একদিনের কথা

শাহজাহান হাফিজ

এক
একদিনের কথা, আমার খুব মনে পড়ে!
স্বপ্নময় সুনিবিড় ছায়াচ্ছন্ন, রাজা শশীকান্তর
বাগানবাড়ির পথটি ধরে, আমি চলেছি;
তখন দুপুর, পথটি নির্জন, পাখিদের কোনো সাড়াশব্দ নেই।
আমি সাদা ফিতের মতো, সরলরেখার মতো
সুন্দর পথটি ধরে এগিয়ে যেতেই, অল্প বাতাস,
পাতা ঝরতে লাগলো,
অজস্র পাতা!

আমি ছিলাম একাকী, আমি ছিলাম নিঃসঙ্গ।
আমার নিঃসঙ্গতার মধ্যে কেবলই পাতা ঝরতে লাগলো।
আর ঝরাপাতারা বাতাসে ভাসতে-ভাসতে, উড়তে-উড়তে,
আমার চোখে-মুখে, আমার মাথায় ও আমার শরীরে,
গড়িয়ে পড়তে লাগলো!
মনে পড়ে, আমি খুব অবাক হয়ে, আকাশের দিকে তাকালাম
না, আকাশে কোনো মেঘ নেই; এমনকি মেঘের কোনো ছায়াও নেই।
মনে পড়ে, আমি খুব অবাক হয়ে, বাতাসের দিকে তাকালাম।
না, বাতাসে কোনো ঢেউ নেই; এমনকি বাতাসে কোনো আলোড়নও নেই।
পাথরের মতো স্তব্ধ, বিপুল এই চরাচরে, বৃক্ষদের দিকে তাকিয়ে ভাবলাম,
‘তবে কি ঝরে যাবার দিন এলো পৃথিবীতে!’

দুই
সেই দিনই বিকেলে খবর এলো, তুমি নেই!
সময়-বৃক্ষের পাতাদের মতো, ঝরতে-ঝরতে, হারিয়ে গেছো তুমি!
তুমি হারিয়ে গেছো, ভাবতেই, বুকের ক্ষত থেকে
রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
তুমি হারিয়ে গেছো ভাবতেই, স্মৃতির ভুবন থেকে
স্বপ্ন ঝরে যেতে লাগলো।
যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে, অনন্তের দিকে তাকালাম।
স্মৃতিভারাক্রান্ত ও বেদনাহত, আমি জিজ্ঞেস করলাম,
‘ক্ষণস্থায়ী এ-জীবনে, এই কি ভালোবাসার পরিণাম?’
কেউ কোনোই উত্তর দিলো না। শুধুই
আমার স্বপ্নের মধ্যে, আমার দুঃখের মধ্যে, আমার অশ্রুপাতের মধ্যে,
ভালোবাসার বেদনা ঝরে পড়তে লাগলো!
আর আমি অনন্ত আকাশতলে একাকী, ভীষণ একাকী,
শোকাহত এক মানুষ
নীরবে দাঁড়িয়ে রইলাম!
দুঃখের ঝরা পাতারা, বাতাসে ভাসতে-ভাসতে, উড়তে-উড়তে,
আমার চোখে-মুখে, আমার মাথায় ও আমার শরীরে,
কেবলই গড়িয়ে পড়তে লাগলো!