আসহাবউদ্দীন আহমদ : ক্রোধ ও কৌতুকের শিল্পী

আহমেদ মাওলা

দৃঢ়চেতা রাজনীতিক, সমাজসচেতন লেখক, চিরসংগ্রামী কর্মীপুরুষ ইত্যাদি নানা পরিচয়ে অধ্যাপক আসহাবউদ্দীন আহমদকে (১৯১৪-৯৪) শনাক্ত করা যায়। কিন্তু আমার কাছে ‘ক্রোধ ও কৌতুকে’র নিপুণ শিল্পী হিসেবে তাঁর ভূমিকাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। কায়েমি স্বার্থবাদী বুর্জোয়া রাজনীতি, প্রচলিত সমাজকাঠামোর প্রতি আসহাবউদ্দীন আহমদের ছিল প্রচ- ক্রোধ এবং ক্ষোভ। ব্যক্তির সঙ্গে সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক, রাষ্ট্রব্যবস্থার নানা অসংগতি, শাসক দলের সীমাহীন ব্যর্থতা, বুর্জোয়া রাজনীতিতে সামন্ত মনোভাবের দাপট, গণতন্ত্রের বদলে নির্লজ্জ দলতন্ত্র, দুর্নীতি ও নৈরাজ্য, চুরি, ছিনতাই, নরহত্যা, নারীধর্ষণ, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কেরানি থেকে মুচি, মরিচ, পেঁয়াজ, তেল, কাঠ, বাঁশ, কাগজ-কলমের মূল্যবৃদ্ধি – যা কিছু মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে, সবই তাঁর লেখার উপাদান। তাঁর দেখার চোখ ছিল বস্ত্তবাদী, লেখার প্রেরণা ছিল সাম্যবাদী চেতনা। ফলে নিরাবেগ সমাজ-নিরীক্ষণ হয়ে উঠেছে তাঁর লেখার প্রধান শক্তি। জনতোষের সাহিত্যের বদলে তিনি রচনা করেছেন জনরোষের সাহিত্য। প্রথাগত সমাজকে ক্রোধ ও ক্ষোভের চাবুক মেরে তিনি জনগণকে সজাগ করতে চেয়েছিলেন। ভেঙে চুরমার করে দিতে চেয়েছিলেন এই বিত্ত ও ভোগের লুম্পেন সংস্কৃতিকে। জনপ্রিয় ধারার সাহিত্যের জোগানদাতা ছিলেন না বলে তাঁর পাঠকসংখ্যা ছিল সীমিত। তাঁর অসামান্য অবদান তাই লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে গেছে। হয়তো তাই, তাঁর জন্মশতবার্ষিকী খুব নীরবে-নিভৃতে কেটে যায়। কোথাও কোনো সাড়া নেই, স্মরণ নেই, নেই কোনো আয়োজন।

আসহাবউদ্দীন আহমদের জন্ম ১৯১৪ সালে। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর গ্রামে। তাঁর শিক্ষাজীবন ছিল খুবই কৃতিত্বপূর্ণ। প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা (১৯৩২), বৃত্তিসহ প্রথম বিভাগে আই.এ. (১৯৩৪), distinction-সহ বি.এ. (১৯৩৬) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ. পাশ করেন ১৯৩৯ সালে।

