আবুল হোসেন : কবিপ্রসিদ্ধির ওপার থেকে

শহীদ ইকবাল

পরিণত মৃত্যু, কোনো কষ্ট না দিলেও কিছু জানার বেদনা বারবার ফিরে ফিরে আসে। মহান কবিতারথের কবি আবুল হোসেনের চলে যাওয়ার পরিবেশটি তেমনই বলা যায়। অনেক পড়াশোনা ছিল তাঁর। পর্যবেক্ষণের তীক্ষ্ণতাও তীব্র ও গভীর। সবকিছুর ঊর্ধ্বে কবিতাই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। বিভিন্ন ইন্টারভিউয়ে বলেছেন কবিতা নিয়ে, কবিতার শৈলী নিয়ে অনেক কথা। কী কথা? বাংলা কবিতাধারা সম্পর্কে, কবিতার ভাষা সম্পর্কে, কবিতার কৌশল সম্পর্কে আর এখন কারা কীভাবে লিখছেন – তাঁর সময়ে তাঁর সমসাময়িকরা কীভাবে লিখতেন ইত্যাদি। মন্তব্য শুনেছি; সুকান্ত ভট্টাচার্য, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, সমর সেন সম্পর্কে। বলেছেন শামসুর রাহমান, সিকান্দার আবু জাফর, হাসান হাফিজুর রহমান, সাইয়িদ আতীকুল্লাহ্ পর্যন্ত। দেখার ও জানার অভিজ্ঞতার পাতায় তুলে এনেছেন রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ দাশ – কে নয়! এক বিরাট বটবৃক্ষ, মহীরুহ তিনি। কতো যে অভিজ্ঞতা, তাঁর আমার আপন ভুবন সিরিজ স্মৃতিকথা সুপাঠ্য ও আকর্ষণীয়। দেশভাগের স্মৃতি কতো মর্মন্তুদ – তা তার চোখেই যেন পাঠকরা দেখে ফেলেন। ওইরূপ মানবিক সমস্যার বিষয় নিয়ে তিনি সকলকেই অনুভূতিগ্রাহ্য করে ফেলেন।

