পল বিটি : কৃষ্ণপক্ষের কৃষ্ণাঙ্গ ঔপন্যাসিকের বুকার জয়

মাসুদুজ্জামান

 

কৃষ্ণাঙ্গ এক মার্কিন কিশোর। ডাকনাম মি (Me)। কাহিনির মূল কথক বা ন্যারেটর সে। মি বসবাস করে লস অ্যাঞ্জেলসের ডিকেন্সে। সে চাইছে স্কুলে আবার সাদা-কালো, অর্থাৎ বর্ণবাদী ব্যবস্থাটা চালু হোক। মার্কিন সমাজে বর্ণবাদী ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটেছে অনেক আগে। কিন্তু মি চায় তা ফিরিয়ে আনতে। তার ভাবনাটা এমন – যদি এই বর্ণবাদী ব্যবস্থাটা আবার চালু হয়, তাহলে সে ফিরে পাবে তার আফ্রিকান শিকড় ও পরিচয়। কিন্তু সমকালীন মার্কিন সমাজে এটা পুনঃস্থাপিত হবে কী করে! বর্ণবাদ নিয়ে এই যে টানাপড়েন, এটাই হচ্ছে সেলআউট উপন্যাসের মূল গল্প।

সেলআউটের গল্পটা তীব্র স্যাটায়ারধর্মী, বর্ণবাদী রাজনীতিই হচ্ছে উপন্যাসটির বিষয়বস্ত্ত; সেই সঙ্গে এতে ছড়িয়ে আছে বিষাদ ও ক্রোধ। উপন্যাসের অর্থও এটাই – সত্তার বিসর্জন। আফ্রিকা থেকে আমেরিকায় আসা কৃষ্ণাঙ্গদের কীভাবে আত্মপরিচয় আর আত্মসত্তার অবলুপ্তি ঘটেছিল, সেলআউট উপন্যাসের এটাই হচ্ছে কাহিনি আর এর রচয়িতা হচ্ছেন পল বিটি। বিটি পেলেন ২০১৬ সালের ম্যান বুকার পুরস্কার। ঐতিহাসিকভাবেও তাঁর এই পুরস্কারপ্রাপ্তির বিষয়টি উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে; কেননা তিনিই প্রথম মার্কিন ঔপন্যাসিক যিনি এই পুরস্কারটি পেলেন। প্রখ্যাত মার্কিন দুই লেখক মার্ক টোয়েন আর জনাথন সুইফটের পঙ্ক্তিতেই তাঁর অবস্থান বলে মনে করেছেন বিচারকরা। এই প্রশংসার মুখেই বিটির ধারণা, উপন্যাসটি পাঠকদের কাছে একটু কঠিনই মনে হবে। কিন্তু ইতিহাসবিদ আমান্দা ফোরম্যান, যিনি এ-বছর বিচারক প্যানেলের চেয়ারম্যান ছিলেন, তাঁর ধারণা, উপন্যাসটি এতটা দুরূহ নয়। এই উপন্যাসটি হচ্ছে আমাদের সময়ের উপন্যাস, ফোরম্যানের এমনটাই ধারণা। উপন্যাসটি পাঠককে সাম্প্রতিক মার্কিন সমাজের একেবারে কেন্দ্রে নিয়ে যায়, ব্যঙ্গ আর কৌতুকী বিনির্মাণের কারণে এটি সুইফট আর টোয়েনের লেখার সমপঙ্ক্তিতে স্থান করে নিতে পারে। এটি একইসঙ্গে ভাবনাজাগানিয়া আবার বেদনা-জাগরূক। এভাবেই সেলআউটের ব্যাখ্যা দিয়েছেন ফোরম্যান।

 

