ঢাকা আর্ট সার্কলের স্বাধীনতার স্বাদ

Dhaka Art Circle

ইব্রাহিম ফাত্তাহ্

সংখ্যায় তাঁরা বারোজন, তাঁদের সৃষ্টি-প্রয়াস বারো রকম। সৃজন-চিন্তা, কৌশল, প্রয়োগ ও প্রকরণের স্বাতন্ত্র্যে উজ্জ্বল একেকজন। তাঁরা কাজে এক, প্রকাশে হরেক। এবার নিজেদের কাজের পেছনে প্রেরণা হিসেবে নিয়েছেন – স্বাধীনতা। তাই মধ্য ঢাকার এথেনা আর্ট গ্যালারিতে ‘স্বাধীনতার মিষ্টি স্বাদ’ শিরোনামে সদ্য শেষ হলো এই বিশেষ দলীয় চিত্র-প্রদর্শনী। আমাদের স্বাধীনতা দিবসের দুদিন পর ২৮ মার্চ শুরু এ-প্রদর্শনী শেষ হয় ২০ এপ্রিল।
চারুশিল্পীদের শিল্পকেন্দ্রিক কার্যক্রম পরিচালনায় একটি দল সক্রিয় আছে অনেকদিন। ১৯৯৩ সালে ঢাকা আর্ট সার্কেল নামে এই শিল্পীদলটির প্রতিষ্ঠা। প্রতিবছর তাঁরা প্রদর্শনী, ওয়ার্কশপ কিংবা সেমিনার আয়োজনে সচেষ্ট থাকেন। যে দুই অগ্রজকে কেন্দ্র করে এটি সচল রয়েছে, তাঁরা হলেন – সমরজিৎ রায় চৌধুরী (১৯৩৭) ও আবু তাহের (১৯৩৬)। তাঁরা দুজন কাছাকাছি সময়ের শিক্ষার্থী। সমরজিৎ চারুকলায় স্নাতক করেছেন ১৯৬০ সালে আর তাহের ১৯৬৩ সালে। তিনি এখন চারুকলা অনুষদে সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত। উল্লেখ্য, তাঁরা দুজনই একুশে পদকপ্রাপ্ত চিত্রশিল্পী-ব্যক্তিত্ব।
এ-দলের বারোজন সদস্য, সবাই পেশাজীবী শিল্পী। চাকরিজীবনে অবসর নিয়ে এখন স্বাধীনভাবে শিল্পচর্চা করছেন এমন শিল্পীদের মধ্যে আছেন – মোহাম্মদ মহসীন (১৯৪০), আনোয়ারুল হক পেয়ারু (১৯৪৩), সৈয়দ এনায়েত হোসেন (১৯৪২), রেজাউল করিম (১৯৪৩), মতলুব আলী (১৯৪৬), আবদুস শাকুর শাহ (১৯৪৬), বীরেন সোম (১৯৪৮) ও স্বপন চৌধুরী (১৯৪৮)। তাঁদের প্রথম তিনজন চারুকলায় ১৯৬৩ সালের স্নাতক। রেজাউল করিম ১৯৬৮, মতলুব আলী ও বীরেন সোম ১৯৬৯, শাকুর শাহ ও স্বপন চৌধুরী ১৯৭০ সালের স্নাতক। শিল্পী চন্দ্রশেখর (১৯৫১) ও রফি হক (১৯৬৫) দুজন দুটি পত্রিকার যথাক্রমে শিল্প-নির্দেশক ও সম্পাদক। শেখর চারুকলায় স্নাতক করেছেন ১৯৭২ সালে, রফি হক স্নাতকোত্তর করেছেন ১৯৯১ সালে। দেখা যাচ্ছে আর্ট সার্কেলের প্রতিষ্ঠাতা শিল্পীর সঙ্গে শেষের জনের বয়সের ব্যবধান ঊনত্রিশ বছর! অবশ্য রফি হক এ-শিল্পীদলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন এর প্রতিষ্ঠার অনেক পরে।
প্রদর্শনীর একটা ভিন্নতা দেখে ভালো লাগল। প্রত্যেক শিল্পীর চারটি করে চিত্রকর্মের মধ্যে একটি তাঁর ফেলে আসা জীবনের অর্থাৎ প্রায় শিল্পীজীবনের সূচনাকালের কাজ। শিল্পীর অতীত ও বর্তমানের শিল্পচর্চার মান ও অবস্থানের একটি তুলনামূলক বিচারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে দর্শক-বোদ্ধাদের হাতে।
