ঠাকুরমার ঝুলি : পুনর্পাঠের ইঙ্গিতে

শহীদ ইকবাল

ঠাকুরমার ঝুলি (১৯০৭) বাঙালির সাহিত্য, শাশ্বত বাংলার রচনা। লেখক দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার (১৮৭৭-১৯৫৬)। সকলের পাঠ্য। কেননা মাটি ও মানুষের ঐতিহ্যিক চেতন মনকে তিনি এতে পরিস্ফুট করেছেন। এগুলো এত নিপুণ – যেখানে দক্ষিণারঞ্জন মিত্র যেন ‘রসের রাজা’ হয়ে বসে আছেন। তাঁর আগ্রহ, ধৈর্য, পরিবেশনরীতি, দায়িত্বশীলতা সবকিছু নতুনভাবে গড়ে উঠেছে আর ঠাকুরমার ঝুলি তাতে হয়ে উঠেছে আমাদের চিরায়ত – চিরকালীন সম্পদ। প্রাসঙ্গিকভাবে রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করে বলা যায় : ‘দক্ষিণাবাবুকে ধন্য! তিনি ঠাকুরমা’র মুখের কথাকে ছাপার অক্ষরে তুলিয়া পুঁতিয়াছেন তবু তাহার পাতাগুলি প্রায় তেমনি সবুজ, তেমনি তাজাই রহিয়াছে; রূপকথার সেই বিশেষ ভাষা, বিশেষ রীতি, তাহার সেই প্রাচীন সরলতাটুকু তিনি যে এতটা দূর রক্ষা করিতে পারিয়াছেন, ইহাতে তাঁহার সূক্ষ্ম রসবোধ ও স্বাভাবিক কলানৈপুণ্য প্রকাশ পাইয়াছে।’ এটি নির্মোহ সত্য কথা।

পূর্বের অনেক সমালোচক এমনটাও বলেছেন যে, রবীন্দ্রনাথ ‘স্বীয় প্রতিভা’য় এমন কাজ করতে সমর্থ হননি। তাই রবীন্দ্রনাথ সংগ্রাহক দক্ষিণারঞ্জনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। স্বীকার করতে দ্বিধাও করেননি যে, ‘আমি হইলে ত এ কাজে সাহসই করিতাম না। … বিলাতী কলমের যাদুতে রূপকথার কথাটুকু থাকিলেও সেই রূপটি ঠিক থাকে না।’ এই রকমের অর্থে, ঠাকুরমার ঝুলির মর্মার্থ অনুধাবন করা সমীচীন। বাংলার পলস্নীর মাটি থেকে এর রস আহৃত হয়েছে। কিন্তু এখন তো সেই পলস্নী নেই! সে-মূল্যবোধও হারিয়ে গেছে। নগর ও নাগরিকতার সূত্রে পারস্পরিক যোগাযোগ, সম্পৃক্ততা কমে গেছে। মূল্যবোধের চর্চা এখন অনেকটাই অগভীর, নৈতিকতা স্থূল – শৈথিল্যপ্রবণ। স্মর্তব্য, ঠাকুরমার ঝুলি প্রকাশেরও একটা বাস্তবতা আছে। সে-অর্থে সময়টাও গুরুত্বপূর্ণ। ১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গ সকলকে যেন জাগিয়ে দিয়েছিল। এক সুরে তান তুলে দিয়েছিল। উনিশ শতকের পরে আমাদের জাতীয়তাবাদী চেতনাদর্শও এ-সমাজে প্রভূত হয়ে ওঠে। ধারাবাহিকভাবে তার একটা কলরোলও যুক্ত হয়। তখনই এর প্রকাশ। কিন্তু প্রকাশের পূর্বাপর কী? মনে রাখা বাঞ্ছনীয় যে, ঠাকুরমার ঝুলি সংগ্রহ কিংবা প্রকাশ করাটা আর অন্যসব সাহিত্যের মতো নয়। আমরা জানি, ‘লোককথা বা কথকতার ধারাবাহিক চর্চা পৃথিবীর অনেক ভাষায় এপিক বা মহাকাব্যের জন্ম দিয়েছে। এবং এই কথকতার বিস্তার ও সামষ্টিকীকরণের মাধ্যমে ভাষিক জাতীয়তাবোধেরও উদ্ভব হয়েছে। লোকজীবনের রোম্যান্সলোকের বিচিত্র ভাণ্ডার অবলম্বন করেই অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জন্ম নেয় রোম্যান্টিক ন্যাশনালিজম। ঐতিহ্য সন্ধানের সূত্রে লোককথার গভীর তলে একেকটা জাতি পেয়ে যায় তাদের আত্ম-আবিষ্কারের ভূমিতল’ (রফিকউলস্নাহ খান)। এই আত্ম-আবিষ্কারের উপলক্ষটিতে এর গুরুত্ব। সেটি সুনিপুণভাবে করেছেন দক্ষিণারঞ্জন মিত্র। কোনো পথচলতি কৃত্রিম কিছু আরোপ করেননি তিনি। মনের মাধুরীও মেশাননি। নিজের মনে কিছু করার ক্ষমতা থাকলেও তার প্রয়োগ ঘটাননি। দরদভরা মনটাকে ‘ঠাকুরমা’র কাছে – স্বনিয়মের কোটায় বেঁধে রেখেছেন। লাগামছাড়া করেননি। কী সংযম ছিল তার! বুঝতে পারেন এবং সে-ভার কার্যকর করেন, নিয়ন্ত্রিত হন, দায়বদ্ধতায় মূলে সমাচ্ছন্ন থাকেন – প্রণম্য দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার। এ-প্রসঙ্গে দক্ষিণারঞ্জনের শিল্পীমনের ক্রমবৃদ্ধির পরিচয়টি জেনে নেওয়া যেতে পারে :

