ম্যাডাম

হরিশংকর জলদাস

‘পানি কি সবসময় পাওয়া যাবে আপা?’ বিনীতভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলেন অধীরবাবু।

‘আপা নয়, ম্যাডাম। ম্যাডাম শুনতে আমি অভ্যস্ত। এ বিল্ডিংয়ের সব ভাড়াটে আমাকে ম্যাডাম বলে ডাকে।’ তারপর তৃপ্তির সামান্য ঢেঁকুর তুলে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে অধীরবাবুকে বললেন, ‘পানি সবসময় পাওয়া যাবে কিনা জিজ্ঞেস করছিলেন না আপনি? সবসময় নয় চবিবশ ঘণ্টাই পানি পাবেন আপনি আমার বিল্ডিংয়ে।’ বলে উচ্চৈঃস্বরে হেসে উঠলেন আনোয়ারা বেগম। পাশের সোফায় বসা স্বামী আজিজুল হকের দিকে তাকিয়ে তিনি আবার বললেন, ‘তুমি কী বলো? মিথ্যে বলেছি?’

‘আর ভাড়া ম্যাডাম, মাসে ভাড়া কত দিতে হবে?’ অধীরবাবু আগের ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলেন।

‘ভাড়া? ভাড়া খুব বেশি না। দুটো বেডরুম, ড্রইংরুম, ডাইনিংরুম মিলে রুমের সংখ্যা তো কম না! সে অনুপাতে ভাড়া অনেক কম। মাত্র তেরো হাজার। তবে আপনি শিক্ষক মানুষ, কতই বা বেতন পান! আপনি বারো হাজারই দেবেন।’ আনোয়ারা বেগম বললেন।

অধীরবাবু আগের চেয়ে আরও কুঁজো হয়ে গেলেন। পাছার অর্ধেকাংশ সোফায় লাগিয়ে বসেছিলেন তিনি, এখন আরও সামনে এসে কাঁচুমাঁচু ভঙ্গিতে বললেন, ‘নিচতলা আপা, সরি ম্যাডাম। ঘরগুলো স্যাঁতসেঁতে, অন্ধকার। দেখলাম একটা জানালার পাশে সার্ভেন্ট টয়লেট, খোলা। বাসার খুব প্রয়োজন আমার। আপনার বাসাটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। তাই বলছিলাম কী ম্যাডাম, যদি আমার কাছ থেকে দশ হাজার নিতেন।’

‘দশ হাজার!’ চোখ কুঁচকে দ্রুত উচ্চারণ করলেন আনোয়ারা বেগম। ‘আপনি বোধহয় ভুল জায়গায়

এসেছেন মাস্টারবাবু। এর চেয়ে কমে বাসা পাবেন না আমার এখানে।’ তারপর সোফা থেকে উঠতে উঠতে বললেন, ‘দুদিন ভেবে দেখেন। দুদিন পর বলে যাবেন বাসা নেবেন কি নেবেন না। এর মধ্যে তেরো হাজারি ভাড়াটে এলে ওদের দিয়ে দেব।’

অধীরবাবু দ্রুত বলে উঠলেন, ‘আমি বাসাটা নিলাম ম্যাডাম।’

‘দুমাসের অ্যাডভান্স দিতে হবে।’ আনোয়ারা বেগম বললেন। ‘ও হ্যাঁ, ছেলেমেয়ে তিনজন বলছিলেন না আপনি। আগামীকাল বিকেলে স্ত্রী আর বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে একবার আসবেন। ওদের দেখা দরকার আছে আমার।’ পরদিন বিকেলের ইন্টারভিউতে পাশ করেছিলেন অধীরবাবু এবং তার পরিবারবর্গ। সেই থেকে অধীরবাবু ‘আনোয়ারা ভবনে’ বাস করছেন।

