চরিত্রর দুই কেতা : প্রতিক্ষেপ আর প্রতিধ্বনি

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য

বাদল সরকারের কবি-কাহিনী বাংলার – আমার মতে, পৃথিবীর – সেরা কমেডিগুলোর একটি। নানা দিক থেকেই নাটকটি মনে রাখার মতো। রঙ্গনাট্য সংকলনের ভূমিকায় বাদল সরকার বলেছেন, এইসব কমেডি লেখার পেছনে রঙ্গ ছাড়া আর কোনো উদ্দেশ্য তাঁর ছিল না : ‘হাসির নাটকে বক্তব্য নেই, যুগ-সমস্যার আলোচনা নেই, বাণী নেই,  এসব কথা যদি মেনেও নিই, তবু হাসি বা হাসানোর মূল্য আমার কাছে কমে না।’ কিন্তু লেখক না-চাইলেও নাটকের ভেতর দিয়ে কখনো-কখনো কিছু বাণী (আজকাল যাকে বলা হয় বার্তা) বেরিয়ে আসে। সংসদীয় রাজনীতির হীনতা, অবাধ নির্বাচনের নামে যথেচ্ছ ব্যক্তিগত কুৎসা ইত্যাদি অনেক দিকই এ-নাটকে স্পষ্ট রেখায় ফুটে ওঠে।

কিন্তু এছাড়া নাটকটির অন্যান্য গুণও আছে। এর আখ্যান-রচনার বাঁধুনি অসাধারণ; ছোট-ছোট সংলাপের ভেতর দিয়ে ঘটনার পর ঘটনা হাজির করা হয়; আর, তারিফ করার মতো এর চরিত্র সৃষ্টি। প্রতিটি মুখ্য চরিত্রই অনন্য : একজনের সঙ্গে অন্যজনের কোনো মিল নেই। কথা ও কাজের মধ্যে দিয়ে এরা সবাই, কি স্ত্রী কি পুরম্নষ, দর্শকদের সামনে আলাদা-আলাদা ব্যক্তি হয়ে হাজির হয়। তাদের কাউকে মার্কামারা (টিপিক্যাল) বলা যাবে না; প্রত্যেকেই বিশিষ্ট আর একক।

এদের মধ্যে দুটি চরিত্র আছে নাটকের ইতিহাসে যাদের সমান্তরাল নমুনা পাওয়া দুষ্কর। তাদের বলা যায়, প্রতিক্ষেপ (রিবাউন্ড)-বিশারদ আর প্রতিধ্বনি-কার। যেসব বিষয়ে এই দুটি চরিত্রের কিছুই জানা নেই তেমন বিষয়েও তারা অন্যদের সঙ্গে পালস্না দিয়ে কথা চালিয়ে যায়। একজনকে কোনো প্রশ্ন করলে প্রশ্নকর্তাকেই সে-প্রশ্নটি ফিরিয়ে দেয়, যেন উত্তর দেওয়ার দায় তারই। অর্থাৎ প্রশ্নটি প্রতিক্ষিপ্ত হয়ে প্রশ্নকর্তার কাছেই ফিরে যায়। প্রশ্নের প্রতিক্ষেপ করাই এ-চরিত্রের বিশেষত্ব।

অন্যজন প্রতিক্ষেপের লাইনে যায় না, শুধু প্রতিধ্বনি করে। একবার ক-এর কাছে খ-এর কথাগুলোই সে শোনায় প্রশ্নের ভঙ্গিতে, পরেরবার খ-এর কাছে ক-এর। আর এই দুটি চরিত্র যখন মুখোমুখি, তখন তো নাটক গুলজার।

কবি কাহিনীতে কানাই দত্ত হলেন প্রতিক্ষেপ-বিশারদ। পেশায় সাংবাদিক বাকবন্দি বলে এক মফস্সল শহরে এসেছেন জনপ্রিয় সাহিত্যিক স্মরজিৎ সান্যালের পরিচয় ভাঁড়িয়ে। ওই লেখকের কোনো বই-ই তাঁর পড়া নেই। স্মরজিতের কোনো বই সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি যে বিপদে পড়বেন – এ তো জানা কথা।

কিন্তু কানাই দত্ত অতি তুখোড় লোক। শুধু ফিকিরবাজই নন, অসুবিধেয় পড়লে চট করে তার থেকে বেরিয়েও আসতে পারেন। নাটকে দুবার তাঁকে স্মরজিতের বই নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। দুবারই তিনি প্রতিক্ষেপ করে রেহাই পান।