জমিদারী দেখতে গিয়ে দক্ষিণারঞ্জনের সঙ্গী হলো ভ্রমণ – গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। কখন মাঠ পেরিয়ে দূরের গঞ্জে, কখন ডিঙি-নৌকোয় নদীনালা এড়িয়ে। মাঠে শুনতে পান দূরদেশী কোনো রাখালের ছেলের ওষ্ঠস্ফুরিত বংশীধ্বনি, নৌকোয় বসে শোনেন রসিক মাঝির ভাটিয়ালি গান। ধানের শীষ থেকে মন চলে যায় পাখির শীষে – গগন পানে গানের তালে। জলে ভেসে আসা একখানা গান দক্ষিণারঞ্জনের জীবনের দিশারী হয়ে গেল। এই মনের মানুষকেই তো তিনি খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন। ‘কথা’-সাহিত্যের রসে তার মন মজে গেল। খুঁজে বের করলেন সেই পানসির গায়কদের।… বের করে আনলেন হৃদয়রসে জারিত সেই অপরূপ লোককথা। একটা সমগ্রতার স্বাদ গন্ধ নিয়ে ধরা পড়ে গেল জহুরীর কাছে। কবি ও নিষ্ঠাবান প্রাবন্ধিক দক্ষিণারঞ্জন বাংলা সাহিত্যের অবহেলিত ‘কথা’-সাহিত্যের দিকে চিত্তকে নির্দিষ্ট করলেন। ফ্যান্টাসির সঙ্গে মিলিত হল তাঁর ইমাজিনেশন। ‘কথা’-সাহিত্যে কাব্যচর্চা আবশ্যিক, কবিকল্পনা তাতে প্রাণসঞ্চার করে। উপরন্তু তাঁর বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে তিনি পাঠভিন্নতা, আখ্যান বিচিত্রা বিশেস্নষণ করে মূল কথাটিকে আবিষ্কার করতে থাকলেন।

দক্ষিণারঞ্জনের এ-কাজ আমাদের স্বপরিচয়, আত্মানুসন্ধানজ্ঞাপক। লোককথা, রূপকথা, উপকথা, পুরাণ, ইতিহাস এক-একটি জীবনের বাস্তব-সংবেদ। বিভিন্ন উপাদান ও মোটিফের মধ্য দিয়ে আমাদের ঐক্য, যূথরূপ, সামষ্টিক এষণা এতে পথ করে নেয়, পুনরুদ্ধারও পায়।

 

