নদী কারো নয়

সৈয়দ শামসুল হক

 

\ ৩২ \

 

উন্মাদের উন্মাদ! পাগলের সাঁকো কোথায় যে কে নাড়ায়! সাতচল্লিশের দেশভাগ কাল। সেই উন্মাদকালে আকাশে বর্ষণ নাই, মাটিতে ফাটল, আধকোশা স্তিমিত, মানুষেরা চঞ্চল এই মতো যে কোথাও থেকে একটা ঢোলের বাড়ি শোনা যাচ্ছে – গাঁজা ঝাঁই ঝপর ঝপর – নির্ণয় নাই যে কোথায়! এইকালে নদী পেরিয়ে কি কেবল ওয়াহেদ ডাক্তার নিজেকে হরিষালের রাজা ঘোষণা দিয়েছে? আরেকজনের কথাও আমরা একটু পরেই জানবো। তাঁর নাম জসিমউদ্দিন মিয়া মন্ডল, পদবি মন্ডল হলেও বিশ্বমন্ডলে

নিজেকে তিনি স্থাপন করেন। সে-কথা পরে পরে।

এখন ওয়াহেদের এহেন খবর পেয়ে এই যে মন্মথ দারোগা লাফ দিয়ে ঘোড়ার পিঠে উঠে বসলেন, তাকেও আমরা উন্মাদ বলেই সাব্যস্ত করবো, কিন্তু এজন্যে আমাদের সামান্য একটু অপেক্ষা করতে হবে। ওদিকে হালনাগাদ খবর এই যে, জলেশ্বরী ভরে গেছে কিং ওয়াহেদের কাহিনীতে। কিং? রাজা নয়, বাদশাহ নয়, নবাব নয়, ওয়াহেদ নিজেকে কিং ঘোষণা করে? হ্যাঁ সে করে! ইংরেজি শব্দেই করে! ভারতবর্ষ থেকে বিদায়ী ইংরেজ রাজা কিং জর্জের অনুকরণে!

পাকিস্তান হওয়ার সেই চোদ্দই আগস্ট সাতচল্লিশে ওয়াহেদ ডাক্তার নদীর পাড়ে খেয়া মাঝিকে ইংরাজের ঝাঁই রাজা তার মায়েকে চোদং মুঁই বলে নিজ নিবাস হরিষালে আসে, কিন্তু সে নিজেকে স্বাধীন রাজা ঘোষণা দিয়ে কয়েকদিন পরেই রাতের অন্ধকারে চাদর মুড়ি দিয়ে আবার জলেশ্বরীতে প্রবেশ করে। একে প্রবেশই বলতে হয়! দুনিয়ার চোখ তাকে যতই উন্মাদ দেখে না কেন, নিজেকে সে যখন রাজা মনে করছে তখন তার বেলায় আসা-যাওয়া ক্রিয়াপদ আর খাটে না – উন্মাদেরও একটা সম্মান পাওনা থাকে – প্রায়ই তো আমরা উন্মাদকেও আধ্যাত্মিক শক্তিমান বলে ঠাহর করি! – অতএব ওয়াহেদের আসা-যাওয়ার বদলে প্রবেশ ও বিদায় গ্রহণ বলাটাই এখন আমরা স্থির করছি।

রাতের অন্ধকারে ওয়াহেদ ডাক্তার জলেশ্বরীতে প্রবেশ করে। উদ্দেশ্য তার দুটি। এক, রাজকার্য চালাতে, দলিল-দসত্মাবেজে সই-স্বাক্ষর করতে একটা সিলমোহর তো লাগে, সেটা বানানো দরকার; জলেশ্বরীতে রাবার স্ট্যাম্প তৈরি করে একমাত্র একজন, ঢাকা মানিকগঞ্জ থেকে আসা হায়দর মিয়া, তবে স্ট্যাম্প বানানোর চেয়ে বই বাঁধাইয়ের কাজটাই তার আসল, তাই শহরে তার নামপরিচয় দপ্তরি হায়দর। ওয়াহেদের দ্বিতীয় কাজ, মোক্তার মইনুল হোসেনের সঙ্গে পরামর্শ করা। মোক্তার মানুষ – আইনকানুন তার নখদর্পণে – ততোধিক মোখলেছ দালালের মারফতে ওয়াহেদের সঙ্গে তার দোস্তিটা জমে ওঠে সেই কবে – বিশেষ করে নারী-সম্পর্কিত এক ঘটনায় ওয়াহেদ যে মামলার ফেরে পড়ে, সেই মামলা থেকে নিপুণ হাতে খালাস করিয়ে আনেন মইনুল মোক্তার।