দুই

সেলআউটের আখ্যানটি উন্মোচিত হচ্ছে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে, অর্থাৎ বিচারালয়ে, যেখানে এই ছবির কথক মি, যার অন্য নাম বনডন, বিচারের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অতীতে ফিরে যেতে চাইছে। এই অংশের ভাষা বেশ কর্কশ, অনেক পাঠককেই যা বিব্রত করতে পারে, সেই সঙ্গে এর বিষয়-আশয়ও। ‘এটা অনেক কঠিন বই। বইটা লিখতেও আমার কঠিন লেগেছিল, পাঠকের জন্য পড়াটাও কঠিন হবে। আমি শুধু আমার জন্য এই উপন্যাসে একটা স্পেস তৈরি করে নিতে চেয়েছি। আশা করছি অন্যেরাও তা তৈরি করে দিতে পারবে।’ লন্ডনের গিল্ডহলে পুরস্কার নেওয়ার সময় কথাগুলো অশ্রম্নসজল চোখে বলছিলেন বিটি। পরে একটা সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমার জন্যে ব্যাপারটা যেমন গৌরবময়, অন্যদের কাছেও এটি সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে করি।’ প্রধান বিচারক আমান্দা ফোরম্যানও বলেছেন, প্রায় চার ঘণ্টা ধরে আলোচনার পর তাঁরা বিটিকেই পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। শুধু চার ঘণ্টার এই বিচার-বিশ্লেষণ নয়, জানুয়ারির পর থেকে বিচারকরা ১৫৫টি উপন্যাস পড়েছেন শ্রেষ্ঠ উপন্যাসটি বেছে নেওয়ার জন্য। প্রথমে ১৩ জনের এবং পরে ছয়জনের একটা শর্টলিস্ট করে শীর্ষ রচনাটি বেছে নিলেন তাঁরা। এ থেকে বাঙালি পাঠক হিসেবে আমরা বুঝতে পারি, কতটা পরিশ্রম আর স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে ম্যান বুকার পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ উপন্যাসটি বেছে নেওয়া হয়।

আরেকটু বিসত্মৃতভাবে যদি এর কাহিনি সম্পর্কে বলি, তাহলে ফোরম্যানের বিবেচনা অনুসারে উপন্যাসটি যে সমকালীন মার্কিন সমাজেরই প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। উপন্যাসটি গভীরতর অর্থে একটা ট্র্যাজি-কমেডি ধরনের রচনা। এতে আছে কৃষ্ণাঙ্গদের দাসপ্রথার উৎস খুঁজে পাওয়া আর আর্থ-বৈষম্যকে চিহ্নিত করার সুতীব্র অভীপ্সা। উপন্যাসটির সেই মুহূর্তগুলোই আমাদের অভিনিবেশ দাবি করে, যখন সমস্ত আমেরিকায় আফ্রিকান-আমেরিকানদের প্রতিবাদকে পুলিশ সন্ত্রাসী কায়দায় দমন করার জন্য উদ্যত হয়। কৃষ্ণাঙ্গদের দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় অতীতের বর্ণবাদী ব্যবস্থার মুখোমুখি।

উপন্যাসটির নির্মাণশৈলীও অনেকটা অভিনব। প্রথম একশ পৃষ্ঠা একোক্তি বা মনোলগের ভঙ্গিতে রচিত আর আছে কিছু সাক্ষাৎকার, যে-সাক্ষাৎকারগুলো পড়তে-পড়তে ব্যঙ্গের তীব্র অভিঘাতে পাঠক সচকিত হয়ে উঠবেন। এই অংশটি সূক্ষ্ম বর্ণনাভঙ্গি আর ঐতিহাসিক সংবেদনার বুনটে ঋদ্ধ।