ঢাকার মতন চট্টগ্রামও এখন দুটো অংশে বিভক্ত – ওল্ড চিটাগাং আর নিউ চিটাগাং। শহরের উত্তর-পশ্চিমে নিউ চিটাগাংয়ের বিস্তৃতি। কর্ণফুলীর পাড়ে পুরাতন চট্টগ্রাম। নদীপাড়েই সকল শহর। বেশিরভাগ শহরের পত্তন হয়েছে নদীপাড়ে। একসময় নদীপথই সকল যোগাযোগ আর ব্যবসাবাণিজ্যের প্রধান মাধ্যম ছিল। এ কারণে বুড়িগঙ্গা বা টেমস, গঙ্গা বা কর্ণফুলী যে নদীই হোক না কেন শহর গড়ে উঠেছে তাদের পাড়ে। চট্টগ্রাম শহরও কর্ণফুলীর পাড়ে একসময় গড়ে উঠেছিল। ওল্ড চিটাগাং এখন এটি। সদরঘাট, মাঝিরঘাট, ফিশারিঘাট – এসব ঘাট দিয়ে আন্তর ও বহির্বাণিজ্য চলত। নদীর পাড়েই ফিরিঙ্গিবাজার, কোতোয়ালি, পাথরঘাটা বংশাল এরিয়া। এসব এরিয়াতে ইংরেজদের বসবাস ছিল একসময়। এসব এরিয়াতে নেটিভদের বসবাস তো দূরের কথা, যাতায়াতও নিষিদ্ধ ছিল একসময়। ইংরেজ সরকার ভারতবর্ষ ত্যাগ করলে ফিরিঙ্গিবাজার এলাকা আর ফিরিঙ্গিদের রইল না। বনেদি হিন্দু-মুসলমানরা এসব অঞ্চলে বসবাস শুরু করল। তারা নিজেদের রুচি ও সামর্থ্য অনুযায়ী ঘরবাড়ি-বিল্ডিং করল। ‘আনোয়ারা ভবন’ এরকম একটা বিল্ডিং, যা বানিয়েছেন আজিজুল হক কিন্তু যার মালিক আনোয়ারা বেগম। তারই নামানুসারে এই বিল্ডিংয়ের নাম আনোয়ারা ভবন। ‘আনোয়ারা ভবন’ পাঁচতলা, প্রতিতলাতে দুটি করে ইউনিট। আশপাশের বিল্ডিংয়ের চেয়ে এই বিল্ডিংয়ে ভাড়া বেশি, কারণ বিল্ডিংটির বাইরে অত্যন্ত সুসজ্জিত; প্রশস্ত টাইলস করা সিঁড়ি এর। সিঁড়ির পাশের হাতল সেগুন কাঠের, দরজা সুচারু, কারুকার্যময়। আনোয়ারা বেগম তার বিল্ডিংয়ের প্রশংসা সুযোগ পেলে করেন। বিল্ডিংয়ের প্রসঙ্গ তোলার সুযোগ না থাকলেও নানা উছিলায় সুযোগ করে নেন।

আনোয়ারা বেগমের স্বামী আজিজুল হক টিঅ্যান্ডটির ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। সম্প্রতি রিটায়ার করেছেন। চাকরি করতে করতেই জায়গা কিনেছেন, বিল্ডিং বানিয়েছেন। প্রশ্ন উঠতে পারে আজিজুল হক এত টাকা পেলেন কোথায়? চাকরির বেতনের তো একটা লিমিটেশন আছে, একটা নির্ধারিত স্কেলে বেতন পান সরকারি কর্মকর্তারা। টিঅ্যান্ডটির মধ্যমমানের একজন ইঞ্জিনিয়ারের বেতনস্কেল কতই বা? তারপরও একটা ছেলেকে ডাক্তার, একটা ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার আর একটা মেয়েকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়িয়েছেন আজিজুল হক। তারপর বানিয়েছেন বাড়ি। বুদ্ধিমান তিনি। অবৈধ আয়ের জায়গা ও বাড়িটি নিজের নামে করেননি, বউয়ের নামে রেজিস্ট্রি করিয়েছেন। বিল্ডিংয়ের গায়ে ‘আনোয়ারা ভবন’ নামটি খোদাই করিয়েছেন পরম যত্নে। শ্বেতপাথরে খোদাই করা নামফলকের সামনে পথচারীরা একমুহূর্তের জন্য হলেও দাঁড়ায়, সৌন্দর্য উপভোগ করে। মূল গেটের দুপাশে দুটো গাছ – রাধাচূড়া আর কৃষ্ণচূড়া। লাল রাধাচূড়া হলুদ আর কৃষ্ণচূড়া। এপ্রিল-মেতে যখন ফুল ফোটে, তখন দেখার মতো একটা বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। হলুদ-লালেতে এক অসাধারণ রংবাহারের সৃষ্টি হয় ‘আনোয়ারা ভবনে’র সামনে। শত-শত ভোমরা দিনরাত মধু সংগ্রহ করে ফুল থেকে। আর এলাকার বিরহীদের মনে হাহাকারের ঝড় ওঠে ফুলের অসহনীয় সৌন্দর্যে। বাইরের মানুষরা মনে করে – আহা! যারা এই ভবনে বাস করে, তারা কী সৌভাগ্যবান! কিন্তু ভেতরের চিত্র অন্য।

