পিতা

রা ফি ক  হা রি রি

‘বশির মিয়া, ও বশির মিয়া।’

মাঝরাতে আমার ঘুম ভেঙে যায়। আববা কি ডাকছে আমাকে? দুবার শুনতে পেলাম নামটা। এখন রাত কয়টা বাজে? আববা কি এখনো ঘুমায়নি? আমি অন্ধকার হাতড়ে মোবাইল খোঁজার চেষ্টা করি। খুঁজে পাই না। বেডসুইচ টিপ দিই। নাহ্, বাতি জ্বলছে না। ইলেকট্রিসিটি চলে গেছে। হেমন্তের ঠান্ডা মিষ্টি বাতাসে ঘরের ভেতর কেমন আদুরে একটা শীতলতা। পাখা বন্ধ। বাতি না জ্বালালে বোঝার উপায় নেই ইলেকট্রিসিটি আছে না গেছে। একটা কাক কোথাও দুবার ডেকে উঠল। মাঝরাতে কাকের ডাক বড্ড অশুভ। আমার ভেতরটা কেমন মুচড়ে ওঠে। দ্রুত বিছানা থেকে নামতে গিয়ে অন্ধকারে হুমড়ি খেয়ে পড়ি। মোবাইলটা কোথাও খুঁজে পাই না। হালকা মিহি অন্ধকার আর আলোর ভেতর দিয়ে আমি পাশের ঘরে যাই পা টিপে টিপে। মা আর আববা পাশের ঘরে শুয়ে আছেন। মার ঘুম খুব পাতলা। মাকে কিছুতেই আমি মধ্যরাতে জাগাতে চাই না। সারাটা দিন মেশিনের মতো নাক, চোখ, মুখ গুঁজে শুধু কাজ করেন। কী এতো কাজ করেন আল্লাহ মালুম। আমি মায়ের সম্পূর্ণ উলটো। আমি ঘুমালে পৃথিবীর কোনো কিছুর আর খবর থাকে না। শরীরে গরম পানি ঢাললেও আমার ঘুমের কোনো নড়চড় হয় না। আমি ঘুম থেকে উঠলেই মা সবসময় বলতেন – ‘আল্লাহ যেন তোরে সাত ছিনালের বুদ্ধি দেন আর কুত্তার মতন ঘুম দেন।’ ছোটবেলা থেকেই মা আমার ঘুম নিয়ে এই কথা বলতেন। প্রথম প্রথম বুঝতাম না মা কী বলছেন। একদিন মা পরিষ্কার করে দিলেন, ‘সাত ছিনাল হলো সাতটা ধূর্ত শয়তান। ধূর্ত শয়তানের বুদ্ধি যেমন অত্যন্ত পাকা, সেরকম পাকা বুদ্ধি যেন আল্লাহ তোরে দেন। বুদ্ধির শক্তি বড় শক্তিরে বাপজান। আর কুত্তার ঘুম হইল পৃথিবীতে সবচেয়ে সচেতন ঘুম। ফুলের টোকার শব্দেও কুত্তার ঘুম ভাইঙ্গা যায়। ঘুম মানে হইল দ্বিতীয় মরণ। বাইচা থাইকা যদি তুই মইরা যাস তার চেয়ে বড় বিপদ আর নাই। ঘুমের মধ্যেই সব বড় বিপদগুলো আসে। তুই যখন মরার মতো ঘুমাস, তখন আমার খুব দুশ্চিন্তা হয়। সারারাত আমি ঘুমাতে পারি না। উইঠা আইসা বারবার তোর নাক-মুখ হাতাইয়া দেখি। শ্বাস দেখি।’

মার এসব কথা শুনে আমি চেষ্টা করি কান খাড়া করে ঘুমাতে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। আমি ঘুমাই মরার মতো।

আমি তখন জহুরুল হক হলে থাকি। ২১৩ নম্বর রুমে দুটি বেডে আর ফ্লোরিং করে আমরা আটজন ঘুমাই। আমাদের কোনো কষ্ট হয় না। মহাআনন্দে থাকি গাদাগাদি করে। অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দিই। তারপর মধ্যরাতে আবু মিয়ার চায়ের দোকান থেকে চা খেয়ে বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে হলে ফিরি। মাঝরাতের পরে একজনের পায়ের ওপর আরেকজনের পা রেখে, যার যার নাক-মুখ বাঁচিয়ে আকাশের দিকে মুখ করে বড় বড় শ্বাস নিতে নিতে আমরা গভীর ঘুমে তলিয়ে যাই।