ঘটনা আর কিছুই না, রাজারহাটের রহমতউল্লাহ্, প্রাইমারি স্কুলের হেডমাস্টার, তার স্ত্রী সন্তানবতী হয় না বহুকাল। তারপর কত চেষ্টা-তদবির। রহমতউল্লাহ্ বলে, ব্যাটাবেটি না হইছে তো কী! আর সকলের ব্যাটবেটি তো দেখিয়া সারা! না মাকে দ্যাখে না বাপকে পোছে। কিন্তু সন্তানের সাধ বলে কথা! নারীর এ সাধ কি যায়! রহমতউল্লাহ্র স্ত্রী গোপনে হরিষালে যায় সেখানকার মাজারে লাল সুতা বাঁধতে – যদি সন্তান গর্ভে আসে ওই সুতার কারণে! ওয়াহেদ ডাক্তারেরও কাছে সে ওষুধ নেয়; তিনরাত্রি নারীটিকে থাকতে হয় হরিষালে; পরবর্তী মাসেই সে যে সন্তানবতী হয়, তায় রহমতউল্লাহ্ সন্দেহ করে, মাজারে তার স্ত্রী নিশ্চয় অন্য কারো শয্যায় যায় বিধায় গর্ভবতী হয়ে পড়ে। হরিষালে স্ত্রী সঙ্গে সে যায় নাই, স্ত্রী স্বামীকে বলে নাই যে হরিষালে মানত-তদবিরের জন্যে যাচ্ছে, বলে যায় ছোটবোনের বাড়ি যাচ্ছে, স্বামীও সন্তানহীন স্ত্রীকে এই সামান্য আনন্দভ্রমণ থেকে বঞ্চিত করতে চায় নাই, সে অনুমতি দেয়, কিন্তু ঘটনা অচিরেই তার কাছে প্রকাশ পায়।

শিক্ষক স্বামীটি নিজে কমিউনিস্ট পার্টি না করলেও তার একটা অনুরাগ ছিলো এলাকায় এই পার্টি যারা করে তাদের জন্যে। কলকাতা থেকে  পার্টির লোকজন কেউ ইংরেজ পুলিশের থেকে গা-ঢাকা দেবার জন্যে এদিক পানে এলে, স্থানীয় কর্মী ভবতোষদা কখনো কখনো কাউকে কাউকে এই শিক্ষকের বাড়িতে এনে আপাতত তুলতো, তারপর পাঠিয়ে দিতো আধকোশার ওপারে দূরদূরান্ত গ্রামে, আর তেমন বাঘা আত্মগোপনকারী কেউ হলে সোজা একেবারে কুচবিহারের ভেতরে পাঠিয়ে দিতো ভবতোষদা। কপালের কপাল! – সেই ভবতোষদা হরিষালে নেতা পার করাচ্ছেন আর তখনই কিনা রহমতউল্লাহ্র স্ত্রী হরিষালের মাজারে ও ওয়াহেদ ডাক্তারের কাছে উপস্থিত সমত্মানবাঞ্ছা নিয়ে। অধিক আর এ গল্পের দরকার নাই। রহমতউল্লাহ্ মামলা ঠুকে দেয় মাজারের খাদেম আর তার সহযোগী হিসেবে ওয়াহেদ ডাক্তারের নামে, অভিযোগ ধর্ষণের!

সে-মামলা থেকে ওয়াহেদ ডাক্তারকে নির্দোষ খালাস করিয়ে আনে আর কে? মইনুল হোসেন মোক্তার। সেই থেকে দুজনের  দোস্তি, দোস্তিটা অবশ্য পুরনোই, সেই কলকাতায় একবার দুজনের ভ্রমণ থেকে, সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে বরখাস্ত ধর্ষণ মামলাটির কারণে দোস্তিটা বেশ জমজমা হয়ে পড়ে আর কী! তবে, এইখানে এই খবরটাও জেনে নেয়া যায় যে, রহমতউল্লাহ্র স্ত্রী মৃত সন্তান প্রসব করে। এ-কথাটাও তখন রাজারহাটে বেশ চাউর হয়ে পড়ে যে, রহমতউল্লাহ্ই বিষ প্রয়োগে স্ত্রীর গর্ভ নষ্ট করে। অচিরেই স্ত্রীটি তার ভাইয়ের পরামর্শে তালাক নেয়, ভাই তাকে দ্বিতীয় বিবাহ করায় আর সেই সংসারে নারীটির এখন পাঁচ সন্তান!