দুই

চল্লিশের মেধাবী প্রাচুর্যময় কবি আবুল হোসেন (১৯২২-২০১৪)। রবীন্দ্র-নজরুল সান্নিধ্যধন্য, বাংলাদেশের কবিতার প্রত্যুষ-লগ্নের কবি তিনি। দীর্ঘ কবিতা-পরিক্রমায় তিনি নিজস্ব ভাষারীতিতে সমকালকে নবায়ন করেছেন, অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে। পুরোদস্ত্তর নাগরিক। ‘ফুসফুসে সীলমোহর’, ‘থ্যাঁতলানো থাম’, ‘ট্রাম-মোটর’, ‘পোড়া চামড়া’, ‘বেয়নেট’ এমন চলতিশব্দ দিয়ে প্রথম বিপ্লব ঘটান কবি। ফ্রি-ভার্সের সার্থক প্রয়োগ করেছেন তিনি। কবিতাকে নামিয়ে এনেছেন দৈনন্দিন ব্যবহার্যের মুখে। পূর্ব-পাকিস্তানি কবিতার প্রস্ত্ততি-ভিতে, নতুন সৃষ্টিতে; তারুণ্যের প্রেরণা নিয়ে তাঁর বীজবপন অতঃপর অগ্রসর ও উত্তরণ। অনুভূতির স্তরে একালের রাজনীতি, বাস্তবতা স্বীকারে আসে : ‘যায় যায়, সব যায়/ ধর্ম, সত্য, নীতির কঙ্কাল আজ ধুলোয় লুটোয়।/ মানুষের বেশে ঘুরে বেড়ায় হায়েনা সারাদেশে’ এরূপ ভাষ্যে তিনি সাবলীল এবং মার্জিত। রবীন্দ্র প্রশংসাধন্য নব-বসন্ত (১৯৪০) কলকাতায় ছাপা হয়, অ্যান্টিক কাগজে। আবু সয়ীদ আইয়ুব, বুদ্ধদেব বসুসহ অনেকের সাহচর্য তাঁর আধুনিক রুচি গঠনে সহায়তা করেছে। কবিতাচর্চায় তিনি গতানুগতিক নন, নিজেই বলেছেন : ‘আবেগ হচ্ছে কবিতার প্রথম উপকরণ। হৃদয়ে আবেগের তোড় না থাকলে কখনো কবিতা হয় না। কিন্তু সেই আবেগ যাতে কবিকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে না পারে সে-সম্পর্কে কবিকে সবসময় সাবধান থাকতে হয়। সেখানেই তাঁর শিল্পকর্ম। আমি স্বতঃস্ফূর্তভাবে কবিতা লিখি না … আমি সেন্টিমেন্টের বিরোধী নই, সেন্টিমেন্টালিটির বিরোধী। তাকে সত্যিই ভীষণ ভয় পাই।’ উত্তীর্ণ এবং স্বকাল-অবলম্বী আবুল হোসেন সম্পর্কে কবি আবদুল কাদির বলেছেন :  আবুল হোসেনের কবিতায় যে-স্বকীয়তা সেটা বেশি প্রকাশ পেয়েছে তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ বিরস সংলাপে। আপনারা এই বইয়ের অনেক কবিতা, যেমন ‘বাংলার বাঘ’ ফজলুল হককে নিয়ে লেখা, আমাদের শ্রদ্ধেয় বন্ধু শাহাদত হোসেন মারা যাওয়ার পর লেখা ‘জনৈক কবি নাট্যকারের মৃত্যুতে’ কিংবা ‘নজরুল ইসলামের ছবি দেখে’ এসব কবিতা অনেকেই পড়েছেন। কী চমৎকার এসব কবিতা! এই বইয়ে অনেকগুলো গদ্যকবিতাও আছে। এগুলোতে তিনি এমন একটা ভঙ্গি দিয়েছেন, এমন একটা ভাবের আবহাওয়া সৃষ্টি করেছেন, যা আমাদের সাহিত্যে দেখা যায় না, আমাদের কবিতায় দেখা যায় না এবং পশ্চিমবঙ্গের অনেক কবিতার ক্ষেত্রেও দেখা যায় না।

কবি ছুঁয়েছেন আধুনিক কাব্য আঙ্গিকের ব্যতিক্রমী কিছু। বলতে গেলে, বাঙালি মুসলমানের বাংলা কাব্যচর্চার আধুনিকতার ঊষালগ্নটি দুর্দান্তরূপে স্পর্শ করেছেন তিনি। প্রকৃতি বিচ্ছুরিত রোমান্টিক রং কবির বিশ্বাস ও শিল্পোৎকর্ষের সঙ্গে যেন এক রথে মিলেছে। তাঁর শব্দ ও চরণ ঋজুরেখ :

সুলেমান, রিচার্ড, ক্লুসেড

জেরুজালেম

ঘুম ঘুম ঘুম

তবু তো আজও স্বপ্ন দেখি

তবু তো হৃদয় করে আজও টন টন

তবু তো শোণিতে জাগে অনিরুদ্ধ

দুর্বার প্লাবন

তবুও তবুও।

মূলধারা-অনুবর্তী কবিতার মতো আবুল হোসেন ছন্দ বা আঙ্গিকের প্রথানুগ পরিচর্যা করেননি। ফলে তাঁর কবিতার পাঠক বেশি নয় – মুক্তছন্দ ব্যবহার করেন, অন্ত্যমিল-মধ্যমিল রাখেন, অনুপ্রাস ব্যবহার করেন। আমরা জানি, সফল গদ্যকবি সমর সেন (১৯১৬-৮৭)। কিন্তু তাঁর মতো বেপরোয়া ছন্দ ভাঙেননি আবুল হোসেন, প্রথাবদ্ধ ছন্দের ভেতরেই নিজস্ব কারুকাজ সম্পন্ন করেছেন। বিরস সংলাপ (১৯৬৯) (১৯৪০ থেকে ১৯৬৯ সময়ে লেখা), হাওয়া, তোমার কি দুঃসাহস (১৯৮২), দুঃস্বপ্ন থেকে দুঃস্বপ্নে (১৯৮৫), Selected Poems of Abul Hussain (১৯৮৬), এখনও সময় আছে (১৯৮৬), নির্বাচিত কবিতা (১৯৯৭), রাজ রাজড়া (১৯৯৭), আর কিসের অপেক্ষা (২০০০), রাজকাহিনী (২০০৪), আবুল হোসেনের কাব্যগ্রন্থ। তাঁর অনুবাদ কবিতা : ইকবালের কবিতা (১৯৫২), আমার জন্মভূমি (১৯৭৮), অন্য ক্ষেতের ফসল (১৯৯০)। আবুল হোসেনের কবিতাসমগ্র বেরিয়েছে ২০১০ সালে।

