একটি মেয়ে

আফসার আমেদ

॥ ২৫ ॥

একদল সন্ন্যাসিনীর সঙ্গে সে চলেছে সমাজসেবা করতে গ্রাম-গ্রামান্তর পেরিয়ে। একইরকম শাড়ি পরেছে তারা। কণ্ঠে সুন্দর একটা গান গাইছে। পথশ্রমে ক্লান্ত হচ্ছে না। খালি পা,  িস্নগ্ধ নিসর্গ। মানবসেবার গান।
কে যেন তাকে বিরক্ত করে। তার সঙ্গে কথা বলতে চায়। গা ধরে নাড়ায়। ‘দিদি, দিদি।’
বুঝতে পারে সেঁজুতি, সে ঘুমিয়ে আছে। কে যেন তার ঘুম ভাঙাতে
চাইছে, ‘দিদি, দিদি।’ কিন্তু ঘুম ভাঙছে না তার, জেগে উঠছে না সে।
আবার ডাকল। গা নাড়া দিলো। ‘দিদি, দিদি।’
ঘুম ভাঙে সেঁজুতির। চোখ মেলে, কিন্তু ঝাপসা দেখে। ‘মৌরি নাকি?’
‘চোখ মেলো না, আরে দেখো, আমি কে?’
‘তুমি কে? আমি কোথায়?’
‘তুমি সালংয়ে আছ।’
‘আমি তো চলে এসেছি আলমকে নিয়ে।’
‘এখানেই তো আছ।’
‘কেন আমাকে আলম ফিরিয়ে নিয়ে যায়নি, আলমকে ডাকো।’
‘সে নেই, একটু বেরিয়েছে।’
‘তুমি কে?’
‘আমি তোমার বন্ধুর বউ।’
সচেতনতা ফিরে পায় সেঁজুতি। তারপর পাশ ফিরে শোয়।
আবার মেয়েটি নাড়ায়, ‘দিদি, দিদি।’
‘আহ্ বিরক্ত করছ কেন?’
কিছুক্ষণ সব চুপ। সেঁজুতি পাশ ফিরল। চোখ মেলে তাকাল। একটি ফুটফুটে কমবয়সী মেয়ে। মুখটা গোল, চোখ দুটি ছোটো ছোটো, কপাল বড়ো।
‘আমি নোরবু লেপচা, মণ্ডল স্যারের বউ।’
‘ও আচ্ছা।’
‘চুপ করে গেলে যে? কী করেছ সারারাত?’
‘কী করেছি?’
‘যা সব করেছ, তা সব তোমার মনে নেই?’
‘কিছুই মনে নেই।’ ‘শুধু মনে আছে বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিলাম, সেতুর ওপর উঠেছিলাম। কিন্তু এত সুন্দর বাংলা বলতে পারলে কী করে?’
‘ও মা, আমি তো বাংলাতেই পড়েছি। লেপচা আমার মাতৃভাষা।’
‘তুমি এত সুন্দরী?’
হাসে নোরবু। ‘তুমি তো আরো সুন্দরী।’
‘একদম বাজে বকবি না।’
‘ওর কাছে তোমার কথা অনেক শুনেছি।’
উঠে বসে সেঁজুতি, ‘কী-কী বলেছে।’
‘কত কথা!’
‘ঠিক আছে, সেসব পরে শুনব।’ নিচে নেমে আসে। মাথাটা টলে যায়। নোরবু তাকে ধরে। তারপর বাথরুমে চলে যায়।
ডাইনিংয়ে চা নিয়ে অপেক্ষায় ছিল নোরবু। বাথরুম থেকে ফিরে সোফায় বসে সে। নোরবু চা দেয়, নিজেও নেয়। ‘তুমি এলে, আমি উৎসব ছেড়ে আসতেই চেয়েছিলাম। মাও আসতে বলল। স্যার বলল, তোমরা বিশ্রাম নেবে, জার্নি করে ক্লান্ত হয়ে আছ। এসে দেখলাম আলম বেকায়দায় পড়েছে ভীষণ।’
‘বেকায়দা?’
হো হো করে হাসে নোরবু। ‘জামা খুলে হাতে নিয়ে ঘুরছে।’
‘কেন, জামা খুলে হাতে নিয়ে ঘুরবে কেন?’
‘তুমিই জানো।’
‘আমি জানব কেন?’
