প্রচ্ছদ-পরিচিতি

ফুলদানি

সত্তরের দশকের শেষ পর্যায়ে শহিদ কবীর বাউল সাধক লালনের গানে প্রবলভাবে আন্দোলিত হয়েছিলেন। সে-সময়ে তাঁর সৃষ্টিতে লালনের গানের মর্মবাণী প্রতিফলিত হয়েছিল। টেম্পেরায় করা বাউল সিরিজের এসব চিত্রে বাউল সংগীতের অচিন প্রেম ও মানবিক বোধের উজ্জ্বল প্রকাশে চিত্রানুরাগীরা বিমোহিত হয়েছিলেন।

শিল্পের বৃহত্তর জগতে নিজের শিল্প-সাধনাকে ব্যাপৃত করার ইচ্ছা নিয়ে চারু ও কারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষকতা ত্যাগ করে শহীদ কবীর স্পেন চলে যান ১৯৮০ সালে। তাঁর শিল্পীসত্তা ইউরোপীয় পরিমন্ডলে অধিকতর সমৃদ্ধ হয়। ইউরোপের স্বাধীন, আন্তর্জাতিক বোধে উজ্জীবিত নতুন পরিবেশে তিনি অধিকতর স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এবং তেলরং ও ছাপাই ছবিতে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। ইউরোপীয় বাস্তবতায় ও প্রকরণে এসব ছাপাই ছবি হয়ে ওঠে কাব্যগুণসমৃদ্ধ ও ইঙ্গিতময়। দীর্ঘদিন তিনি মাদ্রিদে ছিলেন।

তেলরং, অ্যাক্রিলিক এবং টেম্পেরায় তিনি সিদ্ধহস্ত। এসব মাধ্যমের কাজে প্রাধান্য পেয়েছে মাটি থেকে পাওয়া লাল, খয়েরি, ধুসর ও গেরুয়া রং। এই রং তিনিও আহরণ করেছেন শৈশবস্মৃতি ও বাঙালির জনজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে। বছরকয়েক আগে ঢাকায় তিনি যে-প্রদর্শনী করেন তাতে তেল ও জলরঙের কাজে এদেশের জনজীবনের নানা অনুষঙ্গ প্রত্যক্ষ করা যায়। তিনি স্পেনপ্রবাসী হলেও বাংলাদেশের সমাজবাস্তবতা সর্বদা তাঁকে আন্দোলিত করে। বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ, কষ্ট ও বেদনা  এ-প্রদর্শনীর চিত্রসমূহে প্রতিফলিত হয়েছে।

সম্প্রতি ঢাকায় তেল ও অ্যাক্রিলিকে করা বেশ কিছু কাজে তাঁর সাধনা ও শক্তিমত্তা নতুন মাত্রা নিয়ে উন্মোচিত হয়েছে।

শহীদ কবীর ১৯৬৯ সালে ঢাকার চারু ও কারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রচ্ছদের চিত্রটির সংগ্রাহক আবুল খায়ের।