এবারের বৈশাখ : ১৪১৯

হায়াৎ সাইফ

এই পুরনো জীর্ণ ও প্রায় বিধ্বস্ত ঘরেও আবার বৈশাখ ফিরে আসে,
বিবর্ণ দেরাজে টেবিলে চৌকাঠে অবশ্যম্ভাবী ক্ষয় ও খর্বুট,
সময়ের অভিক্ষেপে মানুষের নির্মমতায় প্রকৃতিও বদলে যায় বদলে যেতে থাকে,
এবার হয়তো কিছুটা বৃষ্টি ধারা ঝরে নবাঙ্কুর ইক্ষুবন যদিও চোখেই পড়ে না
তবু মনে হয় বর্ষ শেষ হয়ে আসে যদিও ঝড়ের উল্লাস নগরে তেমন নেই,
বৈশাখের বাতাবরণে আপাতত আবহমান সময়ের পুনরাবৃত্তি বন্ধ হয়েছে,
হয়তো ভালো হয়নি হয়তো পৃথিবীর উষ্ণায়ন এবং আরো কত কিছুকেই
এর দায়িত্ব দেওয়া চলে, কিন্তু তাতে প্রকৃতির তেমন কিছু এসে যায় না,

এইসব বিষয়ের এবং পুরনো বৈশাখের শবের ব্যবচ্ছেদে বিশেষজ্ঞরা
লিপ্ত হলেও প্রকৃতির যেমন কিছু এসে যায় না, তেমনি প্রকৃতির অংশ হিসেবে
আমরা ভাবতে পারি আমাদেরও কিছু এসে যায় না, অথচ আসলে
অনেক কিছুই এসে যায়, আর আমরা যারা গুটিগুটি সন্ধ্যার দিকে যাত্রা করেছি
তারা অনায়াসে ভাবতে পারি যে এই নিসর্গের এমন হীনমন্য চলাফেরা
রাত্রির অন্ধকার নামলেই আর চোখে পড়বে না, কেননা পরদিন সূর্য উঠলে
এখানে যারা থাকবে যা দেখার তারাই দেখবে অন্যতর চোখে,
কোনোভাবেই আমাদের তো আর এই কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙছে না।

এই সব ভেবে নিয়ে উটপাখির মতো বালিয়াড়িতে মুখ গোঁজা যায়,
কিন্তু তাতে পরবর্তী ভয়াবহ ঝড়ঝঞ্ঝার সম্ভাবনা উবে যাওয়ার কোনো কারণ নেই,
তাই উষ্ণায়ন হবে, কার্বন এমিশান হবে, দূষিত হবে বায়ু, দূষিত হবে জল
সরোবর দেবে তৃষ্ণায় অপরিশুদ্ধ রুগ্ণ ভ্রান্তির কালো জল,
পরবর্তী বৈশাখে তার কক্ষপথে চলতে চলতে হঠাৎ করেই কি মা ধরিত্রী
তাঁর শরীর থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারবেন
এইসব অনান্দনিক বিষয় আর এইসব ভয়াবহ সম্ভবনা?

এই এক নতুন সন্ত্রাস চোদ্দশো উনিশের বৈশাখের শুরুতে
তবুও ক্ষণস্থায়ী হলেও হে বৈশাখের অমোঘ আগমনের সময়!
বাঙালির এই সন্ত্রাসকে একটু স্বস্তির সঙ্গে ধারণ করো,
একদিনের জন্যে হলেও একটু ভবিষ্যতের সামান্য ভালো লাগার আশ্বাস দাও,
বৈশাখ বিদায় হওয়ার আগে অন্তত একটিবার স্বর্ণময় বাঙলার স্বপ্ন দেখে যাই।