‘ওমা, তুমি ওর জামার সমস্ত বোতাম ছিঁড়ে দিয়েছ।’
‘কীভাবে? কখন?’
‘সারারাত আলমকে শুতে দাওনি। আলম তোমার পাশে শুতে চায়নি, তুমি আলমের পাশে শোবেই। আরো কীসব করেছ।’
‘আর কীসব করেছি?’
কিছু একটা করতে রান্নাঘরে ছুটে গেল নোরবু।
পিছু-পিছু সেঁজুতিও গেল, ‘কী করেছি?’
হো-হো করে হাসে নোরবু। ‘তুমি তাকে কামড়ে নিয়েছ?’
‘কোথায়?’
‘মুখে। বেচারি একেবারে অত্যাচারে জর্জরিত। আমরা আসতে আমাদের কাছে সব বলে কান্নাকাটি করেছে।’
‘আর?’
‘আর নাকি স্যারকে খুব গালাগালি করেছ।’
‘এসব আমার কিছু মনে নেই। তোমাকে?’
‘আমাকেও গালাগালি করেছ। কেন, তুমি কি স্যারকে বিয়ে করতে চেয়েছিলে?’ কথাটা বলে নোরবু কেমন গম্ভীর হয়ে যায়।
সেঁজুতি নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ‘ছি ছি এসব কথা বলছ কেন? ও তো আমার শুধুই বন্ধু। মাতাল হয়ে গেলে মানুষ কী না করে, কী না বলে? তার জন্য আমার ওপর রাগ করে আছ?’
‘তা কেন, আমরা অতিথিদের খুব ভালোবাসি।’
‘তাহলে তমোঘ্ন কেন বিয়ের কথা লুকলো।’
‘জানোই তো, পাগল-ছাগল মানুষ। বিয়ে নিয়ে বাড়াবাড়ি চাইল না।’
‘ওরা এখন কোথায়?’
‘বাজারে। আলম দর্জির কাছে শার্টের বোতাম লাগাবে। দেরি তো হবে।’
লজ্জা পায় সেঁজুতি, ‘কী বিচ্ছিরি কাণ্ড!’
‘যা ঘটে যায়, তাকে নিয়ে আর ভাবতে নেই।’
নোরবু টেবিলে সকালের খাবার রেডি করে। রুটি আর সবজি। আর সালাদ। নোরবু বলল, ‘কাল রাতে তুমি কিছুই খাওনি, এখন বেশি করে খাও।’
‘মাংস অনেকটা খেয়েছিলাম।’
‘গরম জল করছি, স্নান করে নেবে। খোয়ারিও কাটবে।’
খেতে খেতে আরো কথা হয়। নোরবু মিষ্টি মেয়ে।
তমোঘœ আর আলম ফেরে। তমোঘ্ন একগাদা বাজার করে এনেছে। অনেক রকম সবজি, মুরগি। আলম নাকি মুরগিটা জবাই করে রান্না করে দেবে। কিন্তু সেঁজুতি ভাবল, এখনই তো দুপুর বারোটা বেজে গেছে, ছটায় লাস্ট বাস, ফিরতে তো হবে।
তমোঘœকে বলতে বলল, ‘আজ আর ফেরা হবে না।’ নিজেদের মধ্যে কথা হলো কখন। সবাই মিলে দুপুর দুপুর বিন্দুতে ঘুরতে যাবে। আরো দু-একদিন থাকলে আরো কোথাও কোথাও ঘুরতে যাওয়া যেতে পারে। জলঢাকা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কয়েকজন বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার এখানে থাকে, তারা তো ছাড়তেই চাইবে না। তারা সব সপরিবার থাকে। গন্ধ পেয়ে এলো বলে। আজ দুজনেই স্কুলে ছুটি নিয়েছে, উৎসবের পরের দিন ছুটি নিয়েই থাকে।
আলমের চ্যাপ্টার আপাতত ক্লোজড। সে এখন মুরগি রান্নায় ব্যস্ত। তমোঘ্ন লেপচা জনজাতির পরিচয় দিতে ব্যস্ত। অভিধানটা কীরকম হবে, তার কাজ কীভাবে চলছে, তা নিয়ে কথা বলল তমোঘ্ন। তা নিয়ে তাদের একটা অফিস করেছে। সেখানে দুজন কর্মচারী কাজ করে। দেখাশোনা করে তারা দুজন। সাহিত্য আকাদেমির আর্থিক সহায়তায় প্রকল্পটি চলছে।
