নদী কারো নয়

সৈয়দ শামসুল হক 

\ ১৫ \ 

অন্ধকারে চ্ছলচ্ছল করে চলেছে আধকোশা। কন্ট্রাক্টর সাইদুর রহমান কী জানবেন, যখন তিনি মকবুল হোসেনের সঙ্গে গল্প করছেন, কী তাঁর – জননন্দিত ঔপন্যাসিক মকবুল হোসেনের মনের মধ্যে তুফান তুলছে। আর ওদিকে ড্রাইভার মেহেরুল্লারই বা কী! মকবুল হোসেন নদীর অন্ধকার বুকে চোখ পেতে আছে। নদীর মতো নারী। শুধু নারী কেন? নর-নারী সবাই। মানুষমাত্রই নদীর মতো। নদীর সঙ্গে মানুষের তুলনা করেছিলেন টলস্টয়। লিও টলস্টয়। আহ্, মকবুল, তুমি শুধু যুবক-যুবতীর লাগে-ভাঙে টানে-ঠেলে প্রেমকাহিনি লিখেই জীবন কাটালে! জনপ্রিয়তার রথে চড়ে নিজের আত্মাটিকে সেই রথের চাকায় পিষে চলেছো হে! আত্মা এবং উচ্চাশা। যৌবনের সেই দিনগুলো। টলস্টয়ের মতো উপন্যাস লিখতে চেয়েছিলে। তাঁর পুনরুত্থান নামে উপন্যাসখানা কতবার না পড়েছো তুমি! সেখানেই তো আছে, মানুষ নদীর মতো। কোথাও নদী সংকীর্ণ, কোথাও সে দিগন্ত বিস্তৃত। কখনো সে শীর্ণ, শুকিয়ে যাওয়া খাল। কখনো বা বর্ষায় ভৈরবীর মতো উদ্দাম উত্তাল। খলখল করে হেসে চলেছে দক্ষিণের দিকে। কখনো পাড় ভাঙছে। কখনো রচনা করছে চর, মানুষের জন্যে আবাদের জন্যে বসতের জন্যে নতুন জমি।

রাতের অন্ধকারে আধকোশা দীপ্তিমান – নক্ষত্রের আলোয় কি মকবুলেরই চোখের আলোয়। বাতাসের অাঁচড় আর পড়ছে না। হিল্লোলিত নয় আধকোশার বুক। মকবুল একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে নদীর দিকে। ওই নদী থেকে কুসমি উঠে এসেছিলো। কুসমিকে দেখে, কিংবা আরো সত্য অস্পষ্ট নারীমূর্তিটিকে হঠাৎ আবিষ্কার করে মনে হয়েছিলো – প্রিয়লি! তার মেয়ে! ভাগ্যের পঙ্কিল আবর্ত থেকে, দুর্ভাগ্যের কাদামাখা শরীর নিয়ে ডুব দিয়েছিলো সে নদীতে। গাহনের জন্যে। শুদ্ধ হবার জন্যে। আবার ফিরে থেকে সব শুরু করবার জন্যে। কিন্তু এই ভ্রম ছিলো ক্ষণকালের। ভ্রম মাত্রেই ক্ষণকালের। ভ্রম দীর্ঘস্থায়ী হলে মানুষ আর অগ্রসর হতে পারে না। কিংবা হয়। খাদের দিকে যায়। অতল গহবর। জীবনের বাঁকে বাঁকে এমনি কত গহবর। টলস্টয় হতে গিয়ে সামান্য শস্তা উপন্যাসের লেখক হয়ে গহবরে তো সেও পতিত। না, ভ্রম অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী হয়ও। তার বেলায় হয়েছে। পাঠকের প্রিয়তাকেই, আর বই কাটতির তেজি বাজার থেকে দু’হাত উপচেপড়া টাকাকেই সে সার জ্ঞান করেছে। পতনও দীর্ঘস্থায়ী তবে। আর এ এমন, অভ্যেস হয়ে যায়। তখন নিজের ভেতরটা দু’ভাগ হয়ে যায়। একভাগ তখনো স্বপ্ন দ্যাখে, উচ্চাশা পোষণ করতে থাকে। হবে একদিন! কখনো-না-কখনো হবে! আরেকভাগ ভাঙাচোরা স্বপ্ন বুকে জড়িয়ে ধরে মনে করে, আহ্ আমি অলংকার পরে আছি গো!