জহুরুল হক হলে থাকা অবস্থায় একদিন ৬.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলো। মধ্যরাতে। আমি ততক্ষণে ঘুমিয়ে কাদা কাদা। কারো কারো মাত্র চোখ লেগে এসেছে। এর মধ্যেই হুড়মুড় লেগে গেল। সবাই হইচই করতে করতে ঘর থেকে বের হয়ে আসে। দৌড়ে নিচে হলের মাঠে চলে যেতে থাকে। দু-তিনজন উত্তেজনা সহ্য করতে না পেরে দোতলা থেকে নিচে লাফ দেয়। আমাদের রুমের সবাই প্রথম ধাক্কায় রুম থেকে ছিটকে বের হয়ে আসে। আমার কোনো খবর নেই। আমি নিশ্চিন্তে মরার মতো ঘুমাচ্ছি। রুম থেকে সবাই বের হয়ে নিচে যাওয়ার পর জলিল আর জিয়ার মনে পড়ে আমি ঘরের ভেতর ঘুমাচ্ছি। ওরা দুজন তখন আবার দোতলায় ছুটে আসে। আমাকে ঘুম থেকে জাগানোর চেষ্টা করে; কিন্তু কাজ হয় না। তখন দ্বিতীয়বার জহুরুল হল নাচতে শুরু করে। নিচে থাকা ছাত্ররা হইচই করে।

‘অই তরা নিচে নাইমা আয়। নিচে নাইমা আয়। আবার ভূমিকম্প হইতেছে।’

জলিল আর জিয়া আমাকে হাজার চেষ্টা করেও ঘুম থেকে ওঠাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত দুজন মিলে পাঁজা কোলে করে নিচে নিয়ে আসে। আমি মারা যেতে পারি কিংবা আমার ক্ষতি হতে পারে এই আতঙ্ক ওদের ভূমিকম্পের আতঙ্ককে তাড়িয়ে দিয়েছিল। নিচে নামিয়ে আনার পরেও যখন আমার ঘুম ভাঙল না, তখন সবাই ভাবল আমি হয়তো মরেটরে গেছি। প্রভোস্ট স্যার ছুটে এলেন। দেখলেন সব ঠিক আছে। কারো তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। শুধু আমাকে ঘাসের ওপর শুয়ে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে জলিলকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বশিরের কী হইছে? ডাক্তার ডাকো। তোমরা দাঁড়ায়া আছো কেন?’

জলিল মাথা চুলকে বলল, ‘স্যার ও ঘুমাচ্ছে।’

‘কী?’

‘ও ঘুমাইতেছে স্যার। ঘুমাইলে ওরে সহজে জাগানো যায় না। আমরা দুইজন ওরে ওপর থেকে কোলে করে নামাইয়া আনছি। তারপরেও দেখেন কেমনে ঘুমাইতেছে।’

স্যার হয়তো কিছুক্ষণ অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়েছিলেন। তারপর বললেন, ‘বশিররে এই মুহূর্তে হলের পুকুরে চুবাও। আমি আদেশ করছি। দেখি ওর ঘুম কীভাবে না ভাঙে। কত বড় উজবুক! এই ধরো তোমরা।’

সবাই মিলে আমাকে জহুরুল হক হলের পুকুরে ফেললো। মধ্যরাতে। আমি হুড়মুড়িয়ে উঠলাম। রাতে লুঙ্গি পরে ঘুমিয়েছিলাম। কোনোরকম লুঙ্গির কোনা ধরে ইজ্জত বাঁচাতে বাঁচাতে পানি থেকে উঠে দাঁড়ালাম। দেখি বন্ধুরা সব দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। প্রভোস্ট স্যারকে দেখে সালাম দিলাম। তখনো লুঙ্গির কোনা ধরে উদোম গায়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি।

জলিলকে বললাম, ‘দোস্ত কী হইছে মাঝরাতে, আমি পুকুরে কেন? তোরা সবাই এখানে কী করোস? স্যার এতো রাতে আপনে এখানে কেন?’

আমি কিছু বুঝতে পারছিলাম না। ঘুমের রেশ তখনো কাটেনি।

প্রভোস্ট স্যার বললেন, ‘দেখলা, কত বড় উজবুক! কেয়ামত হয়ে গেল অথচ ওর খবর নাই।’

সবাই হাসতে থাকে। ভূমিকম্পের পরবর্তী আতঙ্কজনক পরিবেশটুকু আমার এই ঘটনায় নিমিষেই দূর হয়ে যায়। সবাই আমার ঘুমের ঘটনা নিয়ে হাসি-তামাশা করতে থাকে।

পরে জলিল আমাকে সবকিছু খুলে বলে। কুম্ভকর্ণের মতো আমার ঘুমের ইতিহাস বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে কোনায় কোনায় ছড়িয়ে পড়ে। আমি ঘুমের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হয়ে যাই।