তারপর নোরবু শাড়ি দেখায়, সোয়েটার দেখায়, চুড়িদার দেখায়, গয়না দেখায়। মায়ের কথা বলে, বাবার কথা বলে। ছোটো মাসি তার খুব প্রিয়। কলকাতা তার খুব একটা যাওয়াই হয় না। জলপাইগুড়ি কলেজে পড়েছে। তমোঘœর সঙ্গে এখানেই আলাপ।
নোরবু তার ভাষার একটি গান গাইতে থাকে। ভাষা কিছু বোঝা যায় না। কিন্তু গানটার মধ্যে প্রাণ আছে। আসলে যে-গাইছে তার সজীবতা গানটাকে প্রেমময় করে তুলছে, তার চোখের চাহনি, অভিব্যক্তি তাতে প্রাণতা এনে দিচ্ছে। পাহাড়ি নদীর গতির মতো তার সুর আর ছন্দ। সেই ভাষা জানে বলে তমোঘ্নকে আপ্লুত করছে, তমোঘœর চোখ বুজে আসছে। ভারি সুন্দর মেয়ে নোরবু। নোরবুকে ভালোবেসে বিয়ে করে তমোঘ্ন কোনো ভুল করেনি। এখান থেকে পালাবার জন্য সেঁজুতির মন উতলা হয়ে ওঠে শুধু। কলকাতাই তার ভালো। একদিনে হাঁপিয়ে উঠছে। এখানে কীভাবে তমোঘœ বছরের পর বছর থাকছে?
বলতে বলতে বৃষ্টি নামল।
আর-একটা গান ধরল নোরবু।
রান্নাঘরে আলমের কাছে যায় সেঁজুতি। আলম রান্না করছিল, তার পিঠে হাত দেয়। ‘কী রে, আমার ওপর রাগ করেছিস?’
‘কভি নেহি।’
‘তোকে কামড়ে নিয়েছিলাম?’ হাসে সেঁজুতি।
‘হ্যাঁ।’
‘তুই তাহলে আমাকে দুঘা মারলি না কেন?’
‘খুব কষ্ট হয়েছিল, তুমি অমন করছিলে। শরাব তোমাকে এমনটা করাচ্ছিল বলে গুসসা হয়নি।’
‘জায়গাটা কেমন?’
‘ঘুমনে কে লিয়ে আচ্ছা। এবার আমাকে ছেড়ে দাও।’
‘কোথায় যাবি?’
‘আমি আমার ঘরে ফিরে যাব। ধান্দা ভি করবে?’
‘পুরনো কাম?’
‘তওবা কর দিয়া। উকাম করবে না।’
‘তুই কম্পিউটারের কোর্স করেছিস যে?’
‘আপিসের সব কাম চালাতে পারি। হায়ার সেকেন্ডারি ভি পাস।’
‘তোর গ্রিল কারখানায় কাজ করা চলবে না।’
‘তবে কি আমি সরকারি নোকরি পাব? কে দেবে?’
‘তা কেন, আরো অনেক অফিস আছে। তোকে একটা কিছু পাইয়ে দিতে হবে।’
‘ওয়াদা?’
‘চেখে দেখবে নাকি মাংসটা?’
‘পরে। দাঁড়া বাথরুমে যাই।’
নোরবুর গান চলতেই থাকে। দুটিতে এখন দাম্পত্য প্রেমে মগ্ন। করুক গে, করুক গে, এতে তার কী? বাথরুমে গিয়ে সময় কাটায় সেঁজুতি। আয়নায় নিজেকে দেখে। পৃথিবীতে যা কিছু ঘটে, সবকিছু মেনে নেওয়াই নিয়ম। কোনোকিছুই ফেলার নয়, কুড়িয়ে নিতে জানলে সম্পদ হয়ে ওঠে। গত রাতে আলমের ওপর অত্যাচার করেছে। নিরীহ অনুগতপ্রাণ সৎ ছেলেটি, কোনো কদর্যতা জানে না। তেমন হলে তো আলমই সুযোগ নিতে পারত। অথচ তাকে সেই প্ররোচণা করেছে, সে-প্ররোচণায় পা দেয়নি আলম। খুব বাঁচা বেঁচে গেছে। কী আর বাঁচা হলো। তা না করে যে খুব পবিত্র হয়ে উঠল, এমনও বিশ্বাস করে না সেঁজুতি। করলেই বা কী অপবিত্র হতো। আলম পুরুষ, সে নারী। দুজনের ইচ্ছার ঐক্য থাকলে সেখানে কোনো অপবিত্রতা থাকত না। সে শুধু আক্রমণ করেছে, আলম নিজেকে রক্ষা করে গেছে। যদি আলমকে বাধ্য করাত, তাহলে আলমের পক্ষে সেটা অসম্মানের হতো, অপবিত্র হতো।
বাথরুম থেকে বেরিয়ে আবার আলমের কাছে যায়, গায়ে হাত রাখে।
আলম পেছনে ফিরে তাকায়।
‘তোর কোনো দুঃখ হয়নি তো?’
