জ্যোৎস্না ও জোনাকির গল্প

জরিনা আখতার

তবে এখানেই থাকো তোমরা –

এই নিশিপুর গ্রাম তোমাদের অভয়াশ্রম,

এখানে এভাবে না এলে তো তোমাদের সঙ্গে দেখাই হতো না!

জোড়াদিঘির প্রান্ত ছুঁয়ে বনে-বাদাড়েই খেলা করো তোমরা অবাধ স্বাধীনতায়,

নিশিপুর মানে মুক্তি – প্রকৃতির সাথে জীবনের নিবিড় সখ্য কয়েকটি দিন;

দুপুরের প্রখর রোদে জোড়া দিঘিতে জলক্রীড়ায় মেতেছে কয়েকটি বালক

মেঠোপথে মানুষের আসা-যাওয়া

নীরবতায় বাদ সাধে না কোনো পশুপাখিও

নিশিপুর জানে না শব্দ-দূষণ কাকে বলে!

গোধূলি অতিক্রান্ত হলে নিঃশব্দে নিথর নিশিপুর গ্রাম আঁধারের

কালো চাদর গায়ে লুকোতে না লুকোতেই আলোকিত হলো চারদিক –

আকাশে পূর্ণ চাঁদ

অবিশ্রান্ত জ্যোৎস্না ঝরে পড়ছে গাছের পাতায়, জোড়াদিঘির জলে,

পথের ধুলোয়, মাঠের সবুজে –

যেন রুপালি পোশাকের পরিরা আকাশ থেকে নেমে এলো নিশিপুরের মাটিতে,

কেউ নামলো জোড়াদিঘির জলে

কেউ মেঠো পথ ধরে অদৃশ্য হলো কোথাও!

কেউ ঘাসের নরম শয্যায় মেলে দিলো মোহময় কোমল শরীর,

কেউ কেউ অকারণে ঘুরে বেড়ালো সারা নিশিপুর গ্রাম সারারাত –

শুক্লপক্ষের এই অবিস্মরণীয় ভুবন স্মৃতির কোরাস শোনাবে

দিনের কোলাহল থেমে যাওয়া নগরীর গভীর নিশিথে।

একদিন পূর্ণ চাঁদ ক্ষয়ে ক্ষয়ে লুকালো আকাশে গভীরে

আঁধারের সমুদ্রে ডুবে যাওয়া

নিশিপুরের রাতে আর দৃশ্যমান হলো না

কোনো কিছু –

কালোর সংজ্ঞা তবে নিশিপুর গ্রাম

কালো মেয়ের কালো রূপের মতো!

জোড়াদিঘি, ঘন বন, মেঠো পথ সব কিছু মুছে গেল চোখ থেকে –

এক সময় দেখা দিলো জোনাকিরা

স্নিগ্ধ আলোর পোশাক পরা জোনাকিরা কেউ দলবেঁধে, কেউ দলছুট,

কেউ জোড়ায়-জোড়ায় ঘুরে বেড়ালো সারারাত;

মাটির মর্তে যেন নেমে এলো আকাশের নক্ষত্র-মিছিল –

কৃষ্ণপক্ষের এই অপরূপ রাত স্মৃতির মশাল হয়ে জ্বলবে

মনের মেঘাচ্ছন্ন আকাশে।