যেমন দৃশ্য ২-এ : সনতের কাছে লিলি জানতে চায়, স্মরজিৎ সান্যালের কোনো এক উপন্যাসে বিদিশা বলে একটি চরিত্রের আত্মহত্যার আসল কারণ কী। লিলির মা সুপ্রীতি বলে ওঠেন : ‘সে-কথা লেখককে প্রশ্ন করলেই তো পারিস? উনি যখন উপস্থিত – ’।

এরপর মঞ্চ-নির্দেশ ও সংলাপ এই রকম :

[লিলি তাহাই চাইছিল]

লিলি : সাহস হয় না।

স্মরজিৎ : কেন, আমাকে দেখে কি খুব ভীতিপ্রদ বলে মনে হচ্ছে?

লিলি : না, মানে – আমি – আচ্ছা, বলুন না?

স্মরজিৎ : কী?

লিলি : বিদিশা কেন আত্মহত্যা করল?

স্মরজিৎ : কেন? আপনিই বলুন না?

লিলি : বাহ, আমি কী বলব?

স্মরজিৎ : আপনি তো পড়েছেন। পড়ে নিশ্চয়ই কিছু একটা মনে হয়েছে?

লিলি : আমি কতটুকু বুঝি?

স্মরজিৎ : যা বুঝেছেন, বলুন না?

লিলি : আমার – আমার মনে হয়, শান্তনুর চলে যাওয়া বিদিশার আত্মহত্যার আসল কারণ নয়, তাই না?

স্মরজিৎ : বলে যান!

লিলি : না, আমি বুঝি না –

স্মরজিৎ : আপনি ঠিকই বুঝেছেন। বলুন না?

লিলি : (উৎসাহ পাইয়া) আমার মনে হয় – বিদিশার মনে এক শূন্যতা জমেছিল। এ-শূন্যতা তার নারসিসাস কমপ্লেক্সের অন্তর্মুখী বেদনার ওপরে এ-যুগের নিঃসঙ্গ কামনার প্রতিক্রিয়া। তাই বিদিশা ভিতরে-ভিতরে – আমি বলতে চাইছি, শান্তনুর চলে যাওয়াটা শুধু ওর এই শূন্যতাটাকে আরো স্পষ্ট, আরও সর্বব্যাপী করে দেওয়া, আর কিছু নয়।

স্মরজিৎ : (সপ্রশংস) মিসেস মজুমদার, আপনার মেয়ের সাহিত্য-চেতনার আশ্চর্য গভীরতা।

লিলি : কী যে বলেন?

স্মরজিৎ : না না, সত্যি কথা? বহু পণ্ডিত ব্যক্তির সঙ্গে এই প্রশ্নটা নিয়ে আমার আলোচনা হয়েছে, কেউ আপনার মতো এমন দুকথায় গুছিয়ে বলতে পারেননি।

সুপ্রীতি : (গর্বে) লিলির ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যের দিকে ঝোঁক।

স্মরজিৎ : স্বাভাবিক। আপনারই তো মেয়ে! (পৃ ১৫৭-৫৮)

 

সবটাই এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল। স্মরজিৎবেশী কানাই দত্ত আদৌ জানেন না, বিদিশা কে আর শান্তনুই বা কে; এরা কোন উপন্যাসের চরিত্র সে-ই তার জানা নেই। কিন্তু প্রশ্নের প্রতিক্ষেপ করে তিনি শুধু নিস্তারই পান না, একই সঙ্গে মেয়ে ও মাকে খুশি করে দেন। দুজনের কাছেই তার প্রতিষ্ঠা আরো দৃঢ় হয়।

শুধু এখানেই নয়, বারে-বারেই এরকম ঘটে। যেমন ওই দৃশ্যেই বিদিশার মনোবিশ্লেষণের পরে :

অরবিন্দ [স্মরজিৎকে] : আপনি বুঝি কবিতাই লেখেন?

লিলি : কী বলছেন? ‘বাষ্পের তৃষ্ণা’ পড়েননি? ‘সীতা ও অ্যান্ড্রোমিডা’? ‘মেঘ-চেরা জ্বালা’?