উপন্যাসটির প্রধান চরিত্রটি একজন আফ্রিকান-আমেরিকান নগরচাষি, সামান্য গঞ্জিকাসেবী সে। লস অ্যাঞ্জেলেসের কিছুটা বাইরে তার বসবাস। একক বাবার কাছে সে বেড়ে উঠেছে। বাবা একজন সমাজতাত্ত্বিক। গল্পের এই নায়ক কিন্তু বাবার পথে না-হেঁটে পঠনপাঠনের বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছে মনস্তত্ত্ব বা মনোবিজ্ঞানকে। এই পঠনপাঠন নিয়েই যখন সে নিজের জগতে বিচরণ করছে, ঠিক তখনই তার বাবা টহল পুলিশের হাতে খুন হয়। গল্পের নায়ক এরপর নিজের মত করে অদ্ভুত ধরনের প্রতিবাদী হয়ে উঠলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারালয়টি হয়ে ওঠে তার শেষ ঠিকানা।

লক্ষণীয়, তার প্রতিবাদের ধরনটি ছিল বেশ অভিনব। সে হোমিনি জেনকিন্স নামের এক বৃদ্ধ দাসমালিকের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা শুরু করে, যে-লোকটি একসময় স্থানীয় স্কুলগুলোতে সাদা-কালো বিভাজিত শিক্ষাব্যবস্থার জন্য সোচ্চার ছিল। এই যে বর্ণবৈষম্য, সেই সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক প্রসঙ্গই উপন্যাসটির ভাবগত কেন্দ্র। এসব কর্মকা- নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, কিন্তু এটাই মার্কিন
সাংস্কৃতিক পরিকাঠামো বলে মনে করেন ঔপন্যাসিক পল বিটি। তাঁর নিজের কথায়, ‘যে কেউ যেমনটা চান লিখতে পারেন। সংস্কৃতির এই যথার্থতা নানা দিকে প্রসারিত হয়ে আমাদের সংবেদনাকে নানাভাবে ছুঁয়ে দিতে পারে।’

১৯৬৯ সালে প্রবর্তিত বুকার পুরস্কারটি শুধু পঞ্চাশ হাজার পাউন্ডের পুরস্কারমূল্যের জন্য নয়, মানের দিক থেকে গত কয়েক বছরে বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়ে উঠেছে। পুরস্কারটি ইংরেজিতে প্রকাশিত উপন্যাসের জন্য দেওয়া হয় আর তা ব্রিটেনেই প্রকাশিত হতে হয়। ২০১৪ সাল পর্যন্ত পুরস্কারটি ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড আর কমনওয়েলথ দেশগুলোর ঔপন্যাসিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরে তা উন্মুক্ত করা হয়। এর আগে যারা এ-পুরস্কারটি পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন মার্গারেট অ্যাটুড, কাজু ইশিগুরো, পিটার ক্যারে ও মাইকেল ওন্দাতজি। এ বছর চূড়ান্ত বাছাইপর্বে স্থান পেয়েছিলেন ঐতিহাসিক থ্রিলার হিজ ব্লাডি প্রজেক্টের স্কটিশ লেখক গ্র্যামি ম্যাক্রি বারনেট। ডু নট সে উই হ্যাভের কানাডীয় লেখক ম্যাডেলি থিয়েন, যিনি তাঁর উপন্যাসে চীনা সাংস্কৃতিক বিপস্নবকে উপজীব্য করেছেন। অল দ্যাট ম্যান ইজের কানাডীয়-ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক ডেভিড জালের ছিলেন শর্টলিস্টে। জালের বইটি নয়টি পরম্পরিত ছোটগল্পের সংকলন। নয়জন মানুষের জীবনের নানা পর্বের গল্প এগুলো। বিবেচনায় ছিল ওত্তেসা মোশফেগের এইলীনও। মোশফেগের উপন্যাসটি একটা কিশোর কারাগারের পটভূমিতে লেখা। সর্বশেষ শর্টলিস্টে ছিল ডেবোরা লেভির উপন্যাস হট মিল্ক। এই উপন্যাসটিতে উপজীব্য হয়েছে আসন্ন কালের কথা। গত বছর, পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে আছে, বুকার পুরস্কার পেয়েছিলেন জামাইকান ঔপন্যাসিক মারলন জেমস তার আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব সেভেন কিলিংস উপন্যাসটির জন্য। বব মার্লেকে খুন করার কাহিনি নিয়ে ওই উপন্যাসটি লেখা হয়।