‘কোই গম নেহি।’
‘সচ্?’
‘একদম সচ্?’
‘তুই যে আমার খুব ভালো বন্ধু রে।’
গানের কাছে আবার ফিরে এলো সেঁজুতি। অমনি বাইরে প্রবল ধারায় বৃষ্টি শুরু হলো।
বিকেল পেরিয়ে গেল, বৃষ্টি তখনো থামল না। এখন টানা বৃষ্টি দুদিন-আড়াই দিন চলে পাহাড়ে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রাস্তায় ধস নামে। বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন হয়। তখন এলাকাটা হয়ে পড়ে একক দ্বীপের মতো। তেমন ঘটবে কিনা এ নিয়ে তমোঘœ নোরবু কথা বলছিল নিজেদের মধ্যে। বিন্দু যাওয়ার প্রশ্নই নেই। বাড়িতে বসে আড্ডা দিয়ে কাটাবে।
বিকেল যখন সন্ধ্যার দিকে এগিয়েছে, তখন নিজের লেখা একটি গান গাইতে লাগল, শোনাতে লাগল সেঁজুতি।
নোরবু তাল ঠুকছে।
তমোঘ্ন অবাক হয়ে শুনছে। তমোঘ্ন বুঝি জানে না, সেঁজুতি এমন গান লিখতে পারে। তার একটা গুণের পরিচয় হয়তো তমোঘ্ন পাচ্ছে। তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে তমোঘ্ন। তাতে তার আর কী ক্ষতি হলো। জীবন তো তার মতো করে চলবে। বৃষ্টিটাও কেমন গান হয়ে উঠছে। সন্ধ্যাটাও। পাহাড়ের সন্ধ্যা আরো ভয়ংকর সুন্দর। সন্ধ্যার সঙ্গে নদী কথা বলে।
টেবিলের ওপর তমোঘ্ন গেলাসে গেলাসে পেগ সাজাল। নোরবু নিল। সেঁজুতি না করল।
আলম তো খায় না। সন্ধ্যাটা ঘনিয়ে উঠতে লাগল আরো।
গরম মাংস  এলো টেবিলে।
মাংসের লোভ এলো সেঁজুতির। হালাল মাংস, আরো উপাদেয়। তাছাড়া দেশি মুরগি। চমৎকার খেতে। এক টুকরো নিলো।
তারপর সেঁজুতির হাত নিশপিশ করে, কণ্ঠ পিপাসার্ত হয়। হাত বাড়াতে গিয়েও দ্বিধা পায়।
নোরবু গেলাস তুলে দেয় হাতে। আর হাসে।
হাসির মর্ম বুঝে সেঁজুতিও হো-হো করে হাসে।
তমোঘ্ন বলল, ‘ধীরে ধীরে খাও, কম খাও।’
‘তুমি বেশি খাওনা যেন।’
‘বেশি খেয়ে নিলে ঘুমিয়ে পড়ি শুধু, আর কিছু করি না।’
‘আর কবিতা লেখো না তুমি?’
‘লিখি। তবে লেপচা ভাষায়। তবে তোর মতো গান লিখতে পারব না।’
‘তোর গান ভালো লেগেছে তমো?’
‘বেশ বেশ। খাপছাড়ায় দিয়েছিস?’
‘দিয়েছি।’
‘পছন্দ?’
‘একদম। তোকে খুব মিস করি।’
‘জানি। তোর কথা ভুলে থাকি মনে করিস না।’
‘মনে আর রাখলি কোথায়?’
