পশমিনা

বসন্ত লস্কর

নীলের ওপর লাল গোলাপ ফুল অাঁকা টিনের তোরঙ, শাশুড়ির। বিয়ের কনের সঙ্গে এ-বাড়িতে ঢুকেছিল। গত বছর শাশুড়ি চলে যাওয়ার পর, দু-তিন মাস পরে ছোট ননদ লফট থেকে নামিয়েছিল। মরা মানুষের তোরঙ খুলে কেউ হাটকাচ্ছে, সে হোক না মানুষটির নিজের মেয়ে, দেখে রুমেলির ভালো লাগেনি। ননদকে বলতেই ননদ মুখঝামটা দিয়েছিল, ‘থামো তো তুমি, আমার মায়ের তোরঙ। আমি জানি মা এতে দামি কিছু লুকিয়ে রেখে যায়নি। দামি জিনিস বলতে মায়ের সেরকম কিছু ছিল না। আমি জিনিস খুঁজছি। একটা শাল।’ কাশ্মিরের যে-শালওয়ালা ফি বছর শীত পড়লেই এ-বাড়িতে আসে, সেই বলে গেছে বাড়িতে পুরনো শাল থাকলে ভালো দাম দিয়ে কিনে নেবে। তোরঙ খালি করে ফেলেছে চুমকি। কয়েকটা পুরনো তাঁত আর সিল্কের শাড়ি, একটা বেনারসি যা
ভাঁজে ভাঁজে কেটে গেছে। আর বেনারসিটির নিচে বিছানো খবরের কাগজের নিচে
শালটি তার নিজস্ব ওমের মধ্যে ঘুমিয়েছিল।
‘আসলি চিজ, বুঝলে?’ ননদ বোঝায়, ‘মায়ের পাওয়া জিনিস। মায়ের দিদিশাশুড়ি দিয়েছিল। ক’পুরুষ হলো বুঝতে পারছ? গায়ের কাজ দেখেছ?’ রুমেলি ভেবে ভয় পায় চুমকি কেন শালটা টেনে বের করেছে, ‘এই শাল তুমি বিক্রি করবে?’ শালটি হাতে নিতেই সারা শরীরে কেমন একটা শিরশির অনুভূতি হয়েছিল’, ‘কতদিনের জিনিস অথচ কোথাও একটু টসকায়নি। এ জিনিস কেউ বিক্রি করে?’ অম্লান মুখে চুমকি উত্তর দিয়েছিল, ‘তাহলে তুমিই কেনো, কিনবে? তোমাকে হলে দুহাজার টাকায় দিতে পারি। দাও টাকা।’ রুমেলি পশমিনাকে বুকে চেপে ধরেছিল, গাল ঘষেছিল। দেখে চুমকি বলেছিল, ‘পাপবোধ থেকে আমাকে তুমি মুক্তি দিলে বউদি, ঘরের জিনিস ঘরেই থাকল, অথচ আমার হাতে ক্যাশ চলে এলো। থ্যাংক ইউ বউদি, থ্যাংক ইউ।’
পশমিনা শালের অনেক নাম শুনেছে, আসল জিনিস এই প্রথম চোখে দেখল। নকল সে অনেককেই পরতে দেখেছে। তাদেরই কেউ কেউ বলেছে, ওই নামেই পশমিনা, আসল নয়। রুমেলি জেনেছে পশমিনার দাম লাখ ছাড়িয়ে যায়। আরো দামি শালের নাম শুনেছে সে – সাহতুর। কার্গিলের দিকে কী এক জাতের হরিণের লোম থেকে তৈরি হয়। না হোক সাহতুর, সে এখন একখানা আসলি পশমিনার মালিক যে পশমিনায় গায়ে কম করে এক-দেড়শো বছরের গল্প লেগে আছে।
‘হঠাৎ এত টাকার তোমার কী দরকার পড়ল?’ চুমকি উত্তর দিয়েছিল, ‘বিয়ে করব তাই। খালি হাতে যাব? যা পাই তা-ই জমিয়ে নিচ্ছি।’ ‘বিয়েটা করছ? কবে?’ ‘যে কোনোদিন। আনিস লিখেছে ওর বাবা-মাকে আর ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছে না’, চুমকি গলার স্বর করুণ করে বলে, ‘আনিসের বাবা-মায়েরই বা কী দোষ? দুবছর চাকরি হয়ে গেল, বিয়ের জন্য এবার চাপ তো দেবেই, এক ছেলে, বলো?’