ওয়াহেদ ডাক্তার মইনুল হোসেন মোক্তারের কাছে আসে। রাত দু’পহরে দরোজায় ধাক্কা পেয়ে দরোজার ঝাঁপ খুলেই মইনুলের চক্ষু স্থির – কিং ওয়াহেদ! এই গরমকালেও ধূসর একটা চাদর মুড়ি দিয়ে দুয়ারে খাড়া। চোখ দুটি জুলজুল করছে। বাতি নাই জগতে, তারার কেবল রোশনাই কি ভাঙা চাঁদেরই আলো বিচ্ছুরণ, ওতেই চোখ দুটি দৃশ্যমান চাদরঢাকা মুখের ভেতরে। – আরে, ওয়াহেদ! ফিসফিস ঘড়ঘড়ে গলায় ওয়াহেদ – রব না করো, দোস্ত! বলেই তাকে ঠেলা দিয়ে বাড়ির ভেতরে ওয়াহেদ ডাক্তার প্রবেশ করে।

আমরা আগেই জেনে গেছি, মইনুল হোসেন মোক্তারের তখন নিজ বাড়ি নাই, আধকোশার গর্ভে কবেই তার বাড়ি গেছে গত বছরের তুমুল বর্ষাকালে। ছিলো সে বন্ধু দেবদত্ত বিশ্বাস মোক্তারের বাড়ি, তারপর লাশকাটা ঘরের পরে বাঁশবনের পাশে হানাবাড়ির মতো এক বাড়িতে গিয়ে সে ওঠে। বহুকাল বাড়িটাতে কোনো বসত নাই মানুষের। বলে, ওই লাশকাটা ঘরে যাদের ছেদন হয় সেইসব মড়া মানুষ খাড়া হয়ে এখানে চলাচল করে অমাবস্যাকালে। দুর্নামের এমন নিশুতি বাড়ি বলেই ওয়াহেদ ডাক্তার সাহস পায় আসতে।

ওয়াহেদ ডাক্তার জানে, নিজেকে তার রাজা ঘোষণা জলেশ্বরীর নেয়ামতউল্লাহ্ হাকিমের কানে এর মধ্যেই পৌঁছে গেছে। হরিষালের সে যদি রাজা, তবে জলেশ্বরী যে পাকিস্তান সেই জলেশ্বরী তার জন্যে পররাষ্ট্র! আর, হরিষালকে যদি নেয়ামতউল্লাহ্ তাঁর পাকিস্তানের অংশ বলে দাবি করেন তো বিদ্রোহী তিনি, নয় কি! মইনুল হোসেন মোক্তারের স্ত্রী, স্মরণ করাই তিনি আমাদের এখনকার প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক মকবুল হোসেনের জননী, তিনি ছিলেন অঘোর ঘুমে। গর্ভে তাঁর সন্তান অর্থাৎ ভবিষ্যতের মকবুল। প্রথম গর্ভ বলেই বড় ক্লিষ্ট ছিলেন তিনি, ঘুমিয়ে পড়েছিলেন স্বামীর মুখে রাতের অন্ন তুলে দিয়েই।

কিন্তু প্রথম গর্ভক্লিষ্ট বলেই তো আর চিরকালের ঘরগৃহিণী সত্তা তাঁর লোপ পায় নাই। তিনি চমকে ওঠেন, জেগে ওঠেন, নতুন মানুষের নিঃশ্বাস পান, আর্তস্বরে জিগ্যেস করে ওঠেন, কাঁই? রাইতনিশুতে কার সাথে কথা কন, মোক্তার সাব? – আরে, চুপ করি থাক! কাঁইও নয়! – কাঁইও নয় তবে রব করেন কার সাথে? উঠে পড়েন মোক্তার গৃহিণী। মোক্তার আরেকটা ধমক দিয়ে বলেন, রাজা! রাজা আসিছে হামার হানাবাড়িতে। উঠি দ্যাখ! জীয়ন্ত রাজা চক্ষে দেখিবার ভাইগ্য কয়ঝনার হয়!

ততক্ষণে ওয়াহেদ ডাক্তার, হরিষালের স্বঘোষিত কিং রাজা, বারান্দায় ছিন্ন একটা মোড়ার ওপর বসে পড়েছে, তখনো তার মাথামুখ-সর্বাঙ্গ সেই ধূসর চাদরে ঢাকা। মোক্তার তাড়া দেয়, ঘামিয়া যে সারা! চাদরখান খোলো! না, খোলে না। ছদ্মবেশ বলে কথা! পুরানকালের গল্পে তো আছেই, ছদ্মবেশ ধারণ করে রাজা বেরোয় নিশুতি রাতে। বোধহয় সেই কথাটি স্মরণ করে চাদর আরো জড়িয়ে পেঁচিয়ে বসে ওয়াহেদ। দুয়ারের কাছে এসেই অমন চাদরঢাকা মূর্তি দেখে প্রায় চিৎকার করে ওঠেন মোক্তার গৃহিণী।

