কাইয়ুম চৌধুরীর স্বদেশ-সজ্ঞানতা

সুশান্ত মজুমদার

কাইয়ুম চৌধুরীর শিল্পীসত্তার বহুমুখিনতা বুঝি মাধুকরী ছিল। বিভিন্ন পুষ্প থেকে মধু সংগ্রহের মতো স্বদেশভূমির বিবিধ নির্যাস গ্রহণ করে আবার তা স্বীয় সৃষ্টির মধ্যে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন। শিল্পী নিংড়ে তুলে নিয়েছেন বাংলার চিরন্তন প্রকৃতি, বহমান নদী, উপকূলভাগের মনোহারী শোভা, সৌম্যশান্ত পরিবেশ, ভাসমান নৌকো। ঢেউ ও জলপ্রবাহের ধ্বনি ধারণ করে বাংলার প্রায় সব আকৃতির সুকুমার অঙ্গের নৌকো চোখ থেকে অন্তরে পৌঁছে দেয় সৌন্দর্য। কাইয়ুম চৌধুরীর ছবিতে অনন্তের দিগ্বলয়, নিঃসীম নীল আকাশ, বিস্তীর্ণ ক্ষেত, বৃক্ষ, শূন্যে উড়ে চলা বন্ধনমুক্ত পাখি, পাপড়িময় ফুল হয়ে ওঠে আমাদের আদিসঙ্গী। চওড়া রঙিন পাড়ের কাপড়পরিহিতা আদুল চুলের খোঁপার নারী বাংলার অতিশয় সব নরম আদুরে বধূর প্রতিমূর্তি।

জীবন ও প্রকৃতি হচ্ছে কাইয়ুম চৌধুরীর ছবির উপকরণ। তাঁর ক্যানভাসে লোকজ স্টাইল, বাস্তবতানির্ভর, আমরা যাকে রিয়ালিজম বলি। ঐতিহ্যবাহী স্বভাবগত নিসর্গ, বলা যেতে পারে সৃষ্টির মূল, গুণের চৈতন্যময় সান্নিধ্য শিল্পীর ছবি থেকে আমাদের বড় পাওয়া। রং ও রেখার কান্তি ও দ্যুতিময় সুকুমার শিল্প ধারণ করেছে দ্বিতীয় জাগতিক বাস্তব। বিরাজমান এই বাস্তবতা সময় ও ক্রমাগ্রগতির নিয়মে যখনই বদলেছে, তখনই পরিবর্তনের পক্ষে সাড়া দিয়েছেন শিল্পী। পরিবর্তিত চিন্তার অংশীদার কাইয়ুম চৌধুরী বদল করেছেন তাঁর ছবির আঙ্গিক। এখানেই শিল্পীর সচেতনতা।

শিল্পীজীবনের সূচনালগ্নে কাইয়ুম চৌধুরী ছিলেন অন্তর্মুখীন, আত্মবিষয়ে নিবিষ্ট। কিন্তু সমাজ-সজ্ঞানতায় তাঁর ঘাটতি ছিল না। বাইরের আলোড়ন, সংঘবদ্ধ মানুষের জাগরণ, সামাজিক উত্তেজনায় তাঁর শিল্পীমন সাড়া দিয়েছে। ওই সময়ে তাঁর আঁকা ছবি নিয়ে সেই কথাই বলতে হয়, এ যেন শৈবালের নিচে জলচর জীবের বিক্ষোভ। ভাষা-আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ সবই কাইয়ুম চৌধুরীর ছবির বিষয়। ক্রমশ খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন তিনি। তখন দেখা গেছে, জোটগত সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রভাগে শিল্পী উপস্থিত।

