা করেছেন যে, এটি আসলে শিল্পকলা নয়, কারণ শিল্পের সঙ্গে মননের সংযুক্তি থাকতে হবে। সুতরাং কালচার ইন্ডাস্ট্রিকে শিল্পকলা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ভাবতে হবে। Culture Industry Reconsidered শীর্ষক রচনায় অ্যাডর্নো খোলাসা করে যা বলেন তার অর্থ এরকম : ১৯৪৭ সালে হর্কহাইম সহযোগে অ্যাডর্নো ‘কালচার ইন্ডাস্ট্রি’বিষয়ক প্রবন্ধটি প্রথম প্রকাশ করেন। খসড়া পর্যায়ে তাঁরা ‘মাস কালচার’ শব্দটি রেখেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তা বাদ দিয়ে ‘কালচার ইন্ডাস্ট্রি’ শব্দটি রেখেছেন। আসলে মাস কালচার বলতে সংস্কৃতির সেই অংশ বোঝায়, যা জনগণের ভেতর থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদ্ভাসিত হয়। বলা যায়, জনপ্রিয় শিল্পের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ। এই সমকালীন জনপ্রিয় সংস্কৃতি ও গণসংস্কৃতি কালচার ইন্ডাস্ট্রি সম্পূর্ণ আলাদা। কালচার ইন্ডাস্ট্রি নতুন ও পুরনোর গুণগত সম্মিলন ঘটিয়ে পরিকল্পিত পণ্য উৎপাদন করে, যাতে ভোক্তার চাহিদা মেটে ও ভোক্তার চাহিদার প্রকৃতিও নির্ধারণ করা হয়।

সংস্কৃতির আলাদা আলাদা শাখা কাঠামোগত দিক দিয়ে এ-ধরনের এবং তাদের বিন্যাস অনেকটা অবিচ্ছিন্ন। অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক কেন্দ্রীভবন এবং প্রযুক্তিগত সামর্থ্য এমনটা সম্ভব করেছে। কালচার ইন্ডাস্ট্রি ওপর থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভোগ্যপণ্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সংস্কৃতির যে ভালো-মন্দ তারতম্য যুগ যুগ ধরে চলমান আছে তার পার্থক্য কমিয়ে আনে। উচ্চমার্গীয় শিল্পের অনন্যতাকে বিনষ্ট করা হয়। নিচু শ্রেণির শিল্পকলার নিজস্বতাকেও ধ্বংস করা হয় সভ্যতার চমকপ্রদ ধারার সাহায্যে। এই সাধারণ শিল্পকলার একটি নিজস্ব বিদ্রোহবোধ থাকে; কিন্তু তাকে হার মানতে বাধ্য করে সামাজিক সহায়তার অনুপস্থিতির কারণ। সাধারণ মানুষের সচেতনতাকে কব্জা করা হলেও মানুষ তাদের লক্ষ্য নয় – মানুষকে যন্ত্রপাতির সঙ্গে লটকে দেওয়া হয়। ক্রেতা হিসেবে মানুষ চূড়ান্ত ভূমিকা লাভ করতে পারে না। কালচার ইন্ডাস্ট্রি তাদের বিষয় হিসেবে গণ্য করে, বিষয়ী হিসেবে নয়।

গণসংস্কৃতির নামে একটি নির্বিরোধ প্রত্যয় ব্যবহারের চেষ্টা চলে; কিন্তু বাস্তবে জনগণের সংস্কৃতির নামে শিল্পমালিকদের কণ্ঠই আধিপত্যশীল থাকে। কালচার ইন্ডাস্ট্রি গণসংস্কৃতির নামে নিজেদের মানসিকতাকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করে। এই মানসিকতা অনেকটা অপরিবর্তনীয় ও অপরিবর্তনীয়ভাবেই গৃহীত। গণমানুষ তাদের কর্মকাণ্ডর পরিমাপক নয়, বরং তাদের নিজস্ব মতাদর্শই এখানে মূল বিবেচ্য। মূল্য-লাভের মধ্য দিয়েই কালচার ইন্ডাস্ট্রি তাদের
সংস্কৃতির পণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। কালচার ইন্ডাস্ট্রির যাবতীয় কর্মকা- লাভালাভের নগ্নতাকে প্রকাশ করে। তারা অনেক সময় এই মুনাফাকেন্দ্রিক মানসিকতাকেও সাংস্কৃতিক আকার দেওয়ার চেষ্টা করে।