আমরা জানি নদীর যে-জল বহে যায় তা আর ফেরে না। এই নিয়েই তো সেই কথাটি যে, এক নদীতে দু’বার নামা যায় না। কিন্তু কাহিনিতে আমরা ফিরে যেতে পারি। বারবার ফিরেই তো যাচ্ছি অনেকক্ষণ ধরে। মকবুলের চিন্তাস্রোতে বাধা আসে, টুংটাং করে কিছু বেজে ওঠে। প্রথমে ঠাহর হয় না পকেটে যে তার মোবাইল ফোন, বাজছে। মকবুল হোসেনের মনে হয়, তার করোটির ভেতরেই সংগীতটি হচ্ছে। সন্ধ্যা থেকে এ পর্যন্ত যা ঘটেছে, চেতনায় ও চেতনা পারে, বর্তমানের ভেতরে ও অতীতের পর্দা ছিঁড়ে, এই যে নদী বহে যাচ্ছে, ওই যে নক্ষত্র জ্বলছে, ওই যে দূরে কেউ লণ্ঠন হাতে পাড় দিয়ে হেঁটে চলেছে, আর এই নৌকোটি যে অন্ধকারে দ্বিমাত্রিক হয়ে মৃদু তালে উঠছে ও নামছে, এই সকলের ভেতরে অব্যক্ত যে বাণী ছিলো তারই জন্যে একটি আর্ত-সুর কেউ রচনা করে এখন পরীক্ষামূলকভাবে বাজাচ্ছে। সুরকারের যদি পছন্দ হয় সুরটি, বিভাব যদি সংগত হয়ে দেখা দেয়, তখন একে বাহন করে বাণীটি স্ফুট হবে। মকবুল অপেক্ষা করে। মকবুল কান পেতে থাকে। পরমুহূর্তেই ঘোরটি কেটে যায়। সে দ্রুত মোবাইল ফোনটিকে পকেট থেকে বের করে বোতাম টেপে। – হ্যালো! কে? সাড়া নেই। – হ্যালো, হ্যালো। ফোনের ভেতরে সোঁ সোঁ শব্দ। – হ্যালো। শব্দটা হঠাৎ পরিষ্কার হয়ে যায়। – বাবা, বাবা! তুমি শুনতে পাচ্ছো? মকবুল অবসন্ন হয়ে যায়। প্রিয়লি! – মা, তুই! – বাবা! – বল্, মা। – তুমি কোথায়? – জলেশ্বরীতে। – আমাকে নিয়ে যাও, বাবা। পরক্ষণেই আর্তস্বর ভেসে আসে – না! একটি পুরুষকণ্ঠ শোনা যায়। চাপাস্বরে বলছে, কোথায় ফোন করছিস, মাগি! আহ্। আর্তনাদ করে ওঠে মকবুল। ধমনী ছিঁড়ে রক্ত পড়ছে তার। মাথার ভেতরে হাতুড়ির ঘাই। মস্তিষ্ক ছিটকে ছিটকে পড়ছে। আহ্ আহ্ আহ্। এ কি সম্বোধন! তার মেয়েকে! এমন কুৎসিত ভাষায়! ফোন কেটে যায়।

দ্রুত ঘরে ছুটে আসে মকবুল হোসেন। ফোনটি আলোর কাছে নেয়। নম্বরটি পড়ে দেখে। অচেনা নম্বর। জলেশ্বরী আসবার আগে যে ফোন থেকে প্রিয়লি কথা বলেছিলো, এটি সে ফোন নয়। মকবুল রিং করে। ফোন বেজেই চলে। কেউ ধরে না। আগের নম্বরটি সে সেভ করে রেখেছিলো, সেটিতে এবার সে রিং করে। এখানেও বেজে চলে। ফোন কেউ ধরে না। নদীটিতে বাতাস আছড়ায়। নদী চ্ছলচ্ছল করে ওঠার বদলে কাঁদে। হ্যাঁ, নদীও মানুষের মতো। কাঁদে। নদী কাঁদে। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, মকবুলের মাতৃভাষা বাংলাভাষারই লেখক, নদীকে তিনি কাঁদতে শুনেছেন। সে নদীর নাম ছিলো বাকাল। টলস্টয় কেন, তাঁর মতোও হতে পারে নাই মকবুল হোসেন। ধীরে বড় ধীরে তার কান্না পায়। ঘর থেকে বারান্দায় ফিরে এসে, অন্ধকার নদীর দিকে মুখ করে, মকবুল হোসেন কাঁদতে থাকে।

আমরা নকশীকাঁথা শেলাইরত রমণীদের কি দেখি নাই? আমাদের মা-জননীদের কি দেখি নাই? যুগের পরিবর্তন আছে, রুচিরও বিবর্তন আছে। অনেক কিছু পেছনে পড়ে যায়। অনেক কিছু আমরা আর জীবন নিকাশে জরুরি মনে করি না। এর ভালোমন্দ আছে। তবু, বিতর্ক এই – যা কিছু হারিয়ে যায়, হারিয়ে যাবার যোগ্য বলেই কি? সেই হারিয়ে যাওয়াটা লোকসানেরও হতে পারে। আমরা কজনাই বা সে ক্ষতি বিবেচনা করি! আমরা এখন সমূহ লাভের দিকে বর্তমানে ধাবমান। বর্তমান তো অতীতের ভিতেই দাঁড়িয়ে আছে, নাকি? ভারতবর্ষ বিভাগের দিনগুলো এখন অনেক পেছনে। রাজনীতির বড় নৌকোয় আমরা আরোহণ করবো না। সামান্য সাধারণ মানুষের জীবনে সেই বিভাগের কথা আমরা বলতে শুরু করেছি। বলবারও পরিপাটি আছে, যে-মতো নকশীকাঁথায় আমরা অবলোকন করি। আমাদের মাতামহী পিতামহীদের সে সকল কাঁথা আর কোথায় বা এখনো আছে। হয়তো জাদুঘরে! বিভাগ তথা পার্টিশনের দিনও এখন ইতিহাসেই মাত্র। কিন্তু কে বা আর ইতিহাস পড়ে!