স্মরজিৎ : আপনি আমার সবকটি দুষ্কর্মের সঙ্গে পরিচিত দেখছি। কিন্তু সবাই তা হতে যাবে কেন? (পৃ ১৫৭)

 

এখানে অবশ্য স্মরজিৎকে কিছু করতে হয়নি; লিলিই তাঁর মুশকিল আসান করেছে। কিন্তু পরে সুপ্রীতির প্রশ্নের মুখে তাঁকে বিব্রত হতে হয়।

 

সুপ্রীতি : আপনার শেষ কবিতার বই কী বেরোলো স্মরজিৎবাবু?

স্মরজিৎ : অ্যাঁ? (হাসিয়া) সে আর আমি কী বলব? আপনারা তো সব খবরই রাখেন। বিশেষ করে মিস মজুমদার।

লিলি; ‘সোনালি সিমফনি’র পর আর কিছু বেরিয়েছে বলে তো শুনিনি?

স্মরজিৎ : (সুপ্রীতিকে) দেখলেন তো? (লিলিকে) না, ওর পরে আর কিছু বেরোয়নি। (পৃ ১৫৯)

 

আরো একবার ওই প্রশ্ন-প্রতিক্ষেপের ব্যাপার ঘটে। লিলির মনে আরেকটি প্রশ্ন উঠেছিল : মীনা (স্মরজিৎ সান্যালের অন্য এক উপন্যাসের চরিত্র) কেন পাগল হলো? এখানে শুধু লিলি নয়, তার বাবা মণিভূষণ মজুমদারও হাজির। একই সঙ্গে প্রশ্নের প্রতিক্ষেপ আর প্রতিধ্বনি চলতে থাকে। ‘স্মরজিৎ’কে লিলি আবার ধরেছিল মীনার পাগল হওয়ার ব্যাপারটা তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। কানাই দত্ত বোঝাতে রাজি হয়েছিলেন। এবার লিলি তাঁকে পাকড়েছে। (দৃশ্য ৪)

 

লিলি : বাহ, আপনি যে আজ সকালে বললেন – বুঝিয়ে দেবেন।

মণি : কী বুঝিয়ে দেবেন?

লিলি : মীনা কেন পাগল হলো?

মণি : পাগল হলো?

লিলি : পাগল হয়ে গেল না মীনা?

মণি : কে মীনা?

লিলি : বাঃ! পড়োনি – সীতা ও অ্যান্ড্রোমিডা!

মণি : ও হ্যাঁ হ্যাঁ, অ্যান্ড্রোমিডা! ঠিক ঠিক, ভুলেই গিয়েছিলাম। হ্যাঁ হ্যাঁ, সীতা তো পাগলই হয়ে গেল –

লিলি : সীতা কোথায়? মীনা তো।

মণি : ও একই ক – না না হ্যাঁ হ্যাঁ মীনা মীনা, সীতা কেন পাগল হবে? সীতা তো – ওই – সীতার তো ইয়ে হলো। পাগল হলো তো মীনা। মনে পড়েছে।

লিলি : তাহলে বলুন?

মণি : হ্যাঁ হ্যাঁ, বলুন না! আমারও ওই প্রশ্নটা খুব মনে হয়েছে।

স্মরজিৎ : পাগল না হলে আর কী হতে পারত বলুন?

মণি : (লিলিকে) হ্যাঁ ঠিক কথা। পাগল না হলে আর কী হতে পারত? বল?

লিলি : ধরম্নন – পাগল যদি না-ই হতো?

মণি : (স্মরজিৎ) হ্যাঁ, ধরম্নন পাগল না হলে পাগল না হতে পারত!

স্মরজিৎ : হ্যাঁ, পাগল না হতে পারত। কিন্তু তা হলে – মূল প্রশ্নটা তো রয়েই যায়।

মণি : (লিলিকে) তবে? মূল প্রশ্নটা কী করবি? সেটা ভেবে দেখেছিস?

