ভাষার বিবর্তনের আরেক দিন

সাগর চৌধুরী

শেক্সপিয়রের হ্যামলেট নাটকের নায়কের মুখে বিখ্যাত monologue বা একক সংলাপ ‘To be or not to be, that is the question…’ ইংরেজি সাহিত্য-পাঠকদের সকলেরই চেনা। এখন ধরুন, আজকের তরুণ প্রজন্মের কেউ যদি এই শব্দগুলি তার মোবাইল ফোন থেকে টেক্সট করে কাউকে পাঠাতে চায় তাহলে সে কী লিখবে? ধরেই নেওয়া যায়, সে টাইপ করবে ‘2b or not 2b…’ ইত্যাদি। এই নতুন ধরনের ভাষার ব্যবহার কয়েক বছর ধরে ক্রমশ বাড়তে-বাড়তে আজকাল মোবাইল ফোনের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে। বেশ কিছু আধুনিক গল্প-উপন্যাসের চরিত্রদের মুখেও লেখকরা মাঝেমধ্যে টেক্সটিংয়ের ভঙ্গির ভাষা জুড়ে দিচ্ছেন এবং এই ভাষা বুঝতে বা মেনে নিতে পাঠকদেরও তেমন অসুবিধা বা আপত্তি হচ্ছে না। এই ভাষার সবচেয়ে উলেস্নখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, মাত্র একটা বা দুটো অক্ষরের সাহায্যে পুরো শব্দ বা শব্দগুচ্ছ বোঝানো, যেমন ‘be’-এর বদলে কেবল b, ‘to’-এর বদলে 2 অথবা ‘see you’-এর বদলে ‘c u’। নিয়মিত টেক্সটিং করায় অভ্যস্ত লোকজন অনেক সময়েই শব্দের আদ্যক্ষর দিয়ে কেবল একটা শব্দ নয়, একাধিক শব্দের বাক্ভঙ্গিও প্রকাশ করে থাকে, যেমন gf – girl friend, কিংবা cmb – call me back, 2bctnd – to be continued, cu2nite – see you tonight ইত্যাদি। তেমনি আবার, ঋণের স্বীকৃতিপত্র বা হ্যান্ডনোটের আরেক নাম যে IOU (I Owe You) তা তো আমরা সকলেই জানি। মজার কথা হলো, টেক্সটিং ইংরেজিতে বার্তা লেখার যতই আধুনিক কায়দা হোক না কেন, IOU কিন্তু কয়েকশো বছরের পুরনো, সম্ভবত ১৬১৮ সালের একটা টাকা-পয়সা লেনদেন-সংক্রান্ত দলিলে এই বিশেষ সংক্ষেপিত লেখনভঙ্গিটির প্রথম উলেস্নখ দেখা যায়। এই কায়দায় টেক্সটিং যারা করে তাদের অবশ্যই linguistic বা ভাষাবিজ্ঞানগত নিয়মকানুন ভঙ্গের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা যায়, তবে তাদের কিন্তু এটাও খেয়াল রাখতে হয় যে, তাদের ব্যবহার করা ভাষাকে অন্যদের কাছেও বোধগম্য হতে হবে, কারণ ওই ভাষায় কোনো বার্তা পাঠাতে গিয়ে যদি এত বেশি নিয়মকানুন ভঙ্গ করতে হয় যে, শেষ পর্যন্ত সেটা রীতিমতো দুর্বোধ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে তাহলে তেমন বার্তা পাঠানোর তো কোনো মানেই হবে না। তাছাড়া বার্তা যথাসম্ভব সংক্ষেপ্ত রাখাই টেক্সটিংয়ের একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য, কারণ বার্তা যতই দীর্ঘ হবে, তার ভেতরের তথ্য যতই বেশি হবে, orthography বা বিশুদ্ধ বানান লেখার সাধারণ অনুপাত ততই বাড়তে থাকবে। তবে অপেক্ষাকৃত পরিণত-বয়স্ক, ভাষার শুদ্ধতার ব্যাপারে হয়তোবা কিছুটা রক্ষণশীল লোকজনের মধ্যেও টেক্সটিং করার প্রবণতা বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে চিরাচরিত, প্রথাসিদ্ধ ভাষার ব্যবহারও বাড়বে। একই সঙ্গে আবার, একটা প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে কোনোরকম ‘অফিসিয়াল’ তথ্য সরবরাহের সময় বিশুদ্ধ বানানে ও ব্যাকরণসম্মত