 

দুই

‘Abul Hussain, like Ali Ahsan, is well-read in both Yeats and Frost. The former has translated some Yeats into Bengali, but has not sought to capture the grandure and enchantment of Yeats imagery – an effect which the great Irish poet achieves so effortlessly …’ – সে-অর্থে বাংলাদেশের কবিদের মধ্যে আবুল হোসেন প্রথম আধুনিক, ফররুখ আহমদ, সৈয়দ আলী আহসান ও আহসান হাবীবের কবিতাগ্রন্থের আগেই নববসন্ত বের হয়, রবীন্দ্রনাথকে তা উৎসর্গীকৃত, ‘প্রিয় কবির তালিকায় রবীন্দ্রনাথ নেই, কিন্তু রবীন্দ্র প্রভাব তাঁর লেখায়’ বিশেষ করে নব-বসন্তে। ত্রিশোত্তর কবিগণই প্রিয় ও প্রভাবিত তাঁর লেখায়, পাশ্চাত্যের ইয়েটস-ফ্রস্টও। স্মর্তব্য, পূর্ব-বাংলার এ মধ্যবিত্ত বাঙালি মুসলিম কবি কবিতাকে উৎসে ফেরালেন, পূর্ণতর আধুনিক করে। ‘আধুনিক কাল নিঃসন্দেহে রোমান্টিসিজমের পরিপন্থী’ স্বপ্নে ডোবার কাজ একালের কবিদের নয়, কারণ :

আমরা কি বেঁচে আছি? এই কি জীবন।

বন্ধ ঘরে কানামাছি এ জীবন নিরুপায় খেলা

নির্মম আঘাতে ক্ষতবিক্ষত শরীর।

(‘শেষ যুক্তি’, বিরস সংলাপ)

তাঁর কবিতায় ঘিরে থাকে স্বকাল, সমাজ। ব্যক্তিমনন প্রগাঢ়, ব্যক্তিতেই বিশ্লেষণভাবাপন্ন আবুল হোসেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিস্তর, ব্যক্তিত্বে স্থির, সিদ্ধান্ত স্বকালবিদ্ধ প্রেম-প্রণয় নির্দ্বন্দ্ব। অভিজ্ঞতা সীমিত মনে হয়, বীক্ষণও সে-মতেই প্রতিষ্ঠিত। ক্রমবিকশিত, স্থিতধী আয়ত্ত পরিসর, নিঃসন্দেহে আহসান হাবীবের মতো অক্রিয় বা শাশ্বত-প্রকৃতিকাতর মৃদুমগ্ন নন। ব্যক্তিত্বমন্ডিত, মূল্যবোধের দ্যুতিতে ভাস্বর, আহসান হাবীবের মধ্যবিত্ত বয়ান থেকে তুমুল পার্থক্য প্রকাশিত। অপরদিকে সৈয়দ আলী আহসান থেকে পূর্ণায়ত পৃথক। আবুল হোসেনের এ- ব্যক্তিত্বটি ত্রিশের কবিদের চর্চা বা ইয়েটস-ফ্রস্ট প্রভাবে নিরন্তর যা তাঁকে মননে ঋদ্ধি দিয়েছে সুযোগ করে দিয়ে পরীক্ষার ব্যাকরণে নিমজ্জনে :

আজও

দিনের রাতের যত হোঁচট এড়িয়ে

ছুটির মেলার ভিড়ে আঁচল ওড়ানো ছবি দেখে

বুকের বিকেল ভরে সিনেমার গানে

বউ-এর ছেলের কান্না ভুলে মাঝে মাঝে

সিগারেট ধরিয়েনি গলির দোকানে

এর চেয়ে আশ্চর্য কী আছে?