অথচ গত তিন মাস আমার চোখে কোনো ঘুম নেই। কুকুরের ঘুমের মতো স্পর্শকাতর হয়ে পড়েছে আমার ঘুম। মধ্যরাতে ঘরের ভেতর তেলাপোকার ওড়াউড়ির পাখার শব্দেও আমার ঘুম ভেঙে যায় এখন। রাতের পর রাত আমি কান খাড়া করে পাশের ঘরের শব্দ শোনার চেষ্টা করি।

আমার মা আর অসুস্থ আববা পাশের ঘরে শুয়ে আছেন।

আমি শোনার চেষ্টা করি, আববা কখন আমাকে ডাক দেন।

‘বশির মিয়া, ও বশির মিয়া।’

অন্ধকার হাতড়ে হাতড়ে আমি আববার ঘরে যাই। আববার বিছানার পাশে আরেকটা ছোট বিছানা। মা সেই বিছানায় গভীর ঘুমে তলিয়ে আছেন। হালকা মিহি আলোতে মাকে দেখা যাচ্ছে, বুক ওঠানামা করছে। ভুস ভুস করে শ্বাস ছাড়ছেন।

মাকে আমি সারাজীবনেও এভাবে ঘুমাতে দেখিনি। গত দুমাস তিনি যেভাবে ঘুমাচ্ছেন, আমি সত্যিই অবাক। মা ঘুমিয়ে থাকলে আমি পা টিপে টিপে হাঁটলেও অসংখ্যবার দেখেছি মার ঘুম ভেঙে গেছে। মাকে ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে আমি ঘর থেকে বের হতে পারিনি কখনো। অসংখ্যবার মাকে আমি পরীক্ষা করে দেখেছি। আমার মায়ের ঘুম মায়ের ভাষায় কুকুরের ঘুমের চেয়েও পাতলা। কানের কাছে একটা কাগজের টুকরা পড়লেও তিনি চোখ মেলে তাকান।

দুমাস ধরে আমি সেই মাকে দেখছি সম্পূর্ণ উলটো। আমার মা হয়ে গেছেন আমার মতো আর আমি হয়ে গেছি মায়ের মতো।

তিন মাস আগে আববা বাড়িতে এলেন। এগারো মাস তিনি বাইরে ছিলেন।

আমার আববা তার সারাটা জীবন বাইরে বাইরে ঘুরেই কাটালেন। ব্যবসা করা ছিল আববার নেশা। পৃথিবীর কত ধরনের ব্যবসা যে তিনি করলেন। সারাজীবন ব্যবসার বিচিত্র সব আইডিয়া নিয়ে উত্তেজিত হয়ে শুধু সারা বাংলাদেশ তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। সারাজীবন শুধু ব্যবসাই করলেন। টাকার মুখ আর দেখলেন না। দেশ-বিদেশ ঘুরে ঘুরে ব্যবসা করে গেলেন। মাঝে মাঝে আমরা কিছু টাকার মুখ দেখতাম। আববা তখন দীর্ঘদিন পর বাড়িতে ফিরে আসতেন। তার চোখে-মুখে খুব হাসি লেগে থাকত। আমরা বুঝতাম আববা বেশ মুনাফা করেছেন এবার ব্যবসায়। মা ছোট্ট খুকির মতো মাথায় ঘোমটা দিয়ে ঘরের ভেতর হাঁটাহাঁটি করতেন। আববা মায়ের পানদানি থেকে পান খেতেন আর জর্দার তোড়ে বিকট শব্দ করে কাশতেন। কাশতে কাশতে তার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হতো। ব্যবসার লাভের টাকা দিয়ে কিছুদিন খুব ঘটা করে বাজার করে খাওয়াতেন আমাদের। তারপর বলতেন – ‘বশির মিয়া আমার যাওয়ার সময় হলো। নতুন একটা ব্যবসার আইডিয়া মাথায় আসছে। এই ব্যবসাটা ধরে ফেলতে পারলে আর তোমাদের চিন্তা করতে হবে না। ঢাকায় বাড়ি করতে বেশিদিন লাগবে না। একটা বাড়ি করে অর্ধেক ভাড়া দিয়ে দেব আর বাকি অর্ধেকে তোমরা থাকবা। ভাড়ার টাকা দিয়ে সংসার চলবে। তখন আর দেশ-বিদেশ আমাকে ঘুরতে হবে না। তোমাদের ছাড়া আমার বেশিদিন দূরে থাকতে ভালো লাগে না।’

