আমারও কিছু কথা ছিল

বিশ্বজিৎ ঘোষ

কেমন আছো তুমি?
স্বর্গলোকে কেমন কাটছে তোমার দিনগুলো এখন?
কীভাবে কাটছে বৈকুণ্ঠের রাতগুলো?
মনে পড়ে আমার কথা? সেই কবেকার কথা?
জানো আমার নাম? জানবে কী করে?
তোমার কবি, যাকে তোমরা দেবতা বানিয়ে তুলেছো
সেই ব্যাসদেব আমাকে একটা নাম দিতেও কত কার্পণ্য করেছেন।
ভেবে দেখেছো একবার?
নাকি বৃন্দাবনের লীলালাস্যে সব ভুলে এখন স্বর্গলোকে
বসে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছো?

তুমি নাকি ভগবান? সব নাকি জানো তুমি?
তবে কেন জানলে না এই যশোদানন্দিনীর মনের কথা?
একবারও কি নিয়েছো তার খোঁজ?
ভেবে দ্যাখো, আমি না জন্মালে তুমি থাকতে কোথায় আজ?
তোমাকে হত্যার জন্য কংস সেই কবে থেকে প্রস্ত্তত।
দেবকীর পুত্র হলে অাঁতুরঘরেই তাকে বলি দেবে কংস।
সেই দিন তো তোমার ত্রাতা ছিলাম আমি।
আর আজ?

রাধার প্রণয় আর ষোলোশো গোপীনারীর ছলাকলায়
রমণক্লান্ত তুমি আজ স্বর্গসুখে বিভোর।
কিন্তু কোথায় তোমার শৈশবত্রাতা?

আমিও তো তোমার রাধা হতে পারতাম।

হতে পারতাম প্রেমিকা, ঘোমটা-টানা ঘরের বউ।

লুকাবো না আজ কোনো কিছু।
আমি চেয়েছিলাম তুমি আসবে আমার দ্বারে,
স্বপ্ন দেখেছি, আমায় নিয়ে তুমি ডিঙি ভাসিয়েছো
যমুনার নীল জলে।
তমাল তলে তোমার বুকে মাথা রেখে
ঘুমিয়ে পড়েছি আমি।
এমনি আরো কত কী!
কিন্তু সবই ছিল বুদ্বুদের মতো ক্ষণস্থায়ী, মরীচিকার মতো অলীক,
সবই ছিল নীলকণ্ঠ পাখির ঝরা পালক।

আমি তো অনাঘ্রাতা ছিলাম, ছিলাম অনূঢ়া,
বুকভরা ছিল সুবাসিত প্রেম, যমুনার উথাল-পাথাল ঢেউ।
তবু তোমার চোখ আমাকে ছাপিয়ে ঠেকল গিয়ে রাধাকুঞ্জে?
বিবাহিতা সেই নারী তোমার নাকি আত্মীয়া?
তার সঙ্গে ছলাকলা, রুচিহীন লীলালাস্য!
লজ্জা করে না তোমার? এই-ই কি তোমার দৈব-রুচি?

না, আর কাজ নেই; বলবো না তার কোনো কথা।
শুধু জেনো –
আমারও কিছু কথা ছিল। কিছু তা বললাম,
কিছু থাক তালপুকুরের ডুবানো কৌটায় চিরকাল ভরা।