অধীরবাবু যে বছর এলেন এই বিল্ডিংয়ে আনোয়ারা বেগমের ছোট মেয়েটি ক্লাস সেভেনে। মেয়েটি অঙ্কে কাঁচা। অধীরবাবু বিএসসি, গণিতের শিক্ষক। প্রাইভেট পড়ান। অনুরোধ করে অধীরবাবু ঘরে প্রাইভেট পড়ানোর অনুমতি আদায় করেছেন আনোয়ারা বেগমের কাছ থেকে। সেদিন বিকেলে অধীরবাবুর দরজায় টোকা দিলেন আনোয়ারা বেগম। দরজা খুলে অধীরবাবু ভয় পেয়ে গেলেন, সামনে আনোয়ারা ম্যাডাম দাঁড়িয়ে। নির্মোহ চোখ, গাম্ভীর্য থিকথিক করছে সমস্ত চেহারায়। চট করে দরজার সামনের মেঝেতে তাকালেন অধীরবাবু। সেখানে কোনো জুতোজাতা আছে কিনা অধীরবাবুর অধীর চোখ খুঁজে ফিরতে লাগল। সেখানে পড়ুয়াদের কোনো জুতা-স্যান্ডেল দেখতে না পেয়ে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন অধীরবাবু, সেদিন কী কান্ডটাই না ঘটে গিয়েছিল পড়ুয়াদের জুতা-স্যান্ডেল নিয়ে। নিচুতলার একটি ফ্ল্যাটে থাকেন অধীরবাবু। মুখোমুখি ফ্ল্যাটে থাকেন আনোয়ারা বেগম, সপরিবারে। অবশ্য ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট তার। নিচতলার ভেতর থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি। নিচতলায় ডাইনিংরুম, ড্রইংরুম এবং সার্ভেন্ট রুম, ওপরতলায় লিভিংরুম। সকালের ব্যাচে অনেক ছাত্রছাত্রী। দরজার সামনের লবিটা জুড়ে নানা কিসিমের জুতা-স্যান্ডেল। ছোট, বড়, মাঝারি – নানা আকারের পাদুকা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ওইদিনও দরজায় খটাস-খটাস-খট আওয়াজে দরজা খুলেছিলেন অধীরবাবু। আনোয়ারা বেগম চিৎকার করে উঠেছিলেন, ‘আমি কি জুতার দোকান দেওয়ার জন্য আপনাকে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দিয়েছি?’

আমতা আমতা করে কী যেন বলতে যাচ্ছিলেন অধীরবাবু। চোখ বাঁকিয়ে তর্জনী উঁচিয়ে আনোয়ারা বেগম বলেছিলেন ‘কোনো কথা বলবেন না অধীরবাবু। আমি আপনাকে ভাড়া দিয়েছি থাকবার জন্য, ছাত্রছাত্রীদের গোশালা  বানাবার জন্য নয়।’ ছাত্রছাত্রীদের যে গোশালা হয় না, শুধু গরুরই গোশালা হয়, সেটা হয়তো আনোয়ারা বেগমের জানা নেই অথবা ওইসময় তার মাথায় আসেনি। কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে অধীরবাবুকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আনোয়ারা বেগম গলা উঁচিয়ে বললেন, ‘শুনেন, জুতার প্রদর্শনী এখানে চলবে না। হাত-পা ধরে কাকুতি-মিনতি করেছেন, পড়ানোর অনুমতি দিয়েছি। যা করবেন ঘরের ভেতরে। ভবিষ্যতে দরজার বাইরে একটা তেনা পর্যন্ত যেন না থাকে। মনে থাকে যেন, নইলে পথ দেখতে হবে আপনাকে।’ বলেই পেছনে ফিরলেন আনোয়ারা বেগম।

আদাব-নমস্কার দিতে ভুলে গেলেন অধীরবাবু। আনমনে কী যেন ভাবছেন তিনি তখন। নিজের ভেতরে চোখ রেখে আতিপাতি করে অধীরবাবু তখন খুঁজে বেড়াচ্ছেন – কখন আনোয়ারা বেগমের হাতে এবং পায়ে ধরে প্রাইভেট পড়ানোর অনুমতি আদায় করেছেন। হ্যাঁ, অনুমতি নিয়েছিলেন তিনি, তবে হাতে-পায়ে ধরে নয়, মুখে অনুরোধ করে।

‘ম্যাডাম, আসেন আসেন ভেতরে আসেন।’ মুখে যতই গদগদ ভাব দেখান না কেন গলায় অস্বস্তির কাঁটা বিঁধে আছে অধীরবাবুর।

‘না, আমি ভেতরে যাব না।’ দাপুটে কণ্ঠ আনোয়ারা বেগমের।

অস্থির গলায় অধীরবাবু জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিছু কি বলতে এসেছিলেন ম্যাডাম?’