ভূতের মতো উঠে দাঁড়িয়ে ওয়াহেদ ডাক্তার ঘোষণা করে, ভাবি, মুঁই! হরিষালের ওয়াহেদ ডাক্তার! তরাস না হন! স্বামী বলেছিলো রাজার কথা, কোথায় কে! ডাক্তার? ডাক্তারেরই গলার স্বর! ব্যাপারের তল না পেয়ে গৃহিণী হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। মোক্তার মইনুল হোসেন স্ত্রীকে ঠেলা দিয়ে ভেতরে পাঠায় – যা, যা, যায়া দ্যাখ না কেনে, দধি থাকিলে, খৈ দুকনা থাকিলে, আনি দে, বিচা কলা থাকিলে আন, গত হাটে যে আনিছিলোম। ডাক্তারের ভোক্ নাগিছে! যা! গৃহিণী ছনমনে হয়ে ভেতরে যান, মোক্তার বলে, বুঝিলে ডাক্তার, বেটি ছাওয়ার প্যাটে কথা থাকে না। কাইল বিহানেই চারোদিকে রাষ্ট্র হয়া যাইবে যে তোমরা আসিচ্ছিলেন। চাদর ঢাকি আসিছিলেন যদি চাদর খুলিয়া আহাম্মকের কাম করিছেন। আর আমিও য্যামন পরিবারকে একবার বলিয়াই ফেলিছিনু যে রাজা আসিছে হামার দুয়ারে, আসি দেখি যা!

পাগলেরও উল্লাস হয় – তবে ক্ষণেকে, ক্ষণেকেই সে তার বিষণ্ণ মন্ডলে তলিয়ে যায়, আর তবে সে মূলের পদ বিস্মরণ হয় না, তার উন্মত্ততার শেকড়টি। অচিরে, রাতের সেই অন্ধকারে, বাঁশবনের পাতায় পাতায় যখন কালো হাওয়ার সরসর, হয়তো পাশেই লাশকাটা ঘরটিতে তখনো কোনো শব পড়ে আছে ব্যবচ্ছেদের অপেক্ষায়, লম্ফজ্বলা লাল টিমটিমে আলোয় মোড়ার ওপরে বসে আছে ওয়াহেদ ডাক্তার, আর সমুখেই মাটির ওপরে থেবড়ে বসে মইনুল হোসেন মোক্তার, ভেতরে হাঁড়ি-বাসন নাড়াচাড়ার শব্দ উঠছে, মোক্তার গৃহিণী সন্ধান করছে দধি খৈয়ের – তখন হাঁক ওঠে চৌকিদারের – এ এ এ রে জাগো রে! আওয়াজটা সড়কের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে মিলিয়ে যায় কি যায় না, ওয়াহেদ বলে, আর জাগা!

মইনুল হোসেন বলে, তারপর বিবরণ তো সমুদয় তোমার জানা! ওয়াহেদ বলে, জানা হামার শ্যাষ। জানোই তো মুঁই ঘোষণা দিছোঁ হেথাকার রাজ হামারে! অস্থির হয়ে মইনুল বলে, শুনিছোঁ! শুনিছোঁ! – তো কথা একখান। জলেশ্বরী তো পাকিস্তানে আর পাকিস্তান এলা হামার শত্রুদ্যাশ, হয় কি নয়? তাই রাইতের আন্ধারে আসিতে হইলো। হামার টাইম কম। এই রাইতেই ফির নদী পাড়ি দিয়া যামো। হামার রাজকর্মের ছিলছাপ্পড় দরকার, বিচার-আচারের আইনবিধি দরকার। তুমি আমাক পুলিশের আইনের বইখান দিবে, আর হায়দর দপ্তরির দোকান হতে ছিল বানায়ে দিবে। ছিলের মার্কায় সিংহের মাথার ছবি থাকিবে! নিচে হামার নাম বড় অক্ষরে – কিং ওয়াহেদ, এলাকা হরিষাল!

উন্মাদ যে তার ছন্নমতির কারণ বিস্মৃত হয় না, অচিরেই তার প্রকাশ ঘটে। মইনুল বলে, কিন্তু আধকোশা যে পার হয়া যাইবেন, সেই আধকোশা কি আর আধকোশা আছে? পার্টিশনের দিন আধকোশা পড়িলো হিন্দুস্থানের ভাগে, ফির তিনদিন বাদে ঘুরি আসিলো পাকিস্তানে!

