জেল রোডের প্রেমগীতি

আহমেদ মুনির

কাল রাতে নিজেরই শরীর ছেড়ে

হেঁটে গেছি আমি জেল রোড ধরে

মনে পড়ে আমানত শাহ, বদরপাতি;

সরু গলি বেয়ে বয়ে গেছি

রিকশায় চড়ে উড়ে গেছি

নাকি আনমনে একা হেঁটেছি কেবলি;

ভুলে গেছি স্বপ্নদৃশ্য, তবু মনে আছে

সুগন্ধি দোকান, সারি সারি আতরের শিশি

সাইনবোর্ডের নির্ঘুম অক্ষর

এখানে আতর মেলে খাঁটি একনম্বর।

কাল রাতে অচেনা আন্দরকিল্লা

আমাকে প্রবল যুদ্ধের ভেতর

ফেলে দিয়ে গেছে

এই তো দুর্গ প্রাকার, ভেতরে বাইরে

রক্তপাত, খুনোখুনি

কে তুমি মোগল, নাকি আরাকানি?

আজো প্রশ্ন ভাসে রাতের বাতাসে

আমি কারো কখনো ছিলাম নাকি!

অচেনা সৈনিক তবু বলে

যুদ্ধ করে জিতে নাও

যেরকম জিতে নেয় লোকে

রক্তে ও শপথে,

তোমার অধিকার নেই এই পথে।

এই পথে তবু কাল রাতে হেঁটে গেছি

চুমকি জরির দেশে

প্রেম মরে গেছে যেসব লোকের

অথবা কখনো দ্বিধা থেকে হয়নি উদয়

 

বদরপাতির মাজারে

শুয়ে আছে তাদের হৃদয়।

কাল রাতে মানতের গাঁদা ফুল

মাড়িয়ে মাড়িয়ে হেঁটে গেছি জেল রোড ধরে

এই গাঁদা ফুলগাছ থেকে

ছিঁড়েছিল কবে কোন প্রেমিক পুরুষ

কানে আতরের তুলা গোঁজা ছিল নাকি?

বিবাহ হয়নি তার নক্ষত্রের দোষে?

শোলার দোকানে বিবাহের টোপরের পাশে

তার বিবাহবার্ষিকী তাই

সমাধিফলক হয়ে ঝোলে!

অন্ধ ট্রাকের ওপর এলাচের বস্তা

ঘুমন্ত হেলপার তার পাশে

এলাচের দানা হয়ে পড়ে আছে।

অধিকার নেই, তবু তার ঘুমের ভেতর

হেঁটে গেছি এলাচের গন্ধ হয়ে।

পাশে জেলখানার সুউচ্চ প্রাচীর

কোনো কয়েদি রয়েছে জেগে এত রাতে?

কত তার সেলের নম্বর

তারও বুকে আছে প্রেমের আতর, মেশকাঅম্বর!

আগরবাতির বন্ধ দোকানগুলোকে

পুরনো বন্ধুর মতো মনে হয়

সেখানে দাঁড়িয়ে হে মরণ

তোমাকেই বোন বলে ডাকি

জীবনের সব ঘুম হয়নি ঘুমানো!

শেষকৃত্যে কিছু আগরবাতি

আমিও উপহার পাব নাকি!