ভাষায় লেখা বার্তা পাঠানোই স্বাভাবিক প্রথা। বিলেতে থাকার সময় যেমন দেখেছি, শীতকালে প্রবল শৈত্যপ্রবাহের দরুন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনজীবন যখন বহুলাংশে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, তখন অনেক স্কুল-কলেজ থেকে ছাত্রদের বা তাদের অভিভাবকদের মোবাইল ফোনে পাঠানো টেক্সট বার্তায় হয়তো লেখা হচ্ছে : ‘Weather alert! No classes today due to snow storm.’ টেক্সটিংয়ের abbreviated style বা সংক্ষেপিত লেখনভঙ্গি, যেমন 2day (today) অথবা, due2 (due to) এ-বার্তায় অনুপস্থিত, এবং এই জাতীয় প্রাতিষ্ঠানিক বার্তার অনুপাত সাইবারস্পেসে ভেসে বেড়ানো লাখ-লাখ টেক্সট বার্তার মধ্যে উলেস্নখযোগ্য। আমাদের দেশেরও অনেক সংগঠন তাদের তরফ থেকে পাঠানো টেক্সট বার্তায় সংক্ষেপিত লেখনভঙ্গি একেবারেই অনুমোদন করে না।

পাঠক তো বুঝতেই পারছেন যে, লেখ্য ইংরেজি ভাষার বিবর্তনই এ-নিবন্ধের প্রাসঙ্গিক বিষয়। ইংরেজি ভাষা অথবা রোমান হরফ ব্যবহার করে লিখতে হয়, এমন ভাষাগুলি ছাড়া অন্যান্য ভাষাতেও (যেমন বাংলা) আজকাল মোবাইল ফোন থেকে টেক্সট বার্তা পাঠানোর চল অবশ্য হয়েছে, তবে ওইসব ভাষায় ইংরেজিতে টেক্সটিংয়ের মতো সংক্ষেপিত লেখনভঙ্গির ব্যবহার এখনো চালু করা যায়নি। বাংলা ভাষায় এটা আদৌ করা যাবে কি না আমি জানি না। টেক্সট বার্তা আদান-প্রদানের ব্যাপারে আমাদের দেশের কিশোর-তরুণ প্রজন্ম ইংরেজিতেই স্বচ্ছন্দ, অপেক্ষাকৃত বেশি বয়স্কদেরও অনেকেই মোবাইল ফোনে ইংরেজি ছাড়া অন্য কিছু লিখতে শেখেননি। আমার প্রায় তিন দশকের প্রবাসজীবনের অনেকটাই কেটেছে BBC World Service-এর বেতার-অনুষ্ঠানের একজন প্রযোজক-পরিবেশক হিসেবে কর্মরত অবস্থায়। ওই সময়ে English by Radio নামে বেতার সম্প্রচারের মাধ্যমে ইংরেজি ভাষা শেখানোর একটি অনুষ্ঠান আমি উপস্থাপনা করেছি এবং সেই সূত্রে কয়েকজন ভাষাবিদের সঙ্গে মেলামেশার ও কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, যা প্রাত্যহিক জীবনে ইংরেজি ভাষা ব্যবহারের কিছু খুঁটিনাটির সঙ্গে পরিচিত হওয়ায় আমাকে সাহায্য করেছে। BBC Radio 4-এর খ্যাতনামা সংবাদ ভাষ্যকার ও পরিবেশক জন হামফ্রির লেখা একটা প্রবন্ধ তখন আমি পড়েছিলাম। প্রবন্ধটির শিরোনাম খুবই মজার – ‘I h8 txt msgs’ – এবং এই প্রবন্ধের এক জায়গায় হামফ্রি টেক্সটিংয়ের বিরুদ্ধে যথেষ্টই উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, যেসব লোক নিয়মিত মোবাইল ফোনের সাহায্যে টেক্সট করে, তাদের বেশিরভাগই হলো ‘vandals who are doing to our language what Genghis Khan did to his neighbours 800 years ago. They are destroying it; pillaging our punctuation; savaging our sentences; raping our vocabulary. And they must be stopped.’ একই ধরনের সমালোচনা আরো অনেক সূত্রেরই, যারা টেক্সটিংয়ের নাম দিয়েছে ‘textese’, ‘slanguage’, ‘digital virus’, ‘shrinktalk’ এবং তাদের কারো কারো দাবি, ‘It masks dyslexia, poor spelling, mental laziness, and it is penmanship for illiterates.’ তবে একটা কথা এখানে মনে রাখতে হবে – ১৪৪০ সালে জার্মানির জোহানেস গুটেনবার্গ যখন প্রথম মুদ্রণযন্ত্র তৈরি করেন (তার আগেই অবশ্য কাদামাটি দিয়ে তৈরি হরফ ব্যবহার করে ছাপার কাজ শুরু হয়েছিল চীনদেশে, ১০৪১ সালে), তখন সে-যুগের লোকজনের ধারণা ছিল, মুদ্রণ বা ছাপাই আসলে শয়তানের আবিষ্কার, মানুষের মনে নানারকম ভ্রান্ত চিন্তাভাবনা ঢুকিয়ে দেওয়াই তার উদ্দেশ্য। সেই থেকেই এই বিতর্কের অবতারণা যে, ভাষার ওপর নতুন প্রযুক্তির প্রভাব হবে সর্বনেশে। টেলিগ্রাফ, টেলিফোন, এমনকি ব্রডকাস্টিং বা বেতার-সম্প্রচার চালু হওয়ার সঙ্গেও গোড়ার দিকে জড়িত ছিল একই ধরনের আশঙ্কা। কিন্তু মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টেক্সটিং সম্পর্কে এমন ব্যাপক কৌতূহল, সন্দেহ, আশঙ্কা, বিভ্রামিত্ম, বিরোধিতা, আকর্ষণ, উত্তেজনা ও উৎসাহ যে সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষ করে এত অল্প সময়ের মধ্যে, তা সম্ভবত কেউ কখনো ভাবেনি। পনেরো-বিশ বছর আগেও টেক্সটিং ছিল বেশিরভাগ লোকের কাছেই একটা অভিনব ব্যাপার।

আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে ‘শর্ট মেসেজ সার্ভিস’ বা, SMS ‘গেস্নাবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশন্স’ (GSM) নেটওয়ার্কের অঙ্গে পরিণত হয়ে উঠতে থাকে, কিন্তু আরো প্রায় সাত-আট বছর পর্যন্ত টেলিফোন কোম্পানিগুলি তার বাণিজ্যিক সম্ভাবনার দিকে তেমন দৃষ্টি দেয়নি। তখন পর্যন্ত টেক্সট বার্তা প্রেরণের মাধ্যম ছিল Pager নামে যন্ত্রটি, যা এখনো কোনো-কোনো ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। তারপর মোবাইল ফোনের ব্যবহার ক্রমে বাড়তে থাকে, তবে গোড়ার দিকে টেক্সটের দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র বিশটির মতো অক্ষরে সীমিত। লোকজন তখনো তেমন ব্যাপকভাবে টেক্সটিং শুরু করেনি – ১৯৯৫ সালে প্রতি GSM খরিদ্দার পিছু টেক্সটিংয়ের গড় সংখ্যা ছিল মাত্র ০.৪ প্রতি মাসে, ২০০০ সালেও এই অনুপাত ৩৫ ছাড়ায়নি। এর কারণ হলো, এই নতুন পরিষেবার জন্য কী ধরনের খরচ ধার্য করা যেতে পারে তা টেলিফোন কোম্পানিগুলি তখন পর্যন্ত ঠিকমতো হিসাব করে উঠতে পারেনি। কিন্তু সমস্ত প্রক্রিয়া একবার চূড়ান্ত হওয়ার পর টেক্সটিংয়ের সংখ্যা উল্কার গতিতে বাড়তে শুরু করে – বছর দশেকের মধ্যেই, ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী, গোটা বিশ্বে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১.৫ ট্রিলিয়নের কাছাকাছি, প্রায় কল্পনাতীত বিশাল একটা অংক, যা দিনের পর দিন আরো বেড়েই চলেছে, আর টেক্সটিং পরিষেবা সরবরাহকারী মোবাইল টেলিফোন কোম্পানিগুলির সর্বমোট বার্ষিক আয়ের পরিমাণ প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলার, আরো পাঁচ-সাত বছর পর আজ হয়তো ১০০ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাওয়ার দিকে।