সমরজিৎ রায় চৌধুরী অাঁকেন বাংলা জনজীবনের সংস্কৃতি ও প্রকৃতির ছবি। চিত্রজমিনকে অনেকটা নকশার শৃঙ্খলায় বেঁধে তিনি অাঁকেন। এ-ধরনটি তাঁর নিজের। দীর্ঘকাল ডিজাইনের ক্লাস নিতে নিতে মনে হয় বোধের ভেতরে ঢুকে গেছে নকশার ফর্ম আর জ্যামিতির আকৃতি। সেই ফর্ম তাই অবলীলায় ঢুকে পড়ে চিত্রপটে। সমরজিতের কাজ এমন যে, নিজের চিত্রভাষা অক্ষুণ্ণ রেখেই তিনি নতুনের খোঁজ করেন এবং তাকে নিজের নকশায় নতুন করে বাঁধেন। একযুগ কিংবা তারও আগে তিনি অাঁকতেন কৃষক-শ্রমিক, গ্রামের সাধারণ নারী-পুরুষের অবয়ব। এর রংগুলো ছিল লোকশিল্পীদের পছন্দের লাল, নীল, হলুদ, সবুজ। এমন একটি অবয়ব এ-প্রদর্শনীতে শিল্পীর আগের কাজ হিসেবে প্রদর্শিত হয়েছে। তাঁর এখনকার চিত্রগুলো আরো মজাদার। এ-প্রদর্শনীর অন্য দুটি কাজের একটিতে লোকবাংলার গ্রামীণ জীবনের নকশামুখর রূপ দেখি, অন্যটিতে পাই পুরনো ঢাকার বর্ণিল চলমানতার চেহারা। জ্যামিতিক ছোট ছোট ক্ষেত্রে বিভাজিত জায়গায় তিনি স্থাপন করেন বাংলার বৈশিষ্ট্যবাহী নৌকা, ঘর-গেরস্তি, আকাশ-নদী। আবার পুরনো ঢাকার ক্ষেত্রে শিল্পী রেখাঙ্কনে অনেক ভবনের সারি এঁকে তার ভেতরে বসবাসকারী মানুষের নানা কর্মকান্ডের ছবি এঁকেছেন। সাধারণ জীবন ও স্থাপনাকে অসাধারণ কুশলতায় নিজের নকশায় গৌরবান্বিত করেছেন এই গুণী শিল্পী। ছবিগুলো শিল্পী এঁকেছেন ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিক রঙে।
আবু তাহেরকে আমরা অনেককাল ধরে জানি, তিনি অাঁকেন বহুবর্ণিল বিমূর্ত ছবি, যেগুলোকে আমরা নানাবর্ণের কম্পোজিশন ভাবতে পারি। এসব কাজের ভেতরে তিনি ইদানীং কিছু মূর্ততার অনুসন্ধান করেন, কিছু ফিগরের সন্ধান আমরা পেয়ে যাই। তাঁর দুটি চিত্রকর্মের শিরোনাম – ‘দ্য ডার্ক ফর্ম’ ও ‘মাই কান্ট্রি’। একটি কাজে আমরা কালচে মেঘের প্রতিফলন দেখি। এর নিচেই নদীজলের ঢেউ খেলা করছে যেন। অন্য কাজটিতে আমরা লক্ষ করি নানা বর্ণের প্রাবল্য ও ভারী রেখার সাবলীলতা। ছবিগুলো শিল্পী এঁকেছেন ক্যানভাসে তেলরং ও মিশ্ররঙে। বেশ কয়েকটি একক প্রদর্শনী করেছেন। এ ছাড়া দেশ-বিদেশে আয়োজিত বহু স্বনামধন্য চারুকলা প্রদর্শনীতে তাঁর অংশগ্রহণ ঘটেছে। শিল্পী অনেকদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। আমরা তাঁর সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।
মোহাম্মদ মহসীন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কিপার ছিলেন। অবসরগ্রহণের পর নিয়মিত ছবি অাঁকছেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী তাঁর একটি একক চিত্র-প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল। তিনি অনেকদিন ধরে অাঁকছেন স্মৃতি ও ঐতিহ্যের ছবি। দুটি বিষয়ই যেন পরস্পর সম্পর্কিত। মানুষ তাঁর বয়সের পরিণত পর্যায়ে এসে নিজের অতীতকে নতুন আলো