ক্ষমতাশালী ও নির্দেশপ্রদানকারীরা এসব কালচার ইন্ডাস্ট্রির নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে। তারা মুনাফা অর্জনের সব সুবিধা বাস্তবায়নে একনিষ্ঠ থাকে। একে সর্বব্যাপী একটি কর্মকা- হিসেবে গড়ে তোলে। সংস্কৃতি তার দুরবস্থার জন্য নিজস্বগুণেই প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে সংস্কৃতির সার্বিক আত্তীকরণ ও অন্তর্ভুক্তি মানবীয় সত্তাসমূহকে ভিত্তিহীন করে দেয়। এক সময় এসব ইন্ডাস্ট্রির পণ্য আর ঠিক পণ্য থাকে না এবং সেগুলো মুনাফার জন্যও প্রস্ত্তত হয় না। সংখ্যার দিক দিয়ে একেক সাংস্কৃতিক আইটেম এত বেশি উৎপাদিত হয় যে, তারা মুনাফার উদ্দেশ্যে বিক্রি হয় না। আর পণ্যসমূহের স্বাধীন অস্তিত্ব নিজেকেই নিজেদের বিজ্ঞাপনে পরিণত করে। পরিশেষে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞাপনের বদৌলতে কালচার ইন্ডাস্ট্রি একটি শুভেচ্ছা প্রস্ত্ততকারক জনসংযোগে পরিণত হয়। সাহিত্যকে পণ্যে রূপান্তরিত করা ব্যবস্থাটি সক্রিয় থাকে। আঠারো-উনিশ শতকের বাণিজ্যিক উপন্যাস থেকে এর যাত্রা শুরু। একই ধরনের পণ্যের অনেক কপি তৈরির প্রযুক্তিগত দক্ষতাই এ-ধরনের ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় গুণগত দক্ষতা।

সুতরাং ‘ইন্ডাস্ট্রি’ শব্দটিকে এখানে একেবারে আক্ষরিকভাবে নেওয়ার কিছু নেই। পণ্যের প্রমিতকরণ, বণ্টন-প্রযুক্তির যৌক্তিকীকরণ এখানে গুরুত্বপূর্ণ। শুধু উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিষয় নয়। যদিও চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে শ্রমবিভাজনের বিস্তার, যন্ত্রপাতির সংস্থাপন ও উৎপাদনের উপায় থেকে শ্রমের বিচ্ছিন্নতার বিষয়গুলো দৃশ্যমান, তবে নিয়োজিত শিল্পী-কুশলী ও নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তিদের মধ্যকার সংঘাত দূরীভূত করা হয়।

মতাদর্শই শিল্পীর ব্যক্তিক প্রতিভাকে বাণিজ্যিক ব্যবহারে প্রণোদিত করে। যত বেশি পদ্ধতিগত অমানবিকতা অবলম্বন করা হবে তত বেশি সাফল্যজনকভাবে ইন্ডাস্ট্রি শিল্পীদের ব্যাপ্তি ঘটায়। কালচার ইন্ডাস্ট্রির কৌশল বলতে বাহ্যিক বণ্টন ও যান্ত্রিক পুনরুৎপাদন বোঝায়। অভ্যন্তরীণ শৈল্পিক জগতে এই কৌশলের কোনো হস্তক্ষেপ থাকে না। ভোক্তাদের সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে কালচার ইন্ডাস্ট্রির ভূমিকার প্রশ্নে শিল্প-সমালোচক ও সমাজবিজ্ঞানীরা যথেষ্ট সাবধান করে আসছেন। এরা যে নন্দনতত্ত্ব ও সত্য-মিথ্যার প্রচার ও প্রসার ঘটাচ্ছে, তাকে সমালোচনাহীনভাবে গ্রহণ করার কোনো কারণ নেই। r