মাসখানেক আববা বাড়িতে থেকে আবার ব্যবসা করার জন্য বের হয়ে যেতেন। কই কই ঘুরে বেড়াতেন আমরা তার কিছুই জানতাম না। দুমাস-তিন মাস কোনো খবর থাকতো না। আবার হুট করে তিনি বাড়িতে আসতেন। কখনো কখনো খুব মন খারাপ করে বাড়ি আসতেন। কারো সঙ্গে কথা বলতেন না। দু-তিনদিন যাওয়ার পর মুখ খুলতেন।

‘বুঝলা বশির মিয়া ব্যবসায় লস খাইলাম। আমার পার্টনার সব টাকা নিয়া পালাইলো। শালার মানুষরে এতো বিশ্বাস করলাম।’

আববার মুখে আমি বেশিরভাগ সময় এই কথাটাই শুনতাম – ‘ব্যবসায় লস খাইলাম। মানুষ টাকা মাইরা দিলো।’

একদিন মাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘মা আববা সবসময় এই রকম বলে কেন?’

মা বললেন, ‘তোর বাবা হইল পৃথিবীর সবচেয়ে নিখুঁত ভালো মানুষ। এতো ভালো মানুষ ব্যবসা করতে পারে না। তাই সবাই তোর আববার টাকা মাইরা দেয়। তিনি সবাইরে বিশ্বাস করেন। আর আমি তোর আববারে বিশ্বাস করি।’

আববার খুব একটা বন্ধু-বান্ধব ছিল না। মাঝে মাঝে নতুন নতুন কিছু লোককে দেখতাম আববার সঙ্গে ঘোরাঘুরি করতো। তারপর হঠাৎ করেই তারা আবার বাতাসে মিলিয়ে যেতো।

মা বলতেন, ‘এই লোকগুলো তোর আববার সঙ্গে ধান্ধার জন্য ঘোরে। তারপর টাকাপয়সা নিয়া আবার হাওয়ায় মিলায় যায়। একবার কেউ টাকাপয়সা নিয়া গেলে সে তো আর সারাজীবনেও তোর আববার কাছে আসবো না। এজন্য তোর বাবার কোনো বন্ধু নাই।’

আমি মাকে বলি, ‘মা আপনার মাথায় এতো বুদ্ধি। আপনে আববারে কিছু বলেন না কেন?’

মা বলেন, ‘তোর আববা হলো বাতিকগ্রস্ত মানুষ। এ-ধরনের মানুষরে কিছু বললে তারা শোনে না। এরা মরে নিজের কথায়, বাঁচে নিজের কথায়।’

আববার শুধু একজন বন্ধু ছিল। আমরা তাকে ডাকতাম তোফাজ্জল কাকা। আমার জন্মের পর থেকে তোফাজ্জল কাকাকে আববার সঙ্গে দেখে আসছি। আববা ব্যবসার কাজে বাইরে বাইরে ঘুরে আসার পর যখন এলাকায় ফিরে আসতেন, তখন তোফাজ্জল কাকার সঙ্গে আববার দেখা হতো। আববা তোফাজ্জল কাকার সঙ্গে এলাকার চায়ের দোকানে বসে চা খেতেন আর বিড়ি ফুঁকতেন। তোফাজ্জল কাকা স্থানীয় মানুষ।

একবার আববা ব্যবসা থেকে ফিরে এসে বললেন, ‘তোফাজ্জল তোমাদের এলাকায় দেখো তো একটু জায়গা পাওয়া যায় কিনা। সারাজীবন তো ভাড়া কাটাইলাম। এবার দেখি নিজের বাড়িতে থাইকা কেমন লাগে।’

তোফাজ্জল কাকা ঘরে বসে মায়ের পানদানি থেকে পান খাচ্ছেন আর আববার কথা শুনছেন।

‘মনে হয় ব্যবসায় খুব মোনাফা করছো এবার।’

‘এখনো করি নাই। তবে হয়ে যাবে, চিন্তা করবা না। তুমি জায়গা দেখতে থাকো।’

‘আগে টাকার কথা বলো। কেমন টাকা আছে তোমার কাছে। তখন আমি জায়গা দেখবো।’

‘লাখদশেক টাকা আমার এক পার্টনারের কাছে আছে। তিনি লোক ভালো। টাকা মারবেন না।’

‘তোমার এই কথা সারাজীবন শুইনা আসছি। জায়গা আমার কাছে আছে। দুই কাঠা। দশ লাখ টাকায় আশা করি হয়ে যাবে। কিছু লোন নিয়া বাড়ি করতে পারবা।’

‘তাইলে চলো একদিন জায়গাটা দেইখা আসি।’