আনোয়ারা ম্যাডাম বললেন, ‘হ্যাঁ, আমার মেয়ে ক্লাস সেভেনে পড়ে। অঙ্কটা সে গুছিয়ে উঠতে পারছে না। আপনি তো গণিতের মাস্টার। মেয়েটাকে একটু দেখেন। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে তো, একটু যতণ নিয়ে দেখতে হবে।’ শেষের কথাগুলো শুধু অহংকার প্রকাশ করার জন্য বললেন।

অধীরবাবু আগবাড়িয়ে বললেন, ‘কোনো চিন্তা করবেন না ম্যাডাম। কাল থেকে পাঠিয়ে দিন, একা দেখব তাকে, যত্ন করে দেখব।’

‘ঠিক আছে।’ বললেন ম্যাডাম আনোয়ারা।

পরবর্তী আটমাস অনেক যত্ন নিয়ে ম্যাডামের মেয়েটিকে দেখলেন অধীরবাবু। মেয়ে স্বচ্ছন্দে গণিতের বৈতরণী পার হয়ে গেল। মেয়েকে পড়ানোর জন্য ম্যাডাম অধীরবাবুকে কোনো টিউশন ফি দিলেন না। মনে করলেন – আমারই বিল্ডিংয়ে আশ্রয় দিয়েছি, তাতেই তো মাস্টারের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। টিউশন ফি আবার কিসের?

সিঁড়ির নিচে সারি সারি মিটার। একদিন দেখা গেল বিদ্যুৎ অফিসের দুজন লোক খুব গভীর মনোযোগ দিয়ে মিটারগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। এগারোটি মিটারের মধ্যে একটি পানি তোলার মিটার। নিচে গভীর প্রশস্ত পানির একটি হাউস আছে। ডিপ টিউবওয়েল থেকে পাম্পের মাধ্যমে পানি টেনে হাউস ভর্তি করা হয়। ওই পানি তোলার মিটারে তখন রিডিং ওঠে। দেখা গেল পানি তোলার মিটারে চোরালাইনের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ধরা পড়ে গেলেন ম্যাডাম। কিন্তু তিনি মচকালেন না। জামাই আদরে ওই দুজনকে ড্রইংরুমে নিয়ে গেলেন। নিচু স্বরে তাদের সঙ্গে কীসব ভুজংভাজং করলেন। কিছুক্ষণ পর তৃপ্তমুখে বেরিয়ে গেল বিদ্যুৎ অফিসের দুজন। এরপর থেকে আনোয়ারা ম্যাডাম ক্ষেপে গেলেন। এলান জারি করলেন – মিটার বদলাতে হবে, প্রত্যেক ভাড়াটেকে এক হাজার করে দিতে হবে। তেতলার হাফিজ সাহেব বললেন, ‘আপনার তো সব ডিজিটাল মিটার। বদলানোর দরকার কী? আর যদি বদলাতে হয় মিটারের দাম দেবেন আপনি, আমরা নই।’ ক্ষোভকে নিজের ভেতরে চালান করে দিয়ে তিনি আরও বললেন, ‘যাওয়ার সময় তো মিটারগুলো আর খুলে নিয়ে যাব না!’

ম্যাডাম বললেন, ‘আপনাকে টাকাও দিতে হবে না, মিটারও খুলে নিয়ে যেতে হবে না। আপনি আমার বাড়ি ছাড়বেন, পনেরো দিনের মধ্যে!’

হাফিজ সাহেব স্কুলপড়ুয়া দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে মাসের শেষে বাসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।

একদিন বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে অধীরবাবু দেখলেন গেটের পাশে দাঁড়ানো কৃষ্ণচূড়া ও রাধাচূড়ার ডালগুলো কাটা হচ্ছে। ডালে ডালে তখন থোকা থোকা ফুল, লাল ও হলুদ আলো ছড়াচ্ছে। অবাক কণ্ঠে কাঠুরেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হয়েছে ভাই, ডালগুলো কেটে ফেলছেন কেন?’