 

তিন

পুরস্কারপ্রাপ্ত পল বিটির বয়স এখন ৫৪ বছর। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় মায়ের কাছে তাঁর বেড়ে ওঠা। বিটির বয়স যখন তিন বছর, তখন তাঁর বাবা পরিবার ছেড়ে চলে যান। তিনি আর তাঁর দুই বোন মা ইভোনের কাছে বড় হতে থাকেন। মায়েরও আছে শিল্পরসবোধ। পেশাগত জীবনে নার্স হলেও তিনি চিত্রশিল্পী। একবার তিনি তাঁর পুত্র বিটি এবং বিটির দুই বোনকে সল বেলো আর জোসেফ হেলারের লেখালেখির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। নিয়ে গেছেন সামুরাই চলচ্চিত্র দেখতে। বিটি বলেছেন, মায়ের মধ্যে আছে একটা এশীয় মন, বিশেষ করে জাপানি ঝোঁক। কিন্তু তিনি কখনো কোনো দর্শন – রাজনৈতিক হোক কিংবা সাংস্কৃতিক – পুত্র-কন্যাদের ওপর চাপিয়ে দেননি। মধ্যকুড়ি বছর বয়সে বিটি কবিতা রচনায় ঝুঁকে পড়েন। এই সময়ে তিনি পড়েছিলেন ই ই কামিংসের কবিতা, জাপানি হাইকু ও কৃষ্ণাঙ্গ কবিদের লেখা একটা কাব্য-সংকলন – নিউ ব্লাক ভয়েজেস। ১৯৯০ সালে তিনি নুয়েরিকান পোয়েটস কাফের কবিতা পুরস্কার অর্জন করেন। কিন্তু কবিতা যেহেতু কিছুটা পড়ার বিষয়, পারফরম্যান্সের বিষয়, তাই তিনি কবিতা লেখা ছেড়ে দিয়ে গদ্যের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। তিনি এমনসব টুকরো লেখা লিখতে থাকেন, যা ঠিক পদ্য নয়, কাব্যধর্মী গদ্যরচনা। এই গদ্যের ধারাতেই ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস দ্য হোয়াইট বয় সাফল

তবে কবিতা দিয়েই শুরু হয়েছিল লেখালেখি, সেই স্কুল বয়স থেকে। তখনই তিনি জানতেন শব্দ নিয়ে কীরকম খেলা খেলা যায়। স্মৃতিচারণা করে বলেছেন, ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তামনিকায় একবার সামার ক্যাম্পে গিয়ে একটি বাসের বাইরের দিকটা তিনি এবং তাঁর বন্ধুরা কীভাবে হিপি স্টাইলে রং করেছিলেন। বাসের একেবারে ওপরের দিকে রং-তুলি দিয়ে পুলিশকে নিয়ে লিখেছিলেন একটি কবিতা। সেই কবিতা রাস্তার প্রকৃত পুলিশকেও আকৃষ্ট করেছিল। ‘আমার এখনও কবিতাটির কথা মনে আছে, ‘শূকরটুকর’, ‘কুত্তা’ এই ধরনের শব্দটব্দ ছিল ওই চার লাইনের কবিতায়। পুলিশ আমাকে বাসের বাইরে নামিয়ে দু-তিনটি শব্দ মুছে দিতে বলে।’ আজো এরকম উদ্দীপনাই সবসময় বিটিকে প্রাণিত করে উপন্যাস লিখতে। বর্ণবাদী ইতিহাসের অতীত আর বর্তমানের মধ্যে বিচরণ করতে ভালবাসেন এই লেখক।