নকশীকাঁথা সম্পর্কে গীত গাইবো না। হায়, এ শিল্প এখন আর পারিবারিক নয়, বাণিজ্যিক হয়ে পড়েছে। এখন নকশীকাঁথা তার শত শত বৎসরের সৃজন-কারণ থেকে অপসৃত হয়ে গেছে। একদা নকশীকাঁথা যে কী ছিলো, হেনরি মিরোর অাঁকা চিত্রসকল দেখে এখন পাশ্চাত্য অভিমানী আমাদের মনেই পড়বে না কত-কত আগে এর অধিকব্যাপী ও অধিক জীবনস্পর্শী কল্পনা আমরা নকশীকাঁথায় দেখেছি – হা আমাদের অন্ধদৃষ্টি! – সেই যে অবিশ্বাস্য স্বপ্নচর সেলাই ছিলো রমণীদের রক্তের অন্তর্গত, সুতোর ফোঁড়ে ফোঁড়ে অদ্ভুত পাখি ও প্রাণীসকল, পালকি, কুটির, বঁধুসাজে কন্যা, জননীর কোলে শিশু, বৃক্ষপাতা, সাপ ও নিটোল জলাশয়, নীলডানার পরী, ছিলো তা জীবনেরই স্বপ্নপ্রবাহ প্রকাশকারী, ছিলো এই ব্রহ্মপুত্র ধোয়া ভূতলকে স্বর্গতুল্য করে তোলার অভিলাষী। সেসব আজ যদি জানতে হয় তবে কবি জসিমউদ্দীনের কাছে আমাদের ফিরে যেতে হয়, তাঁর নকশীকাঁথার মাঠ কাব্যটি আমাদের পাঠ করতে হয়। আমরা সেই কাব্যের শরীরে কাঁথা সেলাইরত রমণীদের এখন এই পর্যায়ে একবার দেখে নিই। সোনা রোদ্দুরে ভেসে যাওয়া আঙিনায় মেলন করে ধরা কাঁথার জমিনে তারা ঝুঁকে পড়ে মনের মধ্যে সন্ধান করছে চিত্র, স্পষ্ট কোনো নকশা তাদের মনের মধ্যে নাই। কেবল একটি আকাঙ্ক্ষা ও তাড়নাই শুধু রচনার, আর নিবিষ্ট নিবিড় তাদের হাতে নানা রঙের সুতো, বিভিন্ন আকারের কয়েকটি সোনামুখী সুই, এই মাত্র। অতঃপর প্রথম ফোঁড়টি পড়ে। অতঃপর একটি রঙের সুতোয় দীর্ঘকাল ছবি তোলার পর অন্য রঙের সুতো আমরা তাদের হাতে তুলে নিতে দেখি। নতুন সেই সুতোর রঙে এবার ফোঁড় পড়তে থাকে। চিত্রের পর চিত্র হতে থাকে। বেলা ঢলে আসে। লেবুগাছে চঞ্চল পাখি এসে বসে। কুটিরের চালে শ্যামাপাখি ডানা ঝাড়ে। তারাও বুঝি তাদের পাখিচোখে নকশা দেখে পাখার ঝাপটানি সম্বরণ করে স্থির হয়। লেবুগাছ তার সুগন্ধটি বাতাসে পাঠায় বিস্ময়ে। ওঠো হে, এলা ওঠো। গাও তোলো। রাইতের রন্ধনের সময় হয়া যায়। গল্পকারের হাতে মানবজীবনের বয়ান কিংবা সীবনও তাই। অবিকল তা-ই। এক রং অনেকক্ষণ, তারপর অপর রঙে। গল্পের বুনোন এক রঙে হতে হতে অপর রং এসে পড়ে। কেন এক রঙে সেলাই করতে করতে অপর রঙের সুতো সুইয়ের ছিদ্রে পরিয়ে নিতে সাধ হয় কাঁথার রমণীরা স্পষ্ট করে জানে না। কিন্তু আমরা জানি। ক্লান্তি নয়, অবসাদ নয়, কল্পনাই তাদের তাড়না করে। গল্প-কথকের সরণিতেও অবিকল এই। নিজের জন্মশহরে বহুদিন পরে ফিরে আসা মকবুল হোসেনকে নিয়ে আমরা অনেকক্ষণ একটি সুতোয় কাজ করেছি, অতঃপর ভিন্ন সুতোয় যাই। আমরা সাইদুর রহমান কন্ট্রাক্টরকে বাংলাবাড়ি থেকে নিষ্ক্রান্ত করে, তাঁকেই এখন অনুসরণ করতে ইচ্ছা রাখি।