দুই

দুধের সাগর, রূপ-তরাসী, চ্যাং-ব্যাং, আম-সন্দেশ নিয়ে ঠাকুরমার ঝুলি। প্রধানত রূপকথা ও উপকথা এবং উপকথার পর্যায়ভুক্ত এসব রচনা। দুধের সাগররূপ-তরাসী পর্বের দশটি গল্প রূপকথামূলক। ‘কলাবতী রাজকন্যা’, ‘ঘুমন্তপুরী’, ‘কাঁকন-মালা’, ‘কাঞ্চন-মালা’, ‘সাতভাই চম্পা’, ‘শীত-বসন্ত’ এবং ‘কিরণ-মালা’ সজ্জিত ঠাকুরমার ঝুলিরূপ-তরাসী পর্বে আছে, ‘নীলকলম ও লালকলম’, ‘ডালিমকুমার’, ‘পাতাল-কন্যা’, ‘মণি-মালা’, ‘সোনার কাঠি, রূপার কাঠি’। প্রসঙ্গত বলা যায়, ইংরেজি ‘Fairy tales’ আর ‘রূপকথা’ এক নয়। ‘Fairy’ বা ‘পরী’ ঠাকুরমার ঝুলিতে নেই। ‘বাংলা রূপকথার গল্পকে হতে হবে এমন যাতে পরিদের ভূমিকা প্রধান হবে না, গল্পগুলো কোনো দেবদেবীর মাহাত্ম্য প্রচারের বাহন হবে না, ইতিহাসের কোনো চরিত্র নায়ক হয়ে উঠবে না। গল্পে ভূতপ্রেত বা পশুপক্ষীর উপস্থিতি থাকলেও তারা গল্পের নিয়ন্তা হবে না। রূপকথার গল্পে যেসব পশুপাখি থাকবে তারা হবে অপ্রাকৃত – যেমন রাক্ষস-রাক্ষসী, পঙ্খিরাজ, বেঙ্গমা-বেঙ্গমি, খোক্কস, শুকসারী ইত্যাদি। সবকিছুর ওপরে সেসব গল্পে প্রধানত মানুষের প্রাধান্য থাকবে। তবে সে-মানুষের বাস্তব পরিচয় থাকবে না। গল্পগুলোতে যেসব দেশের উলেস্নখ থাকবে সে-সম্বন্ধে পাঠকের কৌতূহল জাগবে না। নর-নারীর ভালোবাসা এবং নিয়তি বা অদৃষ্ট হবে ওইসব গল্পের প্রধান উপজীব্য। সব গল্পকে অবশ্যই মিলনাত্মক হতে হবে এবং এতে শেষ পর্যন্ত সত্যেরও জয় হবে। এসব গল্পে দুষ্টের পরাজয় ঘটবে। প্রাচীন লোকবিশ্বাস বা ঐন্দ্রজালিক ক্রিয়া ওতপ্রোতভাবে তাতে জড়িয়ে থাকবে। কিন্তু সরাসরি কোনো নীতি বা উপদেশ প্রদানের মধ্য দিয়ে তা শেষ হবে না। রূপকথার গল্পে কোনো কৌতুকরস থাকবে না। ভাষা হবে কাব্যধর্মী। সরল, গ্রামীণ, স্নিগ্ধ ও অনুভূতিময় গদ্যে গল্পের ঘটনাবলি বর্ণিত হবে। রূপকথার স্বরূপে এসব কথার আরো গাঠনিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় ভস্নাদিমির ইয়াকোভেস্নভিচ প্রপ (১৮৯৫-১৯৭০) রচিত Morphology of the Folklore (১৯২৮) গ্রন্থে। তাতে ৩১টি সূত্র সন্নিবদ্ধ করেছেন ভস্নাদিমির প্রপ। প্রথমে গল্পে নায়কের অনুপ্রবেশ, অতঃপর নির্দিষ্ট স্থানে গমন এবং খলনায়কের আবির্ভাব। খলনায়ক অসৎ উদ্দেশ্যে নায়ককে সব দুর্গম অভিযানে উদ্বুদ্ধ করবে এবং তা সম্পন্ন হলে নায়িকার জীবনে তার প্রভাব পড়বে, বিরহ প্রলম্বিত হবে। একসময় হয়তো সে মুক্তিও পাবে কিন্তু তখন সে চরম প্রতিশোধপ্রবণ হবে। নানা ইন্দ্রজাল এসে তখন তাকে বাধার সম্মুখীন করতে পারে বা বাধার মুখে পড়বে। তখন অলৌকিকভাবে বা কারো সহায়তায় সে এমন অবরুদ্ধ দশা থেকে মুক্তি পেতে পারে এবং তার শক্তিমত্তার প্রকাশ বাড়বে, পরবর্তী সময়ে সে ভিলেনকেও পরাস্ত করতে পারবে। আবার নায়ক কলংকিত হয়েও পরাজয়বরণ করতে পারে। এমন ঘটনাগুলো প্রধানত সম্মুখযুদ্ধের মাধ্যমে ঘটবে এবং ক্রমশ তার ভুল কলাকৌশলগুলো ধরা পড়বে। তাতে কিছুটা সংশোধনও ঘটতে পারে। এক পর্যায়ে তার সব সঙ্গীর মুক্তি ঘটবে এবং নায়কের গৃহে প্রত্যাবর্তন সম্পন্ন হবে। এ-প্রক্রিয়ায় হত্যা, আত্মরক্ষা, ছদ্মবেশ ধারণ বা রহস্যভেদের মতো লৌকিক বা অলৌকিক ঘটনা কিছু ঘটতে পারে। এতে করে নায়ককে অনেকেই চিনে ফেলবেন। এবং তার নায়কোচিত গুণ (protagonist) পাঠককে অভিভূত করবে। বিপরীতে খলনায়কও তার সত্তায় চিহ্নিত হবে। নায়ক বিচিত্র সৌন্দর্যে নিজেকে প্রদর্শিত করবে এবং খলনায়ককে (villen) কঠিন শাসিত্মতে অবসিত করবে। তখন নায়ক নায়িকাকে বিয়ে করে ঘরে ফেরার আয়োজন সম্পন্ন করবে। অবশ্য এতে তার পদোন্নতি ও সৌকর্যও বাড়বে এবং তিনি  সিংহাসনও পুনরুদ্ধার করবেন বা ফিরে পাবেন। এই তো ‘রূপতত্ত’ব। এমন ধারাক্রমে ঠাকুরমার ঝুলির বৈশিষ্ট্য পরিমাপ্য। এবং পৃথিবীব্যাপী প্রায় সব রূপকথার একই রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য প্রামাণিক জ্ঞান করেছেন দার্শনিক-তাত্ত্বিক ভস্নাদিমির প্রপ। আমাদের চিহ্নিত ও নির্ধারিত স্মারকও সেটি। বস্ত্তত, এমন বিশেস্নষণেই পাওয়া যায় প্রপ-কথিত একালের বৈজ্ঞানিক আখ্যা। আমরা বক্ষ্যমাণ আলোচনায় ঠাকুরমার ঝুলির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এবং ঠিক ওই প্রস্তাবনায় এর রূপতাত্ত্বিক নিরীক্ষাটুকু বিবেচনায় আনতে পারি।

