নীরবতার ভাস্কর্য

কাজল চক্রবর্তী

সন্ধেবেলায় ঘুমিয়েছো। প্রতিদিনের মতো চোখদুটো বোজা। ঠিক হলো সকালে সবাই যাবো, তোমাকে নিয়ে আসবো। নিয়ে আসবো হাসপাতাল থেকে তোমার প্রিয় সংসারের সবুজ ঘাসের উঠোনে। তোমার আলো, সিক্ত দৃষ্টিতে দেখবে তোমাকে। পড়শির ব্যাকুলিত বাঁশি আর বাজবে না, কিন্তু আমরা শুনবো তাদের করুণ সুর। আমরা রক্ত-সম্পর্কিত তোমার অথচ আমাদের দেখাশোনা বছরে দু-একবার। কখনো বা আরো আরো দীর্ঘ এ না-দেখার রেখা। পড়শিরাই তোমার প্রিয়জন। তাঁদের সুখে-দুঃখে তোমার নিত্য আনাগোনা। আজব সংসার, অনেক অনেক বড় হতে হতে কেমন দূরে মিলিয়ে যায়।
জানি তুমি উঠে বসবে না। বাববা, মনে পড়লো বোনকে! একগাল হাসি নিয়ে জানতে চাইবে না, পুঁচকে দুটো কত বড় হলো? এসব কিছুই হবে না। আমরাও মৃত্যু অনুগামী। পৃথিবীতে কেউ থাকতে আসিনি।
তবু কেন যেন মনে হয়, যদি এসব একেবারে না থাকতো মনুষ্যজীবনে! যাওয়ার কোনো পর্বই থাকতো না। শুধু আসবার পথ খোলা থাকতো তবে হয়তো রাতের নক্ষত্র এত সংকেতগামী হতো না।
তুমি ফিরবে না জানি, চলে গেছো মৃত্যু-অনুগামী। আমরাও যাবো কেউই ফেরে না। ফিরে আসতে হয় না! নীরবতার ভাস্কর্য কেন তবে!