আমরা ওই দেখি, জিপগাড়িটি বিকেল থেকে তাঁর ফিরে আসার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। তবে, বাংলাবাড়ির নিকট কাছে নয়। যদিও গাড়িটি এখান পর্যন্ত আসতে পারে, রাস্তা পাকা, কিন্তু সাইদুর রহমান বিশেষ বিশেষ দিনে গাড়িটি বাংলাবাড়ি থেকে বেশ খানিক দূরে দাঁড় করিয়ে পায়ে হেঁটে রওনা দেন। এইসব দিনে তাঁর গন্তব্য তিনি তো জানেনই, তাঁর ড্রাইভার মেহেরুল্লা মিয়াও জানে। সে এও জানে গাড়িটি ঠিকানা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায়ই, দূরে নেমে পড়বার অর্থ হয় না, কিন্তু আমরা কি কোনো কোনো গন্তব্যে পৌঁছুনো নিয়ে অপ্রতিভ থাকি না? তবু যাই। নানা বাহানা করি। ঘরের চালে কাকের মতো মুখ গুঁজে ভাবি কেউ আমাদের দেখছে না। মেহেরুল্লা জানে, এইসব দিনে মনিব এখানে নেমে পড়ে কিছুক্ষণ এলোপাতাড়ি ঘুরে বেড়াবেন, যেন এলাকার তত্ত্বতালাশ করাই তাঁর উদ্দেশ্য। কিন্তু না। হাঁটতে হাঁটতে একসময় তিনি টুক করে হাওয়ায় মিলিয়ে যাবেন। মেহেরুল্লা উদাস চোখ মেলে বসে থাকবে। তবে সে আড়চোখে মনিবের গতিবিধি লক্ষ করতে থাকবে। যদিও তার জানা অতঃপর কোথায় তাঁর গন্তব্য, তারপরও প্রতিবারই সে প্রখর হয়ে থাকে, যেন এই প্রথম সে তাঁর মনিবের দিশাটি ধারণায় পেতে চাইছে। এত সত্ত্বেও চোখ তাকে ফাঁকি দেবে, প্রতিবারই দেয়। হঠাৎ করেই কন্ট্রাক্টর সাহেব মিলিয়ে যাবেন। এই ছিলেন, এই নাই। মেহেরুল্লা তখন ড্রাইভারের সিটে গা ঠেলে আরাম করে বসে পড়বে। বিড়ি ধরাবে। মাথা চুলকাবে। অপেক্ষা করবে কতক্ষণে তার মনিব কুসমির কুটির থেকে বেরুবেন। অনেকদিনের ড্রাইভার সে। জীবন শুরু করেছিলো কন্ট্রাক্টর সাহেবের বিবিসাহেবের নামে নাম মমতাজ বাস সার্ভিসের হেলপার হিসেবে। সেখান থেকে ড্রাইভার। শুরু করেছিলো জলেশ্বরী-উলিপুর-চিলমারী রুটে, পরে তিস্তার ওপরে রেলের ব্রিজে গাড়ি চলার মতো তক্তা পাতার পর জলেশ্বরী-রংপুর রুটে। জলেশ্বরী-ঢাকা রুটে বাস চালাবার উচ্চাশা ছিলো তার, কিন্তু তার হাত পাকা, মানুষটাও বড় বিশ্বাসী দেখে কন্ট্রাক্টর সাহেব তাকে নিজের ড্রাইভার করে নিয়েছেন। মেহেরুল্লার এখন বয়স হয়েছে। সাইদুর রহমানকে তো আজ থেকে তার জানা নয়। বৃদ্ধকালে কারো নারীর বিলাস হতে দেখে আর যে কেউ অবাক হয় হোক, মেহেরুল্লা হয় নাই। আর, মনিব তাকে এত বিশ্বাস করেন বলে, সেই গরবের গরমে বিস্ময়টা চাপা পড়ে যায়। তবে, জগৎও তার জানা। মানুষও তার অজানা নয়। প্যাটের পরেই চ্যাট! হাঁ, হবার পারে! কেনে নয়! বুড়া হইছেন বলিয়া তো আর হাউস মরি যায় নাই! আর দ্যাখেন আল্লার কারিগরি, প্যাটের নিচেই চ্যাট ঝুলেয়া দিছে তাঁই। মনিবের কুসমির কাছে যাওয়াটা সে উদাস মনে দ্যাখে। মেহেরুল্লা যুক্তি বিবেচনাও করে – নিচ্চয় তার মনে কোনো দুষ্ক আছে, কারো কাছে তা কবার না পায়, তাই কুসমির কাছে যায়, যায়া শান্তি পায়! আল্লা সকল নিদানেরই উপায় একটা করি রাখিছে। নারীর থেকি অধিক শান্তি আর কোনঠে পাওয়া যায় হে! শরীলে শান্তি হইলো তো মনেরও শান্তি, হয় কি নয়!