 

তিন

প্রথমেই ঠাকুরমার ঝুলি থেকে কয়েকটি উদ্ধৃতি :

ক.

রাজ-সিংহাসন ফেলিয়া শীত উঠিয়া দেখেন, – মা! বসন্ত উঠিয়া দেখেন, – মা! সুয়োরানীর ছেলেরা দেখেন, – এই তাঁহাদের দুয়ো-মা! সকলে পড়িতে পড়িতে ছুটিয়া আসিলেন।…

সুয়ো-মা মরিয়া গিয়াছে, সুয়ো-মা আর রাজ্য এক হইল, পুরী আলো করিয়া রাজকন্যার গলায় গজমোতি ঝল্মল্ করিয়া জ্বলিতে লাগিল। দুঃখিনী দুয়োরানীর দুঃখ ঘুচিল। রাজা, দুয়োরানী, শীত, বসন্ত, সুয়োরানীর ছেলে, রূপবতী রাজকন্যা – সকলে সুখে দিন কাটাইতে লাগিলেন।

খ.

সোনার পাখি চুপি চুপি বলিল, – ‘অরুণ বরুণ কিরণ! নদীর ও-পারে যে কুঁড়ে, সেই কুঁড়েতে তোমাদের মা থাকেন, বড় দুঃখে মর-মর হইয়া তোমাদের মায়ের দিন যায়; গিয়া তাহাকে নিয়া আইস্!’

তিন ভাই-বোন অবাক হইয়া চোখের জলে গলিয়া মাকে নিয়া আসিল। দুঃখিনী মা ভাবিল, – ‘আহা স্বর্গে আসিয়া বাছাদের পাইলাম।’

তাহার পর আর এক দিন, রাজ্যের কতকগুলো জলস্নাদ হৈ হৈ করিয়া গিয়া ঘেসেড়ার বাড়ী, সূপকারের বাড়ী জ্বালাইয়া দিয়া, রানীর পোড়ারমুখী দুই বোনকে হেঁটে কাঁটা দিয়া পুঁতিয়া ফেলিয়া চলিয়া আসিল।

তাহার পর রাজা, রানী, অরুণ, বরুণ, কিরণমালা, নাতি-নাত্কুড় লইয়া কোটী-কোটীশ্বর হইয়া যুগ যুগ সুখে রাজত্ব করিতে লাগিলেন।

গ.

পুরী থর্ থর্ কাঁপে! হাতের তরোয়াল ঝন্ ঝন্ – রাজপুত্র হাঁকিলেন – ‘জানি না, – যে হও তুমি, রক্ষ রক্ষ দানব! – যদি রাজপুত্র হই, যদি নিষ্পাপ শরীর হয়, দৃষ্টির আড়ালে তরোয়াল ঘুরাইলাম, এই তরোয়াল তোমাকে ছাঁইবে!’

বলা আর কহা, – সূতাশঙ্খ বত্রিশ ফণা ছড়াইয়া বিষদাঁতে আগুন ছুটাইয়া লকলক করিয়া উঠিয়াছে, – রাজপুত্রের তরোয়াল ঝ-ঝন্ – ঝন – শব্দে ঘরের ঝাড়বাতি চূর্ণ করিয়া সূতাশঙ্খের বত্রিশ ফলায় গিয়া লাগিল! অমনি রাজপুত্র দেখেন, – সাপ : ঘরময় বিদ্যুতের ধাঁধা, চারিদিকে ধোঁয়া! – রাজপুত্র শনশন তরোয়াল ঘুরাইয়া বলিলেন, – ‘চক্ষু পাইলাম!!!’ তরোয়াল অজগর সাত খ- হইয়া কাটিয়া গেল, সেই নিশিতে রাক্ষসী-রানীর পুরীতে ধ-ধ্বড়্-ধ্বড়্ শব্দে হাজার সিঁড়ির ধাপ ধসিয়া গেল, রাজকুমারের আয়ু সহস্রডাল সোনার ডালিম গাছ হইয়া গজাইয়া উঠিল।

ঘ.