‘সে তো ঠিক। কিন্তু বিয়ের ব্যাপারটা তোমার দাদা জানে?’ ‘এমনি দাদা সব জানে,’ শুধু কবে করব জানে না। আর দাদাকে বলারই বা কী দরকার তুমিই বলো, আনিস না আমাদের জাতের, না ধর্মের। সাজালো করে তো আর দাদা বিয়ে দিতে পারবে না। তাই ভাবছি আর না ঝুলিয়ে রেখে রেজিস্ট্রি করে চুপচাপ ফুটে যাব। তাতে দাদার প্রেস্টিজটা আত্মীয়কুটুমদের কাছে অন্তত বাঁচবে। কেউ আঙুল তুলে বলবে না, দাঁড়িয়ে থেকে দাদা বোনটাকে নেড়ের হাতে দিয়েছে!’ খিলখিল হাসে চুমকি। গম্ভীর গলায় রুমকি বলে, ‘দুকুলই রাখতে চাও?’ ‘ওভাবে কেন বলছ বউদি? আমি দাদার প্রবলেমটা বুঝি। এতগুলো বছর দেরি করেছি মাকে কষ্ট দেব না বলে। আনিসটাও কী ভালো একবার ভাবো, তুমি, একটা হিন্দু মেয়ের জন্যে এত স্যাক্রিফাইস কেউ করে?’
‘আর হিন্দু হয়ে তুমিই বা কী কম স্যাক্রিফাইসটা করছ? এত ভালো ক্যারিয়ার তোমার, এই তো কদিন হলো রেজাল্ট বেরিয়েছে। তুমি কি ফ্যালনা?’
‘তা নয়, কিন্তু আনিসদের যে খানদান, কী বড় চাকরি করে নিজে, নিজের ধর্মে বিয়ে করলে আনিস তো বাদশাজাদি পেতে পারত!’ চুমকির উৎসাহে জল ঢেলে দিতে চায় রুমেলি, ‘একটা কথা জিজ্ঞেস করছি, মা যদি আজো বেঁচে থাকতেন তাহলে কী করতে?’ চুমকি ঘাবড়ায় না, ‘বিয়েটা করতাম। কারো যদি মরতে এত বেশি সময় লাগে, আমার এ ছাড়া আর করার কীই-বা থাকত? আনিসকে ছেড়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’ রুমেলি চুপ করে শোনে। ‘মাকে আমি অনেক বুঝিয়েছি, মায়ের সেই এক কথা, কতবড় কুলীন বংশ আমাদের, কী দাপুটে জমিদার ছিল তোর ঠাকুরদারা, দেশের বাড়িতে বিষ্ণু আছেন – হ্যানো ত্যানো দোল-দুর্গাপুজো দূর দূর শুনে শুনে কানে চড়া পড়ে গেছে। আজকের যুগে এসব কেউ মানে না, মানার কোনো যুক্তি আছে? আর একটা কথা, ধরো আনিস মুসলমান বলেই যত আপত্তি তো? আজ যদি আমি একটা হাফভিখিরি সাহেব ধরে বিয়ে করতাম, রিলেটিভদের কাছে তো আমার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠত নাকি? সেও তো বিধর্মী, সেও তো ক্রিশ্চান, তবে?’
‘তবে’র উত্তর রুমেলির জানা ছিল না, তবু বলে, ‘তুমি নিশ্চয়ই সবদিক ভেবেই ডিসিশনটা নিয়েছ; কিন্তু আমার কেমন ভয় হচ্ছে চুমকি, দুটো সম্পূর্ণ আলাদা কালচার, যদি মানিয়ে নিতে না পারো?’
‘ছবছর পর আর এসব ভাবার কোনো মানে হয় বউদি? তবে চেষ্টা করব, শেষমেশ যদি দেখি পারলাম না, চলে আসব। তবে ডোন্ট ওয়রি, তোমাদের ঘাড়ে এসে চাপব না।’ রুমেলি হাসে, ‘চাপও যদি, ভাবছ আমরা তোমাকে ঝেড়ে ফেলব? তবে যাওয়ার আগে আমাকে অন্তত বলে যেও, যাবে তো? আর চাও যদি তোমাদের বিয়েতে আমি উইটনেস হতে রাজি।’ ‘ইস’, ঠোঁট বাঁকায় চুমকি, ‘দাদা জানলে সঙ্গে সঙ্গে তোমায় ডিভোর্স।’ রুমেলি হাসে, ‘তুমি যদি আমাদের ছেড়ে যেতে পারো, তুমি কী ভাবছ আমি তোমার দাদাকে ছেড়ে যেতে পারব না? আমিও কিন্তু একটা ভালো চাকরি করি চুমকি।’
কী মোলায়েম, কী হালকা, একেই কি ফেদারওয়েট বলে? অথচ গায়ে দিলেই ক’মিনিটের মধ্যেই সারা শরীরে মিনমিন ঘাম দিতে শুরু করে। অবশ্য শালের সিজন শুরু হতে এখনো বেশ দেরি। দিনের শেষে একবার হলেও আলমারি খুলে মালটা হাতে নেবে রুমেলি। কবেকার কোন এক দুঁদে জমিদার গিন্নির গায়ের শাল ‘আমিও তো জমিদার গিন্নিই’। নিজেকেই বলে রুমেলি, ‘জমিদারিটা যা নেই কিন্তু পরম্পরা, ট্র্যাডিশন?’ নিজের কথায় নিজেই সে হাসে।