আধকোশা নদীর পাড়ে সাইদুর রহমানের এই বিশেষ গতিবিধি ও গন্তব্যটি এখন পর্যন্ত জলেশ্বরীতে কি তাঁর পরিবারে সবার কাছে গোপন, কেবল মেহেরুল্লা ছাড়া। মেহেরুল্লা বড় ঈমানওয়ালা মানুষ। মনিবের বেলায় পুরোপুরি, তবে আল্লার কাছে পুরোটা নয়। জিন-পরীতে বিশ্বাস আছে। হজরত শাহ সৈয়দ কুতুবুদ্দিনের মাজারেও তার শিন্নি চড়ানো আছে, কান্নাকাটি আছে। ছয়-ছয়টা ছেলে, একটাও বাপকে দ্যাখে না। জানোয়ারের দল! পাঁচ-পাঁচটা মেয়ে, তার মধ্যে তিনটাই বিধবা। জামাই যে দুজন বর্তমান আছে, মানুষ নয়। যে-আল্লা তার এত অশান্তি দেখেও নির্বিকার, সেই আল্লার কাছে তার কিসের এত ঠ্যাকা! কেয়ামতের দিনও তার জানা আছে। তবে হাসরের মাঠে বিচার সম্পর্কে তার ভয়ভীতি নাই। দুনিয়াতে আসিয়া গরিবের ঠিকানা – দোজখ, আখেরাতেও সেই দোজখ, হয় কি নয়! যতই নমাজ পড়েন রোজা রাখেন, ঠিকানা হামার দোজখেই! রোজা সে রাখে, তবে রোজার দিনগুজারে বিড়ি তামাকও খায়। ধুঁয়া তো আর খাদ্য পানি নয়, বাহে! এ বিষয়ে জলেশ্বরীতে সে একা নয়। কিষান কামলা কুলি সকলেই বিড়ি তামাক রোজা ভাঙার কারণ মনে করে না। পাঁচ অক্ত নামাজের ভেতরে মেহেরুল্লা ফজর আর মগরেবটা কেবল পড়ে, তাও প্রতিদিন নয়। তিন-তিন অক্ত যে বাদ যায় তার জন্যে কাজা পড়া কি হায়হুতাশ তার নাই। আল্লা কি এতই অবুঝ হামার ভোগ তাঁই না বুঝিবে! জগতে যদি গরিব করি পাঠাইছেন তো হামাকে খাটিয়া খাইতে হয়। দুফর আর বৈকালে কি দিনের পরিশ্রমের পর রাইতের নমাজের টাইম যদি না পাঁও তো কসুর হামার নয়! ডিউটি বলিয়া কথা! দিনভর ডিউটি। প্যাটের থলি ভাত দিয়া ভরাইলে তবে না আল্লা! তবে, একটা বিষয়ে মেহেরুল্লা পাকা ঈমানদার। ঘরে স্ত্রী রেখে অন্য নারীর দিকে চোখ তুলে চাওয়াটাও তার কাছে পাপ। প্রথম প্রথম তার পাপই মনে হতো। এখন একটা আপস করে নিয়েছে। নিজের জন্যে পাপ, তবে মনিবের জন্যে নয়। মনিব হামার রুজি-রোজগারের মালিক হে! তারে কারণে প্যাট হামার ভুখ না থাকে! তাই কুসমির ঘরে প্রথম যেদিন সাইদুর রহমান যান, মেহেরুল্লা বিচলিত হয়েছিলো ঠিকই, মনে মনে অনেক তর্কবিতর্কও করেছিলো বটে, চাকরি ছেড়ে দেবার কথাও একবার ভেবেছিলো – না হে, হাসরের মাঠে আল্লা হামাকে সাক্ষী করিবে, ঝেঁ মুনিব হামাকে অন্ন দিছে সেই মুনিবের বিরুদ্ধে সাক্ষী মুঁই কেমন করি দেমো! – কিন্তু ওই পর্যন্তই। বরং এখন তার সজাগ দৃষ্টি – কাঁইও না দেখি ফেলায়! কারো কাছে না প্রকাশ হয়া যায়! সে দায়িত্ব অনুভব করে তার অন্নদাতার অভিসারটি গোপন রাখতে। হাঁ, গোপন সে রেখেছে। মনের ভেতরে লোহার সিন্দুক আমাদের সকলেরই আছে। সেই লোহার সিন্দুক সমেতই আমরা কবরে যাই কি চিতার আগুনে পুড়ি। মেহেরুল্লা সেই লোহার সিন্দুক থেকে মনিবের কুসমিঘটিত কথা আজ পর্যন্ত কারো কাছে বের করে নাই।  