‘শুধু ডাল নয় গোড়াও কাটা অইব। মালিকানের হুকুম।’ একটা ডালে দাওয়ের কোপ দিতে দিতে বলল কাঠুরে। অধীরবাবু নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না। ম্যাডামের দরজায় গিয়ে জোরে জোরে নক করলেন। অনেকক্ষণ পরে ঘুমো চোখে আনোয়ারা বেগম দরজা খুললেন। সামনে অধীরবাবুকে দেখে রাগী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী বাবু? এরকম করে নক করছেন কেন দরজায়, যেন ডাকাত পড়েছে। আপনি জানেন না এখন ঘুমের সময়? যা বলার সন্ধেয় বলতে পারতেন।’

ম্যাডামের কথা কানে না তুলে উদ্বিগ্ন গলায় অধীরবাবু জিজ্ঞেস করলেন, ‘ম্যাডাম, ফুলগাছগুলো কেটে ফেললেন যে! এত সুন্দর ফুলগাছ!’

এবার চোখ বড় বড় করে বিস্মিত কণ্ঠে আনোয়ারা বেগম বললেন, ‘কী আশ্চর্য! আমার গাছ আমি কেন কাটছি, তার কৈফিয়ত আপনাকে দিতে হবে নাকি? আপনার তো সাহস কম না? বাড়ি বয়ে এসে কৈফিয়ত চাইছেন? যান, বাসায় যান। হাত মুখ ধোন, রেস্ট নেন।’

কাঁচুমাঁচু মুখে ফিরে আসার সময় পেছন থেকে আনোয়ারা বেগমের কণ্ঠ শুনলেন, ‘গাছগুলোর শেকড় আমার বিল্ডিং ফাটিয়ে ফেলছে, না কেটে গাছের গোড়ায় সিন্দুর মাখব নাকি?’

পাশের বিল্ডিংয়ে চুরির অজুহাত দেখিয়ে গেটে তালা লাগালেন ম্যাডাম। সব ভাড়াটেকে জানালেন – ‘সব পরিবারে চাবি থাকবে। যেতে-আসতে তালা খুলে বেঁধে যাবেন।’

পঞ্চমতলার সঞ্জয়ের মা বললেন, ‘ম্যাডাম কোনো অতিথি এলে…?’

‘তখন চাবি নিয়ে নামবেন।’ যেন নির্দেশ দিলেন আনোয়ারা বেগম।

‘এই বয়সে পঞ্চমতলা থেকে ওঠানামা করা কী কষ্টের হবে ভেবে দেখেছেন।’ ভদ্রমহিলা বললেন।

‘ভালো বাড়িতে থাকবেন, নিরাপত্তা চাইবেন আর সামান্য কষ্ট করবেন না!’

সঞ্জয়ের মা শেষযুক্তি দিলেন, ‘আমাদের বিল্ডিংয়ে তো চুরি হয়নি। চুরি হওয়ার আগে আমাদের এত কষ্টে ফেলবেন না ম্যাডাম।’

‘যা বলেছি করেন। দল পাকাবেন না। হাফিজ সাহেবের কথা ভুলে যাওয়ার কথা নয় আপনার।’

নিকটে দুটো নামকরা স্কুল। ওই স্কুলে সঞ্জয়, কালাম, লাভলি, পম্পিরা লেখাপড়া করে। এ এলাকায় বাসা পাওয়া মুশকিল। তাই ভাড়াটেরা শত অপমান গঞ্জনার মধ্যেও বাসা ছেড়ে যান না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও আনোয়ারা বেগম যা বলেন, তা মেনে চলেন।

ওইদিন আনোয়ারা বেগম আরো বলেছিলেন, ‘চাবি আমি বানিয়ে দেব। প্রতিটি ছাবিবশ টাকা করে। যে পরিবারের যতটা দরকার নিয়ে যাবেন।’ পরদিন চাবিওয়ালাকে গেটের পাশে বসে চাবি বানাতে দেখা গেল। আনোয়ারা বেগম সামনে দাঁড়িয়ে। কন্যার ডাকে তিনি ভেতরে গেলে অধীরবাবুর স্ত্রী চাবিওয়ালাকে প্রতি চাবির মজুরি কত জিজ্ঞেস করলেন। চাবিওয়ালা বলল, ‘দশ টাকা।’

এক সন্ধেয় ম্যাডামের কাজের মেয়েটি প্রতিটি বাসায় একটি স্লিপ পৌঁছে দিলো। তাতে লেখা – সিঁড়ি সর্বদা অপরিচ্ছন্ন হয়ে থাকে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অংশ। কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সিঁড়ি পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব নেওয়া হলো। এজন্যে প্রতি মাসে প্রত্যেক ভাড়াটেকে পঞ্চাশ টাকা করে দিতে হবে। ঘরভাড়ার সঙ্গে পাঠিয়ে দিলে চলবে। শেষে বিশেষ দ্রষ্টব্য দিয়ে লেখা – আপনারা অযথা পানি অপচয় করছেন। এভাবে চললে পানি সরবরাহ সার্বক্ষণিক থেকে দুবেলায় নামিয়ে আনা হবে।

