প্রাচ্য-চিত্রকলার অভিযাত্রা

জাহিদ মুস্তাফা

 সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে প্রাচ্যকলার এক গুরুত্ববহ যৌথ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পধারাকে তার সীমিত পরিসর অর্থাৎ ফুল-পাখি-লতা-পাতা আর রমণী-অবয়বের বৃত্ত থেকে বের করে মননশীল আধুনিক নিরীক্ষায় তুলে আনতে তৎপর হয়েছেন প্রাচ্য ঘরানার শিল্পী-শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাঁরা গড়ে তুলেছেন ওরিয়েন্টাল পেইন্টিং স্টাডি গ্রুপ। তাঁদেরই চতুর্থ প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন বাইশজন শিল্পী। প্রদর্শনীর কিউরেটর চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগের শিক্ষক ড. মলয় বালা।

ভূগোলের অবস্থান থেকে পৃথিবীকে দুভাগ করলে দাঁড়ায় – প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য। প্রাচ্য বা পূর্বের শিল্পধারাই প্রাচ্যকলা হিসেবে পরিচিত হয়েছে। মানব সভ্যতার শেকড় এই প্রাচ্যেই। প্রাচ্য সর্বদা ভেতরমুখী, অনুভূতিপ্রবণ ও আধ্যাত্মিকতায় নিমগ্ন। আর পাশ্চাত্য বহির্মুখী ও প্রকাশবাদী। প্রাচ্যকলা বলতে এতকাল যেটুকু চর্চিত হয়েছে, তা প্রকারান্তরে ক্ষয়িষ্ণু ঐতিহ্যের শিল্পিত অবগাহন। একে প্রণিধানযোগ্য মাত্রায় উত্তরণের খন্ডিত চেষ্টা হয়েছে বটে, তবে তা সবল হয়ে ওঠেনি অনায়াসসাধ্য শিল্পপদ্ধতি ও প্রকরণের জন্য।

শিল্পগুরু অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিল্পে খুঁজেছেন নিজস্ব জমিন। অজন্তা-ইলোরা হয়ে মুঘল ঘরানা ঘুরে ভারতশিল্পের ষড়ঙ্গকে কেন্দ্রে রেখে তিনি নব্যবঙ্গীয় চিত্ররীতির সন্ধান পেলেন। কলকাতা আর্ট স্কুলের অধ্যক্ষ হ্যাভেল সাহেবের সহায়তায় শিক্ষার্থীদের পাঠধারায় তিনি এই চিত্রবিদ্যা যুক্ত করলেন। তাঁর উপযুক্ত শিষ্য ও পরবর্তীকালে শান্তিনিকেতনের কলাভবনের অধ্যক্ষ নন্দলাল বসুর হাতে সমৃদ্ধ হয় সেই চিত্ররীতি। নন্দলালের ছাত্র বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় একে আরো সহজ করে আনলেন। এরকম ধারাবাহিক চর্চা ও সাধনার ভেতর দিয়ে আমাদের এ-অঞ্চলে প্রাচ্যকলার পুনর্জাগরণ হয়।

মূলধারার শিল্পের চোখে প্রাচ্যকলা ব্রাত্যই ছিল। অথচ আমাদের পথিকৃৎ শিল্পী জয়নুল আবেদিন (১৯১৪-৭৬) ও কামরুল হাসানের (১৯২১-৮৯) চিত্রপ্রকরণে প্রাচ্যকলার সঙ্গে লোকশিল্পের মেলবন্ধন দেখি। দুর্ভিক্ষের চিত্রমালায় সাবলীল রেখায় জয়নুলের অঙ্কনকে  দেশ-বিদেশের কলা-আলোচকরা প্রাচ্যরীতির সঙ্গে পাশ্চাত্য পদ্ধতির সার্থক সমন্বয় বলেছেন। ১৯৫১ সালে কামরুলের অাঁকা ঘরের জানালা দিয়ে গ্রাম্যবধূর ‘উঁকি’ ও আরো অসংখ্য কাজ প্রাচ্যকলাকেন্দ্রিক। শেকড়ের টান ছিল বলে তাঁদের চিত্রকর্মে ছিল স্বদেশি স্বকীয়তার উদ্ভাস এবং তাঁদের ওই কাজগুলো জননন্দিতও হয়েছে।

বাংলাদেশের আধুনিক চারুশিল্পের আঙিনায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রাচ্যকলা বিভাগের সূচনা হয় ১৯৫৫ সালে ঢাকার তৎকালীন আর্ট ইনস্টিটিউটে। শিক্ষকের দায়িত্বভার নেন ইতালিতে ফ্রেসকো ও ম্যুরাল পেইন্টিংয়ে উচ্চতর শিক্ষাপ্রাপ্ত আমিনুল ইসলাম (১৯৩১-২০১২)। পরে যুক্ত হন হাশেম খান, আরো পরে আবদুস সাত্তার প্রমুখ কৃতী চিত্রকর। গত শতকের আশির দশকে ভারতে উচ্চশিক্ষাপ্রাপ্ত শিল্পী নাসরীন বেগম ও শওকাতুজ্জামান (অকালপ্রয়াত) শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ায় প্রাচ্যকলা শিক্ষায় সত্যিকারের প্রাণস্পন্দন তৈরি হয়। তার ফসল এখনকার প্রাচ্যকলা শিক্ষায় শিক্ষিত, দক্ষ, আধুনিক ও সমকালীন দৃষ্টিভঙ্গির একঝাঁক তরুণ শিক্ষক তৈরি হয়েছেন এবং তাঁরা চারুকলা শিক্ষার নানা কেন্দ্রে কাজ করছেন। তাঁদেরই হাতে গড়ে উঠেছে প্রাচ্য-চিত্রকলা  অনুশীলন দল।