তার বরের মুখে, শাশুড়ির মুখে সেসব রমরমা দিনের কথা কিছু কিছু শুনেছে রুমেলি। বরেন্দুর কথায় কোনো শ্রদ্ধা ছিল না, ‘পূর্বপুরুষরা ছিল জলার জোঁক, প্রাণভরে মানুষের রক্ত চুষেছে, ফল ভুগছি আমরা, অ্যানিমিয়ায় মরছি।’ তবে তার শাশুড়িটির অচলা ভক্তি ছিল তাঁর শ্বশুরের বাপঠাকুরদার ওপর। খুব গল্পদার মানুষ ছিলেন শাশুড়ি, কথায় কথায় সেসব দিনের কথা বলতেন। ‘আমি কিন্তু মা নিজের চোখে কিছুই দেখিনি, পরের মুখে শুনে বলছি, আমি যখন বউ হয়ে এসেছি, তখন মামলা-মোকদ্দমায় তোমার শ্বশুরেরা প্রায় ভিখিরি।’
জমিদারি গেলেও দেবোত্তর সম্পত্তি কিছু কেমন তখনো টিকে ছিল। তার আয়েতেই দোল-দুর্গোৎসব, তাও নমো নমো করে। ‘তবে জানো বউমা, তোমার শ্বশুর বলত যা গেছে ভালোই হয়েছে। খেটে খাচ্ছি, পাপ লাগবে না। বিয়ে হয়ে ইস্তক এ-বাড়ির যেসব গল্প শুনেছি, হাড় হিম হয়ে গেছে।’
পশমিনা শাল পোকাতেও কাটে না? নাকি পোকায় যাতে না কাটে তার জন্যে কোনো ওষুধ দিতে হয়? শালটি হাতে নিয়ে গন্ধ শোঁকে রুমেলি। তার নাকে ওষুধের কোনো গন্ধ লাগে না, বরং কেমন একটা মানুষের গায়ের গন্ধ পায়, খুব চেনা অথচ অচেনা একটা গন্ধ। কত বয়েস হবে শালটার? চার পুরুষ? নাকি তারও বেশি? দিদিশাশুড়ি কি তাঁর শাশুড়ি কি দিদিশাশুড়ির কাছ থেকে পেয়েছিলেন। হিসাব করলে মাথা ঘোরে। মনে হয় একটা গোটা অতীত শালটার গায়ে জমে আছে। রুমেলির গর্ব হয় – এক টুকরো অতীতের মালিক সে, নিজের আলমারিতে যাকে সে বন্দি করতে পেরেছে।
‘আনিসকে এ-বাড়িতে আসতে বলো’, রুমেলির কথায় গম্ভীর হয় চুমকি, বলে, ‘আনিস আসবে না। মা ওকে একবার খুব অপমান করেছিল। মা আমাদের তিনজনকে – আমি, দাদা আর আনিসকে ওই টেবিলটায় চা দিয়েছিল। মা ইচ্ছে করে আমাদের দুটো এঁটো কাপ তুলে নিয়ে আনিসেরটা রেখে দিয়েছিল। মিনি – আমাদের তখন ঠিকে ঝি ছিল মিনি, মিনিকে দিয়ে আনিসের কাপটা তুলিয়েছিল। সেদিনই আনিস আমাকে বলেছিল সে আর কোনোদিন এ-বাড়িতে আসবে না।’
‘মায়ের কথা ছাড়ো। সে-যুগের মানুষ তিনি, তুমি ওকে বলো আমি আসতে বলেছি।’ চুমকি ঘাড় নাড়ে, ‘তুমি চেন না আনিসকে। খুব গোঁ। আর মায়ের কথা বলছ বউদি? – শোন, কথায় আছে মরার সময় নাকি মানুষের সংস্কার থাকে না! আমার মা কিন্তু তোমার মনে আছে কিনা জানি না, যখনই জ্ঞান আসছিল বিড়বিড় করে কী বলছিল মনে আছে?’ রুমেলি ঘাড় নাড়ে। ‘আমার মনে আছে, তোর বাবাকে আমি কী বলব চুমকি? ন্যাকা – বাবা যেন ওনাকে নিমতলায় নিতে আসবে।’
রুমেলি মৃদু ধমক দেয়, ‘ছিঃ চুমকি! হাজার হোক মা তো! মরা মানুষের সম্পর্কে অমন করে বলতে নেই।’ ঠান্ডা গলায় চুমকি উত্তর দেয়, ‘মরা মানুষটা আমারই মা ছিল, তোমার নয়। লোকে বলে মায়েরা নাকি মেয়েদের সবচেয়ে বড় বন্ধু হয়, শিট!’ রুমেলি চুপ করে থেকে বলেছিল, ‘তুমি যদি চাও, আমি তোমার দাদার সঙ্গে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করতে পারি।’ ‘কিসের আলোচনা? বিয়ের? কেন দাদা তোমাকে আনিসকে নিয়ে কিছু বলেনি?’ ‘কেন বলবে না? বলেছে, চুমকিটা ঠিক করছে না ভুল করছে কিছুই বুঝতে পারছি না। বুঝতে পারছি না আমারই বা ঠিক কী করার আছে? আর চুমকিই বা কতদিন অপেক্ষা করবে?’