স্লিপটি পড়ে অধীরবাবুর স্ত্রী স্বামীকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘তোমাদের ম্যাডাম এবার সিঁড়িভাড়া নেওয়া শুরু করলেন। তবে ভাড়া বেশি না, মাত্র পঞ্চাশ টাকা।’

অধীরবাবু ম্লানমুখে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকলেন।

অধীরবাবুর স্ত্রী আবার বললেন, ‘দেখ, পাকঘরের জানালার গ্রিলগুলো ক্ষয়ে গেছে। পাল্লাগুলো খোলা যায় না। ঘরের ভেতরের তেলধোঁয়া ঘরেই ঘুরপাক খায়। কাশি কাশি ভাব হয়ে গেছে আমার। দম নিতে ইদানীং খুব কষ্ট হচ্ছে। তুমি একটু ম্যাডামকে বলো না জানালাটা বদলে দিতে।’

অধীরবাবু অনেকটা স্বগত কণ্ঠে বললেন, ‘দেখি।’

স্ত্রী বললেন, ‘দেখি বলে এড়িয়ে যেও না। সত্যি আমার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।’

এবার ম্লান চোখে অধীরবাবু স্ত্রীর দিকে তাকালেন। বললেন, ‘তুমি তো জানো আমাদের বেডরুমটির পাশেই বাড়িওয়ালির সার্ভেন্ট টয়লেট। জানালা খুললেই পেটফাটা বদবু। এর মধ্যে কতবার অনুরোধ করেছি ম্যাডামকে – টয়লেটটা স্যানিটারি করে শক্ত মতন একটা দরজা লাগান। কিন্তু আমার বারবারের আবেদন উনি কানেই তোলেননি।’ তারপর একটা লম্বা শ্বাস ফেলে আবার বললেন, ‘জানালা পালটানোর অনুরোধকে তিনি কি কোনো পাত্তা দেবেন?’

স্ত্রী বললেন, ‘আচ্ছা, আমরা এখান থেকে চলে গেলে কেমন হয়। চলো না আমরা অন্য কোনো বাসায় চলে যাই।’

অধীরবাবু বললেন, ‘তোমাকে না জানিয়ে বাসা কি কম খুঁজেছি আমি। গাছকাটা নিয়ে ম্যাডাম যেদিন আমাকে অপমান করলেন, সেদিন থেকেই বাসা খুঁজতে শুরু করেছি আমি। কিন্তু মনমতো এবং সামর্থ্যমাফিক বাসা পাওয়া দুষ্কর এ-অঞ্চলে। দু-দুটো নামকরা স্কুল। নিজ সন্তানদের সবাই এই স্কুলগুলোতে পড়াতে চান। আমাদেরও তো দুটো বাচ্চা স্কুলে পড়ছে। সকালের স্কুল। ফিরিঙ্গিবাজার এলাকা থেকে দূরে চলে গেলে যাতায়াতের কষ্ট বাড়বে, খরচ বাড়বে। এইসব বিবেচনা করে বাসা খোঁজা একসময় থামিয়ে দিয়েছি। ম্যাডামের শত অত্যাচারেও চোখ বুজে আছি।’

স্বামীর কথা শুনে স্ত্রী আর কিছু বললেন না। কাজের বাহানায় অন্য কক্ষে চলে গেলেন।

পরের মাসে ম্যাডাম পানি সরবরাহ সত্যি সত্যি দুবেলায় নিয়ে এলেন। মিস্ত্রি ডেকে তিনি এমন সিস্টেম করলেন – পানি তার ফ্ল্যাটে অবিরাম থাকবে, কিন্তু ভাড়াটেরা পাবে দুবেলা, মানে সকালে এবং সন্ধেয়।

সঞ্জয়ের মায়ের জিজ্ঞাসার উত্তরে আনোয়ারা ম্যাডাম বললেন, ‘এভাবেই পানি দেওয়া হবে। পানি তোলার মেশিনেরও তো বিশ্রামের প্রয়োজন আছে। আপনারা যেভাবে পানির অপচয় করছেন পানির পাম্পকে চবিবশ ঘণ্টা ডিউটি দিতে হবে।’

