কাইয়ুম চৌধুরীর তিনটি কবিতা

মৃগনাভি

কী সুগন্ধি মেখেছো আজ –
মৃগনাভি?
তৃষ্ণার্ত কাতর শরীরী গন্ধে
মাতাল সর্বব্যাপী।

কর্ণকুহরে ভেসে আসে তিলক কামোদ
কী যে সুমধুর –
জল টলটল আকাশে জাগে
অগুনতি তারা রাত্রি দ্বিপ্রহর।

দু্ই চোখে ঘুম নেই
সুগন্ধির উৎসমুখে –
অবিরাম ওড়াউড়ি
কী ভীষণ সুখে –
নামিয়ে এনেছি দুকূলপ্লাবী
স্বপ্নলোকের চাবি।
কী সুগন্ধি মেখেছো আজ
মৃগনাভি?

সংলাপ

হাতে হাতে কী মধুর সংলাপ
থির থির কাঁপা কাঁপা,
কখনো অস্ফুট, কখনো সরব
আধেক উত্তাপ আর আধেক চাপা।
হৃদয়ে আমার তুমুল তুফান
সর্বাঙ্গ ছুঁয়ে যায়।
তোমার চাওয়াতে আনন্দ-বিষাদ
আমি নিরুপায়।
নিয়ে যেতে পারি

সবকিছু নিয়ে যেতে পারি
আমার মতো করে আমার ক্যানভাসে –
আমি নিয়ে যেতে পারি বৃষ্টিধোয়া
ভাসমান নীল আকাশে।
নিয়ে যেতে পারি শ্রাবণ মেঘে
ভিজে যাওয়া সবুজ বৃক্ষরাজি
নিয়ে যেতে পারি জোছনা-প্লাবিত
পৌষের শেষ রাত্রি।
নিয়ে যেতে পারি বেগবতী পদ্মায়
সঞ্চরমান ইলিশের ঝাঁক –
নিয়ে যেতে পারি বাতি টিমটিম
কীর্তনখোলার বাঁক।
নিয়ে যেতে পারি আগুনমুখার
উথাল-পাথাল ঢেউ –
নিয়ে যেতে পারি নকশিকাঁথায়
গল্প বুনেছে কেউ।
নিয়ে যেতে পারি করুণাময়ীর
বানানো মৃৎপাত্র –
নিয়ে যেতে পারি যা কিছু ফলায়
কৃষকেরা দিবারাত্র।
নিয়ে যেতে পারি রাজেশ্বরীর মধুকণ্ঠে
রবীন্দ্রনাথের গান –
নিয়ে যেতে পারি শচীনকর্তার
গোধূলিবেলার তান।
নিয়ে যেতে পারি যা কিছু আছে
ভালোবাসিবার জন্যে –
শুধু পারি না নিতে ভালোবাসা তোমার
হারায় রঙের প্লাবনে।