এ-দলের চতুর্থ প্রদর্শনীর আয়োজন হয়েছিল ঢাকায় গত ২৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার থেকে ১০ মে শনিবার পর্যন্ত। বরেণ্য শিক্ষাবিদ এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এ-প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। প্রাচ্যকলাকে শিল্প-দর্শক ও সমঝদারদের কাছে নতুন করে মেলে ধরার এ-প্রয়াসকে তিনি সাধুবাদ জানিয়েছেন। শিল্পীদলে আছেন –  ড. আবদুস সাত্তার, তাজুল ইসলাম, রফিক আহমেদ, ড. সুশান্ত অধিকারী, মুকুল কুমার বাড়ৈ, ড. মলয় বালা, গুপু ত্রিবেদী, দেবাশীষ পাল, কান্তিদেব অধিকারী, অনামিকা শবনম, শংকর মজুমদার, জাহাঙ্গীর আলম, গোপাল চন্দ্র সাহা, সুমন বৈদ্য, মো. জাহাঙ্গীর আলম, বিকাশ আনন্দ সেতু, মমতাজ পারভিন, পূর্ণিমা মন্ডল, ইস্কান্দার মির্জা, মুস্তাকিনা তারিন, অমিত নন্দী ও সুস্মিতা সাহা রিমি।

সবাই যে প্রাচ্যকলার পুরো নিয়ম মেনে এঁকেছেন এমন নয়, কিংবা সবাই যে প্রাচ্যকলায় দীক্ষিত তাও নয়; তবে ধরন-ধারণে এর কলাসূত্র কাজে লাগিয়েছেন শিল্পীরা। বয়স অনুযায়ী এ-দলের শিল্পীদের তিন প্রজন্মের বলা যায়। আবদুস সাত্তার, তাজুল ইসলাম ও রফিক আহমেদ সত্তরের দশকের শিল্পী। এরপর এ-তালিকায় আছেন নববই, শূন্য ও চলমান দশকের শিল্পীরা।

ড. আবদুস সাত্তার সত্তরের দশকের শিল্পী হলেও তাঁর উত্থান আশির দশকে। তিনি এদেশে প্রাচ্যকলার গুরুত্বপূর্ণ চিত্রকর এবং ছাপচিত্রেও অসামান্য দক্ষতা দেখিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃত হয়েছেন। সৃজন-অভিজ্ঞতায় তাঁর নিজের প্রাচ্যচিত্রকলাকে সমৃদ্ধ করেছেন, প্রকারান্তরে সমকালীন শিল্পও লাভবান হয়েছে। প্রদর্শনীতে তাঁর দুটি কাজ ‘কোরীয় পাথর-১’ ও ‘কোরীয় পাথর-২’। বিষয়ে সাধারণ হলেও সবুজ ঘাস ও পাতার আবহে সুদক্ষ ওয়াশে ভার ও ভল্যুমসহ কালোপাথর এঁকেছেন শিল্পী।

তাজুল ইসলামকে আমরা জানি এদেশের প্রথম প্রজন্মের গুণীশিল্পী অকালপ্রয়াত রশীদ চৌধুরীর ট্যাপেস্ট্রির সহযোগী শিল্পী হিসেবে। এ-প্রদর্শনীতে তাঁর গড়া ট্যাপেস্ট্রিতে আরবি ক্যালিগ্রাফি কাজ প্রদর্শিত হচ্ছে। শিল্পী অতিযত্নে পরম করুণাময়কে স্মরণ করেছেন মোটা সুতোর বয়নে।

রফিক আহমেদ সত্তরের দশকে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন ভারতের প্রবীণ শিল্পী কে. জি. সুব্রাহ্মণ্যনের কাছে। তিনি অাঁকেন সমৃদ্ধ গ্রামবাংলার কিষান-কিষানি, জেলে ও জেলেনির ছবি। আকাশ, নিসর্গ, বাড়িঘরের পটভূমিকে জ্যামিতিক গড়নে বিভাজন করে চিত্রপটে শিল্পী তুলে এনেছেন মাছধরার ছিপ-কাঁধে ত্রিভঙ্গে চলা মাছশিকারি আর তার সামনে কলসে জলভরায় মগ্ন এক নারী।