তো? – উত্তর দেয় না মইনুল, ঘোরলাগা চোখে লম্ফের আলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। মশা ভনভন করে উড়ছে, হাতে-পায়ে কাটছে, দৃকপাত নাই, শরীরের জ্বলন অনুভব নাই। ওয়াহেদ আবার ঠেলা দিয়ে বলে, তো? তৎক্ষণাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মইনুল, বলে, তো! তো-তো করেন ক্যান? বিষয় বুঝিয়া দ্যাখেন। এক নদীই কি ঘুরি আসিলো হামার ভাগে? ঘরের বেটি ধরি নিয়া গেলো দুশমনে, তিনদিন ধরি ভোগ করিলো তাকে, ফিরি যে আসিলো – আসিলো সে নষ্ট হয়া।

হয়, হয়! সমর্থনে মাথা দোলায় ওয়াহেদ। হয়, কথাখান ঠিক। নষ্ট নারী। মইনুল হোসেন তপ্তকণ্ঠে বলে, নষ্ট কইলেও কম কওয়া হয়! খেদ করে সে বলে, আর এই নদী নিয়া কী আন্দোলনই না ছিলো হামার। পুলিশ ঠেলিয়া ইংরাজ লাটের কাছে পর্যন্ত নালিশ নিয়া গেইছিলোম যে এই নদী ভাঙনে টাউন শ্যাষ, নদী বাঁধ দিবার ট্যাকা মঞ্জুর করেন। লাট সায়েবে তো কলিকাত্তা যায়া হুকুমও পাঠাইছিলো, এর মইধ্যে ধুমুস করি পাকিস্তানের ঘোষণা! হামার নদী বাঁধও শ্যাষ! নদী যদি নষ্ট নারীর মতো তিনদিন হিন্দুস্থানে থাকিয়া পাকিস্তানে ফিরি আসিলো তো, নারীও যেমন আর ঘরে তোলা যায় না, নদীর বাঁধ নিয়াও আর মাতামাতি করিতে ইচ্ছা করে না!

মইনুল হোসেনের এ-ছবি আমরা আগেই দেখে নিয়েছি, মনে নাই? আমরা নদীর পাড়ে যাই কি যাই নাই চোদ্দই আগস্টে পাকিস্তান হওয়ার সেই ভোরবেলায়? আমাদের সময় এখন – উন্মত্ত এক গল্পের সময়! গল্প তো মানুষই কেবল লেখে না – কাগজে কলমের কালিতে, যেমন মইনুলেরই ছেলে মকবুল হোসেন; গল্প লেখে সময়! আ, তবে সময়ের এও এক কাজ! সময়ের হাতে থাকে তবে রচনার কলম? ধ্যান করে দেখলে সে-কলমটিও প্রকৃত প্রস্তাবে মানুষেরই হাতে। মানুষের সঞ্চালন ছাড়া সময়ের নিজস্ব কোনো সৃজন ক্ষমতা নাই। সেই মানুষেরই হাতে আজ এই নদী আধকোশা এমন এক উন্মত্ত নাটকের দৃশ্যপট হয়ে উঠেছে যার সমুখে এখন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মইনুল হোসেন মোক্তার। এই সেই নদী! এ যেন মইনুল হোসেনেরই অন্তর্গত বিস্ময়-উক্তি – এই সেই আধকোশা!

আর, তারপর একদিন – হঠাৎ টাউনে ঘোষণা – আধকোশা পাকিস্তানের ভাগে ফিরে এসেছে! কাছারির মাঠে আবার মানুষের জমায়েত। আবার ট্রেজারির বারান্দায় টংয়ের ওপরে দাঁড়িয়ে পড়েছেন মহকুমার হাকিম নেয়ামতউল্লাহ্, আবার তাঁর ভাষণ। – বিসমিল্লাহের রহমানুর রাহিম! আল্লাহ্র অশেষ কৃপা ও সুচারু বিধান! আসুন আমরা হাত তুলে মোনাজাত করি আল্লাহ্র দরবারে, পাকিস্তানের সীমানা বৃদ্ধি পেয়েছে, জলেশ্বরীর পাশ দিয়ে বহে যাওয়া এই যে আপনাদের চিরপরিচিত নদী, এই যে আধকোশা, এই আধকোশা পাকিস্তানে ফিরে এসেছে। লাটসাহেব জরুরি টেলিগ্রাফ করে আমাকে জানিয়েছেন – আধকোশা এখন পাকিস্তানে। বলেন সোবহানআল্লাহ। আবার এ নদীর পানি আপনাদের। আপনাদেরই! শুধু নদী নয় – ওপাড়ে হস্তিবাড়ি গোল্লামারি মান্দারবাড়ি সমুদয় এলাকা এখন পাকিস্তানে চলে এসেছে। সোবহানআল্লাহ।