‘দেখার কিছু নাই। আমার বাপ-দাদার জায়গা। কোনো ঝামেলা নাই। তুমি বন্ধু মানুষ বইলা তোমার কাছে বেচা যাইতে পারে।’

আববা আমাকে নিয়ে জায়গা দেখে এলেন। ঘুরে ঘুরে জায়গা দেখলেন আর বললেন, ‘জায়গা খুব কম। বেশি বড় বাড়ি এই জায়গায় বানানো যাবে না। সামনে একটা বাগান করতে পারলে ভালো হতো। যাই হোক তোফাজ্জল তোমার জায়গা আমার পছন্দ হইছে।’

তোফাজ্জল কাকাকে নিয়ে আমরা বাড়ি ফিরে এলাম।

আববা আমাকে বললেন, ‘কী বশির মিয়া, জায়গা কিনলে লোন নিয়া বাড়ি করতে পারবা না?’

আমি কিছু বলি না।

তোফাজ্জল কাকা বলেন, ‘ও খুব পারবে। তোমার গুণী শিক্ষিত ছেলে। বিসিএস পরীক্ষা দিছে। চাকরি হলেই সেই চাকরি দেখাইয়া লোন নিতে পারবে।’

আববা আমার দিকে তাকান।

‘কী বশির মিয়া, কথা সত্যি নাকি?’

‘আববা চিন্তা করবেন না। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। সারাজীবন বহুত ঘুইরা বেড়াইছেন। আর না ঘুরলেও চলবে। নিজের বাড়িতে থাকবেন আর তোফাজ্জল কাকার সঙ্গে আড্ডা দিয়া বেড়াইবেন।’

তোফাজ্জল কাকা আর আববা দুজনেই হেসে ওঠেন। আববা অনেক দূরে তাকিয়ে চুপচাপ কিছু একটা ভাবেন। হয়তো নিজের বাড়ির কথা। নিজের স্বপ্নের কথা। আমি ঠিক জানি না।

ঘরের ভেতর ঢুকে আববার বিছানার দিকে তাকাই আমি। আববা বিছানায় নেই। জানালা দিয়ে বাইরের মৃদু আলোতে দেখতে পেলাম আববার বিছানাটা কেমন বিরান মাঠের মতো ফাঁকা পড়ে আছে। আমার বুকের ভেতরটা ধক করে ওঠে। কষ্ট করে ঢোক গিলি আমি। আববা কোথায় গেল? আববা এতোটাই অসুস্থ যে, তিনি বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। তাহলে তিনি কোথায় গেলেন? আমি হাতড়ে হাতড়ে ঘরের বাতি জ্বালাই। বিদ্যুৎ চলে এসেছে। ঘরের ভেতর আববা নেই। আমি ছিটকে ঘরের বাইরে আসি। দেখি মূল দরজার সামনে আববা হেলান দিয়ে বসে আছেন। বিড়বিড় করে কিছু একটা বলছেন। আমি আববাকে জড়িয়ে ধরি। আববা আমার মুখের দিকে তাকান। আমাকে তিনি চিনতে পারছেন না। অস্পষ্ট গলায় বলছেন, ‘বাড়িত যাবো। দরজাটা খুলে দেন।’

আমি নিজেকে শক্ত করি। আমাকে ভেঙে পড়লে চলবে না। আববাকে পাঁজাকোলে করে ঘরে নিয়ে আসি। বিছানায় শুইয়ে দিই। মা তখনো ঘুমাচ্ছেন। আরামের ঘুম, যেন সারাজীবনের ঘুম তিনি এখন সেরে নিচ্ছেন। মাকে আমি ঘুম থেকে জাগাই না। থাক, মা ঘুমাক।

আববাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিই। আববা ঘোলা চোখে আমার দিকে তাকান।

আবারো অস্পষ্ট গলায় বিড়বিড় করে বলেন, ‘বশির মিয়া, বশির মিয়া।’

আববার ডাক শুনে আমার গলায় কী যেন একটা আটকে আসে।

‘বলেন আববা। আমি আপনার কাছে আছি। চিন্তা কইরেন না। বলেন।’

‘ওই লোকটার কাছে যাইতে হবে। টাকা দিয়া যাবে দশ লাখ।’

আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে। ঝাপসা চোখে আমি আববার দিকে তাকিয়ে থাকি।

দুই মাস আগে বাড়িতে খবর আসে, আববার শরীর খুব খারাপ। তোফাজ্জল কাকা খবর নিয়ে আসেন। খবর শুনে মা কাঁদতে থাকেন। এগারো মাস আববা বাড়িতে আসেননি। আমার বাতিকগ্রস্ত আববা। পৃথিবীর সবচেয়ে নিখুঁত মানুষ। তোফাজ্জল কাকা বললেন, ‘চিন্তা করবা না। আমি তোমার আববাকে নিয়ে আসবো। আমি জানি ও এখন কোথায় আছে।’

