দুটি কবিতা

two-poem

মোহাম্মদ রফিক

নাই বা হ’ল

 

কে যেন, কে যেন, আসে, কে যেন, কে যেন বা দাঁড়িয়ে,

ওই, ওই, চোখের পলক না ফেলতেই কে যেন, কে

খুব কাছাকাছি, ঘন হয়ে, ঘন নিবিড় নিস্তব্ধ

সকল শরীর থেকে খুলে ফেলে শাড়ি, ঘন হয়ে,

মুক্ত করে বেণি, আলতো স্পর্শ চুলে, ঘাড়ে,

ত্বক ছুঁয়ে যায় ত্বক, চুমু খায়, ওষ্ঠহীন ওষ্ঠে,

এক বলগা নিভন্ত চুলিস্নর আঁচ দাঁতের মাড়িতে,

ছাই, ছাই উজ্জ্বল, মধুর, মিষ্টি তাপহীন তাপ

একবিন্দু বৃষ্টি ফোঁটা চৈত্রের নিদাঘে, শূন্যতায়,

খরাদগ্ধ ঊষর প্রান্তর চেয়ে মরু-মরীচিকা;

থরথর, অস্পষ্ট উলঙ্গ স্বেদে লোনা কামার্ত শরীরে

উন্মাদ, উন্মাদ, পারাপারহীন পারাবারে, জ্যোৎসণায়, জ্যোৎসণায়

কে যেন শরীর ছুঁয়ে কালা ও বধির, বাসনায়,

অধীর, উন্মাদ, শূন্যতায়, শূন্য, শূন্যতায়,

 

যেন বা গানের স্তব্ধ লয়, একটি বা তুলির টান

রং ও রেখার আঁক,

 

মাঝেমধ্যে ঘটে থাকে!

 

জন্মবৃত্তান্ত

 

মাতাপিতা আমাকে জন্ম দিলো ১৩তম সন্তান

(কেউ মৃত, কেউ দেশান্তরী, কেউ মজুর…)

কক্সস-বাজারের নুড়ি ধুলো বালু পাথরের গায়ে-গায়ে

ছুঁয়ে বঙ্গোপসাগর, তারপর ভারত মহাসাগর

অতঃপর অতলামিত্মক, প্রশান্ত, এন্টার্কটিকা

তারপর শূন্য-শূন্য ঢেউ-বাষ্পে মেরুদেশ

ছুঁয়ে বরফ-পর্বত, বরফ, পর্বত-বরফ

 

মাতাপিতা আমাকে জন্ম দিলো ১৩তম সন্তান,

(কেউ ছাড়েনি আঁতুড়ের মাদুর, সেঁটে গেছে কেউ ভিখারি…)

বালু-ভুঁয়ে ঠাসা পর্ণকুটিরের খর-বালু মাখামাখি

পায়ে পায়ে থর-গোবি, হাতের মুঠোয় আরব মরূদ্যান

আর কিছুদূর যেতে না যেতে, পাড়ি ধরি সাহারা

মরীচিকা, মৃগতৃষ্ণিকা, মায়া, চিকচিকে বালু ঘূর্ণি

ক্রমে-ক্রমে, বিভ্রম, মসিত্মষ্ক-মগজে, আন্দিজ ঘিরে

কাঁটাতার, কাঁটালতা

 

মাতাপিতা আমাকে জন্ম দিলো ১৩তম সন্তান,

যেনবা হেলাফেলা সারাবেলা বালু ও ঘূর্ণির

নীলিমায়, সেই থেকে বালু ও সাগরের ঐক্য

কিছুতে ভুলি না, পারি না

পাথরের… কী তবে ভূমিকা।