চুমকির গলাটা ভেজা ভেজা, ‘দাদাকে আমি দোষ দিই না। কোনো দাদারই এসব ব্যাপারে কিছু করার থাকে না আমি জানি। তাই তো বলছি কাউকে কিছু না জানিয়েই কেটে যাব।’ বলতে বলতে হাসে চুমকি, ‘আর যাওয়ার সময় একেবারে খালি হাতে কী করে যাই বলো তো বউদি, তাই তো হাতের কাছে যা পাই তা ঝেড়ে দিয়ে দুপয়সা করে নিচ্ছি। নিজেরও তো টুকটাক খরচ আছে?’ ‘খালি হাত, খালি হাত করছ কেন চুমকি? আমি কি মরে গেছি? মায়ের যা আছে সব তোমার।’ ‘ছিঃ’ চুমকি রাগ দেখায়, ‘যা গায়ে পরে আছি, ওইটুকুই ব্যস। এর বাইরে এক খি সুতো বাড়তি নিলে আনিস বলেছে বাড়িতে ঢুকতে দেবে না।’ ‘তখন এসো।’ দুজনেই হাসে।
সব শুনে বরেন্দু বলেছিল, ‘ঠিক হয়েছে। হুমদোমুখো হার্মাদগুলো স্বর্গ থেকে দেখে জ্বলুক।’ ‘মেয়েটা পালাবে ভাবতে আমার একদম ভালো লাগছে না।’ রুমকির কথায় বিরক্ত হয় বরেন্দু, ‘না পালিয়ে করবে কী? কোন বামুন পুরুত ওদের বিয়ে দেবে?’
‘কেন ওদের রেজিস্ট্রিতে আমরাও তো থাকতে পারি।’ বরেন্দু বিরক্ত হয়েছিল, ‘পালাক না, পালাক – ওর ভাগের ভাগ ওকে আমি দিয়ে দেব, ভেবো না।’
‘সে তুমি যা দেবে দাও, এখন মেয়েটার জন্যে আমরা যদি কিছু করতে পারতাম।’ রুমেলির কথার উত্তরে কাঁধ ঝাঁকায় বরেন্দু, ‘নো ওয়ে। বরং ওকে জিজ্ঞেস করতে পারবো কত টাকা ওর এখন দরকার। আর তুমি তো বেশ একটা খেলনা হাতে পেয়েছ দেখছি। শালটা খুব পছন্দ হয়েছে, না?’
‘খুব’। শীতটা আসার জন্যে অপেক্ষা করছি। প্রথম যে বিয়েবাড়িটা পাব তাতেই চড়াব।’
‘চুড়িও। মাকে তো দু-একবার ছাড়া পরতে দেখেছি বলে তো কই মনে পড়ে না। তবে শীতকালে তোরঙ থেকে বের করে রোদে দিতে দেখেছি। শালটা ওরিজিন্যালি যার ছিল তার কথা শুনেছ কি?’
‘কে, মায়ের দিদিশাশুড়ি?’
‘ওই নামেই শাশুড়ি, ছোটবেলায় অয়েল পেন্টিং দেখেছি দেশের বাড়িতে, কী চেহারা রে বাবা! ইন্ডিয়ান অ্যামাজন। বসে বসে মালা জপছেন। কী পাঞ্জা রে ভাই, ঘুরিয়ে মারলে যাকে মারবে স্ট্রেট কোমায় চলে যাবে।’
‘কোথায় ছবিটা?’
‘চুলোয়। দেশে ছিল। কে কোথায় কী করেছে। ভাগের বাড়ি, ইটের পাঁজা এখন।’
‘নিয়ে তো যাচ্ছো না একবারও। আমারও তো শ্বশুরের ভিটে দেখতে ইচ্ছে করে। শীতকালে যাব হ্যাঁ?’ উৎসাহ দেখে বরেন্দুও মজা পায়, ‘বুড়ির শালটা গায়ে দিয়ে বলো?’
‘অফ কোর্স। মায়ের দিদিশাশুড়ি খুশি হবে। হাজার হোক আমি তো তারই বংশের বউ।’
‘থামো!’ বরেন্দু ছদ্ম ধমক দেয়, ‘বুড়ি জানতে যদি বেজাতের মেয়ে এ-বাড়ির বউ হয়ে এসেছ, সামনে দাঁড়ালে এক লাথির চোটে নেটসুদ্ধ ছিঁড়ে বেরিয়ে যেতে বুঝলে? তবে তার আগে তোমার গা থেকে বুড়ি শালটা ঠিক টেনে খুলে নিত!’