শিক্ষকতার পেশা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। চট্টগ্রাম কলেজ (১৯৩৯-৪১), চট্টগ্রাম আই. আই. (বর্তমানে মুহসীন) কলেজ (১৯৪১-৪৫), লাকসাম নবাব ফয়েজুন্নেসা কলেজ (১৯৪৫-৪৮), ফেনী কলেজ (১৯৪৮-৫০) এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ (১৯৫০-৫৩) প্রভৃতি কলেজে প্রায় ২২ বছর শিক্ষকতা করেন। তিনি অনেক সহকর্মীর মতো নিরাপদ, নিশ্চিত জীবনযাপনে আসক্ত হননি। সামাজিক অসংগতি ও শোষণ-বঞ্চনাই তাঁকে একদিন নিশ্চিত পেশা ছেড়ে সক্রিয় রাজনীতিতে নিয়ে আসে। ১৯৫২ সালের ভাষা-আন্দোলন ও বাঙালি জাতীয়তাবাদী জাগরণের সময় তিনি সহকর্মী অধ্যাপক আবুল খায়েরকে সঙ্গে নিয়ে কুমিল্লায় ভাষা-আন্দোলনের মূল ভাষণ দেন। গড়ে তোলেন ‘প্রগতি মজলিশ’ নামক সাংস্কৃতিক সংঘ। বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ঘটে। ১৯৫৩ সালে শিক্ষকতা ছেড়ে পুরোপুরি রাজনীতিতে যোগ দেন এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থী হিসেবে আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। সে-সময়ে ৯২-ক ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি কারারুদ্ধ হন। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৬ এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত প্রায় ১৪ বছর আত্মগোপনে থেকে তিনি রাজনীতি ও সাহিত্যচর্চা চালিয়ে যান। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮০ সালে গণচীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে তিনি চীন সফর করেন। রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার পর বাংলাদেশ লেখক শিবিরের চট্টগ্রাম জেলার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘদিন। ১৯৯৪ সালের ২৮ মে ঢাকা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

আসহাবউদ্দীন আহমদের (১৯১৪-৯৪) দীর্ঘ ৮০ বছরের জীবনকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি। ১. শিক্ষকতার পর্ব,
২. রাজনৈতিক পর্ব এবং ৩. সাহিত্যচর্চাকাল। রাষ্ট্রীয় অসংগতি, সামাজিক অবিচার, শ্রেণিবৈষম্য, শোষণ-বঞ্চনা, প্রতিকারহীন দারিদ্র্য দেখে অনেকটা জেদের বশেই তিনি সাহিত্য-রচনায় হাত দেন। কিন্তু সাহিত্যের প্রচলিত কাঠামো – গল্প, উপন্যাস, নাটকের ফর্মের ভেতর না গিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন, অপ্রচলিত নতুন একটি কাঠামোর মধ্য দিয়ে তিনি সমাজ-বাস্তবতাকে তুলে ধরেন।

কথাসাহিত্য ব্যক্তির মধ্য দিয়ে সমাজের ভেতরের অবস্থাটিকে সামনে নিয়ে এসে পাঠককে বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। উপন্যাস কী গল্পে কী নাটকে এই বাস্তবতা প্রতিফলনের আধার হলো চরিত্র, সংলাপ, ঘটনা, স্বপ্ন এবং সর্বোপরি কাহিনীর বিন্যাস।’১ (আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, ১৯৯৮)

আসহাবউদ্দীন আহমদ গল্প-উপন্যাসের এই প্রচলিত কাঠামোর ভেতরে গেলেন না। কারণ, গল্প-উপন্যাসের নিটোল কাহিনিতে জীবনের প্রকৃত চেহারাটি খুলে ধরার চেয়ে তাকে আড়াল করার কাজেই লেখকরা অধিক তৎপর থাকেন। আসহাবউদ্দীন আহমদ নিজের বক্তব্য সঠিকভাবে প্রকাশের জন্য স্বতন্ত্র একটি আঙ্গিক উদ্ভাবন করেন। তিনি গল্প লেখেননি, গল্প করেছেন। বৈঠকি ঢঙে, আলাপের ভঙ্গিতে তিনি কথা বলেছেন। তিনি পাঠককে শ্রোতা হিসেবে গণ্য করে এসেছেন শুরু থেকেই। তাঁর কথায় পাঠক বা শ্রোতা আকৃষ্ট না হয়ে পারেন না, কারণ তাঁর লেখায় থাকে উচ্চাঙ্গের কৌতুক, ব্যঙ্গ ও হাস্যরস। ‘তাঁর রচনা আগাগোড়া কৌতুক ও ব্যঙ্গরসে পূর্ণ।’২  (আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, ১৯৯৮)