‘সারারাত খেটে চিত্রকল্প ঘেঁটে/ উপমার আলোজ্বলা পথে গেছি হেঁটে’ অলঙ্কার ব্যবহারেও একই রকম সচেতনতায় পঙ্ক্তির বিনির্মাণ চলেছে। কার্যত বিরস সংলাপই কবির প্রকরণ-নির্ভর গ্রন্থ, পরের কাব্যগ্রন্থে বোধ করি তারই অনুবর্তন পরিলক্ষিত :

আমার চারপাশে মরা, আধমরা,

মানুষের কি পাহাড়, ইলেকট্রিক কাঁটা তার,

ওপড়ানো গাছ, ধসে পড়া দেয়াল, পাঁজর ভাঙা

রাস্তায় ছড়ানো ছিটকানো ঝড়,

কিংবা,

হাওয়া তোমার কি দুঃসাহস,

সংস্কারের দড়ি ছিঁড়ে

তুই ঝাঁপ দিয়েছিলে

নতুন পথে চাওনি ফিরে

…   …    …

ধরিয়ে দিলে রক্তের নেশা

তোমার পথই পথ আমারও

প্রতীক, চিত্রকল্প ছাড়াও বাক্যবিন্যাসে, distortion, inversion-এ আবুল হোসেন ব্যতিক্রমী, ত্রিশোত্তর কবিকুলের পরিবাহী। ‘পিরামিড’, ‘মমি’, ‘মূষিক’, ‘হাওয়া’, ‘ঘোড়সওয়ার’, ‘স্বগত’ প্রভূতমাত্রায় আধুনিক অলঙ্কারে ভূষিত ও ব্যঞ্জিত। পূর্ণাঙ্গ সচেতন অর্থেই তা কাব্যপঙ্ক্তিতে বিরাজিত। কবিতার ছন্দের পঙ্ক্ষাতেও একই ভাষ্য প্রযোজ্য। বাঙালি মুসলমানের হাতে এমন কাব্য-পরিচর্যা একদিকে যেমন সাহসী, অন্যদিকে তেমনি অভিনব। নব-বসন্তের রোমান্টিক রঙে কবি এখনো প্রীতিময় ও স্বতঃধার।

তিন

আবুল হোসেন বিশ্বসাহিত্যের জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। বাংলাদেশের কবিতা সম্পর্কে তার স্বকীয় চিন্তা ছিল। বাংলা একাডেমি থেকে বের হওয়া তার অনুবাদ অন্য ক্ষেতের ফসল সম্পর্কে কিছু কথা বলা যায়। অন্যরকম পরিচর্যার ছাপ আছে গ্রন্থটিতে। তিনি বলেছেন : ‘বিদেশী কবিতা পড়তে গিয়ে যখন কোন কবিতা ভালো লেগেছে এবং মনে হয়েছে ওটা তর্জমা করে দেখা যায়, তখন সে কাজে হাত দিয়েছি। এই বইয়ের কবি ও কবিতাগুলো নির্বাচনের সূত্র এটাই। সেজন্যেই এই বইতে ইংরেজি কবিতার সঙ্গে উর্দু এবং আভর ভাষার কবিতা ঢুকে গেছে। পাশ্চাত্যের সঙ্গে প্রাচ্য এসে মিশেছে। ইংরেজ, মার্কিনী, ককেশীয়, পাকিস্তানী, সাদা-কালো ও তামাটে বসেছেন একই টেবিলে। এঁদের দেশ, ভাষা, পরিবেশ, ধর্ম, সংস্কৃতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা এবং ব্যবস্থা ভিন্ন।’ খুব চমৎকার এই গ্রন্থটিতে রয়েছেন উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস, মুহম্মদ ইকবাল, রবার্ট ফ্রস্ট, এজরা পাউন্ড, টমাস স্টার্নস এলিয়ট, ল্যাংসটন হিউজ, জন বারিম্যান, রসুল হামজটিফ। একটি সংক্ষিপ্ত জীবনকথার পর কিছু কবিতার নান্দনিক অনুবাদ করেছেন আবুল হোসেন।  এ-অনুবাদে কবির কবিত্ব চিহ্নিত। কবিভাষা নির্বাচনে নিজস্বরীতিই প্রয়োগ করেছেন। ইয়েটস এতে করে হয়ে উঠেছেন এদেশীয়, প্রাচ্যীয় – আধুনিক। একটু পরীক্ষা করে নিই, ইয়েটসের ‘For Anne Gregory’ থেকে  :