’৫২-র ভাষা-আন্দোলনের প্রভাবে গত শতাব্দীর ষাটের দশকে এই ভূখন্ডের মানুষের মধ্যে পুনর্জাগরণের উন্মেষ হয়। মধ্যযুগ থেকে আধুনিকতায় উন্নীত হওয়ার যে-রেনেসাঁস, বহু প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে বিলম্বে হলেও তার দীপ্তির সঞ্চার লক্ষ করা যায় তৎকালীন জীবনের সর্বস্তরে। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির আলোময় ক্ষেত্র তৈরির এক প্রারম্ভিক কাল। সর্বত্র তখন নতুন পদধ্বনি। শিক্ষা-আন্দোলন, বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের ছয় দফা, ’৬৯-এর তীব্র গণআন্দোলন ভেঙে দেয় মানসিক জড়তা। দুর্ভেদ্য জনতার অধিকার বিস্তার রাজনীতিতে যোগ করে সজীব উদ্বেল প্রাণশক্তি। চোখ মেলে জেগে ওঠার ইশারা আমরা টের পাই। দেখা গেল, আগের যে-কোনো সময়ের চেয়ে শিল্প-সাহিত্যে আত্মনির্ভর ভাব-ভাষা-ভঙ্গি ও সুষমার সমন্বিত রূপের অধিক অধুনাতনশীলন। চারুকলাও এর ব্যতিক্রম ছিল না। ওই সময়ে শুরু প্রাণপ্রাপ্তির চেতনালাভ। বাঙালির শেকড়ে ফেরার টান, তার স্বরূপ অন্বেষণ, নিজস্ব জগতে শিল্পের চাষবাস, বহুপল্লবিত চিন্তার শ্রেষ্ঠাংশ স্বমানসে বপন। কাইয়ুম চৌধুরী ক্যানভাসে মূর্ত করেন লোকজ মোটিফের আধুনিকায়ন। তাঁর স্বাতন্ত্র্য এখানেই, যা স্বভূমির প্রতিনিধিত্ব করলেও আধুনিকতার ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। পাশ্চাত্য শিল্পের কোনো আন্দোলন বা ইজমকে আত্মস্থ না করেও তিনি অগ্রসর সময়ের ও বৈশিষ্ট্যের শিল্পী হয়ে উঠতে পেরেছেন। এখানেই বহির্বিশ্বের শিল্পাদর্শ থেকে তিনি পৃথক। বিমূর্তের চেয়েও চিরায়ত মূর্তের সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটাতে বা জ্যামিতিক বুনোট স্থাপনে তাঁর ছবিতে দেখা যায় বাংলার সনাতন দৃশ্য।

’৪৭-এর দেশভাগের পর পশ্চাৎপদ স্তর, অনগ্রসর ধ্যান, কুসংস্কারময় শত ফাটলের দৈনন্দিনতা চারুকলা চর্চার জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্র ছিল না। অপরিণাম সন্দেহ, নিকৃষ্ট শাসন, অসার ধর্মান্ধতা ও ভ্রূকুটিময় ছিল পরিবেশ। মুক্তচিন্তার বিরোধিতা, প্রগতিবিরুদ্ধ উদ্যোগে ছিল অনুকূল রাষ্ট্রীয় পোষকতা। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে একটি কার্যকর শিল্পচর্চার প্রতিষ্ঠান স্থাপনে চরম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র কাইয়ুম চৌধুরীকে কেবল ছবি আঁকার উপকরণ জোগাড়ে কোশেশ করতে হয়নি, আঁকা ছবির প্রদর্শনী ও ক্রেতার অভাবে জীবিকার সংকটেও তখন পড়তে হয়েছে। ছবি টানানোর মতো কার্যালয়-ভবন-বসতবাড়িতে উপযুক্ত দেয়ালই ছিল না। এই দেশের শিল্প-আন্দোলনে কাইয়ুম চৌধুরী সেই শিল্পী, যিনি বইয়ের প্রচ্ছদকে ওই সময়ে পেইন্টিংসের মর্যাদায় নিয়ে যান। বইয়ের প্রচ্ছদে উদ্ভাসিত উৎকর্ষতার দৃষ্টান্ত তাঁর হাত ধরে এসেছে। দেশের স্বনামধন্য কবি-সাহিত্যিকদের বইয়ের প্রচ্ছদকে তিনি মনে করেছেন মিনি ক্যানভাস। মিনিয়েচার ছবি বলতেই বা কার্পণ্য করি কেন! ছবি-উপযোগী কাইয়ুম চৌধুরীর হাতের অক্ষরও  অঙ্কন-কুশলতায় শিল্পবিদ্যার বিষয় হয়ে উঠেছে। বইয়ের দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ এঁকে তিনি হৃদয়সংবেদী শিল্পবোদ্ধা তৈরি করেছেন, একই সঙ্গে আমাদের দিয়েছেন ছবি দেখার অন্য অবলোকন। এখানেও ছবি আঁকার মতো ছিল তাঁর অধ্যবসায়। বারোয়ারি লঘু শিল্প-ধারণার বিপরীতে অন্তত আধুনিকতাবিরোধী ওই সময়ে বড় ক্যানভাসে ছবি আঁকার নিয়মিত আয়োজনে বইয়ের প্রচ্ছদ প্রস্ত্ততির কাজ করেছে।

স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে বাংলাদেশে কাইয়ুম চৌধুরীর ছবিতে সর্বাগ্রে বিবেচিত বিষয় হয়ে আসে মুক্তিযুদ্ধ। সূক্ষ্ম মনোবিশ্লেষণ-ক্ষমতাধারী, স্বীয় শিল্প-সাধনায় সার্বক্ষণিক মশগুল এই শিল্পীর চিন্তায়, মননে মু্ক্তবুদ্ধি, ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙালিয়ানা বিশেষ করে একাত্তরের জাতির শ্রেষ্ঠকর্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ক্রিয়া করে। তাঁর কাজই ছিল মুক্তিযুদ্ধকে কতভাবে ক্যানভাসে, পোস্টারে, পত্রিকার অলংকরণে ও প্রচ্ছদে আনা যায়। একের পর এক ছবিতে তিনি এঁকেছেন মুক্তিযোদ্ধা, যোদ্ধার অস্ত্র ও জাতীয় পতাকা।