হাস্যরস থাকলেও তাঁকে নিছক রম্য লেখক বলা যাবে না। কারণ, রম্যরচনায় লেখক কথা বলেন রংচঙিয়ে, কায়দা করে এবং তাঁর প্রধান লক্ষ্য থাকে মানুষকে যে-কোনোভাবে হাসানো। কিন্তু আসহাবউদ্দীনের লেখা পড়লে পাঠকের হাসির উদ্রেক হয় না, বরং মর্মে অভিঘাত করে। তাঁর ক্রোধ ও কৌতুকের কথা পড়ে পাঠক হাসতে-হাসতে কেঁদে ওঠে গভীর বেদনায়।

ক. ধারের মহিমা বলে শেষ করা যায়! ধারের টাকার মানসিক মূল্য মাইনের টাকার চেয়ে অনেক বেশি। ধার করে যাই করে থাকেন, তার প্রত্যেকটিতে আলাদা স্বাদ পাবেন। কারণ ধার পেতে যত কষ্ট মাইনে পেতে সে কষ্ট নেই। কষ্টে যা মিলে তাই তো আসল জিনিস। ধার করে পোষা পাতিহাঁস কিনে খান। বুনোহাঁসের চেয়েও অনেক বেশি স্বাদ পাবেন। হাসছেন কেন? এ পরিহাস নয়। ধার করে ডিনার খেয়েছি। পাক কী রকম হয়েছে বলতে পারি না। হয়তো পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা ধার না পাওয়াতে কোরমাতে মশলার কোরাম হয়নি। কিন্তু খেতে ফার্স্টক্লাস লেগেছে। হাড়সুদ্ধ চিবিয়ে খেয়েছি।৩

(আসহাবউদ্দীন রচনাসংগ্রহ, ‘ধার’, ১৯৮১)

খ. শুরুতেই বলে রাখি, কথা একটু ঝাল হবে। কারণ, নয় টাকা সের দরে মরিচ খেয়ে লিখতে বসেছি। মরিচ একটু বেশি খেলে কতক্ষণ জিহবা জ্বালা করে। কিন্তু মরিচের সের নয় টাকা হলে সারাক্ষণ গাসুদ্ধ জ্বালা করে। মনে হয় সরকার সারা গায়ে যেন বাটা মরিচ মেখে দিয়েছে। কথাবার্তাও তাই ভয়ানক ঝাল হয়ে ওঠে।৪

(আসহাবউদ্দীন রচনাসংগ্রহ, ৩য় খ-, : ১৯৮২)তাঁর কথার ভঙ্গি অনেকটা রাজনৈতিক কর্মীর মতো। মনে হয় তিনি যেন লোকালয় থেকে লোকালয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মেথর কলোনি থেকে ফুটপাতের চা দোকান, রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে বন্যা-খরাপীড়িত জমি বিক্রি করতে আসা চাষা এবং ভাঙাচোরা স্কুলের সামনে বাদাম বিক্রেতা পর্যন্ত সবখানে তাঁর সহজ উপস্থিতি। লক্ষ্য একটাই, সমাজবাস্তবতা তুলে ধরা। এমনকি প্রসঙ্গ এলে নিজেকে নিয়ে ঠাট্টা করতে তিনি একটুও দ্বিধা করেন না। তাঁর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এতই গভীর যে, পাঠককে সমাজ-বাস্তবতার বিপজ্জনক অবস্থার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। পাঠককে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দেওয়ার অসাধারণ শৈল্পিক শক্তি রয়েছে আসহাবউদ্দীনের রচনায়।

কেউ হয়তো বলে বসবেন, কোনো কাজ হাতে না পেয়ে আমি শীতকালেই এক অসার আষাঢ়ের গল্পের আসর জমিয়ে বসেছি। আর রসের নামে চারিদিকে শুধু বিক্ষোভের ফেনা উড়াচ্ছি। কিন্তু যাই বলুন, ফেনা তো রসস্রোতের জোয়ারের লক্ষণ। তাছাড়া শুধু রসের ওপরকার ফেনাটুকু দেখলে তো চলবে না। রসের তলার হক কথার মিছরির কণাগুলো তো হিসেবে ধরতে হবে। আষাঢ়ের গল্প যে আষাঢ় মাসেই করতে হবে কিংবা ভাদ্র মাসে করাটা ভদ্রতাবিরুদ্ধ হবে, এমন কথা নেই।৫ (আসহাবউদ্দীন আহমদ, ১৯৬৮)