আমরা দেখেছি মইনুল হোসেন মোক্তারকে সেই সমাবেশে। উদ্ভ্রান্ত, রক্তচক্ষু, মুখে গ্যাঁজলা। পরণে নিত্যকার পাজামা শার্ট নাই, ফতুয়া আর লুঙ্গি। লুঙ্গির কোঁচা তুলে একটা বিষম ঝাড়া দিয়ে মইনুল হোসেন তখন ভিড়ের মধ্যে চেঁচিয়ে ওঠে – সেই প্রথম – নদী যে ঘুরি আসিলো সেই একে নদী কি আসিলো! লোকেরা তখন হাকিম নেয়ামতউল্লাহ্র আকাশে তোলা হাতের অনুসরণে হাত তুলেছে আল্লাহ্র দরবারে মোনাজাত করতে। মইনুল চেঁচিয়ে বলে, মোনাজাতের গুষ্টি মারি! যে নারী নষ্ট, তাকে ঘরে তোলে কাঁই! লোকেরা চঞ্চল হয়ে পড়ে। নারী! কোন নারীর কথা বলছে মোক্তার? মইনুল চিৎকার করে বলে, নদীও নারীর মতো, হয় কি নয়? হিন্দুস্থান উয়াকে রেপ করি ছাড়ি দিছে! ইংরাজ তাকে সহায়তা দিছে! ইংরাজের লাটসায়েব এলা নদী ফিরি দিলেই কি তাকে হামরা নেমো? হাকিম সায়েবের সাথে মোনাজাতে হাত তুলিমো? নয়! নয়!

মোনাজাত প্রায় ভন্ডুল হয়ে পড়ে। নেয়ামতউল্লাহ্ পুলিশকে বলেন, ওদিকে গন্ডগোল কিসের? যান, দেখুন। পাকিস্তান! পাকিস্তান! এখন পাকিস্তান! গন্ডগোলের কোনো অবকাশ নাই! ভিড়ের মধ্যে কে একজন, বোধ করি হাইস্কুলের হেড মৌলভি, তিনি হঠাৎ বলে ওঠেন, ও মোক্তার সায়েব, আপনি কি কাদিয়ানির ইমামতিতে মোনাজাত করায় নিষেধ করছেন? তখন একটা চাঞ্চল্য পড়ে যায় হেড মৌলভিকে ঘিরে। জনতার কারো কারো মনে পড়ে যায় যে, বাংলার শেষ ইংরেজ লাট লর্ড কেসির জলেশ্বরী আগমনকালে কাদিয়ানি কথাটা শহরের নেতা মুসলমানদের কানে উঠেছিলো নেয়ামতউল্লাহ্কে নিয়ে।

আমাদের মনে পড়বে, লাটসাহেবকে কে আগে মালা পরাবে – কংগ্রেস না মুসলিম লীগের নেতা, এই নিয়ে নেয়ামতউল্লাহ্র ডাকা স্থানীয় গণ্যমান্যদের মিটিংয়ে বিতন্ডা হয়েছিলো। মুসলিম লীগের পক্ষেই যখন নেয়ামতউল্লাহ্ রায় দেন তখন কংগ্রেসের রাজেনবাবু গলা চড়িয়ে বলেন, মাল্যদান পরথমে করিবে কংগ্রেস, হাকিমস্যার আপনি এই কথাটা আগে ঘোষণা করেন। – মালা! – গেট! – মালা! – গেট! – আগে কংগ্রেস, তারপরে গেট! – আগে হিন্দু না মোছলমান? হাকিম সায়েব, আপনি তো মোছলমান, আপনি বলেন মোছলমান আগে কিনা! কোরানের সাথে বেইমানি না করেন!

কোরানের কথা উঠে পড়ায় যতটা না, হাকিম নেয়ামতউল্লাহ্ মনে মনে ত্রস্ত হয়ে ওঠেন তিনি মুসলমান কিনা এই প্রশ্ন অকস্মাৎ উত্থাপিত হওয়ায়। নেয়ামতউল্লাহ্ নিজে জানেন তিনি মুসলমান, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন, কোরান পড়েন, কিন্তু তিনি চার মজহাবের কোনোটাতেই নেই; তিনি কাদিয়ানি! এবং কাদিয়ানিরা আসলে মুসলমান কিনা এ নিয়ে বাংলা মুলুকে যতটা না তার অনেক অধিক পাঞ্জাব ও দিল্লি অঞ্চলে বাহাস আছে। এমনও বলা হয়, ভারতবর্ষে মুসলমানদের বিভক্ত করবার জন্যেই কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের জন্ম দেয় ইংরেজ। তারা হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহেওয়াসাল্লামকে শেষ নবী না মেনে তাঁর পরে পাঞ্জাবের কাদিয়ান গ্রামে জন্ম নেয়া একজনকে নবী মানে। খাঁটি মুসলমানের কর্তব্য হয় এ-কথা শোনামাত্র নাউজুবিল্লাহ পড়া। কিন্তু অতটুকুতেই শান্ত নয় অনেক মুসলমান, এরা কাদিয়ানিদের বিরুদ্ধে জেহাদ পরিচালনা তথা এদের খতম করার কথাও বলে; ফলে বেশ কয়েকবার দাঙ্গা-হত্যাও হতে থাকে। নেয়ামতউল্লাহ্ ঈষৎ নয় যথেষ্টই শংকিত হয়ে পড়েন – জলেশ্বরীর মানুষ কি জানে তিনি কাদিয়ানি? দ্রুত হাত তুলে তিনি বলেন, থামুন আপনারা! আসছেন লাটসাহেব, তিনি রাজপ্রতিনিধি, রাজার চোখে হিন্দু মুসলমান এক, আপনারা এ নিয়ে তর্ক তুলবেন না।