এক সন্ধ্যায় তোফাজ্জল কাকা আববাকে সঙ্গে নিয়ে মহল্লায় ঢোকেন। আববার হাতে ছোট্ট একটা নোংরা ব্যাগ। তার হাঁটতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। মৃদুপায়ে তিনি হাঁটছেন। তোফাজ্জল কাকা এক হাতে আববাকে ধরে রেখেছেন। আববাকে দেখে আমার বুকটা কেমন ভার হয়ে আসে। আমি সঙ্গে সঙ্গে দোকানে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরাই। নিজেকে শক্ত করি। আমার আববা খুব শক্তপোক্ত একজন মানুষ। আজ তার এ কী অবস্থা। শুকিয়ে কেমন চিমসে গেছেন। মনে হয় কেউ একজন স্বাস্থ্যবান একটা বেলুনের সব বাতাস বের করে নিয়েছে। খুব কষ্ট করে আববা টুকটুক করে হেঁটে আসছেন।

আমার আববা সারাজীবন আমাদের জন্য কষ্ট করলেন। ব্যবসায় উন্নতি করে নিজের একটা বাড়ি করতে চাইলেন। আমি তার ছেলে হয়ে কিছুই করতে পারলাম না তার জন্য। সিগারেট শেষ করে আমি আববার কাছে যাই। আববার হাত ধরি। আববা খুব কষ্ট করে হেসে ওঠেন।

‘কেমন আছো বশির মিয়া?’

‘ভালো আছি আববা। আপনার শরীরের এই অবস্থা কেন? নিজের শরীরের কোনো যত্ন নিলেন না সারাজীবন।’

‘এই তো বাসায় আইসা পড়ছি। এখন তোমরা যত্ন নিবা। ভয় নাই। দশ লাখ টাকার আয়োজন কইরা ফেলছি। তোফাজ্জলের জায়গাটায় তোমাদের জন্য বাড়ি হবে। নিজের বাড়িতে মরতে পারবো।’

‘আববা আপনি এসব কী বলছেন আজেবাজে কথা। বাড়িতে চলেন। সব ঠিক হয়ে যাবে।’

আববাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাই। ডাক্তার অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তারপর একসময় আমাকে বলেন, ‘মন শক্ত করেন। আপনার আববার দিন শেষ। ফুসফুসের ক্যান্সার সারাশরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। কিছুই করার নেই। আমি কিছু ওষুধ লিখে দিচ্ছি। খাওয়ান। মুখের রুচি ফিরবে। খাওয়া-দাওয়া করতে পারলে শরীর কিছুদিন ভালো থাকবে।’

আমি বাসায় কাউকে কিছু বলি না। আববার মুখের রুচি ফিরে আসে। তিনি কয়েকদিন বেশ ভালোভাবে খাওয়া-দাওয়া করেন। শরীরে শক্তি ফিরে পান। একটু ভালো মনে হয় তাকে। তখন আববা নানা ধরনের কথা আমাদের বলেন।

‘বশির মিয়া এবার ব্যবসাটা ভালো হইছে। পার্টনার ভালো ছিল। পনেরো লাখ টাকা পাওয়ার কথা। আমি ধরে নিছি দশ লাখ। আশা করি এই সপ্তাহে পাওয়া যাবে। তোফাজ্জলকে পাঠিয়ে দিবো।’

আমার আববার কথা শুনি। কিছু বলি না।

‘আমার শরীরের রোগটা কী, ডাক্তার কিছু বলছে?’

‘বলছে আপনার ফুসফুসে ইনফেকশন হইছে। ভালো করে খাওয়া-দাওয়া করেন। সব ঠিক হয়ে যাবে।’

‘আমারও তাই মনে হয়। মুখে রুচি ফিরে আসছে। খেতে ভালো লাগে এখন। শরীরে বল পাচ্ছি। আরেকটু সুস্থ হলেই জায়গাটা একবার দেখে আসবো। দক্ষিণমুখী করে বাড়িটা বানাতে হবে। তুমি লোনের ব্যবস্থা করতে পারবা না?’

