এই গাড়ি, ওই গাড়ি

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

 

বাড়ির অদূরে নদী, নদীর উপরে ব্রিজ, ব্রিজের উপরে

ঝমাঝম শব্দ তুলে এতক্ষণে যার

নদীটিকে পেরিয়ে যাবার কথা ছিল, সেই যাত্রীতে-বোঝাই

প্যাসেঞ্জার-গাড়ি আজকে এখনো এ-পাড়ে

ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।

মাঝে-মাঝে সিটি দিচ্ছে অবশ্য। তা দিক।

আসল কথাটা এই যে, সামনে ওই সিগন্যালের বাতি

যতক্ষণ না নিষেধের রক্তবর্ণ ছেড়ে

আবার সবুজ হচ্ছে, ঠিক ততক্ষণই

এ-গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকবে, এক-পা এগোবে না।

 

জায়গাটা তো ইতিমধ্যে মোটামুটি চেনা

হয়ে গেছে। তাই বলি যে, চলতে-চলতে আস্ত একটা ট্রেন

হঠাৎ এইখানে এসে থেমে রইল, এমন ঘটনা

একবারও দেখিনি এর আগে।

তা হলে আজকেই বা একে থেমে থাকতে বলা হলো কেন?

এর কি তবে ফুরিয়েছে দম?

 

আচমকা উত্তর পাই আমার ভাবনার। ঝমাঝম

শব্দ তুলে নদীর ও-পার থেকে দুরন্ত গতিতে

সেতুটি পেরিয়ে আসে ঝকঝকে নতুন ট্রেন, যার

সামনের ফলকে লেখা : রাজধানী এক্সপ্রেস।… ওরে বাবা,

ওর জন্য না-দাঁড়ালে কার জন্য দাঁড়াবে ছ্যাকড়া প্যাসেঞ্জার-গাড়ি?

ওর টিকিটের দাম কি বেশি নয়?

ঢের বেশি বলেই তো দেখি বাদবাকি গাড়িকে

নিজেরা দাঁড়িয়ে থেকে ওকে রাস্তা ছেড়ে দিতে হয়।