বড় বড় বালতি, ড্রাম কেনার ধুম পড়ে গেল ভাড়াটেদের মধ্যে। ফ্ল্যাটের সকল ট্যাপ ছেড়ে দিয়ে সবাই হুড়াহুড়ি করে ওইসব ড্রাম-বালতিতে পানি ধরতে লাগলেন। পনের-বিশ মিনিটের অধিক সময় পানি দেন না ম্যাডাম। ফলে প্রতিটি ফ্ল্যাটে পানির জন্য হাহাকার পড়ে গেল। কয়টায় পানি দেবেন তারও কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। কখনো ৭টায় কখনো ৯টায় পানি দেন তিনি। নারীদের বাইরে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। চাকরিজীবী মহিলারা পড়লেন বড় বিপাকে। নির্দিষ্ট সময়ে পানি সরবরাহের অনুরোধ করলে ম্যাডাম তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন, ‘আপনাদের কথামতো আমাকে পানি ছাড়তে হবে নাকি? আমার সময়ে আমি পানি ছাড়ব। ধরে রাখবেন।’ বলে দড়াম করে নাকের ডগায় দরজা বন্ধ করে দিলেন ম্যাডাম।

এইভাবে চলতে লাগল দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। প্রতিদিন বাসি পানি দিয়ে গোসল করতে হয়। খাওয়ার পর জগে করে পানি নিয়ে মুখ ধুতে হয়। সকল ইংলিশ টয়লেট অকেজো হয়ে গেল। মলত্যাগ করার পর টয়লেটের জলেই ওগুলো ভাসতে লাগল। ছোট বালতিতে করে টয়লেটে জোরে পানি নিক্ষেপ করতে হলো। ওইজল টয়লেটে প্রত্যাঘাত পেয়ে মলসহ নিক্ষেপকারীর গায়ে এসে পড়তে লাগল। বাসিন্দারা আগে যেখানে শাওয়ারের পানিতে গোসল করতেন, এখন বালতিতে সংরক্ষিত পানি থেকে দু-চার মগ                 মাথা-গায়ে ঢেলে স্নানপর্ব সারতে লাগলেন। পানির অভাবে পোশাক-পরিধেয় দিন দিন ধূসর ম্লান হতে লাগল।

একটা সময়ে ফ্ল্যাটের নারীরা একত্রিত হয়ে ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করলেন। আগের মতো সার্বক্ষণিক পানি সরবরাহের আর্জি জানালেন তারা।

ম্যাডাম সোফায় হেলান দিয়ে আধাবোজা চোখে বললেন, ‘যা নিয়ম করেছি, তা বলবৎ থাকবে। আগে যেমন চলেছেন, এখনো তো চলছেন।’

‘আমাদের বড় কষ্ট ম্যাডাম।’ সঞ্জয়ের মা বললেন।

‘আমারও তো কষ্ট। মাসে মাসে গুচ্ছ-গুচ্ছ টাকার বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে আমাকে। এ-ত টাকা দিতে আমার কষ্ট হচ্ছে না – ?’

মিসেস শাহেদা বললেন, ‘আচ্ছা ম্যাডাম, এরকম করলে হয় না, আমরা যদি মাসে মাসে পানির বিলের জন্য কিছু টাকা দিই আপনাকে, তাহলে আপনারও কষ্ট হলো না, আমরাও আগের মতন পানি পেলাম।’

চট করে সোজা হয়ে বসলেন ম্যাডাম। বিস্ফারিত চোখ। তাতানো কণ্ঠে বললেন, ‘কী বললেন আপনি? নাউজুবিল্লাহ্ নাউজুবিল্লাহ্! মুসলমান হয়ে পানির টাকা নিতে বলছেন আমাকে? এটা আমাদের প্রথাবিরুদ্ধ, বিশ্বাসবিরুদ্ধ জানেন না আপনি?’

মিসেস শাহেদা তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন, ‘সরি ম্যাডাম, আমি ওভাবে বলিনি। আমি বলতে চাইছি – পানি তুলতে তো পাম্প চলে, বিদ্যুৎ খরচ হয়, মিটার ঘোরে। বেশি টাকার বিল আসে। আমরা যদি প্রত্যেক পরিবার মাসে তিনশো টাকা করে দিই, তাহলে আপনার কষ্টটা কমবে।’ কথাগুলো বলে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে সোফায় হেলান দিলেন মিসেস শাহেদা।