আমি চোখে পাথর বাইন্ধা রাখি। আববাকে বলি, ‘পারবো আববা। চাকরির গেজেটটা বাইর হলেই চাকরিতে জয়েন করবো। তখন চাকরি দেখাইয়া লোন নিতে পারবো।’

বিসিএসে আমার প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি হয়। আববাকে বলছি সেটা। তিনি শুনে বলেন, ‘চাকরি কইরা কয় টাকা কামাবিরে বেটা। চাকরির গোনা টাকা। তার চেয়ে যদি ব্যবসাটা শিখতে পারতিস।’

আববার শরীর দিন দিন খারাপ হতে থাকে। মুখের ভেতর ঘা হয়ে গেছে। তিনি কিছু খেতে পারেন না। শরীর শুকিয়ে যাচ্ছে। এখন আর বেশি কথাও বলেন না। সারাদিন শুধু চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকেন। মাঝে মাঝে আমাকে ডাকেন।

‘বশির মিয়া, ও বশির মিয়া।’

আমি ছুটে আববার কাছে আসি। তার হাত ধরি।

‘কিছু বলবেন আববা?’

আববা মুখ তুলে তাকান। কিছু বলতে চান। কিন্তু দুর্বলতার জন্য পারেন না। একসময় ধীরে ধীরে বলেন, ‘লোকটা কি টাকাগুলো পাঠাইছে?’

তারপর আবার চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন।

যে-লোকের কাছে আববার টাকা পাওয়ার কথা ছিল তোফাজ্জল কাকা সেই লোকের ঠিকানায় গেলেন। কাউকে তিনি পেলেন না। আমরা বুঝে যাই বরাবরের মতো এই লোকও আববার টাকা মেরে দিয়ে চলে গেছে। আববাকে কিছু বলি না। আমরা বসে বসে তার মৃত্যুর অপেক্ষা করতে থাকি।

একদিন আববা বিছানায় উঠে বসে সুস্থ মানুষের মতো কথা বলতে থাকেন।

‘বশির মিয়া এই বাড়িতে আমরা কবে আসলাম। তুমি কাউরে কিছু না বইলা এই বাড়িতে চুপিচুপি আসলা কেন?’

আমি আববার কথা কিছু বুঝতে পারি না।

মায়ের দিকে তাকিয়ে আববা বলেন, ‘এই মহিলা এখানে কী করে? তোমার মা কই বশির মিয়া। তোমার মারে ডাকো।’

মা আর আমি দুজনেই কাঁদতে থাকি। আহ্, কী দুঃসহ সময়! আমার আববা এখন আর কাউকে চিনতে পারছেন না। ক্যান্সার তাঁর সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে।

মা আমাকে বলেন, ‘তোর আববা আর বেশিদিন বাঁচবে না।’

মাকে আমি কিছু বলি না।

মা বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি তোর বাবার বিছানার পাশে আমার শ্বশুর বসে আছেন। আমি তখনি বুঝতে পারি, তোর বাবা আর বাঁচবে না।’

আমি মাকে বলি, ‘মা আপনি হয়তো স্বপ্ন দেখছেন। এরকম হয় নাকি।’

‘হয়তো স্বপ্নই দেখছি। আমার যে কী হলো কিছুই বুঝতে পারছি না। তোর আববা আমার পাশে আছেন সুস্থ হোক আর অসুস্থ হোক আছেন তো। আমি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ি। এমন ঘুম আমার কখনো হয় নাই। তুই একটু সজাগ থাকিস বাপ। কখন কী হয়।’

আমি রাতের পর রাত কান সজাগ করে শুয়ে থাকি। আববা কখন ডাকেন।

‘বশির মিয়া, ও বশির মিয়া।’

আববা খুব হালকা গলায় আমাকে আবার ডাকলেন। মনে হলো অনেক দূর থেকে তিনি আমাকে ডাকছেন। আমি আববার মুখের কাছে চলে আসি। বাইরে রাতের আঁধার হালকা হয়ে আসছে। ভোর হয়তো হবে কিছুক্ষণের মধ্যে।

‘বশির মিয়া আমারে মাফ কইরো বাজান। তোমার জন্য কিছু করতে পারলাম না। সারাজীবন ভাড়াবাড়িতে কাটাইলাম। তোমারে একটা বাড়ি বানাইয়া দিতে পারলাম না।’

আববা হাঁপাতে থাকেন। চোখ কেমন ঘোলাটে হয়ে আসে আববার। শ্বাস নিতে পারেন না। অনেক দূরে মহল্লার কোনো একটা কুকুর শরীর হিম করা শব্দে কাঁদতে থাকে। কুকুর নাকি আজরাইল দেখতে পায়।

আমি আববার মাথাটা আলতো করে ধরে রাখি। আমার আববা আমার পীর সাহেব, পৃথিবীর সবচেয়ে নিখুঁত বাতিকগ্রস্ত মানুষ আস্তে আস্তে মারা যান আমার কোলে। মা তখনো তার বিছানায় গভীর ঘুমে তলিয়ে আছেন। আববা তার পাশে আছেন – সেই নিশ্চিন্তের ঘুম।

