দুটি কবিতা

মাহবুব সাদিক

 

হৃদয়ে বসন্ত আজ

আজ এই বিলম্বিত বেতালা শরতে

কুয়াশামাখা মাঘের হাওয়ারা ছোবল মারছে

হালকা পোশাকের তলে গায়ের ছাল-চামড়ায় –

কংক্রিটের বিকট-দর্শন শহরের এই

সরু গলি-ঘুপচিতে ঘূর্ণি তুলছে সাইবেরিয়ার শীত,

নাকি কারাকোরামের পাতী অরণ্য থেকে

পর্বত পেরিয়ে এলো কুয়াশামাখা হিম হাওয়া?

আমি কাঁপছি অকালের এই বৈরী বাতাসে –

বাংলায় অচেনা এই শীতে আমার হাড়-মাংস

প্রায় জমে গেছে – তবে এও জানি, মানবিক আর্তিতে

যে-কেউ যখন-তখন জমে যেতে পারে;

 

প্রথম পার্থকে কোলে নিয়ে লোকলজ্জার ভয়ে

নীরক্ত পৃথাও ভয়ে গিয়েছিলো জমে;

হয়তো আমিও আজ নেভা সূর্যের নিচে ক্লান্তিতে

শীতরাতের হাওয়ার মুখে একা জমার অপেক্ষায় –

অকস্মাৎ তুমি এলে রূপের আগুন,

বেড়ে গেলো হৃৎস্পন্দন আর সম্মোহিত আমার

কানে কানে শোনালে কোন মহামন্ত্রধ্বনি –

উদীচীর হিম হাওয়ায় জমে গেছে আমার শরীর

হৃদয়ে আমার তবু বসন্তের অনির্বাণ নাচ।

 

 

 

 

 

 

দূরস্বপ্নের ভোর

 

দূর পুবে কালচে সবুজ পটভূমি রেখে

শেয়াল চামড়ার বাদামি-হলুদ শরীর নিয়ে দাঁড়ালো

এই ভোরবেলা –

মনে হলো অন্ধকারের কাছে

বন্ধক-দেওয়া এই কলুষিত কালচে হৃদয়ের ঘুম

সহসাই গেছে ভেঙে

দাঁড়িয়ে আছি কালো শরীর নিয়ে কালচে মাটিতে

সামনেই বিল-বাঁওড়ের হাঁটুপানি

তাও কালোই এখন, সেখানে

এক ঠ্যাংয়ের ওপর গোটা তিনেক ছন্নছাড়া বক

কেন যে মাছ ধরার মকশো করছে তা তারাই জানে,

আসলে কোথাও মাছের ম-টুকু নেই –

এই কালিমালিপ্ত পারিপার্শিবকে

নিজেকে মনে হচ্ছে নির্বাসনে পরিত্যক্ত জন্তুর মতো

যার হৃদয়ের ভেতর থেকে কেবলই উঁকি মারছে

সারবারাসের মতো তিন মাথার কুকুর

আর ডেকে উঠছে : ঘাউ … ঘাউ-ঘাউ

 

তবে কি এই কালচে হৃদয় সত্যি কোনো

নরকের ক্ষিপ্ত পাহারাদার?

এখান থেকে কাউকে সে বেরুতে দেবে না

পাঁচিলের পাহারা এড়িয়ে!

মনে হচ্ছে এই প্রাচীনগন্ধী জনপদে একা আমিই

নরকের অঙ্গার হৃদয়ে ধারণ করে জ্বলে যাচ্ছি,

অনেক উঁচুতে নাকি মানবিক পৃথিবী

আর তাদেরই তৈরি স্বর্গ

তবে সেটা কোথায় কতটা উঁচু কেউ তা জানে না।