একাত্তরের জীবনপণ সংগ্রামে একটি নতুন দেশের জন্য আমাদের দিতে হয়েছে লাখো প্রাণের চরম মূল্য। প্রতি মুহূর্তে যুদ্ধদিনে আমাদের চারপাশে মৃত্যুর বিভীষিকা। অগ্নিদগ্ধ, ধ্বংসপ্রাপ্ত ভস্মাচ্ছাদিত দৃশ্যমান পারিপার্শ্বিকের বিভিন্ন অংশের আকৃতি রং-রেখায় কাইয়ুম চৌধুরীর ছবিতে হয়েছে সজীব। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের জায়মান অনিঃশেষ চেতনা, যুদ্ধোত্তর-বাংলাদেশে জাতির পিতার হত্যাকান্ড, অন্যায্য সামরিক শাসন, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, ধর্মান্ধতা, স্বৈরাচারবিরোধিতা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবির সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাইয়ুম চৌধুরীর ছবি সম্পর্কিত। মুক্তিযুদ্ধের তলদেশস্পর্শী সারাৎসার নিয়ে কাইয়ুম চৌধুরী ছবিতে ইতিহাসের দায় মিটিয়েছেন।

গাঢ় রঙে আঁকা কাইয়ুম চৌধুরীর ছবির মুক্তিযোদ্ধার মাথায় গামছা বাঁধা। বয়সে যুবক, চোখে-মুখে কাঠিন্য, লড়াকু মেজাজে সে আগুয়ান। কখনো ছবিতে মুক্তিযোদ্ধার পাশে দেখা যায় সঙ্গী বাংলার নারী, কাঁধে তাঁর ফার্স্ট এইড বক্স। কাইয়ুম চৌধুরীর মুক্তিযোদ্ধা ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-দিনমজুর ও শ্রমজীবীদের প্রতিনিধি – গ্রামবাংলারই সাধারণ জন। মাথায় গামছাবাঁধা মানে এই যোদ্ধা ট্রেনিংপ্রাপ্ত সেনাসদস্য নয়। শত্রু নিধনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সর্বসাধারণের মধ্য থেকে আসা নির্ভীকচিত্তের তরুণ, যে অবরোধ ও বন্ধন থেকে আমাদের ত্রাণ দেবে। যুদ্ধার্থী জওয়ানের মজবুত কাঠামো, খাঁড়া নাক, অনমনীয় চিবুক, শক্ত পেশি পরিষ্কার করে দেয় সে মাটিসংলগ্ন গ্রামীণ জনপদের ত্রাতা।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অধিকাংশ বীর যোদ্ধাই ছিলেন গ্রামবাংলারই সন্তান। কাইয়ুম চৌধুরী শ্রেণিসজ্ঞান শিল্পী, স্থায়ী ঢাকাবাসী হয়েও তাঁর প্রিয় মনোযোগের কেন্দ্রীয় বিষয় পল্লি ও নিসর্গ, যার ভেতর শৈশব-কৈশোরে লালিত-পালিত হয়ে যে-পরিবেষ্টন তিনি পেছনে রেখে এসেছেন। তাঁর মুক্তিযুদ্ধের ছবিতেও প্রাধান্য পেয়েছে নাড়ির টানের সেই পাড়াগাঁ। আর আছে স্বাধীনতার প্রতীক খাঁড়া লাল-সবুজ পতাকা। মুক্তিযোদ্ধা ও পতাকার সমন্বয়ে পূর্ত হয়েছে একাত্তরে জাতির মহৎকর্মের গৌরবগাঁথা।

’৭৫-এর শোকাবহ হত্যাকান্ডের পর বিবেকের দায়িত্ব থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে ক্যানভাসে স্থাপন করে একাধিক ছবি এঁকেছেন কাইয়ুম চৌধুরী। ছবিসমূহে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে উদ্ভাসিত লাল-সবুজ পটভূমি, প্রকৃতির খন্ডাংশ যে দেশের প্রতিষ্ঠাতা কালজয়ী এই রাজনীতিক। কেবল রাজনীতির কিংবা শিল্পীর ইচ্ছাপূরণের ছবি হয়ে-ওঠার সম্ভাবনা খারিজ করতে পেরেছে শিল্পের শর্ত গুণনের কারণে। নির্মাণকলার কৌশলযোগে শিল্পীর শক্তিশালী হাত প্রকৃত ছবিই আঁকতে সমর্থ হয়েছে। লোকজ আঙ্গিকের এসব ছবিতে বঙ্গবন্ধুর চারপাশে বহুমাত্রিক স্বাভাবিক প্রকৃতি বিবিধ ভাবের বিকাশ ঘটিয়েছে। শিল্পিত পরিচর্যায় বঙ্গবন্ধুবিষয়ক ছবি ধারণ করেছে বাংলাদেশের আত্মা।

