দীর্ঘশ্বাসেরা হাওরের জলে ভাসে

মাসউদুল হক

জন্ম ১ জুলাই ১৯৭৪, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশক : ঘাস ফুল নদী

উপন্যাস এখন বিচরণ করে সমাজজীবনের প্রামিত্মক পরিসরে। আলো ফেলে সামাজিক সত্মরের আনাচে-কানাচে, মনোগহনে, কখনো অজ্ঞাত ভুবনে। প্রকৃতিবৈচিত্র্যে ভরা বাংলাদেশের হাওর-অঞ্চল, তেমনি একটি প্রত্যমত্ম এলাকা, সেখানে সমাজের সত্মরবিন্যাস ও কাঠামো মূল সামাজিক বিন্যাস থেকে আলাদা। মাসউদুল হকের দীর্ঘশ্বাসেরা হাওরের জলে ভাসে উপন্যাসে তেমনি একটি পরিসরকে কাহিনির পটভূমি করেন, তুলে আনেন সেখানকার মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, অসিত্মত্বের সংগ্রাম ও স্বপ্নের পসরা। গোটা দেশের শিক্ষা, উন্নতি ও সভ্যতার কাঠামো থেকে দূরে এই হাওর। সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার মধ্যনগর এলাকা ও সন্নিহিত গ্রামগুলো নিয়ে লেখক যে-কাহিনি বয়ন করেন তা তাঁর অভিজ্ঞতার ফসল।

দীর্ঘশ্বাসেরা হাওরের জলে ভাসে
দীর্ঘশ্বাসেরা হাওরের জলে ভাসে

তাতে আছে হাওর-অঞ্চলে বসবাসরত মানুষগুলোর কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, অনিয়ন্ত্রিত আদিম বৃত্তির অনুপুঙ্খ বর্ণনা। আরো আছে আফাজ মাস্টার নামে এক স্কুলশিক্ষকের শিক্ষার আলো ছড়ানোর একনিষ্ঠ প্রয়াস। লেখক চিহ্নিত করেন জমিদারি প্রথার অবসান হলেও তার ছায়ারূপী জল-অধিপতিদের দৌরাত্ম্য ও শোষণপ্রক্রিয়া। এছাড়া দেখান প্রশাসনযন্ত্রের অত্যাচার ও ক্ষমতায়নের কুটিলতায় বিপর্যসত্ম মানুষগুলোর দুরবস্থা, তাদের সংঘাত-দ্বন্দ্ব। সেখানকার প্রজন্ম স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে হাওর থেকে পাথর তোলার কাজে ভবিষ্যৎকে বাধ্য হয়ে বন্দি করে রাখে। প্রকৃতির মধ্যে টিকে থাকার আদিম লড়াই আর মানুষের গড়া সভ্যতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত তাদের দ্বন্দ্বের মর্মতলে প্রবেশ করেন লেখক, তুলে আনেন জীবনের বহমানতা ও টিকে থাকার সৃষ্টিশর্তকে। এ-উপন্যাস একামত্মই বাসত্মবধর্মী ধারায় রচিত। গ্রন্থনা সরল বর্ণনামূলক, ভাষা প্রাঞ্জল ও নিরলংকার। লেখকের অভিজ্ঞতা ও সহমর্মিতায় উপন্যাসটি আঞ্চলিক জীবনছবির শিল্পপ্রতিমা হয়ে ওঠার দাবি রাখে।