জ্বেলে দেখে আনন্দ পায়, পুরনোকে কাছে টেনে নিতে চায়। এই স্মৃতিতাড়না মহসীনের চিত্রপটে আমরা প্রত্যক্ষ করে নিজেদের স্মৃতির কাছে ফিরে যাওয়ার প্রণোদনা পাই। আমাদের সভ্যতার ঐতিহ্য যেন পুরাকীর্তির আদলে তুলে ধরেছেন শিল্পী তাঁর ‘ঐতিহ্য’ শীর্ষক চিত্রকর্মে, যেন সেগুলো দর্শক খুঁটিয়ে খঁটিয়ে দেখে খননের কষ্টের পর কিছু প্রাপ্তির আনন্দ পায়। শিল্পী এঁকেছেন ক্যানভাসে তেলরঙে।
সৈয়দ এনায়েত হোসেন প্রথমে জীবনের গহন সৌন্দর্য ও প্রকৃতির উদারতায় মুগ্ধ মানুষ, তারপর সেটিকে অনুবাদকারী একজন চিত্রশিল্পী। সে-অনুবাদ অবশ্য হুবহু করেন না তিনি, দৃশ্যকে বদল করে সাদৃশ্যকে নিজের ভেতরে এনে ছেনে-খুঁড়ে তাকে তুলে ধরেন চিত্রপটের সীমানায় নানা প্যানেলের মধ্যে। ফলে মূর্ততার বিশ্বাসের মধ্যেও এক ধরনের বিমূর্ত নিশ্বাস টের পান দর্শক-বোদ্ধারা। ‘জীবন’ নামে এক সিরিজের তিনটি কাজের পাশাপাশি তাঁর পুরনো আরেকটি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে এটিতে। ছবিগুলো শিল্পী এঁকেছেন ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিক রঙে। তাঁর কাজেও আমরা নকশার মাধুর্য ও গঠনের দৃঢ়তা অবলোকন করি। বহুদিন নানা পত্র-পত্রিকায় ইলাস্ট্রেশন এঁকেছেন, এখন নিয়মিত ছবি অাঁকছেন। প্রদর্শনীতে থাকা ছবিগুলো শিল্পী এঁকেছেন ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিক রঙে।
আনোয়ারুল হক বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কিপার ছিলেন, এখন অবসর-জীবনে ছবি অাঁকেন। ইদানীং ‘প্রত্ন কাহিনি’ শিরোনামে সিরিজ অাঁকছেন কাগজে ও ক্যানভাসে মিশ্রমাধ্যমে। চিত্রপটে নানা রং লেপন করে কৌণিক জ্যামিতিতে কিছুটা বিভাজন তৈরি করেন। পৌনঃপুনিক বর্ণ প্রয়োগে এই বিভাজন আর প্রধান থাকে না, বরং বর্ণের ভেতরে ভেতরে প্রত্নসম্পদের মতো নানা ফর্ম ও রেখার উদ্ভাস দেখা যায়। একটি চিত্রকর্ম তাঁর পুরনো কাজ। এটির শিরোনাম ‘কৃষক পরিবার’। গোধূলিবেলায় চিত্রপটের মাঝ বরাবর লম্বা এক গাছের নিচে আর সবুজ ফসলের আশ্বাসের মধ্যে এক কৃষক তাঁর স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে দাঁড়িয়ে যেন স্বপ্ন দেখছেন সমৃদ্ধ এক বাংলার। এর ফিগরগুলো বাস্তবের চেয়ে অনেক লম্বাটে ও তাদের অবয়ব শান্ত, সৌম্য ও ধৈর্যশীল।
রেজাউল করিম দীর্ঘদিন ছিলেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের শিল্প-নির্দেশক। পরিচালক হিসেবে অবসর নিয়েছেন একযুগ আগে। প্রকাশবাদী বিমূর্ততায় অাঁকেন। তাঁর চিত্রপটে বহুরঙের সমাবেশ নেই, স্বল্পরঙে দৃষ্টিনন্দন মিষ্টি ছবি অাঁকেন। তাঁর অধিকাংশ চিত্রপটে ধূসর বর্ণের সুদূরতা দেখা যায়। মাঝে মাঝে আবছায়া অস্পষ্ট কিছু অবয়বকে দেখা যায় প্রায় মিশে আছে চিত্রপটের ধূসরতার সঙ্গে। ২০১৪ সালে ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিক রঙে অাঁকা ‘চাঁদনী রাতের গান’ শিরোনামের চিত্রকর্মে সেই রকমটি আমরা দেখতে পাই। প্রদর্শনীতে থাকা দূর-অতীতের জলরং-চিত্র ‘আমার গ্রাম’ (১৯৬৭) যেন রেজার শিক্ষার্থী-জীবনের স্মৃতিকে তুলে এনেছে।