Never shall a young man,

Thrown into dispair

By those great honey-coloured

Ramparts at your Ear,

Love you for yourself alone

And not your yellow hair.

এমন পঙ্ক্তির দুর্দান্ত অনুবাদ করেছেন আবুল হোসেন। আটপৌরে ভাষায়, নিরাভরণ ছন্দে তার প্রকাশরূপ এ গভীর এবং মহৎ প্রণয়বাঞ্ছিত :

‘তোমার কানের পাশে ঐ মধু-রঙের বিশাল দেয়ালগুলোয়

হতাশ যুবক কক্ষনো ভালো-

বাসবে না তোমাকেই,

তোমার হলদে চুল নয়,

কেবল তোমার জন্যেই।’

এমনি ইংরেজি কবিতায় এলিয়টের অনুবাদও বেশ আকর্ষণীয়। ‘জানালার ধারে সকাল’ কবিতার শেষ স্তবক থেকে তুলে ধরছি :

কুয়াশার বাদামি ঢেউগুলো সড়কের তলা থেকে

ভাঙাচোরা মুখগুলো ছুড়ে দিচ্ছে আমার দিকে

আর ছিঁড়ে আনে কাদাভর্তি স্কার্টপরা এক পথচারীর

অকারণ হাসি, যা হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে

ছাদের কাছাকাছি এসে মিলিয়ে যায়।

মূলের ভাব কাছাকাছি কিন্তু পুরোটাই আমাদের ঐতিহ্য ধরে উপভোগ করা যায়। এক স্বতন্ত্র বাকরীতি – যেটি বিরস সংলাপ কিংবা হাওয়া তোমার কি দুঃসাহসের মধ্যেও মেলে।

 

চার

বাংলাদেশের কবিতায় আবুল হোসেন আদ্যন্ত আধুনিক। সে- রীতিটি একপ্রকার নিরীক্ষার ভেতর দিয়ে তিনি আয়ত্ত করেছিলেন। কবিতাকে ফরমাল নয়, মানুষের কাছে, প্রাত্যহিকতার করিডোরে পৌঁছে দিয়েছেন। সেজন্য শব্দ হয়েছে গভীর এবং বাকপ্রতীমায় তৈরি হয়েছে বাড়তি মাত্রা। বাঙালি মুসলিম কবিদের মধ্যে প্রথম আধুনিক যে-রীতিটি নববসন্ত দিয়ে শুরু হয়েছিল ত কোনোসময় সংশয়ে আচ্ছন্ন হয়নি, দ্বিধান্বিতও নয়। হয়তো তিনি প্রভাবের দাপট আনতে পারেননি, পরের কবিদের চিন্তায়; কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্থৈর্য নিয়ে নিজের বিশ্বাসেই অটল ছিলেন। দীর্ঘ জীবনের যে জার্নি তাতে তার সম্মুখ প্রতীক্ষা ছিল – এ-প্রজন্মের কবিদের নিয়ে। সে-অভিজ্ঞতাটুকু অভিনব কিছু নয়, প্রত্যেকের চর্চার ভেতরেই তা আছে – সেটি অনেকেই এগিয়ে নিয়েছেন। সাইয়িদ আতীকুল্লাহ এবং তার পরবর্তী অনেকেই। কবিতা তো পেছনের জিনিস নয়, মননের ভেতর দিয়ে চিরনবীনের পথ অবমুক্ত করবে, সম্মুখে এগুবো। সেটি তাঁর লেখায়ই আছে, অনুসরণীয় হবেন তিনি এভাবেই।