এর পরের কাজগুলো অবশ্য খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়। দুপুরের পরপরই মহল্লার লোকজন মিলে আববাকে আজিমপুর সরকারি কবরস্থানে কবর দিয়ে আসি। একটা নিমগাছের তলায় আববার কবর হয়। মসজিদের ঠিক পাশেই। সবাই বলে – ‘তোমার আববার ভাগ্য খুব ভালো। কবরের পাশেই নিমগাছ। জিন্দা গাছ থাকলে কবরের আজাব কম হয়। আবার পাশেই মসজিদ।’

আমি টানা চারদিন আববার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সুরা-কেরাত পড়ে তার জন্য দোয়া করি।

মহল্লার লোকজন বলে, ‘এই নিমগাছ দেখে তোমার বাবার কবর খুব সহজেই চিনতে পারবা।’

আমি কয়েকদিন টানা আববার কবর জিয়ারত করে কবরের পাশে দিন-তারিখসহ একটা নেমপ্লেট লিখে আসি। মরহুম আববা। আমার আববার নামের পাশে মরহুম লেখার দিকে তাকিয়ে আমার বুক ভেঙে কান্না আসে। আমি নিজেকে শক্ত রাখি।

আমার বিসিএসের গেজেট বের হয়ে আসে। ঢাকার বাইরে পোস্টিং হয়। মাকে নিয়ে ঢাকার বাইরে চলে যাই। আববা পড়ে থাকেন সরকারি কবরস্থানে।

একটা বছর নতুন চাকরিতে ট্রেনিং নিয়ে এতো ব্যস্ত থাকি যে, আববার কথা প্রায় ভুলেই যাই। আমার মা আবার স্বাভাবিক হয়ে আসেন। কুকুরের মতো তার ঘুম আবার পাতলা হয়ে যায়। সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে এসে আমি আগের মতো হয়ে যাই। মরার মতো ঘুমাই।

‘বশির মিয়া, ও বশির মিয়া।’

এক রাতে মনে হলো আববা আমাকে আবার ডাকছেন। আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে শুনতে পাই আববা বলছেন, ‘বশির মিয়া, ও বশির মিয়া কতদিন তোমারে দেখি না। কই তুমি?’

ধড়ফড়িয়ে আমি ঘুম থেকে উঠি। পাশের ঘরে ছুটে যাই। আমার শব্দ পেয়ে মা ঘুম থেকে উঠে বসেন।

‘কী হইছে বশির?’

আমি সারাঘর আববাকে খুঁজি। বেশ কিছু সময় নেয় সব স্বাভাবিক হতে।

মাকে জড়িয়ে ধরি কাঁদতে কাঁদতে বলি, ‘মা আববার কথা মনে পড়তেছে।’

সকাল হওয়ার আগেই আমি ঢাকা রওনা দিই। কতদিন হয় আববার কবর জিয়ারত করি না।

বিকেলের দিকে আমি আজিমপুর সরকারি কবরস্থানে এসে ঢুকি।

নিমগাছটা খুঁজতে থাকি। ওই তো দূরে নিমগাছ দাঁড়িয়ে আছে। আরো বড় হয়েছে। ডালপালা ছড়িয়ে গেছে। আমি হাঁটতে থাকি। নিমগাছের কাছে আসতেই দেখি নিমগাছের নিচে কবরটার পাশে একটা মেয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে দুহাত তুলে প্রার্থনা করছে। তার দুচোখ ভেসে যাচ্ছে চোখের জলে। আমি পা টিপে টিপে কাছে এসে শুনতে পাই, মেয়েটা বলছে, ‘হে আল্লাহ আমার বাবাকে রক্ষা করেন। এতো ভালো মানুষ পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টা ছিল না। রক্ষা করেন আল্লাহ।’

কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটার হেঁচকি উঠে যায়। আমি তাকিয়ে দেখি সম্পূর্ণ নতুন একটা কবর। ওপরে সবুজ ঘাস। পাশে নতুন একটা নেমপ্লেট।

আমার আববার যে নেমপ্লেট ছিল সেটা আর নেই সেখানে।

বেশ কিছুক্ষণ পর আমি বুঝতে পারি, সরকারি কবরস্থানে এক কবর বেশিদিন রাখা হয় না।

আমি কবরস্থান থেকে বের হয়ে আসি।

আমার মনের ভুল হতে পারে। আমি আবারো শুনতে পাই, স্পষ্ট শুনতে পাই আববা ডাকছেন – ‘বশির মিয়া, ও বশির মিয়া।’ r