‘আমার দিদিশাশুড়ি ঠাকরুন কীরকম মানুষ ছিল জানো বউমা?’ রুমেলির শাশুড়ি এমন করে বলতেন যেন তিনি তাঁকে গোড়া ওপর দেখে এসেছেন, ‘খুব পটকিনি ছিল তো, হাজারটা বিচের-আচার। যেমন চেহারা তেমন রূপ, দুধে আলতা রং। এ-বাড়িতে কালো বউ রাজার মেয়ে হলেও অচ্ছুত। আমাকেই দেখো না, বাপ তো ছিল পুজুরি বামুন। আমার গায়ের রংটুকু যা ছিল তাই রক্ষে। না হলে ওই বাড়িতে ঢুকতে পারি বউ হয়ে?’ রুমেলি ভাবতে পারত শাশুড়ি তার শ্যামলা রং নিয়ে ঠেস দিয়ে কথা বলছে। কিন্তু শাশুড়িকে কদিনেই বেশ চিনে নিয়েছিল, তাই রুমেলি জিজ্ঞেস করেছিল, ‘দিদিশাশুড়িকে আপনি চোখে দেখেছেন?’
‘সে তো কদিন, আমার বিয়ের কমাস পরই দেহ রাখলেন। সে-গল্প তো বলেছি তোমাকে। আমার সেজ দেওরের গল্প? কলকাতায় আইন পড়তে এসে বোনের মেয়েকে কোর্টে বিয়ে করেছিল। খবর পেয়েই মাথায় রক্ত ওঠে – দেড় দিন বেঁচেছিলেন দিদিঠাকরুন। তবে সতীলক্ষ্মী তো, সিঁথের ডগমগে সিঁদুর নিয়েই গেলেন। আমার দাদাশ্বশুরের কী ছেলেমানুষের মতো কান্না যদি দেখতে বউমা!’ জাঁহাবাজ দাদাশ্বশুরের গল্পও অনেক করতেন শাশুড়ি। দাপের লোক, হাঁক শুনে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত। সে-মানুষেরও একবার কী হাল করেছিল দিদিঠাকরুন! কলকাতা থেকে বাইনাচ গিয়েছিল দোলের সময়। মুসলমান বাইজি সব। দাদাশ্বশুর সারারাত বাইজির নাচ দেখে ভোরবেলা বাড়িতে ঢুকবেন, দেখেন দরজা আগলে দিদিঠাকরুন। পাশে ঝির হাতে রেকাব ভর্তি গোবর, তখনো ধোঁয়া উঠছে। একবাড়ি লোকের সামনে এক খাবলা গোবর খাইয়ে তিন ঘড়া গঙ্গাজলে চুবিয়ে তবে সিঁড়িতে তাঁকে পা রাখতে দিয়েছিলেন।’
আসি আসি করেও শীতটা এ-বছর তেমন আসছে না যে, শালটা জড়িয়ে অফিস যাবে রুমেলি। শীতের ওপর ভারি রাগ হয় তার। বরকে খোঁচায়, ‘চলো না নৈনিতাল কি মুসৌরিতে কটা দিন ঘুরে আসি।’ বরেন্দু খিঁচিয়ে ওঠে, ‘এই শীতে?’ ‘শীত কোথায় এখন? কতদিন কোথাও বেরোনো হয় না বলো তো? ক্রিসমাসের সময় ছুটি নেব, তুমিও অ্যাপ্লাই করে দাও।’ সত্যি, ঘরের মধ্যে একা একা শালটা একটুখানি গায়ে জড়িয়ে খুলে রাখতে আর মন সরছে না রুমেলির। ইদানীং শালটা গায়ে দিলে তার কেমন মনে হয় শালটা নিজেই যেন তাকে জড়িয়ে থাকে, গা থেকে নামতে চায় না। এ তো শুধু ভেড়ার লোমে তৈরি পশমিনা নয়, এ এক কালাধার যার মধ্যে দেড়শো বছর দিব্যি শুয়ে আছে।
‘এই শীতে ওই শালটা গায়ে দিয়েছ। গরমের চোটে দমবন্ধ হয়ে মারা যাবে যে! খোলো!’ বরেন্দুর ধমক খেয়ে মুখ ভার হয় রুমেলির, ‘পড়েই তো ছিল এতকাল জিনিসটা। পড়ে পড়েই নষ্ট হোক!’ বরেন্দু বউয়ের রাগ ভাঙায়, ‘তা কেন? এই তো বললে ডিসেম্বরে বাইরে যাবে, তখন পরো। ওসব জায়গার শীতের জন্যেই এসব শাল।’ ‘তাহলে মায়ের দিদিশাশুড়ি? তিনিও কি দার্জিলিংয়ে থাকতেন?’ বউয়ের রাগের তলানিটুকু মুছে নেওয়ার জন্যে বরেন্দু বলে, ‘বউটা আমার ফুলটুসকি, ঠোঁট ফোলানো খুকি রে! দিদিঠাকরুনদের কথা ছাড়ো’ এসব শাল ছিল ওদের কাছে স্টেটাস সিম্বল, কেনাটাই আসল কথা, গায়ে দেওয়াটা নয়!’