[লিলি মূল প্রশ্নের কোনো ব্যবস্থা করার আগেই পাঁচু প্রবেশ করল]      (পৃ ১৮৬-৮৭)

 

সাহিত্যপাগলি মেয়ে একদিকে, অন্যদিকে প্রতিক্ষেপ-বিশারদ সাংবাদিক। দুজনের মধ্যে পড়ে মণিভূষণ অকুতোভয়ে একবার মেয়ের, আর একবার কানাই দত্তের কথার প্রতিধ্বনি ও প্রতিক্ষেপ করে চলেন। প্রতিক্ষেপ করেন কানাই দত্তও – সে-ই তার বাঁচার একমাত্র উপায়। কিন্তু সেই প্রতিক্ষেপেরও যে প্রতিক্ষেপ হতে পারে, স্রেফ প্রতিধ্বনি করে – এমন পরিস্থিতি ছাড়া তা কল্পনাও করা যায় না।

এরপরেও একবার প্রতিক্ষেপ আর প্রতিধ্বনি মুখোমুখি হয়েছিল (দৃশ্য ৪) লিলি বা সুপ্রীতি সেখানে ছিলেন না। দুজনের মধ্যে কথা চলে :

 

মণি : বুঝলেন স্মরজিৎবাবু – সাহিত্যের প্রতি ছোটবেলা থেকেই আমার ঝোঁক।

স্মরজিৎ : সে তো আপনার বাড়িতে ঢুকলেই বোঝা যায়।

মণি : হ্যাঁ, বাড়িতে একটা সাহিত্যের অ্যাটমস্ফিয়র সব সময়ে রাখবার চেষ্টা করি। ওই যে ভাস্বতী – সুপ্রীতিকে বলে বলে আমি-ই বার করালাম। মেয়েটাকেও যতোটা পারি – তা কত করে বললাম – বাংলা অনার্স নে, নিল না।

স্মরজিৎ : কেন?

মণি : বলল – বাংলা নিয়ে কী হবে? ইকোনমিক্স নেব।

স্মরজিৎ : কিন্তু ওর সাহিত্যচেতনা, আমি যেটুকু দেখলাম –

মণি : হ্যাঁ, কিছুটা তো হতেই হবে। আমি আছি, সুপ্রীতি আছে, বাড়িতে একটা সাহিত্যের অ্যাটমস্ফিয়র – খানিকটা না হয়ে যাবে কোথায়?

স্মরজিৎ : সে তো বটেই।

মণি : এই যে আমি আসেমবিস্নতে যাচ্ছি, আমার প্রধান উদ্দেশ্য কি জানেন?

স্মরজিৎ : কী?

মণি : সাহিত্য।

স্মরজিৎ : সাহিত্য?

মণি : নিশ্চয়ই। সাহিত্যের প্রশ্ন অ্যাসেমবিস্নতে একদম ওঠে না। লক্ষ করেননি আপনি?

স্মরজিৎ : তা ঠিক।

মণি : কিন্তু ওঠা উচিত, উচিত নয়?

স্মরজিৎ : নিশ্চয়ই।

মণি : এইবার দেখবেন। আমি তুলব প্রশ্ন।

স্মরজিৎ : কী প্রশ্ন?

মণি : সাহিত্যের প্রশ্ন!

স্মরজিৎ : হ্যাঁ, কিন্তু সাহিত্যের কী প্রশ্ন?

মণি : অ্যাঁ? ইয়ে – সব প্রশ্ন! যত প্রশ্ন আছে! অ্যাসেমবিস্ন যদি বাংলাদেশের হয়, তবে বাংলা সাহিত্যকে বাদ দিয়ে চালায় কী করে? বলুন আপনি?

স্মরজিৎ : হ্যাঁ, ঠিক।

মণি : ভাবছি আজ সাহিত্যসভায় আমার সভাপতির ভাষণে এই পয়েন্টটার ওপর কিছু বলব। আপনি কী বলেন?

স্মরজিৎ : খুব ভালো হয় তাহলে।

মণি : আপনি একমত?

স্মরজিৎ : এতে আর দ্বিমত থাকতে পারে? বিশেষ করে কোনো সাহিত্যিকের?

মণি : (খুশি হইয়া) তা হলে ধরম্নন, আপনার ভাষণেও যদি খানিকটা – মানে সভাপতির ভাষণ যদি প্রধান অতিথির ভাষণের সঙ্গে – একসুরে বাঁধা হয়, তা হলে বেশ – ইয়ে হয় না?