রস রচনার মধ্যেও তিনি দেশ-কাল-সমাজ ও চিমত্মাশীল রাজনীতিকে চারিয়ে দেন সহজ ভঙ্গিমায়। দাম শাসন দেশ শাসন (১৯৯১) গ্রন্থের ‘এঁটো’ শিরোনামের একটি লেখায় সমাজব্যবস্থার অসংগতিকে এমন প্রকটভাবে তুলে ধরেন যে, পাঠককে খুরের আঘাতের মতো যন্ত্রণা দেয় – ‘নিয়ম হল মানুষ খাবে গোশত। কুকুর খাবে হাড্ডি। প্রকৃতি কুকুরের দাঁতগুলোকে সেভাবেই তৈরি করেছে। কিন্তু শোষক শ্রেণি সমাজব্যবস্থাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে এসেছে যে জনতার একাংশ মানবেতর জীবনযাপন করছে। ভোজ-উৎসবে নিমন্ত্রিত অতিথিদের ফেলে দেওয়া হাড় তারা চিবিয়ে খাচ্ছে, যদিও মানুষের দাঁত কুকুরের দাঁত নয়।’ এই কুৎসিত দৃশ্য দেখে লেখকের
বমি-বমি ভাব হয়। সমাজের একটা শক্তি কিছু লোককে গোশত খাওয়ার সুযোগ করে দেয় আর অনেককে সেই গোশতের এঁটো হাড্ডি চিবুতে বাধ্য করে। এ-দৃশ্য কেবল লেখকের বিবমিষার উদ্রেক করে না, পাঠককেও অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দেয়। এভাবেই সমাজ-বাস্তবতাকে তুলে ধরেন আসহাবউদ্দীন আহমদ। ক্ষোভ তাঁর লেখায় ক্রোধে রূপ নেয় –

‘সীমাহীন রাগ ও ক্ষোভ নিয়ে বাঁশ সমাচার লিখছি। লেখাটি যদি তোমাদের কাছে হিউমারাস বলে মনে হয়, তাহলে বুঝতে হবে,… আমার রাগ রঙিন শাড়ি পরে রাগিণী সেজে… তোমাদের চিত্তবিনোদন করছে।’৬

(আসহাবউদ্দীন আহমদ,  ১৯৯০)

ক্ষোভে, যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়ে জেগে ওঠেন আসহাবউদ্দীন আহমদ নতুন শক্তিতে। তাঁর যন্ত্রণা কোনো দুঃখ-বিলাস নয়, তাকে তিনি পরিণত করেন কষ্ট পাওয়া মানুষের ঐক্যের সূত্রে। এভাবেই তিনি শোষিত-দরিদ্র সাধারণ মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নেন। দরিদ্র সাধারণ মানুষ, সামাজিক সুবিচার ও সাম্যের প্রতি ছিল তাঁর দ্বিধাহীন পক্ষপাত। হয়তো এ-কারণেই প্রথাগত সমাজের সঙ্গে খাপ না খাওয়া এক ভিন্ন চরিত্রের মানুষ ছিলেন তিনি। হয়ে ওঠেন তিনি পরিহাসপ্রিয় লেখক, ক্রোধ ও কৌতুকের এক নিপুণ শিল্পী। তাঁর লেখার শিরোনাম ও গ্রন্থের নামকরণ থেকে বোঝা যায়, তিনি বিশ্বাস করেন, শ্রেণিসংগ্রাম ছাড়া মানুষের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকার আদায় করা কোনোদিন সম্ভব নয়।

আসহাবউদ্দীন আহমদের রচিত সাহিত্যকর্ম নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায় : ১. সমাজ-সচেতনতামূলক ক্রোধ ও কৌতুকের সাহিত্য – ধার (১৯৫০), উদ্ধার (১৯৫৩), সের এক আনা মাত্র (১৯৬৮) ঘুষ (১৯৮৬), দ্বিপদ বনাম চতুষ্পদ (১৯৭৪), দাম শাসন দেশ শাসন (১৯৯১), ভূমিহীন কৃষক কড়িহীন লেখক (১৯৯২)।