‘ধীরে খা।’
‘আমি এমনই ফাস্ট খাই।’
‘প্রজেক্টটা কেমন চলছে।’
‘ভালো।’
‘বিষয়টা কী যেন?’
‘পথশিশুদের নিয়ে। কলকাতার পথশিশু।’
‘খুবই ইন্টারেস্টিং।’
‘তুই কি লেপচা ভাষায় ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখিস?’
‘ঠিক তাই।’
‘নোরবু কলকাতা গেলে নিয়ে যাস।’
‘যাব।’
‘হ্যাঁ, নিয়ে আসিস।’
‘ও এশিয়াটিক সোসাইটিতে একটা কাজ করবে। মাস্টারস করছে ডিসটান্স কোর্সে।’
‘তুই কলকাতা গেলে কলেজে চাকরি পেতিস।’
‘আমি ওসব চাই না, বেশ আছি।’
‘এভাবে এখানে জীবন অপচয় করার মানে কী?’
‘তুই কলকাতায় কলেজে চাকরি পাবি তো?’
‘আলবাত পাব। আমাকে পেতেই হবে।’
‘তোর তাড়াতাড়ি নেশা লাগছে, আর খাস না।’
তমোঘœ বলল, ‘তুই চাইলেই পাবে।’
‘আমি পেতে চাই না।’
‘আর খাস না সাঁজবাতি।’
‘এই ঠিক সম্বোধন করলি। কতদিন পরে ডাকলি বল তো। তবে আমি আরো মদ খাব। আমাকে আরো দে।’
‘বেশ কবার আরো খাব।’ নতুন করে মদ নেয় সেঁজুতি। তারপর ডান হাত দিয়ে নোরবু পিঠে হাত বুলোয়। ‘ভারি মিষ্টি মেয়ে। আমি চলে যাব।’
নোরবু বলে, ‘কেন?’
‘সে তুমি বুঝবে না। আমার কোনো লেপচা জনজাতি নেই।’
‘না বেশি দে।’ নিজে হাতে বেশি করে ঢেলে নেয় সেঁজুতি।
আলম এগিয়ে আসছিল বাধা দিতে, সে নিরাশ হয়ে ফিরে যায়। সোফায় গিয়ে বসে। সে ম্যাগাজিন দেখে।
‘বেশি খেলে তুই ক্রাইম করিস সাঁজবাতি।’
‘ক্রাইম করব, বেশ করব।’
‘ডেথ উইশে ভুগিস।’
‘সেটা আমার ইচ্ছা।’
‘একটু তোর সঙ্গে গল্প করব, তা না’ –
‘তোর সঙ্গে আমার কোনো গল্প নেই তমো।’
‘এত মাতাল হয়ে পড়ছিস কেন?’
‘বেশ করব, মাতাল, হবো।’ তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলল, ‘বৃষ্টি কি হচ্ছে?’
নোরবু বলল, ‘হচ্ছে।’
‘ভারি ভালো মেয়ে।’ পিঠে আবার হাত বুলোয় সেঁজুতি।
তমোঘœ বলল, ‘তোকে রুটি-মাংস দিক?’
‘আমি খাব না।’
নোরবু বলল, ‘এই তো আমি দিচ্ছি দিদি।’
‘কেউ দেবে না।’
নোরবু বলল, ‘তবে কি আলম দেবে?’
সেঁজুতি বলল, ‘ওর কি শার্টের বোতামগুলো লাগানো হয়েছে।’
নোরবু বলল হয়েছে।
আলম বলল, ‘চলো দিদি তোমাকে শুইয়ে দিয়ে আসি। যা খেয়েছ, খেতে তো পারবে না কিছু।’
‘কোলে করে নিয়ে চল।’
‘হেঁটে চলো, আমি ধরছি।’
‘বেশ। ঘুমোতেই ইচ্ছে করছে বেশি।’
আলম বলল, ‘কোন বিছানায় শোবে?’
‘তোর বিছানায়।’
‘না, বউদির বিছানায় শুইয়ে দিচ্ছি।’
‘তমো কার কাছে শোবে?’
‘আমার কাছে।’
নোরবু বলল, ‘তুমি আমার কাছে শোবে। শুধু কামড়িও না।’
শুনে হাসতে লাগল সেঁজুতি। বলল, ‘কামড়াব, কামড়াব কামড়াব।’ হাসতেই লাগল সে, অনেকক্ষণ। হাসার শেষে সে একটু কাঁদলও।