না, সেদিন এ নিয়ে বিতন্ডা আর অধিক হয়ে পড়ে নাই। হাকিম নেয়ামতউল্লাহ্ শংকিত হয়ে পড়েন তাঁর কাদিয়ানি পরিচয়টা না জলেশ্বরীতে প্রকাশ হয়ে পড়ে। তিনি সিদ্ধান্ত দেন, তিনি নিজেই প্রথম মালাটি পরাবেন লাটসাহেবের গলায় আর তাঁর দু’পাশে দাঁড়ানো কংগ্রেস আর মুসলিম লীগ একসঙ্গে মালা দেবে এর পরেই। মালা দেয়া নিয়ে এমন জেদাজেদি দেখে সেই সভা থেকে মইনুল হোসেন উভয়পক্ষকে পুটকি মারো বলে বাইরে বেরিয়ে যায়। এবং কাছারির মাঠে অর্জুনের চায়ের দোকানে গিয়ে বসে, শালার শালা! শহরের চিন্তা কারো নাই। আধকোশার ভাঙনে যে শহর থাকে কি না থাকে তারে ঠিক নাই, ইয়ার মইধ্যে লীগ আর কংগ্রেস! জিন্না শালা কি যে শল্লা দিছে মোছলমানের কানে, আর গান্ধীর নেংটিতে যে কোন জাদু হিন্দুরা দেইখছে, সব শালার শিক্ষা হইবে যেদিন আধকোশা আসি তামাম ধ্বসি নিয়া যাইবে!

হ্যাঁ, সেই সভার পরেপরেই মুসলিম লীগের স্থানীয় নেতা নজির মিয়ার বাড়িতে ছিলো তাঁর বাবার বছর-কাজ, অর্থাৎ মৃত্যুবার্ষিকী, মিলাদ আর গরু জবাই করে ভোজ। মিলাদ পড়ান হেড মৌলভি হাফেজ আবদুল গণি হাওলাদার, টাঙ্গাইলের মানুষ তিনি, মিলাদ শেষে, বিরুই চালের ভাতে লাল ভুনা গরুর গোস্তের ঝোলে হাত ডুবিয়ে মুখে লোকমা তুলতে তুলতে তিনি নজির মিয়ার কানে কানে বলেন, পাক বড় দুরস্ত হয়েছে! তবে একখান কথা! – কী কথা আবার! ভোজন আয়োজনে তবে কোনো ত্রুটির কথাই কি? নজির মিয়া আলুথালু হয়ে মৌলভির দিকে তাকান। মৌলভি সাহেব বরাবর মানভাষায় কথায় বললেও তখন টাঙ্গাইলি তার জবানে ফোটে, বলে, একখান গোপন খবর দিবাম! নজির মিয়া গোপন খবরের ইশারা পাওয়ামাত্র কান নামিয়ে আনেন মৌলভির মুখের কাছে, মৌলভি বলেন, কাদিয়ানি! হাকিম সাহেব মোছলমান নয়, কাদিয়ানি! তবে এখনো প্রকাশ করবাম না। আপনিও গোপনই রাখবেন। পাকিস্তান যদি হয় তবে তখন জনগণকে জানাবাম।

কিন্তু কথা গোপন থাকে না। জলেশ্বরীর মাথা-মাথা মুসলমানদের মধ্যে কথাটা চালাচালি হয় যে হাকিম নেয়ামতউল্লাহ্ কাদিয়ানি আর তিনি মানেন না যে আমাদের রাসুলুল্লাহ্ শেষ নবী! আর সেই কথাটাই সাতচল্লিশের আঠারোই আগস্ট কাছারির মাঠে শুকরিয়া সমাবেশে ফাঁস হয়ে পড়ে। ফাঁস আর কেউ করেন না, হাইস্কুলের হেড মৌলভিই করেন, তিনি মইনুল হোসেনকে জিজ্ঞাসা করে বসেন, ও মোক্তার সায়েব, আপনি কি কাদিয়ানির ইমামতিতে মোনাজাত করায় নিষেধ করছেন?