২. রস ও রম্য সাহিত্য – বাঁশ সমাচার (১৯৭৪), দাঁড়ি সমাচার (১৯৭২), সেরা রম্য রচনা (১৯৯৪)।

৩. আত্মস্মৃতি ও অভিজ্ঞতামূলক সাহিত্য – পথচলিতে (১৯৬৯) আমার সাহিত্যজীবন (১৯৮০), উজান স্রোতে জীবনের ভেলা (১৯৯০), বোকামিয়ার ইতিকথা, আত্মগোপন জীবনের বিক্ষেপ্ত স্মৃতিকথা কও অতীত।

৪. রাজনৈতিক চিমত্মাধারার সাহিত্য – বিপস্নব বনাম অতিবিপস্নব (১৯৭৪), লাথি লাঠি গণতন্ত্র (১৯৭৪), দাম শাসন দেশ শাসন (১৯৯১)।

৫. শিশুতোষ সাহিত্য – বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর (১৯৪৯), শিশু তোতা পাখি নয় (২০০৪) ইত্যাদি।

উপর্যুক্ত তালিকা থেকে বোঝা যায়, আসহাবউদ্দীনের জীবনের সবচেয়ে আলোকোজ্জ্বল অংশ হচ্ছে তাঁর লেখালেখি। আর্থিক অনটনে পড়ে নিজেকে নিয়েও তিনি ব্যঙ্গবিদ্রূপ করেছেন, ভূমিহীন কৃষকের সঙ্গে নিজের কড়িহীন লেখক-জীবনের তুলনা করেছেন। মার্কসীয় রাজনৈতিক দর্শন থেকে তিনি যে শিক্ষা লাভ করেছিলেন, সততা ও গভীর নিষ্ঠার সঙ্গে আমৃত্যু তা লালন করে গেছেন। চারপাশের শতপ্রলোভনের মাঝেও তিনি ছিলেন আপসহীন বিরল ব্যক্তিত্বের মর্যাদাসম্পন্ন এক ভিন্ন মানুষ। প্রতিবাদী রাজনৈতিক চেতনাসমৃদ্ধ লেখা অনেক আছে। কিন্তু আসহাবউদ্দীন আহমদ বাংলা ভাষার সেই বিরল লেখকদের একজন, যিনি শ্রেণিবৈষম্যে পীড়িত, শোষিত, শ্রমজীবী, দরিদ্র মানুষের জীবনকাহিনিকে ক্রোধ, ক্ষোভ ও কৌতুকে শব্দ-ভাষ্য দান করেছেন। তিনি দুঃখ-দৈন্যদশাকে পরিহাস করতে জানতেন। তাঁর ব্যঙ্গ ও বিদ্রূপের অভিঘাতে কৌতুক হয়ে উঠত সত্যের অধিক বাস্তব এক নিপুণ শিল্প।

 

প্রাসঙ্গিক উল্লেখ

১. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, সংস্কৃতির ভাঙা সেতু, মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা, ২০১০, পৃ ১১২।

২. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, পূর্বোক্ত, পৃ ১১৩।

৩. ‘ধার’ আসহাবউদ্দীন রচনাসংগ্রহ, মুক্তধারা, ঢাকা, ১৯৮১, পৃ ৬৭।

৪. আসহাবউদ্দীন রচনাসংগ্রহ, ৩য় খ-, আহমদ প্রকাশনী, চট্টগ্রাম, ১৯৮২, পৃ ১১৬।

৫. আসহাবউদ্দীন আহমদ, সের এক আনা মাত্র, আহমদ প্রকাশনী, চট্টগ্রাম, ১৯৬৮, পৃ ১৪৩।

৬. আসহাবউদ্দীন আহমদ, শানে নুযুল, বাঁশ সমাচার, আহমদ প্রকাশনী, চট্টগ্রাম, ১৯৯০।