তবে একটি কথা। কথাটা ছোট কিংবা বড় দেখা যাক। কুসমির ঘরে যাওয়া নিয়ে মেহেরুল্লার মন প্রথম দিকে কালো হয়ে পড়েছিলো। দ্যাশে অ্যাতো মোছলমানের ঘর থাকিতে, অ্যাতো মোছলমান বেটিছাওয়া থাকিতে, আপনে কিনা হিন্দুর ঘরে যায়া পড়িলেন! দ্যাশে কি ছন্ন নারীর অ্যাতোই আকাল? না, মেহেরুল্লার মনে হিন্দু-মুসলমানের ব্যাপারটা পাকিস্তান-হিন্দুস্তানের মতো রেষারেষির নয়। অত সে বোঝেও না। আমরা কজনাই বা নেহেরু-গান্ধী-জিন্নার রাজনীতি আর সেই রাজনীতির ভেতরকথা জানি? কিন্তু সামান্য সাধারণ মানুষের হাটেবাটে সেই রাজনীতির ভোগ যাদের ভুগতে হয়েছে, সেই রাজনীতির কারণে যাদের জীবন পালটে গেছে, অবস্থা পালটে গেছে, তাদের কথা বলবার জন্যেই আমরা এই গল্প-প্রবন্ধের নকশীকাঁথায় ফোঁড় দিয়ে চলেছি। কবে এই কাঁথার সীবন শেষ হবে এখনো জানি না। তবে কখনো না কখনো শেষ হবে, কিন্তু তার পরেও এর সুইয়ের ফোঁড় কারো কারো হৃৎপিন্ডে পড়তেই থাকবে, হাঁ, এই অসম্ভব ইচ্ছাটি আমরা রাখি। এ কাহিনি যেমন কষ্টের, তেমনি এমন বিস্ময়েরও যে কারো যদিবা পৌষ মাস, কারো না কারো সর্বনাশ। আমাদের শুরুতে দেখা মানুষটি, ঔপন্যাসিক মকবুল হোসেন, যে তার জন্মশহর জলেশ্বরীতে ফিরে এসেছে বাবার মৃত্যুকথা জানতে, সেই তাকে দেখামাত্র চিনে    উঠেছে যে-অজিত, বালকবেলার সেই বন্ধু, দীর্ঘ অদেখার পরেও যার ভুল হয় নাই চিনতে, সেই অজিতের চেয়ে, আর আধকোশা নদীর জলে সন্ধ্যাকালের গাহন শেষে উঠে এসেছে যে-কুসমি তার চেয়ে, কিংবা ছোকরা নাচের হারাধনের চেয়ে, যার কথা এখনো আমরা সীবন করি নাই, এদের চেয়ে আর কে ভালো জানে যে, সর্বনাশের ভেতরেও মানুষ বেঁচে থাকে। কেবল তারাই মর্মে মর্মে জানে মানুষের জীবন হয় কচ্ছপের জীবন। কচ্ছপের দ্রুততাও নাই, কঠিন থেকে কঠিনতর পাথরের আঘাতেও তার মৃত্যু নাই। শরীর ঢাকা বর্ম তার। জলে তার শ্বাস, স্থলেও তার নিবাস। মানুষের সুখ-দুঃখও জল-স্থলের মতোই। এই অর্থে মানুষও কচ্ছপের মতো উভচর। জীবনের মৃত্যু আছে – সত্য, গভীর অর্থে জীবনেরও মৃত্যু নাই। অধঃ কি ঊর্ধ্ব, উভয় পাকেই জীবন গতিময় ও নিরন্তর। 

মেহেরুল্লার জন্ম ভারত-পাকিস্তান ভাগের বছরে, সেই যে-বছরে লক্ষ লক্ষ মানুষ কি কোটি কোটি মানুষের কাছে জল-স্থলের নির্ণয় আর থাকে না। বড় হয়ে মেহেরুল্লা শুনেছে, একসময় জলেশ্বরীতে হিন্দুর সংখ্যাই ছিলো অধিক। পাকিস্তান হবার পর তাদের অনেকে নাকি দেশ ছেড়ে কুচবিহারে ভারতের ভাগের দিনাজপুরে চলে যায়। পাকিস্তান হয়েছে বলেই মুসলমানের এমন কী শিং গজায় যে তার ভয়ে হিন্দুরা দৌড় দেয়, মেহেরুল্লা বুঝে ওঠে না। তার যেখানে বাড়ি, সেই বল্লার চরেই তো এখনো বেশ কয়েক ঘর হিন্দু আছে। তারা তবে যায় নাই কেন? কুসমি আর তার