তুমি আসবেই

মাহমুদ টোকন

সকালে তোমাকে ডাকি; সন্ধ্যায় –
তুমি ঠিক চাঁদ। মধ্যদুপুরে রোদ
তোমাকেই ডাকছি অকস্মাৎ।

ডাকছি তোমাকে, ডাকি শেষরাতে
চোখ গেল স্বরে; পদ্মার ডিঙি ঢেউয়ে
ডাকছি ঠিক নিড়ানি আসরে।

সবুজ তোমায় ডাকি, ঘাসফড়িং
তিল সর্ষে ফুল
ডাকছি তোমার নাম শুদ্ধ কি ভুল।
আর্তস্বর ডাকছি খুউব জ্বরতপ্ত
কপালে জলপটি
ডাকছি খররৌদ্র দিনে বৃষ্টির আহুতি।

তোমাকে ডাকছি অদ্য গ্রাম্য হাটে, সেমিনারে
রাজপথ দাবির মিছিলে, মন খারাপ গোধূলিতে
তুমি ঠিক জপনাম ছিলে।

বারান্দায় তোমাকে ডাকি, ছাদে দড়ি
ঝোলানো কাপড়; হাঁকছি ফেরিওয়ালা ডাক
লাগবে… মিষ্টি পাপড়!

ডাকছি রবীন্দ্র গান্ধি মার্কসবাদ
যিশু মুহম্মদ… গৌতম বুদ্ধ যপি
গীতা ভাগবত।

ডাকছি স্বদেশি পণ্য ভাষা-গান
মাটির আঙিনা, ডাকছি অদম্য প্রাণ
দূরের ঠিকানা। ডাকছি অহিংস স্বর
যুদ্ধ নিপাত যাক গানে
ডাকছি শিক্ষা পাক, ভাত পাক
সব শিশু, নিরন্নজনে।

ডাকছি ফুল-ফাগুন নিদারুণ হাড়কাঁপা শীত
ডাকছি নৃত্যগানে
মেঘের সান্নিধ্যে কিঞ্চিৎ।
উদ্দাম সমুদ্রজল কোলাহল, নিভৃত জনপদ; ডাকছি তোমায়
আমি –
সুপারট্রেন… ধীরগতি ছাদাছড়ি পথ।
ডাকছি তিয়েনমেন ডাকছি লেনিনগ্রাদ
লুম্বিনী… মদিনাশরিফ
ডাকছি ও, আমাজন… ঈশান নৈর্ঋত
দশদিক।

ডাকছি ঐতিহ্যবুক পিতা-মাতামহ তার
পূর্বপুরুষ। উত্তর সমন্বয় ডাকি
নতুনের আগমন হুস।
ডাকছি দুর্বোধ্যদিন – মিছিলে মিছিলে
ভুলদর্শন ভাঙা নাকে ক্ষত দিনে তুমি ছিলে।

ডাকছি কালাহারি, ও সাহারা
হিমালয় আল্পস সমতলভূমি। হিসাবের মালভূমে –
যোগ-বিয়োগ পূরণ-ভাগ তুমি।

ডাকছি আড্ডার ছলে… প্রার্থনায়
মান-অভিমানে, ডাকছি গঙ্গাজল –
সমুদ্র স্নানে। ডাকছি সুবর্ণ চিল ব্যাঘ্র নিনাদ
ডাকছি বিদ্যুৎ-মেঘ… অগ্নি বজ্রপাত।

ডাকছি তোমায় আমি ক্ষুধার্ত… হাতে রাখি… পাপ
যূপকাঠে মৃত্যুমুখে ডাকছি তোমার নাম ভাঙা হাটে
শেষ ক্রেতাটির অনুতাপ।

ডাকাছি মাটির থালা… অভুক্ত; ডিজে পার্টিতে
ডাকছি হিসেব-নিকেশ সমান সমান স্ফূর্তিতে।
ডাকছি কান্না-হাসি ভালোবাসি বৈষম্যলীন
ডাকছি বিশ্বাস নিয়ে অনিবার্য পালটাবে দিন।

ডাকছি সন্ধ্যা-সকাল ডাকি আজও
মানুষ প্রকৃতি। সমন্বিত বহুস্বর ডাকছি –
ও, অগতির গতি!