‘আমি যদি দিই, কার কী? আর দমবন্ধ বলছ, আমার কোনো কষ্টই হয় না। মনেই হয় না শালটা গায়ে আছে কি নেই।’ সে-বছর হয়তো হবে রুমেলির মুখ চেয়েই কলকাতার পারদ চোদ্দো-পনেরোয় নেমে এসেছিল।
‘সামনের সপ্তাহে আনিস আসছে বউদি’, চুমকি জানিয়েছিল, ‘ও তোমার মিট করতে চায়।’ ‘তার মানে, এসেছে আদেশ, বন্দরের কাল হলো শেষ? তোমাকে আমরা হারাচ্ছি?’ চুমকি হেসে গেয়ে ওঠে, ‘তোমায় নতুন করে পাব বলে।’ ‘নোটিশ দেওয়া হয়ে গেছে? ম্যানেজটা তো হবে স্পেশাল অ্যাক্টে নাকি?’ চুমকিকে গানে ভর করেছে, গেয়ে ওঠে, ‘ওসব অ্যাক্ট-ফ্যাক্ট জানি না, শুধু তোমাকে জানি, তোমাকে জানি, ওগো আনিসুর।’ বউদিকে জড়িয়ে ধরে চুমকি বলে, ‘আমাকে ধরে বেশ করে একবার ঝাঁকিয়ে দাও তো বউদি, বডি পার্টসগুলো কেমন যেন আলগা হয়ে গেছে মনে হচ্ছে, ঝাঁকুনি খেয়ে যে যার জায়গায় ফিরে যাক।’ ‘তা কোথায় মিট করবে আমার সঙ্গে তোমার আনিস? এ-বাড়িতে তো ওকে তুমি আনবে না?’ মুখটা গম্ভীর হয় চুমকির, ‘আমি না, ও নিজেই আসবে না।’ ‘না আসার কী আছে? যাঁকে নিয়ে অভিমান, তিনি তো আর নেই।’ উদাস গলায় চুমকি উত্তর দেয়, ‘কিন্তু দাদা, দাদা তো আছে?’ ‘তোমার দাদা কিছু বলবে না, সে ভার আমার।’ চুমকিকে তবু চিন্তিত দেখায়, ‘সে আমি জানি। কিন্তু আমি চাই না আমাদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব দাদাকে কেউ কিছু বলুক। আমি নিজের ইচ্ছায় চলে গেছি, দাদাকে না জানিয়েই, এটাই তো ভালো বউদি? দাদাটা অন্তত অপমানের হাত থেকে বাঁচবে। ও বউদি, তুমি বাইরে ওর সঙ্গে দেখা করতে পারো না?’ রুমেলি হাসে, ‘কেন পারব না চুমকি? বলো কবে কোথায় যেতে হবে।’ চুমকি খলবল করে ওঠে, ‘ও তুমি গ্রেট বউদি। সিম্পলি গ্রেট, দাঁড়াও আনিসকে ফোন করছি।’
‘বীরভূমে তোমাদের বাড়িটা লাল ইটের ছিল না? তিনতলা বাড়ি তাই তো?’ রুমেলির প্রশ্নে অবাক হয় বরেন্দু – ‘হঠাৎ দেশের কথা?’ রুমেলি থামে না, ‘দেউড়ি পার হয়ে বারমহল, সারি সারি ঘর, আবার দরজা, দরজা পার হলে মেয়েমহল, আই মিন, অন্দরমহল, তাই না?’ অবাক হয়ে বউয়ের মুখের দিকে চেয়ে থাকে বরেন্দু, ‘কীসব উলটোপালটা বকছ? ওরকম বাড়ি আমাদের ছিল কি-না, আমি জানি না, কখনো দেখিনি, সিনেমায় কোথা কী দেখেছ, না হয় বইয়ে পড়েছ আর সেই গোটা বাড়িটা আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছ!’ ‘বিশ্বাস করবে, যদি বলি আমি স্বপ্নে তোমাদের দেশের বাড়িটা দেখেছি?’ উত্তরে বরেন্দু ঘর কাঁপিয়ে হাসে। ‘বলো না আমি যা বলছি তার সঙ্গে মেলে কি-না?’ ‘মা থাকলে বলতে পারতেন, আমি জানি না।’ রুমেলি বলতে পারে না ইদানীং একটা লাল ইটের তিনতলা বিশাল বাড়ি যাকে লোকে প্রাসাদ বলে, তার স্বপ্নে যায় আসে। স্বপ্নে সে সেই বাড়ির চবুতলায় দাঁড়িয়ে শয়ে শয়ে পায়রাকে দানা খাওয়ায়। তার পরনে গরদের লাল পাড় শাড়ি, সিঁথিতে ডগমগ করছে সিঁদুর, কপালে লাল টিপ যেন সূর্য ডুবছে। গায়ে তার দিদিঠাকরুনের পশমিনা।
পার্কসার্কাসে সিরাজে বসব আমরা। তোমার আপত্তি নেই তো? আনিস ওর দিদিকেও নিয়ে আসবে।’
‘অফিস কামাই করতে হবে? নাকি সন্ধেয়?’