থুত্থুড়ে বুড়ো ঠাকুরদা হরিচরণই বা কোন সাহসে আধকোশা নদীর পাড়ে জনমানুষহীন বাড়িতে পড়ে আছে? এইসব প্রশ্নের উত্তর সে পায় নাই। অথবা প্রশ্নটাই প্রখর হয়ে তার মনে আসে নাই। আর মাড়োয়ারি যদি হিন্দু হয় তবে, ছেলেবেলাতেও সে দেখেছে, জলেশ্বরীতে তারাও ছিলো। মেহেরুল্লার ধারণা নাই যে মাড়োয়ারিরা জৈন। তারাও বা উধাও হয়ে কোথায় গেলো? কেন গেলো? হতে পারে বড় দজ্জাল ব্যাপারী ছিলো তারা। হতে পারে তারা একজোট হয়ে পাটের যে দাম ধার্য করতো সেই দামেই তাদের কাছে কৃষককে পাট বিক্রি করতে হতো। বাবা-দাদার মুখে মাড়োয়ারিদের দাপটের কথা সে গল্পকথার মতো শুনেছে। এখন মাড়োয়ারি গেছে, মজিদ-ফজিদ মাড়োয়ারির জায়গা নিয়েছে, সেই অনায্য দামেই পাট কিনে বড়লোক হচ্ছে, এমন কথাও মেহেরুল্লা শুনে থাকবে। হাঁ, মনে পড়িচ্ছে, হামার গরিবকে নিয়া মিটিং যে করে বল্লার চরের লালভাই, আরে সেই যে লালপার্টির লালভাই, ঝান্ডা তাঁর লাল বলিয়াই কি লালভাই ডাকে সবায়? – সেই তাঁরে কাছে কথাটা একবার শুনিছিলোম বটে! কিন্তু মেহেরুল্লা বুঝে পায় না যে, ব্রিটিশের আমলে মাড়োয়ারিরা যদি থাকতে পারে জলেশ্বরীতে, পাকিস্তান কি এমন ব্রিটিশের চেয়ে ভয়াল হলো যে তারা গুদাম বিক্রি করে গদি উঠিয়ে চলে গেলো?

মনে পড়ে, মেহেরুল্লার যখন পাঁচ-ছ বছর বয়স তখনও জলেশ্বরীতে কয়েক ঘর মাড়োয়ারি থেকে গিয়েছিলো। তারা পাটের মহাজন। তখনও তারা কারবার গুটিয়ে ভারতে ফেরত যায় নাই। বড় বড় গদি ছিলো তাদের। গদি মানে ব্যবসাঘর। মেহেরুল্লার মনিব সাইদুর রহমানের বাবা মোখলেছুর রহমান তো যৌবনকালে ওই মাড়োয়ারিদেরই এক নম্বর ফড়িয়া ছিলো, গ্রামগঞ্জের কৃষকদের কাছ থেকে জোরজবরদস্তি কম দামে পাট এনে তাদের গুদামে তুলে দিতো। ওই মাড়োয়ারিদের একটি ছবি মেহেরুল্লার চোখে এখনো ভাসে। ভোরের আবছা আলোয় সে মাড়োয়ারিদের দেখেছে। তারা পেতলের ছোট ছোট চ্যাপটা আকারের লোটা হাতে রেললাইন ধরে বনবাদাড়ে যাচ্ছে পেট নিকাশ করতে। অতবড় মহাজন হলেও তাদের গদির পেছনে কেন যে পায়খানা ছিলো না, ভেবে সে অবাক হতো। আর ওইটুকু লোটার পানিতেই কি পরিষ্কার হওয়া যায়? এক শোচাতেই তো শেষ! ছী, ঘেন্না। মেহেরুল্লার জানা নাই যে মাড়োয়ারিরা মরুভূমির দেশ থেকে এসেছে, জলের অঢেল খরচ তাদের ইতিহাসে নাই। ভোরের ওই ছবিটা যদি তার মনে হিন্দুদের প্রতি বিতৃষ্ণা জাগিয়ে থাকে, তবে তা ওই পর্যন্তই। মাড়োয়ারিদের বেলাতেই। বাকি হিন্দুর দল? তারাও আছে, হামরাও আছি। খাটিপিটি হামরাও খাই, তারাও খায়। তারা মন্দিরে যায়, হামরা মজ্জিদে যাঁও। তারা শঙ্খ ফুঁকায়, হামরা আজান দেই। এই পজ্জন্ত। তবে, মেহেরুল্লা একটা সীমা অন্তত করে। হিন্দু মুসলমান নারী বিষয়ে। যার যার তার তার। তার ওই সীমাপাতনটি বিস্ময়কর নয়। গ্রামীণ গরিব মানুষের সমাজে এটাই যে ছিলো স্বাভাবিক, একটু অনুসন্ধান করলেই আমরা তা দেখতে পাবো। কিন্তু কুসমির ঘরে মনিবের যাওয়া-আসায় ওই স্বাভাবিকতাটি মেহেরুল্লার মনে প্রথম দিকে ক্ষুণ্ণ হয়ে উঠলেও, অচিরে সেটাও সে মেনে নেয়।