ইংরেজি ভাষা লেখার স্টাইলের ক্রমবিবর্তনের পরিপ্রেক্ষেতে টেক্সটিংয়ের সংক্ষেপিত লেখনভঙ্গি কিন্তু আসলে কেবল একবিংশ শতাব্দীর অভিনব অবদান নয়। ১৯৪২ সালে প্রকাশিত এরিক প্যারট্রিজের সম্পাদনায় সংকলিত Dictionary of Abbreviations নামে অভিধানটিতে প্রচুর SMS-জাতীয় দৃষ্টান্ত দেওয়া আছে, যেমন : agn – again, mth – month, gd – good ইত্যাদি, এবং এ-ধরনের অনেক শব্দই লোকজন ব্যবহার করে আসছে টেক্সটিংয়ের জন্ম হওয়ার পঞ্চাশ-ষাট বছর আগে থেকেই। তাছাড়া একাধিক শব্দের আদ্যক্ষর দিয়ে গঠিত বহু acronym, যথা Radar (Radio Detection And Ranging), NATO, UNESCO, SARC, WHO – এগুলিও তো আমাদের সকলের কাছেই পরিচিত। ইংরেজি ভাষা লেখা শুরু হওয়ার সময় থেকেই তার মধ্যে সংক্ষেপিত শব্দের ব্যবহারও শুরু। যেমন – exam (examination), vet (veterinary surgeon, veteran), fridge (refrigerator), bus (omnibus), fax (facsimile) ইত্যাদি শব্দ এতই পরিচিত যে, ব্যবহারিক ক্ষেত্রে সেগুলি নতুন শব্দে পরিণত হয়েছে। এমনকি তিনশো বছরেরও আগে, ১৭১১ সালে, সে-যুগের একজন বিখ্যাত ইংরেজ প্রাবন্ধিক, কবি, নাট্যকার ও রাজনীতিবিদ জোসেফ অ্যাডিসন তাঁর সমসাময়িক কয়েকজনের লেখায় pos[itive], incog[nito] জাতীয় কিছু শব্দ ব্যবহারের উলেস্নখ করে সখেদে অভিযোগ করেছিলেন যে, তাঁদের এই প্রবণতা বিশুদ্ধ ইংরেজি শব্দভা-ারকে ‘শোচনীয়ভাবে কর্তিত’ –  ‘miserably curtailed’ – করে তুলছে। মোটামুটি একই সময়ের আরেকজন লেখক, সর্বকালের অন্যতম পাঠকপ্রিয় কাহিনি Gulliver’s Travels (১৭২৬ খ্রিষ্টাব্দ) রচয়িতা জোনাথন সুইফটও অ্যাডিসনের অভিযোগের প্রতিধ্বনি করে বলেছিলেন, কোনো লেখার মধ্যে এভাবে বিভিন্ন শব্দের সংক্ষেপ্তকরণ অবশ্যই একটা ‘barbaric custom’ – ‘বর্বরোচিত প্রথা’।

মোবাইল ফোন থেকে টেক্সট বার্তা পাঠানো হয়তো মনের ভাব আদান-প্রদানের সবচেয়ে স্বাভাবিক উপায় নয়। তিন-চার বছর আগে পর্যন্তও অনেক মোবাইল ফোনের কি-প্যাড মোটেই ভাষাবিজ্ঞানসম্মতভাবে সংবেদনশীল – ‘linguistically sensible’ – ছিল না, এবং এই কি-প্যাডের নকশা তৈরি করার সময় কোন অক্ষর লেখায় কত বেশিবার আসতে পারে তা কোনো অজ্ঞাত কারণে সঠিকভাবে বিবেচনা করা হয়নি। আমার পুরনো একটা ফোনে যেমন, 7 বোতামটা ছিল p-q-r-s এই চারটি অক্ষরই টাইপ করার জন্য, অর্থাৎ s টাইপ করতে হলে পরপর চারবার বোতাম টিপতে হতো, অথচ s হলো ইংরেজি ভাষার সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত একটি অক্ষর। আবার ওই ফোনে q টাইপ করা অনেক সহজ ছিল – দুবার বোতাম টিপেই সেটা করা যেত, কিন্তু q ইংরেজি ভাষার সবচেয়ে কম ব্যবহৃত একটি অক্ষর। সর্বাধুনিক মডেলের ফোনগুলিতে অবশ্য এ-অসুবিধা যতটা সম্ভব এড়ানোর উপযোগী করে কি-প্যাড ডিজাইন করা হচ্ছে। তবে এ-কথা স্বীকার করতেই হয় যে, টেক্সটিং মনের ভাব প্রকাশের একটা অত্যন্ত সীমিত মাধ্যম, বিশেষত যেখানে লিখতে হচ্ছে একটা খুবই ছোট স্ক্রিনের সংকীর্ণ পরিসরে, এবং এর বিরুদ্ধে একটা প্রধান সমালোচনা হলো যে, আজকের যুগের শিশুদের SMS ব্যবহারের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা তাদের ভাষাজ্ঞানের ভিত্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। তবে