 

স্মরজিৎ কোনো ঝুঁকি নেয় না, সঙ্গে-সঙ্গে রাজি হয়। মণিভূষণ খুব খুশি। সাহিত্যসভাকেও তাহলে নির্বাচনী প্রচারের কাজে লাগানো যায়। কিন্তু সমস্যা হলো : স্মরজিৎ আবার সভাপতির ভাষণটি কীরকম হবে তা জানতে চান। সে-ভাষণ তো আসলে লিখবে সনৎ।

এই অবধি বেশ চলছিল। এমন সময় এলো এক ফোন। মিসেস গুপ্ত জানাচ্ছেন : আসল স্মরজিৎ সান্যাল বাঘবন্দিতে যেতে পারবেন না। সে-কথা শুনে নকল স্মরজিতের অবস্থা সঙ্গিন। এরপর শুরম্ন হয় এক ত্রিকোণ আলাপ : টেলিফোনের ওপারে মিসেস গুপ্ত, এপারে মণিভূষণ আর কানাই দত্ত। মণিভূষণের সংলাপ থেকেই মিসেস গুপ্তের কথাগুলো বুঝে নেওয়া যায়। শুরম্ন হয় একই সঙ্গে প্রতিক্ষেপ আর প্রতিধ্বনির খেলা।

 

স্মরজিৎ : খুবই ভালো হয়। আপনার ভাষণটা তাহলে কীরকম হবে আমায় বলুন একটু?

মণি : আমার ভাষণটা সনৎ – মানে, ইয়ে আমার ভাষণটা এখনো খুব ভালো করে ভেবে দেখা হয়নি। সময় পেলাম না তো একেবারে? তবে এই ঘণ্টাখানেক পরে আপনাকে একটা ডেফিনিট আইডিয়া দিতে পারব।

স্মরজিৎ : বেশ তো বেশ তো। অমনি আমার লাইনটাও যদি একটু কষ্ট করে ছকে দেন – কিন্তু আপনার কি সময় হবে?

মণি : বিলক্ষণ! সাহিত্যের জন্যে সময় হবে না, আর হবে ওই ইলেকশনের জন্যে?

স্মরজিৎ : বেশি খাটতে হবে না। আউটলাইনটা শুধু যদি –

মণি : অবশ্য অবশ্য। আউটলাইন কেন, আপনি যদি রাজি থাকেন। সবটাই না হয় –

স্মরজিৎ : রাজি? আমি তো বেঁচে যাই। বক্তৃতা আমার একেবারে আসে না।

[টেলিফোন বাজল। মণিভূষণ উঠে ধরলেন।]

 

এতে শুধু নাটকের মজাটাই বাড়ে না, দুটি চরিত্রই আরো মজাদার হয়ে ওঠে। ঘটনা বেশ মোলায়েমভাবে এগোচ্ছিল, তারই মধ্যে মিসেস গুপ্তর ফোনে নতুন এক সংকট দেখা দেয়। কানাই দত্তের তাৎক্ষণিক সংকট মোচনের ক্ষমতা (এককথায় একেই বলে : প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব) আর মণিভূষণের প্রতিধ্বনি করার অভ্যেস – দু-এ মিলিয়ে তখনকার মতো সেই ঝামেলা মেটে। আর সেই মুহূর্তেই লিলি এসে পড়ে, ব্যাপারটা চাপা পড়ে যায়। কিন্তু তার আগের কয়েক মিনিট কানাই দত্ত আর মণিভূষণের আলাপ নাটকে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। প্রতিক্ষেপ আর প্রতিধ্বনির এমন যুগলবন্দি নাট্যসাহিত্যে অপূর্ব, হয়তো বা অ-পূর্ব।

 

প্রথাগত অর্থে কবিকাহিনীতে কোনো নায়ক-নায়িকা নেই। কিন্তু মুখ্যচরিত্র  (প্রোটাগনিস্ট) বলতে নিশ্চয়ই কানাই দত্ত। তার পরেই দ্বিতীয় মুখ্যচরিত্র অবশ্যই মণিভূষণ। এই দুটি চরিত্রের দুটি আলাদা বিশেষত্ব – প্রতিক্ষেপ আর প্রতিধ্বনি – ব্যবহারে বাদল সরকার অসামান্য মুন্শিয়ানা দেখিয়েছেন। বিশেষ করে নজর করতে হয় নাট্যকারের মাত্রাবোধ। পরিমিত সংখ্যায় এই দুটি বিশেষত্ব কাজে লাগিয়ে বাদল সরকার হবু নাট্যকারদের কাছে একটি আদর্শ (মডেল) হাজির করেছেন। এ দুটি বিশেষত্ব না-থাকলেও চরিত্র দুটি কৌতুকের পাত্র হতো, কিন্তু এমন অবিস্মরণীয় হতো না।