কলাবতী রাজকন্যা বলিলেন, – ‘উনি বানরের ছাল গায়ে দিয়া থাকিতেন; কাল রাত্রে আমি তাহা পোড়াইয়া ফেলিয়াছি।’ আর – একদেশের রাজকন্যা হীরাবতী বলিলেন, – ‘উনি পেঁচার পাখ গায়ে দিয়া থাকিতেন, কাল আমি তাহা পোড়াইয়া ফেলিয়াছি।’

শুনিয়া সকলে ধন্য ধন্য করিল।

তা’রপর? – তা’রপর –

বুদ্ধুর নাম হইয়াছে – বুধকুমার,

ভূতুমের নাম হইয়াছে – রূপকুমার।

রাজ্যে আনন্দের জয়-জয়কার পড়িয়া গেল।

তাহার পর, ন-রানী, ছোটরানী, বুধকুমার, রূপকুমার আর কলাবতী রাজকন্যা, হীরামতী রাজকন্যা, সকলকে লইয়া, রাজা সুখে দিন কাটাইতে লাগিলেন।

উপর্যুক্ত এসব রূপকথা ও লোককথায় অকল্যাণ ও অমঙ্গলের শক্তির বিপরীতে শুভচেতনা জয়ী হয়। কিন্তু এর পরতে পরতে ছাড়িয়ে আছে রোমাঞ্চ। উপভোগ্য এ-রোমাঞ্চের ভেতরে একসময় দেখা যায় রাক্ষস-খোক্কসের সব অপকৌশল ধরা পড়ে গেছে। বেঙ্গমা-বেঙ্গমি বা ভূত-পেত্নির রহস্যও উন্মোচিত হয়েছে। এমন প্রতীকী ঘটনা প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে সংগতিসূচক। দৈনন্দিন জীবনযাপনে আমাদের নানা ক্ষেত্রে যে কৌশলী ভূমিকা কিংবা শ্রেষ্ঠত্বের যে বলিহারী আকাঙক্ষা তা রূপকথার গল্পে বা কৌশলগত ফ্রেমে কিংবা সর্বদৈশিক রূপকথার কাহিনি-ঐক্যে – অনেকটা মিলে যায় – মেলবন্ধনও রচনা করে। অশুভশক্তির বিপরীতে যে-শান্তি, মিলেমিশে বসবাসের যে-আকাঙক্ষা – বস্ত্তত তাই ঠাকুরমার ঝুলির আকর্ষণবিন্দু। কিশোরদের নিকট গ্রন্থটির আগ্রহের কেন্দ্রও মূলত তাই। নীলকমল লালকমল গল্পে অতিপ্রাকৃত শক্তির তৎপরতা আছে। অলৌকিকত্ব কিংবা দ্বন্দ্বশীলতার বিষয়টিও এ-গল্পে কম নয়। এছাড়া জাদুমন্ত্রের কলাকৌশলও বিদ্যমান। ডালিম কুমার গল্পটিও এরকম। এসব গল্পে শুভবুদ্ধির জয় আর অশুভ-অপশক্তির পরাজয় ঘটেছে। এক্ষেত্রে মন্ত্র বা জাদুর যে কলাকৌশল তা সমাজের ভালো কিংবা উন্নত কিছুর দিকনির্দেশনা প্রদান করে। প্রসঙ্গত, ঠাকুরমার ঝুলিতে অপশক্তির শিকার হতে দেখা যায়, প্রধানত নারীদের। কেন? পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের শোষণ ও পরিত্রাণ উভয়ই করেছে ‘পুরুষ’ (যেহেতু পুরুষ মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত সমাজ) দৃষ্টিকোণ থেকে। মন্ত্র বা জাদুবলে নারী বিপদে পড়লে প্রধানত পুরুষরাই এগিয়ে এসেছে, এবং সেটাই তার কৃতিত্ব, নারীও সেটি চায় – ফলে নারী-উদ্ধারের কাজটি পুরুষদেরই, প্রকারান্তরে পুরুষ-আস্থাও নারীদের। তাতেই পুরুষের বল বৃদ্ধি কিংবা সামাজিক মর্যাদা সাবলীল থাকে। আর নারীর লৈঙ্গিক ব্যাপারটি
তো আছেই। র‌্যাডিক্যাল নারীবাদী সুলামিথ ফায়ারস্টোনকে এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করা যায়। কারণ লিঙ্গীয় স্তরায়নই নারীর শ্রেণি ও সমাজ-মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করে :

Gender inequality originated in the patriarchal societal structures imposed upon women through their biology; the physical, social and psychological disadvantages imposed by pregnancy, childbirth, and subsequent child-rearing…