জর্জ ওরেল আর কুর্ট ভনেগুটের অনুরাগী বিটি এর পরই শুরু করেন সেই উপন্যাস লেখা। আগেই বলেছি, উপন্যাসের জগতে তাঁর অভিষেক হয়েছিল দ্য হোয়াইট বয় সাফলের (১৯৯৬) মাধ্যমে। এরপর প্রকাশিত হয় আরো দুটি উপন্যাস – টাফ (২০০০), সস্নামবারল্যান্ড (২০০৮)। হোকুম নামে সম্পাদনা করেন আফ্রিকান-আমেরিকান লেখকদের একটা ব্যঙ্গরচনার সংকলন। বিটির লেখার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে এরকম : মানবিক মনস্তত্ত্ব, বর্ণবাদী পরিচয়, ইতিহাসের অনিবার্য নিয়তি, যা থেকে মানুষের মুক্তি প্রয়োজন। সেলআউট উপন্যাসে এসব বিষয়আশয়কেই বিটি, যিনি নিউইয়র্কে বসবাস করছেন, স্থান দিয়েছেন। মনোবিদ উইলিয়াম ক্রসই তাঁকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন বেশি। বিশেষ করে ক্রসের ১৯৭১ সালে প্রকাশিত দ্য নিগ্রো টু বস্ন্যাক কনভারসেশন এক্সপেরিয়েন্স বইটি তাঁর এই উপন্যাসে গভীর প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। একদিকে সিরিয়াস থিম, আরেক দিকে তীব্র ব্যঙ্গকৌতুক, একটা সাক্ষাৎকারে বিটি বলেছেন, সবকিছুই তাঁর কাছে একটা পর্যায় অবধি কৌতুককর মনে হয়। ‘আমার মনে হয় এক স্তর পর্যন্ত সবকিছুই ব্যঙ্গপ্রবণ থাকে। হয়তো সব নয়, তবে অনেক কিছুর বৈশিষ্ট্য এরকমই। যদিও নিজেকে তিনি ব্যঙ্গলেখক মনে করেন না।’ ‘আমি কতদূর পর্যন্ত যেতে পারব, কতটা লিখতে পারব, সেই সীমাটা আমার মাথাতেই থাকে।’ প্যারি রিভিউয়ে দেওয়া একটা সাক্ষাৎকারে এরকমই বলেছিলেন বিটি। ‘আমি বিস্মিত হয়ে যাই যখন দেখি সবাই উপন্যাটিকে ব্যঙ্গধর্মী আখ্যান বলে আখ্যায়িত করছেন।’

২০০৬ সালে তাঁর সম্পাদিত আফ্রিকান-আমেরিকান লেখকদের স্যাটায়ার সংকলন হোকুমের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন, স্কুলজীবনে মায়া এঞ্জেলুর একটি লেখা পড়ে তাঁর চোখ ভিজে উঠেছিল। তাঁর লেখায়
কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর নির্যাতনের যে-ছবি আছে, সে-কথা তিনি কখনো ভুলতে পারেননি। কৃষ্ণাঙ্গ লেখকদের সম্পর্কে তাঁর ধারণা, তাঁরা কৃষ্ণাঙ্গ সম্পর্কে কথা বলে ঠিকই, কিন্তু তাঁদের যেসব কথা বলা উচিত তাঁরা সেসব কথা বলেন না। শেষাবধি বুকার পুরস্কার কমিটিও সে-কথা স্বীকার করে নিয়ে এই কথকের সেলআউট উপন্যাসটিকে মহিমান্বিত করে ম্যান বুকার পুরস্কারটি তাঁরই হাতে তুলে দিলো। সমকালীন মার্কিন বর্ণবাদী নির্যাতন, যে-নির্যাতন প্রায়শই ঘটে চলেছে, মাঝেমধ্যে যা বিশ্বমিডিয়ার সংবাদ হয়ে উঠছে, তাকেই শৈল্পিকভাবে উপস্থাপনার জন্য পুরস্কৃত হলেন কৃষ্ণাঙ্গ ঔপন্যাসিক পল বিটি।

তাঁকে পাঠক হিসেবে আন্তরিক অভিবাদন। r