চড়াইভাতি

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

শীতকালে দু-দুটো দিন ছুটি পাওয়া যায়।
পঁচিশে ডিসেম্বরের বড়দিন আর
পয়লা জানুয়ারি।
তারই মধ্যে ওরা একদিন দল বেঁধে
এই অজ পাড়াগাঁয়ে
পিকনিক করতে এসেছিল।
ওরা মানে মাইল পঁচিশেক দূরবর্তী এক শহরের
এক দঙ্গল ছেলেমেয়ে।

যে মিনিবাসে ওরা এসেছিল, তা থেকে
সেদ্ধ ডিম, কলা, পাউরুটি,
সবজি ও মাছ-মাংসে ভর্তি গোটাকয় প্ল্যাস্টিকের
থলিও নামে
আর নামে খান দশ-বারো ইট।

ইট দিয়ে ছেলেরা চটপট কাজ-চালানো একটা
উনুন বানিয়ে ফেলে। তাতে
আগুন জ্বালিয়ে
জলভরা কেটলি বসিয়ে সকলের হাতে-হাতে
থার্মোকলের প্লেটে করে
দু সøাইস পাউরুটি, ডিম আর কলা ধরিয়ে দেয়।

কেটলির জল ফুটলে তার মধ্যে
গুঁড়ো চা, দুধ আর চিনি ঢেলে
প্ল্যাস্টিকের কাপে করে চা’ও দেয় সবাইকে।

চা খেয়ে মেয়েরা বলে, ‘আমরা তা হলে
চারপাশটা ঘুরে দেখি। আর
তোমরা ততক্ষণে মাংসের খিচুড়ি বানিয়ে মাছ ক’টাকেও
আচ্ছা করে ভেজে রাখো।’
বলে আর ওরা দাঁড়ায় না। ভুলভাল সুরে
‘শীতের হাওয়ায় লাগল নাচন আমলকীর ওই
ডালে ডালে’ গাইতে গাইতে
পাশের হলুদ সর্ষেখেতের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়।

তা যে মিনিবাসে চড়ে ওরা পিকনিক করতে এসেছিল,
আধপোড়া খিচুড়ি আর আধসেদ্ধ
মাছভাজা খেয়ে, সন্ধে লাগার খানিক আগে
সেই মিনিবাসে চড়েই ওরা আবার
শহরে ফিরে গেছে।
পড়ে আছে শুধু ইট দিয়ে গড়া একটা উনুন,
যা থেকে এখনো অল্প-অল্প ধোঁয়া বেরোচ্ছে, আর
থার্মোকলের থালায়-থালায়
গাদাগুচ্ছের উচ্ছিষ্ট।

সেখানে এখন ঘেয়ো কুকুরদের চড়াইভাতি চলছে।
খানিক বাদে গুটিকয়
শেয়ালও এসে পঙ্ক্তিভোজনে বসে যাবে।