অভিসার পর্যন্তই, অর্থাৎ কুসমির ঘরে মনিবের যাওয়া পর্যন্তই মেহেরুল্লার কাছে সংবাদ। ঘরের ভেতরে কুসমির সঙ্গে মনিবের গা ঘষাঘষি হয় কিনা, বা চৌকির ওপর কোস্তাকুস্তি হয় কিনা, ততদূর পর্যন্ত মেহেরুল্লা নির্ণয় করে উঠতে পারে না। মনিব যেদিন প্রথম কুসমির ঘরে ঢোকেন, সেদিন যদিবা নারী-পুরুষের চূড়ান্ত ব্যাপারটাই তার মনে লাফিয়ে উঠেছিলো, ক্রমে তা ঝুলে পড়ে। ক্রমে তার মনে হতে থাকে ব্যাপারটি হয়তো সম্পত্তি-ঘটিত। হয়তো কেন, নিশ্চয় করে তা-ই। সত্তর বছরের বুড়ো যে নগদ যৌবনের নারীকে নিচে ফেলতে পারবে, এটা সে অসম্ভব বলেই সিদ্ধান্ত করে। তার নিজের শরীর দিয়েই বিষয়টি সে বুঝে নেয়। বয়স পঞ্চাশের আগেই তার লেবু নরোম হয়ে যায়। এগারোটি সন্তানের বাবা সে এখন নারী সংসর্গের কথা মনেও আনতে পারে না। মনে তার আসেও না। আসিলেও তো একখান কথা ছিলো হে! বুঝিতোম যে অগ্নি হামার এলাও ধিকিধিকি আছে! জলেশ্বরীর বাজারে দোকানে আজকাল যুবতী নারী কত সওদা করতে আসে, কী তাদের সাজপোশাকের বাহার, শাড়ি-সালোয়ার ভেদ করে যৌবনের সে কি ছলকানি! মেহেরুল্লার আগুন জ্বলে ওঠা তো দূরের কথা, চোখ ফিরিয়ে নেয় খেদযুক্ত হয়ে। না, তার দিন গেছে, তার জন্যে আর এ সকল নয়। শহরের ওধারে, বল্লার চরে, যেখানে মেহেরুল্লার বাস, সেই সেখানে ক্ষেতিবাড়ির আল ভেঙে গ্রামের কত না যুবতী ছিন্ন শাড়িতে এখান থেকে ওখানে যায়। শরীরের যে সকল প্রকাশ করার নয়, খাটো কাপড়ের কারণে তাও প্রকাশ পায়। কাপড় ভেদ করেই পাছা ডবকায়, থন লাফায়। যুবকেরা ভদ্রতা নাশ করে শিস দিয়ে ওঠে, বাপদাদার শিক্ষা ভুলে আওয়াজ দেয়, ও কি সোনাবন্ধু রে! মেহেরুল্লা এখন অনেকদিন থেকে তার স্ত্রীকে ঘরের আসবাব বলেই বিবেচনা করে আসছে। দিন আসে, দিন থাকে, দিন কিন্তু চলিয়াও যায়, হে! সুজ্জ ডুবি গেইলেও আকাশে তার রং থাকি যায়, আধকোশার পানিতে তার ঝিলমিল থাকি যায় তবে বড় বিষাদ হয়া হে! তার মনিব সাইদুর রহমান কন্ট্রাক্টরেরও তবে তাই। নিশ্চয় তাই। নিশ্চয় সম্পত্তির কারণেই তাঁর কুসমির ঘরে যাওয়া। তবে একটা শুধু খচখচ এই যে, কন্ট্রাক্টর সাহেব নিজের অফিসঘরে বোলায় না কেনে তাকে? কেন তার ঘরে যান তিনি? এ কি শোভা পায় তাঁকে? আর চলার ছন্দে যাত্রাটিকে গোপন করারই বা কেন এত চেষ্টা কৌশল তাঁর! মেহেরুল্লা আজ একটু বিরক্তই হয়। অন্যদিন ঘণ্টা এক দেড়েই ফিরে আসেন মনিব, আজ রাত অধিক হয়ে যায়, তবু ফেরার নাম নাই। r (চলবে)