বীরেন সোম ঢাকা আর্ট সার্কেলের সংগঠক। ন্যাশনাল হারবেরিয়ামের প্রধান শিল্পী ছিলেন। সৃজনশিল্পী হিসেবে বহুমাত্রিক সৃজনে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। শিল্পীযোদ্ধা হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন মুক্তিযুদ্ধে। এ নিয়ে বর্ণিল একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশের শিল্পীসমাজ নামে, যেটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ছবি অাঁকেন প্রকাশবাদী বিমূর্ততায়। চিত্রপটের কেন্দ্রে প্রধান একটি বর্ণের আলোছায়া বা টোনের তারতম্য ঘটিয়ে পটের নিচে ও অন্য কোনো ক্ষেত্রে ভারী রঙের প্রলেপ লাগিয়ে কাজকে দৃষ্টিনন্দনভাবে তুলে ধরেন। এ-প্রদর্শনীতে থাকা তাঁর ‘সবুজ প্রকৃতির প্রতিবিম্ব’ চিত্রকর্মে আমরা দেখতে পাই সবুজ আবহের ভেতর আলোছায়ার খেলা। এর স্নিগ্ধ নরম রূপ একধরনের মুগ্ধতার অনুভূতি ছড়িয়ে দেয় দর্শকের চোখে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তখনকার তরুণ শিল্পী বীরেন সোমের চিত্রকর্মে যে-ফিগরগুলো দেখি সেগুলোর গঠন ছিল শিল্পী জিয়াকোমিতির সিলিন্ডার পদ্ধতির অনুরূপ। এরকম একটি পুরনো কাজ সেই পুরনো বীরেনকেই যেন ফিরিয়ে এনেছিল এথেনা গ্যালারির চৌহদ্দিতে।
শিল্পী ও অধ্যাপক একসঙ্গে দুটি পরিচয় বহনের অনেক গুণী মানুষ আছেন আমাদের কাছাকাছি। এই দুটি পরিচয় ছাড়াও মতলুব আলীর বড় পরিচিতি, তিনি একজন প্রতিভাবান লেখক ও শিল্প-সমালোচক। ঢাকা আর্ট সার্কেলের অন্যতম শিল্পীসদস্য। প্রায় চার বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন পদ থেকে অবসর নিয়েছেন। তিনি এঁকেছেন ‘ওহ! সূর্য তুমি সাক্ষী’। জাতীয় পতাকার অনুপাতের তিনখন্ডের শুরুর অংশে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন পতাকা, দ্বিতীয় অংশে আমাদের পতাকার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ সূর্যোদয়ের লালিমা থেকে লালবৃত্তের আভার উচ্ছ্বাস আমরা বুঝতে পারি। কিন্তু তৃতীয় অংশে ভালোবাসা, নাকি দহনের নীল আভা – এ নিয়ে আমি দ্বিধান্বিত। তাঁর কাজগুলো একই সঙ্গে প্রকাশবাদী ও নকশাধর্মী।