যাহোক, ঠাকুরমার ঝুলিতে এমনটাই ঘটেছে। এর ব্যত্যয় ঘটেনি। ‘কাঞ্চন-মালা’, ‘সাতভাই চম্পা’, ‘কিরণ-মালা’, ‘মণি-মালা’, ‘কলাবতী রাজকন্যা’, ‘কাঁকন-মালা’ সব শৌখিন উচ্চতার ‘রমণী’। চিরায়ত বা আবহমান ঐতিহ্যে – তারা এক কৃষ্টিতে গড়া। ঠাকুরমার ঝুলির প্রায় সব গল্পই নারীপ্রধান। নারীর অসহায়ত্ব যেমন এতে ফুটে ওঠে, তেমনি রূপময় ঐতিহ্যেরও তাতে প্রকাশ ঘটে। তবে পুরুষ তাতে একপ্রকার কর্তৃত্বপ্রবণ, বলশালী এবং আধিপত্যবাদী। সেখানে নারীরাও তা মান্য জ্ঞান করেছে। কিন্তু পুরুষ মূল্যবোধে এর গুরুত্ব কী? পুরুষ অসহায় নারীকে উদ্ধার করতে এসেছে। পুরুষ কখনো শোষকও তো! আবার পুরুষের চোখেই নারীর অভিজ্ঞতাও সমাজে বিচার্য বিবেচিত হয়েছে। সেভাবেই তারা সমাজে বা গল্পে প্রতিষ্ঠিত। ফলে তাদের লিঙ্গীয় মর্যাদাও ওই মাপেই পুনর্গঠিত। ফায়ারস্টোনের তত্ত্বও তাই বলে। ঠাকুরমার ঝুলির অলৌকিক শক্তি বা অতিপ্রাকৃত শক্তিও নারী-পুরুষ মনস্তত্ত্বের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। নারী এবং পুরুষ উভয়ই অলৌকিক শক্তি দ্বারা প্রভাবাচ্ছন্ন। এগুলো অনেকটা টোটেমিক মিথের মতো অন্তর্লীনও বটে। রাক্ষস-খোক্কস থেকে শুরু করে নানা অবাস্তব প্রবণতা এ মিথের অন্তর্ভুক্ত, প্রশ্রয়ভুক্তও। প্রসঙ্গত বলা যায়, ‘প্রাচীন জনগোষ্ঠীর বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই Taboo-র উদ্ভব। ট্যাবু অতিক্রম করে যাওয়ার অর্থ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়া – নিজের বিনাশ ডেকে আনা। ‘নীলকমল আর লালকমল’ গল্পে রাক্ষসীর গর্ভে নীলকমলের জন্ম (totem)। ‘নীলকমলের নাম শুনিয়া খোক্কসেরা ভয়ে তিন হাত পিছাইয়া গেল! নীলকমল আর জন্মে রাক্ষসী-রানীর পেটে হইয়াছিলেন, তাই তাঁর শরীরে কিনা রাক্ষসীর রক্ত! খোক্কসেরা তাহা জানিত। সকলে বলিল, – ‘আচ্ছা নীলকমল কি-না পরীক্ষা কর।’ শেষাবধি নীলকমলের দ্বারাই লালকমল রক্ষা পায়। নিষেধাজ্ঞা অতিক্রম করে – যে খল, সে পরাস্ত হয়। বস্ত্তত, খল চরিত্রের উদ্ভব সমাজে নেতি-শক্তির প্রতীকায়নে। হতে পারে তারা পুরুষ বা নারী। মানুষের ভেতরে ‘সত্যের জয় মিথ্যার ক্ষয়’ ভাবনাটি সামষ্টিক অবচেতনে সৃজিত। সেজন্য নানা প্রতীকের মাধ্যমেও তার রূপকাশ্রয় ঘটে। এই প্রতীকায়ণে মানবমনের অবচেতন বা নির্জ্ঞান স্তর প্রণীত। একই সঙ্গে তা দ্বান্দ্বিক চিন্তার স্বরূপে মানুষের সহজাত ও পূর্বধারণায় পুনর্গঠিত। ক্লদ লেভি স্ত্রাউস (১৯০৮-২০০৯) যেমনটা বলেন : ‘…the reality of totemism, in which, within a larger group, smaller groups distinguish themselves through identification with a plant or animal. He denies, however, the totemic societies differ fundamentally from societies that divide people on the basis of caste. Totems, he argues, are just another why to create necessary distinctions within a larger group.’ ঠাকুরমার ঝুলির গল্পগুলোর বৈজ্ঞানিক বিশেস্নষণ করলে ‘হিউম্যান কগনিশন’ ধারণায় যেখানে মানুষের প্রাণীতে রূপান্তর এবং প্রাণীর মানুষে প্রত্যাবর্তনের রূপকীয় তাৎপর্য নজরে আসে। গল্পগুলোর ভেতর দিয়ে আদি-নৃগোষ্ঠীর সংস্কার-বিশ্বাস কিংবা স্বপ্ন টোটেমকে প্রকাশ্য করেছে। ‘কলাবতী রাজকন্যা’য় ভূতুম্  আর বানরের যে রূপকধর্মী তাৎপর্য তাতে ট্যাবু ও টোটেমিক ভূমিকাটি জীবনের গূঢ় রহস্যেরই ইঙ্গিত দেয় :

