গেরো

জাহিদ হায়দার

 

অনেক অনেক দিন আগে

যখন  রাত্রিরা  সূর্যালোকে ফরসা হয়ে যেত,

প্রহরগুলির নাম মানুষ তখনো রাখেনি,

বলতো না : হয়েছে সকাল।

 

দিন গাছের পাতায় আর ঊর্মিপথে ঘুরে

দিন শেষে পাতাদের সবুজে, নদীবক্ষে

কালো পাতা হয়ে শুয়ে পড়তো,

মানুষরা বলতে শেখেনি : নামছে রাত।

 

মেঘেরা পাহাড়ের মাথায় হেঁটে গেলে

কেউ বলতো না : পাহাড়কে মেঘগুলি

গেরো দিয়ে রাখবে কতক্ষণ?

মানুষ গেরো দেবার কৌশল তখনো শেখেনি।

 

গেরোর  আবিষ্কারক নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে কোথাও,

সে ছিল তার সময়ে সব চেয়ে বড় বিজ্ঞানী,

আমাদের দিয়ে গেছে তার শয়তানি।

 

মনে পড়ে, সন্ধ্যার গগনে ঢাকা মার বিষণ্ণ মুখ,

ঠিকমতো গেরোর কৌশল জানে নাই বলে,

কোনো এক অন্ধকারে চলে গেছে তার সুন্দরী,

মানে প্রিয় ছাগল। বাবার কি গালাগাল!

 

শিশিরের মতো সরলতাগুলি রৌদ্র-গেরোতে বেঁধে

আমাকে তুমি চোখ রাখতে বলো গোলাপের দিকে,

দরোজার চেয়ে তালা ও চাবির সংখ্যা কেন বেশি,

সারাদিন হিসাব রাখতে বলো।

 

আমি ঘরের মোম নিভিয়ে ভেবেছিলাম,

তোমার দুই হাতের গেরো-উৎসবে

খুলে যাবে আমাদের অন্ধকারের গেরো।

 

তোমার আমার, এমনকি একটি শিশুর আঙুল

অজস্র গেরো খুলতে খুলতে মাংস ছিঁড়ে যাচ্ছে,

শাদা হাড়ে চোখের গভীরে স্বপ্ন নামের এক

দূরতর রূপকথা তুলছে অন্ধকার পাল।

 

কোন মাটিতে ঘুরে বেড়ায় গেরোবিহীন ভুবন?