কিন্তু অধিক দূর গড়ায় না ব্যাপারটা। জলেশ্বরীর সাধারণ মানুষও কাদিয়ানিদের ব্যাপারে প্রায় কিছুই জানে না। তারা মোনাজাতে হাত উঠিয়েই রাখে। ওঠাবে না! আধকোশা নদী যে হিন্দুস্থানের ভাগে চলে গিয়েছিলো, আবার ফিরে এসেছে তাদেরই কাছে, তাদের কাছে কি পাকিস্তানেই তো ফিরেছে! মইনুল হোসেন মোক্তার তখন পরণের লুঙ্গি প্রায় কোমর পর্যন্ত তুলে বলে ওঠে, চ্যাট হামার! লোকেরা হতবাক হয়ে যায়। সেই প্রথম গুঞ্জন ওঠে, মোক্তারের মাথাখান গেইছে! পাগল হয়া গেইছে! লোকেরা চুকচুক করে, আফসোসে মাথা দোলায়, বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়, বাড়ি পর্যন্ত যেতে যেতে আলোচনা করে – মইনুল হোসেন মোক্তার আর সুস্থ নয়! তার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে!

কিন্তু তার এই মানসিক বিপর্যয়ের কারণ কী তাও মানুষেরা অনুমান করে পায় না। নারীরা স্বামীর কাছে বিবরণ শোনে, লুঙ্গি ওঠানোর দৃশ্য কল্পনা করে কেউ কুলকুল করে হাসে, কেউ অাঁচলে মুখ ঢাকে, কেউ সমবেদনায় কাতর হয়ে পড়ে, বলে, আহা, এমন মানুষখান! এমন সম্মানী! তারে মাথা নষ্ট করিলো আল্লায়! আবার কোনো নারী মোক্তারের বৌয়ের কথা মনে করে ওঠে, তাঁই না পোয়াতি বলিয়া শুনিছিলোম! তখন আলোচনা হয় – বিবাহের অনেক বছর পর্যন্ত সন্তান হয় না, তারপর কত তত্ত্ব তাবিজ ঝাড়ফুঁক রংপুরে বড় ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা, এতদিন বাদে যদি আল্লা মুখ তুলিছে তো দ্যাখো কালের গতি – ভাতার গেইলো পাগল হয়া!

এতক্ষণে সাড়া পাওয়া যায় ঘরের ভেতর থেকে, ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরের ভেতর থেকে মোক্তার গৃহিণী ডাক দিয়ে বলে, আসেন তো! মইনুল হোসেন কানে পশে না পরিবারের ডাক। ওয়াহেদ ডাক্তার বলে, ভাবিসাবে বোলায় তোমাকে। কিন্তু মাটির ওপর দম ধরে বসেই থাকে মইনুল। ভেতর থেকে আবার ডাক আসে, খোরা তৈয়ার, নিয়া যান। খোরা মানে মাটির বাসন। আধকোশা নদীর ভাঙনে মইনুলের বাড়ি যে মুহূর্তের মধ্যে তলিয়ে যায়, আর সে সংসারের বাসনকোসন করে নাই। দেবদত্ত বিশ্বাসের বাড়িতে থাকাকালে নিজের তৈজসের দরকার পড়ে নাই। তারপর লাশকাটা ঘরের পাশে এই হানাবাড়িতে ওঠার পর থেকে স্বামীকে কতদিনই তাগাদা দেয়া গেছে – অন্তত টিনের দু’একখান থালাবাটি আনেন! মইনুল আনে নাই! বরং ক্ষিপ্ত হয়ে বলেছে, এক কথা কত ঘ্যানঘ্যান করিবি? হামার ভিটা গেইছে, আল্লার মাটিই এলা হামার ভরোসা! মাটির খোরাতেই খামো। তুই না খাইস, কলার পাত কাটিয়া খা!

আমরা হয়তো এমনও অনুমান করতে পারি যে, মইনুল হোসেনের উন্মাদ রোগের সূচনা হয় আধকোশা নদীতে তার ভিটে তলিয়ে যাবার ঘটনাতেই। আধকোশা! আধকোশা! এখন ওয়াহেদ ডাক্তারের সমুখে মইনুল মাটির ওপর থেবড়ে বসে বলে, ভাইরে! তোমরা তো স্বাধীন রাজা ঘোষণা করিলেন! তাও তোমার এলাকাটা একটা তো তুমি করি নিছো। মোর দ্যাখো! নিঃসম্বল নিঃসহায়! বারবার ডাকার পরেও স্বামীর সাড়া না পেয়ে মইনুল হোসেনের গৃহিণী নিজেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। ওয়াহেদ ডাক্তারের সমুখে মাটির খোরায় দধি খৈ ধরে দিয়ে খিন্ন গলায় বলেন, বিচা কলা দুইখান ছিলো, কখনবা কাউয়া আসি ঠুকরি গেইছে, ও আপনাকে দিবার নয়! – হইবে! হইবে! ইয়াতেই চলিবে! (চলবে)