কদিন যায়। একদিন রাত্রে, বুদ্ধের ঘরে বুদ্ধ, ভূতমের ঘরে ভূতম্, কলাবতী রাজকন্যা, হীরাবতী রাজকন্যা ঘুমে। খু-ব রাত্রে হীরাবতী কলাবতী উঠিয়া দেখেন, – একি! হীরাবতীর ঘরে তো সোয়ামী না! কলাবতীর ঘরেও তো সোয়ামী নাই! কী হইল, কী হইল? দেখেন, – বিছানার উপরে এক বানরের ছাল, বিছানার উপরে এক পেঁচার পাখ!!

‘অ্যাঁ – দেখ! – তবে তো এঁরা সত্যিকার বানর না, সত্যিকার পেঁচা না।’ দুই বোন ভাবেন! – নানান্ খানান্ ভাবিয়া শেষে উঁকি দিয়া দেখেন – দুই রাজপুত্র ঘোড়ায় চাপিয়া রাজপুরী পাহারা দেয়। রাজপুত্রেরা যে দেবতার পুত্রের মতো সুন্দর!

গন্ধ পাইয়া রাজপুত্র ঘোড়া ফেলিয়া ছুটিয়া আসিলেন।

নৃ-জাতির ও জনগোষ্ঠীর সামষ্টিক অবচেতনার প্রতীকায়িত স্বরূপ এভাবে নির্ণীত হয়েছে ঠাকুরমার ঝুলির আখ্যানে। স্বপ্ন-কল্পনার সাবলীল সম্বন্ধটি ট্যাবু-টোটেমের ভেতর দিয়ে বাস্তব হয়ে উঠেছে। এ-বাস্তবতা দীর্ঘ ধারাক্রমে রাক্ষস-খোক্কস কিংবা বেঙ্গমা-বেঙ্গমির একীভূত প্রাণ-ধারণায় প্রতিষ্ঠিত। যেটি একটি জনগোষ্ঠীর প্রতীকী সারসত্য। বস্ত্তত, ঠাকুরমার ঝুলির শিল্পস্বরূপে সারসত্যটি এমন মর্মরূপের ভেতরে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

 

চার

ঠাকুরমার ঝুলি দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের মৌলিক রচনা নয়। আগেই বলেছি, এগুলো সংগৃহীত ও সংকলিত। কিন্তু মৌলিক রচনা না হলেও এর সংগ্রন্থণে সংকলক যথেষ্ট যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। খুব বিশ্বস্তও থেকেছেন। সংলাপ, ভাষারীতি, কাহিনি-বর্ণনকৌশল প্রভৃতি কাজে দক্ষিণারঞ্জন পূর্ণরূপে অবিকৃত থেকেছেন। বলা যায়, ‘ভাষাগত সংস্কার সাধন করলেও, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর লোকায়ত ভাষার ধরন ও রীতি দক্ষিণারঞ্জন মিত্র সতর্কতার সঙ্গে আলোচ্য গ্রন্থে রক্ষা করেছেন।’ এর বর্ণনরীতিতেও রয়েছে গতিশীল আমেজ ও তীব্রতর প্রবহমানতা। কখনো জলের তরঙ্গে, কখনো বায়ুভারে ঊর্ধ্বমুখী উন্মুক্ত আবহে, কখনোবা নির্মল প্রকৃতির ভেতরে রোমাঞ্চময় ভ্রামণিক পরিকল্পনা উপলব্ধ আখ্যানকে ভিন্নতর মাত্রায় যোজিত করেছে। উদাহরণ :

আর অমনি রাজপুরীর চারিদিকে পাখি ডাকিয়া উঠিল, দুয়ারে দুয়ারী আসিয়া হাঁক ছাড়িল, উঠানে হাতি ঘোড়া ডাক ছাড়িল, সিপাই তরোয়াল ঝনঝন করিয়া উঠিল; রাজদরবারে রাজা জাগিলেন, মন্ত্রী জাগিলেন, পাত্র জাগিলেন – হাজার বচ্ছরের ঘুম হইতে, যে যেখানে ছিলেন, জাগিয়া উঠিলেন – লোক লস্কর, সিপাই পাহারা, সৈন্যসামন্ত তীর-তরোয়াল লইয়া খাড়া হইল। – সকলে অবাক হইয়া গেলেন, – রাজপুরীতে কে আসিল! (‘ঘুমন্তপুরী’)