শেষের বাক্যে কোনো শ্লেষ আছে কিনা ক্যামেরার চোখে ম্যাডাম মিসেস শাহেদার চোখ-মুখ পরখ করতে লাগলেন। কিছুক্ষণ কী যেন ভাবলেন। তারপর অলসভঙ্গিতে হাই তুললেন। বললেন, ‘মন্দ বলেননি। আপনি তো পানির বিলের টাকার কথা বলেননি, বলেছেন পানি তোলার বিদ্যুৎ খরচের কথা। আপনার প্রস্তাবটা মন্দ না।’ তারপর আড়মোড়া ভেঙে বললেন, ‘তো ওই কথাই রইল। মাসে মাসে পানি তোলার বিদ্যুৎ খরচ বাবদ আপনারা তিনশো টাকা করে দেবেন। আমিও চেষ্টা করব পানি আগের মতো সার্বক্ষণিক দিতে।’

হঠাৎ অধীরবাবুর স্ত্রী বলে উঠলেন, ‘ম্যাডাম, আমার একটা অনুরোধ ছিল।’

ম্যাডাম কিছু না বলে তার দিকে তাকালেন।

অধীরবাবুর স্ত্রী বললেন, ‘আমাদের রান্নাঘরের জানালাটা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। খোলা যায় না। ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসে আমার। আপনি যদি জানালাটা ঠিক করে দেন ম্যাডাম।’

‘ওই ঘরে রাঁধছেন আপনি, ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন আপনারা। কোনো কিছু নষ্ট হলে ঠিক করারও দায়িত্ব আপনাদের।’ অধীরবাবুর স্ত্রীর চোখে চোখ রেখে যেন সবার উদ্দেশে ম্যাডাম কথাগুলো বললেন।

মিইয়ে যাওয়া গলায় অধীরবাবুর স্ত্রী বললেন, ‘দশ-বারো হাজার টাকা লাগবে একটা ভাঙাচোরা জানালা বদলাতে। আপনি না পারেন, আমরা করে নিচ্ছি। ভাড়া থেকে টাকাটা কেটে রাখব আমরা।’

আকাশ থেকে পড়লেন ম্যাডাম। বিস্মিত গলায় বললেন, ‘ভাড়া থেকে কাটবেন! ভাড়া থেকে কাটবেন মানে কী! থাকবেন আপনারা জানালা বদলে দেব আমি! কোথায় পেয়েছেন এসব কথা!’ তারপর বিচারকের কণ্ঠে বললেন, ‘দেখুন, নিজেরা বদলে-টদলে থাকতে পারলে থাকুন। না পারলে কী করতে হবে তা তো আপনার না জানার কথা নয়।’

এভাবেই সে সন্ধেয় কথা শেষ করেছিলেন ম্যাডাম আনোয়ারা বেগম।

দিন, সপ্তাহ, মাস গড়িয়ে বছর গেল। ম্যাডাম পানি দেন। তবে লোডশেডিং, পাম্প মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে – এসব দোহাই দিয়ে সরবরাহে বিঘ্ন ঘটান তিনি। ভাড়াটেরা চোখ বন্ধ করে ম্যাডামের অত্যাচার সহ্য করে যান। শুক্রবারের এক দুপুরে রান্নাঘরেই বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলেন অধীরবাবুর স্ত্রী। চুলায় তখন বেগুনভাজি। ধোঁয়ায় সয়লাব গোটা ঘর। বেগুনভাজির পোড়া গন্ধে দম আটকে আসছে। বেগুন পোড়া গন্ধ মেশানো গোটা রান্নাঘরে কুন্ডলী পাকিয়ে উঠছে। ধপাস করে পড়ার শব্দ শুনে অধীরবাবু দৌড়ে রান্নাঘরে ঢুকলেন। পাঁজাকোলা করে স্ত্রীকে ড্রইংরুমে এনে ফ্লোরে শুইয়ে দিলেন। অ্যাম্বুল্যান্স ডাকা হলো। মুখে অক্সিজেনের মাস্ক লাগিয়ে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। কয়েকদিন থাকলেন তিনি হাসপাতালে। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ডাক্তাররা বললেন – হাঁপানির লক্ষণ। ধোঁয়া, ধূলিকণা – এগুলো থেকে দূরে থাকবেন।

ডাক্তাররা বেডের পাশ থেকে সরে গেলে অধীরবাবুর স্ত্রী আকুতিভরা কণ্ঠে বললেন, ‘আমাকে তুমি ম্যাডামের বাড়ি থেকে বের করার বন্দোবন্ত করো। নইলে আমি বাঁচব না।’

অধীরবাবু স্ত্রীর ডানহাতটা ছুঁয়ে বললেন, ‘শিগগির আমরা ম্যাডামের বাসা ছেড়ে দেব। আমরা এমন এক বাসায় যাব যেখানে ম্যাডাম নেই, মানবতা আছে।’