স্বপন চৌধুরী আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আরেক শিল্পীযোদ্ধা। কর্মজীবনে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনে যুক্ত ছিলেন সৃজনশিল্পী হিসেবে। তিনি চিত্রপটের ভেতরের ছবি যেমন অাঁকেন, তেমনি তার বাইরের অবয়বটাও তুলে আনেন দর্শকের চোখের সামনে। কাগজ, ক্যানভাস উলটে, ছিঁড়ে, চিরে আবার কিছু যোগ করে ক্ষ্যাপাটের মতো শিল্পী নিজের রাগ-অনুরাগ তুলে আনেন। মানবজীবন, সময় আর প্রকৃতি নিয়ে তিনি অাঁকেন নিজের নিয়মে আপন শৈলীতে।
আবদুস শাকুর শাহ অধ্যাপক হিসেবে সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে। অাঁকেন লোকায়ত বাংলার গল্পগাথার ছবি একেবারে সাধারণ পটশিল্পীর মুগ্ধতা নিয়ে। জনপ্রিয় এই শিল্পী এবার এঁকেছেন চন্দ্রাবতীর দারুণ মজার ছবি। এক লোকজীবনের গল্প দিয়ে তিনি শিল্পতৃষ্ণাকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। ১৯৭৬ সালে অাঁকা তাঁর চারটি অবয়ব এ-প্রদর্শনীতে জায়গা পেয়েছে। সাদা কাগজের ওপর ক্রেয়ন ঘষে চায়নিজ কালিতে কুশলী অঙ্কনে এই চারটি প্রতিকৃতি এঁকেছেন, যেটি এই শিল্পীর বর্তমানের কাজের স্টাইলের প্রাথমিক অনুশীলন বলে মনে হয়। দেশ-বিদেশে প্রচুর দলগত প্রদর্শনীতে তিনি অংশ নিয়েছেন। একক প্রদর্শনীর সংখ্যাও নেহায়েত কম নয় তাঁর। অসাধারণ একটি প্রকাশনা তাঁকে নিয়ে প্রকাশ করেছে গ্যালারি কসমস, যাতে শিল্পীর সমগ্র জীবনের নানা ধরনের কাজের ছবি সন্নিবেশিত হয়েছে।
চন্দ্রশেখর দে প্রতিভাবান চিত্রশিল্পী। বহু বিচিত্র ধরনের ছবি নানা মাধ্যমে তিনি এঁকেছেন। এবার এঁকেছেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন স্মরণে। বড় এক ক্যানভাসের বিস্তৃত পটভূমিকে তিনি রঞ্জিত করেছেন সোনালি বর্ণে, এরপর ক্যানভাসের কেন্দ্রস্থলের বাঁদিকের সামান্য ওপরে সামনে এগিয়ে যাওয়া লাল শাড়ি সাদা পাড় পরনে এক নারী-অবয়ব এঁকেছেন। পরিবেশনাগুণে কাজটি দর্শককে আকৃষ্ট করে।
বয়সে দলটির সর্বকনিষ্ঠ শিল্পী হলেও রফি হক আমাদের চারুশিল্পে দারুণ এক মুগ্ধতা জাগানিয়া রোমান্টিক শিল্পী। প্রিন্টে সিদ্ধহস্ত, অঙ্কনে সাবলীল, গ্রাফিক-জ্ঞানে পুষ্ট, লেখায়-রেখায় ছন্দময় এই শিল্পী ভার্চুয়াল জগতে সতত বিচরণশীল ও জনপ্রিয়। পেইন্টিং করলেও তাঁর কাজের মধ্যে প্রিন্টের অংশগ্রহণ থাকে, যেটি তাঁর স্বকীয় বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। অনেকটা বিমূর্ত কায়দায় এঁকে চিত্রপটে দারুণ মিষ্টি এক আবহ তৈরি করেন, তারপর কিছু রেখা, টোন, কাটাকুটি, দাগ আর কবিতার পঙ্ক্তি কিংবা লেখা লিখেন শিল্পী। সব মিলিয়ে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে রফি হকের ছবি। এ-প্রদর্শনীর কাজের ক্ষেত্রেও তাই দেখা গেল। এবার শিরোনাম রেখেছেন ‘জনৈক শিল্পীর জার্নাল’।
বারোজন শিল্পীর দল ঢাকা আর্ট সার্কেলের এই প্রদর্শনী নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ একটি আয়োজন ছিল।