‘শনিবার-শনিবার। তোমার অফিস তো দুটোয় শেষ।’
‘শনিবার না? ওদিন তো তোমার দাদাকে টুপি পরিয়ে অন্য কার সঙ্গে তো ঘুরতে যাচ্ছি না – যাচ্ছি নন্দাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে। বলার ধরনে চুমকি হেসে ওঠে, বলে, ‘আনিসের দিদি-জামাইবাবুও আসবে। আমার কেমন ভয়-ভয় করছে বউদি।’ চুমকি রুমেলির কাঁধে মাথা রাখে। হঠাৎ রুমেলির কাঁধে যে-জায়গায় মাথা রেখেছে চুমকি, জায়গাটা কেমন শিরশির করে ওঠে, নিজেকে সামলে নিয়ে সে ননদের মাথায় হাত দেয়, ‘এখনো ভয় করছে? তার মানে তুমি এখনো নিজেকে পুরোটা তৈরি করতে পারনি, তাই না, চুমকি?’ রুমেলির স্বরে হয়তো এমন কিছু ছিল যাতে চুমকি মাথা তুলে বউদির চোখের দিকে তাকায়, ‘এ কথা বলছ কেন বউদি? আমি তৈরি।’ রুমেলি বলে, ‘ভালো। তাহলে তো ভালোই।’ শীতটা জমে উঠেছে।
‘শালটা কী দারুণ দেখেছ?’ আনিসের দিদি নাসরিন তার বরকে উচ্ছ্বাস দেখায়, শালের খুটটা হাতে নিয়ে পরখ করে। খুব অসভ্যতা হবে ভেবে খুটটা টেনে নিতে পারে না রুমেলি; কিন্তু তার কেমন একটা রাগ হয়। নাসরিনের বর বলে, ‘কী শাল? জামদানি?’ রুমেলি উত্তর দেয়, ‘না, পশমিনা।’ ‘ইনশাল্লাহ!’ আনিসের জামাইবাবু বলে ওঠে, ‘এরেই কয় পশমিনা? বাপরে কত নাম শুনেছি হে তোমার। পশমিনা, কীরকম দাম? বিশ-পঁচিশ।’ রুমেলির হয়ে চুমকি উত্তর দেয়, ‘এখন লাখেও মেলে কি-না সন্দেহ।’ এবার আনিস বলে, ‘ইনশাল্লাহ।’ রুমেলির খুব ইচ্ছে করে তার চেয়ারটা একটু সরিয়ে দিতে। ‘আমাদের ফ্যামিলি এয়ারলুম, বউদি খুব সস্তায় দাঁও মেরেছে, বলো বউদি?’ চুমকির বাচালতায় রুষ্ট হয় রুমেলি, তার ইচ্ছে হয় বলে, আমাকে এখানে কেন আনলে চুমকি ছিঃ? মুখে হাসি ঝুলিয়ে সে বসে থাকতে বাধ্য হয়। অথচ তার চোখের সামনে চুমকিটা যেন ইচ্ছে করে আনিসের সঙ্গে লেপটে বসেছে। ‘এই ভাই শোন’, নাসরিন আনিসকে বলে, ‘হানিমুন করতে তো কুয়েত যাচ্ছিস, আমার জন্যে ওখান থেকে ঠিক এই জাতের পশমিনা আনবি, কী রে আনবি তো?’ চুমকি মাঝখানে কথা বলে, ‘ও আনুক না আনুক, পাওয়া গেলে আমি ঠিক আনব দিদি।’ ‘দিদি? ছিঃ!’ নাসরিন বলে, ‘শেখদের দেশ, কী না পাওয়া যায় ওখানে?’ আনিসের জামাইবাবুর দাড়িতে ফ্রায়েড রাইসের একদানা ভাত; দেখে রুমেলির গা ঘিনঘিন করে ওঠে। ‘এই বউদি তুমি কিন্তু কিছুই খাচ্ছ না, দাদার জন্যে মন খারাপ করছে?’ জবাব না দিয়ে আরেকটু বেশি হাসে রুমেলি। আনিসকে জিজ্ঞেস করে, ‘কবে যাচ্ছ কুয়েত?’ মুখে খাবার নিয়ে আনিস উত্তর দেয়, ‘আসছে মাসে।’ নাসরিনের বর বলে, ‘শুধু কুয়েত কেন, যাচ্ছ যখন বিবিকে নিয়ে পুরো আরব শাহিটাই চক্কর মেরে এসো। কী বলেন ভাবি… আই মিন বউদি? আরে আপনি তো স্যুপটাই শেষ করেননি এখনো!’ রুমেলি বলে, ‘আমি স্লো ইটার। আপনারা খান।’ ‘ও দিদি দেখ, ওর প্লেটের চিংড়িগুলো কী বড় বড়? বদলাও, প্লেট বদলাও’, আনিসের সামনে থেকে তার প্লেটটা নিজের সামনে টেনে নেয় চুমকি, নিজেরটা আনিসের দিকে ঠেলে দেয়। হঠাৎ রুমেলির বমি পায়। বেগ চেপে রুমেলি বলে, ‘আমি একটু আসছি।’