কাইয়ুম চৌধুরীর ব্যবহারিক ও সৃজনশীল শিল্পকর্মের দুই ধারা প্রকৃতপক্ষে একই দেহে যেন দুই প্রাণ। তাঁর আঁকা বহুল আলোচিত ও সমাদরে গৃহীত বাউল রবীন্দ্রনাথ পোস্টার, একাধিক সংবাদপত্রের জন্য আঁকা হেডপিস, কত লোগো, আঁকা কার্ড, হেডিং, বইয়ের অলংকরণ, বিশেষ সংখ্যা পত্রিকা বা স্মরণিকায় সচিত্রকরণ, রেখা-রং-রীতি-বিষয়-কলাকৌশল ছড়িয়ে দিয়ে ব্যবহারিক শিল্পের কর্মযজ্ঞকে তিনি সমুজ্জ্বল রেখেছেন। আবার এই শিল্পীর সৃষ্টিধর্মী মৌলিক ছবিতে আমাদের বদ্বীপ ভূখন্ডের প্রকৃতি, মানুষ, জীবনযাপন, তার দ্রোহ, চরাচরের সমূহ রূপ-রস-গন্ধ-রং ও রেখায় জীবন্ত হয়েছে। ছবি আঁকার শুদ্ধতম মহত্তম কর্মের সাধনা দিয়ে শিল্পকলায় তিনি নিজস্ব এক ঘরানা নির্মাণ করেছেন। তাঁর ছবির নিচে স্বাক্ষর না থাকলেও আমরা অনায়াসে পরিষ্কার বলে দিতে পারি – এ-ছবি কাইয়ুম চৌধুরীর আঁকা। তাঁর ছবিতে রঙের সমারোহ, গাঢ় লাল-নীল-সবুজ-হলুদ রঙের চারুত্ব ও বিন্যাসে ধরা পড়েছে, বাংলার ধাতু, মৌসুমের পরিবর্তন যা আমাদের চিরকালের চিরঞ্জীব স্মৃতিসত্তার অংশ হয়ে যায়।

শিল্পী ও সৃজনশীল মানুষের নিজস্ব ধ্যানরাজ্যে যে-আলোড়ন এবং তার বহিঃপ্রকাশে অবাধ্য অস্থিরতার উত্থান, তা কেবল নিজেই সে উপলব্ধি করতে পারে। ওই সংবেদনের গভীরতা আর কারো ধরার কথা নয়। কেউ-ই স্পর্শ করতে পারে না শিল্পীর একান্ত নির্মাণের উৎকণ্ঠা। ক্রমশ ঘনীভূত  অন্তরের দুর্জ্ঞেয় বোধি হয়ে ওঠে নতুন বিষয়, দৃশ্যমান সৃষ্টির জন্য এক অসাধারণ উৎস। স্বীয় সৃষ্টি ও কলাকৌশল নিয়ে স্রষ্টা এখানে একা। সেই যে আপ্তবাক্য, নিজের উগরানো বিষ নিজেই পান করে নীলকণ্ঠ হওয়া – এমন ভাবনা পেশের কারণ বিগত কয়েক বছরে পুনরাবৃত্তির ঘেরাটোপ বা নিজের ব্যবহৃত ছক থেকে কাইয়ুম চৌধুরী বেরিয়ে যেতে চেয়েছেন। জাগ্রত এই ভাবনা এবং তা ধরার জন্য নতুন আঙ্গিক ও রঙের ব্যবহার নিয়ে নিজের ভেতর তিনি নবপ্রস্ত্ততির ইশারা টের পাচ্ছিলেন। বেঙ্গল গ্যালারিতে কাইয়ুম চৌধুরীর শেষ চিত্র-প্রদর্শনীতে রাখা ছবিগুলোর প্রতি সন্ধানী দৃষ্টি রেখে বোঝা গিয়েছিল – শিল্পী নিজের ছবি ভেঙে রং-তুলির টান এবং বিষয় উত্তরণের নতুন প্রয়াসে মনোযোগী। জীবনাভিজ্ঞতার শিখরে পৌঁছানোর উৎসারণ থেকে যে নতুন ছবি তিনি আঁকতেন, তা কাইয়ুম চৌধুরীর আকস্মিক মৃত্যুর জন্য আমাদের না-পাওয়া থেকে গেল।