একটু অন্যভাবে ভেবে দেখলে কিন্তু মনে হতে পারে যে, বাস্তব ছবিটা এর বিপরীত – টেক্সটিংয়ের অভ্যাস আদতে ছোট ছেলেমেয়েদের লেখার বা পড়ার ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয় না, বরং তাদের সাক্ষরতার স্তর বাড়ায়। ইংল্যান্ডের কভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের বেশ কিছুদিন ধরে পরিচালিত এক জরিপের ফলাফল দেখেছিলাম। যেখানে বলা হয়েছে যে, স্কুলের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের টেক্সটিংয়ের ভাষা ব্যবহারের এবং সাধারণ ইংরেজি ভাষার ওপর তাদের দখলের স্তরের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ও যথেষ্ট ইতিবাচক যোগসূত্র রয়েছে। টেক্সট বার্তায় তাদের মধ্যে যারা যত বেশি সংক্ষেপকৃত শব্দ ব্যবহার করে, পড়ার ও শব্দভা-ার প্রসারের পরীক্ষায় তারা ততই উঁচু মান অর্জন করে। বানান করায় ও লেখায় যেসব বালক-বালিকার দক্ষতা অন্যদের তুলনায় ভালো, তারাই টেক্সটিং করায় সবচেয়ে বেশি অভ্যস্ত। এবং যত কম বয়সে তারা প্রথমবারের মতো মোবাইল ফোন হাতে পায়, তাদের অর্জিত মানও ততই উঁচু হয়। প্রকৃতপক্ষেই এই ছেলেমেয়েদের সাক্ষরতার স্তর যদি ইতোমধ্যেই যথেষ্ট পরিণত না হয়ে থাকে, তাহলে তারা দক্ষতার সঙ্গে টেক্সটিং করতে পারবে কীভাবে? সংক্ষেপকৃত শব্দ রচনায় ও লেখায় স্বচ্ছন্দ হওয়ার আগে প্রত্যেককেই তার নিজের ভাষার প্রতিটি অক্ষরের ধ্বনি সম্পর্কে সচেতন হতেই হবে, নচেৎ তার টেক্সট-বার্তা কখনো অন্য কারো কাছে অর্থবহ হবে না। সুতরাং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হতাশ হয়ে পড়ার কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না। আজকের শিশু ও কিশোররা প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠার সঙ্গে-সঙ্গে শুদ্ধ ও সঠিক ইংরেজি ভাষা লিখতে সম্পূর্ণ অপারগ প্রজনেম পরিণত হবে না, সামগ্রিকভাবে ভাষার মানের চরম অবনতিও হবে না। টেক্সটিংয়ের ক্ষেত্রে আজ আমরা যা দেখছি তা প্রকৃতপক্ষে, হয়তো সীমিত মাত্রায় কিন্তু নতুন আঙ্গিকে, ইংরেজি ভাষার ক্রমবিবর্তনেরই প্রমাণ। মোবাইল ফোন থেকে টেক্সট-বার্তা পাঠানোর বাইরেও নানাবিধ প্রসঙ্গে টেক্সটিংয়ের সংক্ষেপিত লেখনভঙ্গির ব্যবহার ইতোমধ্যে অভ্যস্ত রীতিতে পরিণত হয়ে উঠছে। ইংরেজি সংবাদপত্রের পাতায় প্রায় রোজই যেমন খবরের শিরোনাম চোখে পড়ে – ‘Def min to attend naval ceremony’ অথবা ‘Presi meets intl team’ -এসব ক্ষেত্রে ‘Def min’ যে ‘Defence minister’ বা, ‘প্রতিরক্ষা মন্ত্রী’, আর ‘Presi’ ও ‘intl’ যথাক্রমে ‘প্রেসিডেন্ট’ ও ‘ইন্টারন্যাশনাল’ তা বুঝতে পাঠকদের নিশ্চয়ই অসুবিধা হয় না। অতএব এই জাতীয় লেখনভঙ্গি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহৃত ইংরেজি ভাষার স্বাভাবিক অংশ হয়ে উঠবে অচিরেই – কিংবা হয়ে উঠেছে – তাতে বোধহয় কোনো সন্দেহ নেই। বাংলা বা ওই শ্রেণির অন্যান্য ভাষার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কী হবে সেটা অবশ্য এখনো সঠিকভাবে বোঝা যাচ্ছে না।