এখানে বর্ণনার আবহটি চমৎকার। এভাবে রাজপুরীও যেন বাস্তবসত্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। লোকমুখের বয়ন গৃহীত হয়, লেখ্য পাঠকলায়। তাতে অনেক ‘ইমেজ’ অপ্রতুলভাবে দাঁড়ায়, গতির আবহে রোমাঞ্চরস সঞ্চারিত হয়, দেশজ স্মৃতি-সত্তার অনুরণন প্রদীপ্তি পায়। সাহিত্যে যুক্ত করে স্বতন্ত্র আনন্দের অভিমুখ। ঠাকুরমার ঝুলি এক অর্থে উৎসবপূর্ণও বটে। লোকজ আবহে জীবজন্তুর প্রতীকী পদার্পণে ঔৎসুক্য প্রাণ-মন প্রতিমুহূর্তে টনিক পায়। তুচ্ছ করে না কিছুই, বরং রাষ্ট্রিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক বেষ্টনীতে প্রাচুর্যময় করে তোলে। মিত্রাক্ষরের ছড়া, উপকথা, রূপকথা, পদ্য-গদ্য আঙ্গিকটি মিলেমিশে স্পন্দনশীল আবহটি শুধু শিশু-কিশোর নয়, সকলের মনেই রেখাপাত করে। ফলত, ঠাকুরমার ঝুলি সামগ্রিকরূপে হয়ে ওঠে এক সম্পদশীল উপভোগ্য রচনালেখ্য। ভস্নাদিমির প্রপ, মিখাইল বাখতিন, ক্লোদ লেভি স্ত্রাউসের তত্ত্ব ছাড়াও পোস্ট-কলোনিয়াল ব্যাখ্যায় ঠাকুরমার ঝুলির আলাদা একটি পাঠ হতে পারে। তাতেও আনা যেতে পারে নতুন মাত্রা। কেননা টোটেমিক মিথের যে-পারাবত এখানে রচিত হয়েছে তা যে কোনো নৃগোষ্ঠীর লোক-মনস্তত্ত্বের এক দলিল। সেখানে গৃহীত হয় সমকাল-ধারণায় ঐতিহ্যিক নবরূপায়ণ। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে এমন ধারণা-জ্ঞানের কিছু ইঙ্গিত থাকল কিন্তু এর জন্য আলাদা নিবিড় পাঠ নিশ্চয়ই অপ্রয়োজনীয় নয়। প্রসঙ্গত, তারই টাইপ-মোটিফ ও ইনডেক্সের পাঠ এখানে গৃহীত। রবীন্দ্রনাথ ‘বড় স্বদেশী জিনিষ’ বলেছেন, তাতে চরিত্র (রাজকীয়, অমাত্য, পরিচারক-পরিচারিকা, খল, অশরীরী, পশুপক্ষী, দেব-দেবী), খাদ্যসামগ্রী, পরিধেয় বসন, রত্নালংকার, গৃহ-বৃক্ষ, ফুল-ফল, পরিবহন, বাদ্যযন্ত্র, অস্ত্রশস্ত্র, প্রসাধন, নদী-পাহাড়-সাগর, গ্রহ-অন্তরীক্ষ, খেলনা ও প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির উপকরণে ভৌগোলিক কৃষ্টির সবকিছু প্রামাণ্য বলে বিবেচ্য মনে করেছেন। আর জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর তাই তো একে বলেছিলেন ‘জাতির আশায় স্বপ্নের ভাষায় অভাবনীয় সত্য সাহিত্য।’ দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের ঠাকুরমার ঝুলি আমাদের চিরায়ত ও সমগ্রতাস্পর্শী চেতনার উপাচারে ঋদ্ধ। এ-গ্রন্থের ‘trickster’রা এই গেস্নাবাল বিশ্বে এখনো দুর্লক্ষ্য নন। তাই তো ঠাকুরমার ঝুলির রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য বিজ্ঞানমনস্ক পাঠকদের এখনো আগ্রহ সৃষ্টি করে চলেছে। r

 

সহায়ক উৎস

১.     দক্ষিণারঞ্জন রচনাসমগ্র (দ্বিতীয় খ-), দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার, মিত্র ও ঘোষ, ১৯৬১, কলকাতা।

২.     আখ্যানতত্ত্ব ও চরিত্রায়ণ, রফিকউলস্নাহ খান, ২০১১, চারুলিপি প্রকাশন, ঢাকা।

৩.    ‘দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার ও তাঁর  ঠাকুরমার ঝুলি’, বিশ্বজিৎ ঘোষ, ২০০৭, ঢাকা।

৪.     নির্বাচিত রচনা, শামসুদ্দিন চৌধুরী (ভাষ্য ও ভাষান্তর), বর্ণায়ন, ক্লোদ লেভি স্ত্রাউস, ২০১১, ঢাকা।

৫.     Tristes Tropiques, Claude Levi-Strauss.

৬.    The Dialectic of Sex : The Case for Feminist Revolution, Shulamith Firestone.

৭.            Morphology of the Folktale, Vladimir Propp.