টয়লেটের বেসিনে গলায় আঙুল দিয়ে বমি করতে চেষ্টা করে রুমেলি। খানিকটা জল বের হয় শুধু। মুখেচোখে জল দিতে দিতে নিজেকে আয়নায় ধমক দেয়, ‘ছিঃ এসব কী হচ্ছে? ইউনিভার্সিটিতে তোমার তো কম মুসলিম বন্ধু-বান্ধবী ছিল না রুমেলি!’ আয়নায় নিজেকে দেখে চমকে ওঠে, রুমেলি – সিঁথিতে এত সিঁদুর, কপালে এত বড় টিপ? তার কপালে ওগুলো কার চোখ? কখন পড়ল সে? মুখেচোখে ফের জলের ঝাপটা দেয়। ইস শালটা ভিজে গেল। তার মনের মধ্যে ঠাকুমার মুখে শোনা কথাগুলো ফিরে আসে, ‘ভেড়ার লোমের জিনিসে দোষ লাগে না।’ ‘আর এ তো পশমিনা’, রুমেলি যেন নিজেকেই সান্ত্বনা দেয়।
ট্যাক্সিতে ফেরার সময় চুমকি জিগ্যেস করে, ‘কেমন দেখলে বউদি? তোমার কী মনে হচ্ছে সুখী হবো?’ এত শীতের মধ্যেও জানালার কাচটা নামিয়ে দেয় রুমেলি, ‘সুখটা তো নিজের ব্যাপার চুমকি। তোমার দাদা ঠিকই বলেছিল।’ চুমকি কাছে ঘেঁষে আসে, ‘কী, দাদা কী বলেছিল?’ ‘তোমার দাদা বলেছিল পশমিনা শাল কলকাতার শীতের জন্য নয়।’ চুমকি নিভিয়ে যায়, বলে, ‘ও। তোমার আনিসকে ভালো লাগেনি না বউদি? ও কিন্তু এরকমই একটু রিজার্ভড টাইপের – ইন্টোভার্ট।’ রুমেলির মনে হচ্ছে আরো বাতাস দরকার তার। ঠান্ডা হিমেল বাতাস। ‘দিদি তো বলল শুনলে সামনের উইকেই – এদের বেশ ভালো না বউদি – লগ্নটগ্নের ঝামেলা নেই!’ ‘তার মানে তুমি বলছ হিন্দুদের এসব লগ্নটগ্ন সব বোগাস?’ চুমকি বলে, ‘তা আমি কখন বললাম বউদি? ওদের কালচার ওদের, আমাদের কালচার আমাদের।’ ‘কোনোদিনই দুটোতে মিল খায় না, বলো?’ রুমেলির নিজের স্বর নিজের কানেই অন্যরকম ঠেকে। প্রাণপণে চেষ্টা করছে সহজ থাকার। হয়তো হবে শালটা অত্যধিক গরম দিচ্ছে। ‘দাদাকে তোমার কিছু বলার দরকার নেই বুঝলে, যা বলার আমি চিঠিতে জানিয়ে যাব।’ রুমেলির ইচ্ছা করছে ড্রাইভারকে থামতে বলে দরজা খুলে নেমে যায়। হাওয়ায় হাঁটলে হয়তো ফের সহজ হতে পারবে।
নিজের ঘরে ঢুকেই গা থেকে শালটা খুলে খাটে ছুড়ে দেয় রুমেলি, ফ্যানটাও জোরে খুলে দেয়। বরেন্দু অাঁতকে ওঠে, ‘এই হচ্ছেটা কী? শপিং করে খুব গরম হয়ে গেছ মনে হচ্ছে? ফ্যান কমাও।’ ‘প্লিজ – খুউব খেয়েছি দুজনে – অস্বস্তি হচ্ছে – পাঁচ মিনিট।’ ‘শালটা খুব গরম না?’ বরেন্দু জিজ্ঞেস করে। ‘উফ – গরম মানে? পশমিনার গরম সবার সহ্য হয় নাকি? দাঁড়াও আসছি, অনেক কথা আছে।’ বাথরুমে ঢুকে যায় রুমেলি।

Published :


Comments

Leave a Reply