গুপু ত্রিবেদী ইলাস্ট্রেশন ও প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন আগেই, এখন প্রাচ্যকলার শিক্ষক হিসেবে ক্রমশ সৃজনশিল্পীর পরিচয়-প্রধান হয়ে উঠছেন। তিনি কামরুল হাসানের মতো লোকশিল্পীদের চিত্রগত ধারণা ও বৈশিষ্ট্য প্রয়োগ করে ছবি অাঁকছেন। এ-প্রদর্শনীতে কাঠকয়লায় এঁকেছেন ‘রেখার মায়া’। বনবাদাড়ে ঘুরে-বেড়ানো সমবয়সী দুই তরুণীর অবয়ব ও ভঙ্গিমার সঙ্গে প্রকৃতি, পাখি আর হরিণশাবকের এক মায়াময় ছবি এটি।

দেবাশীষ পাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্পের শিক্ষক। রঙিন কালি ও কলমে প্রাচ্য ঘরানার নকশাময় কারুকার্যে তিনি এঁকেছেন ‘বাংলার গাঁথা’। ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষক মুকুল কুমার বাড়ৈ জলরঙে এঁকেছেন ‘অবয়ব’, ভাস্কর্যের দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিমাসুলভ কমনীয়তার সমন্বয় সেই চোখে-মুখে। শংকর মজুমদার কাজ করেন অভিনব পদ্ধতিতে। চিত্রপটে অক্সাইড রঙের প্রলেপ দিয়ে তার ওপর কাঠকয়লায় তিনি বিষয়বস্ত্ত তুলে ধরেন। এ-প্রদর্শনীর জন্য একঝাঁক শূকরের পাল ও একজন পালক নিয়ে শিল্পী এঁকেছেন ‘জীবনসংগ্রাম ও তার বাস্তবতা’।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষক সুশান্ত কুমার অধিকারী ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিক ও প্যাস্টেল রঙে এঁকেছেন ‘গণজাগরণ মঞ্চের প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবিম্ব’। এতে সমাজের কয়েকজন নারী-পুরুষের প্রতিকৃতির প্রতিচ্ছবি এবং সামাজিক-রাজনৈতিক-ধর্মীয় প্রতীকসমূহ একত্রিত হয়ে গোটা চিত্রতল বাংলার পটচিত্র ও টেরাকোটার প্যানেলের মতো বিভাজিত। ক্যানভাসের প্রায় কেন্দ্রস্থলে এ-প্রজন্মের এক তরুণী তার ল্যাপটপে দেখছেন গণজাগরণ মঞ্চের স্লোগানকন্যার ছবি। তার পাশে ঘা-খাওয়া এক ভাবলেশহীন মুক্তিযোদ্ধার ছবি। ওপরে সমাজের নানাস্তরের মানুষ ও তাদের প্রতিক্রিয়া। বেঙ্গল স্কুলের স্বচ্ছ জলরং এবং মোগল মিনিয়েচারের অস্বচ্ছ টেম্পারা পদ্ধতির প্রভাবে সময়োপযোগী মাধ্যমে শিল্প সৃষ্টির প্রয়াস।

প্রদর্শনীর কিউরেটর মলয় বালা গাছের শেকড়ের আবর্তনের ভেতরে খুঁজে পান কবি কালিদাসের শকুন্তলার অবয়ব ও শরীরকাঠামো। ঐতিহ্যের প্রতি সহজাত টান এবং আধুনিক মননশীলতার সমন্বয় আমরা পেয়ে যাই তাঁর চিত্রকর্মে। জলরঙের স্বচ্ছতায় সাবলীল দক্ষতায় শেকড়ের সাধারণ বিষয়কে শিল্পী সযত্নে রমণীয় করে তুলেছেন, এখানেই তাঁর সার্থকতা নিহিত।

কান্তিদেব অধিকারী প্রাচ্যকলা বিভাগের তরুণ শিক্ষক। গাছের গুঁড়িতে গজানো মাশরুমের ছবি এঁকে তিনি এর নাম দিয়েছেন ‘অনিশ্চিত জীবন’। যে-নিগড়ে এর জন্ম সেটি এমনই অস্থায়ী যে, যে-কোনো ক্ষণে উন্মূল হতে পারে। তুমুল এই অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও মৃত কাঠের গোড়ায় সে তো জীবনেরই প্রতীক। নারী ও পুরুষের প্রেমজ রোমান্টিকতাকে নিজের ছবি অাঁকার বিষয় করেছেন অনামিকা শবনম। এক্ষেত্রে প্রচলিত পদ্ধতিতে ফিগার ড্রইংয়ে না গিয়ে শিল্পী চিত্রপটে জলরঙে আলো-অাঁধারি তরঙ্গে নারী-পুরুষের অবয়ব তুলে এনেছেন বটে, তবে তাদের অভিব্যক্তিতে রোমান্টিকতার অনুভব যথার্থ নেই। বরং জাহাঙ্গীর আলমের  জলরঙে অাঁকা ‘বৃক্ষের রহস্যময় রোমান্টিকতা’য় আমরা সে-ভাবটি উপলব্ধি করি। তাঁর কাজের আরেকটি বৈশিষ্ট্য আমাদের আকৃষ্ট করে, সেটি হলো – একটিমাত্র ওয়াশে তিনি এই সৃজন সম্পন্ন করেছেন। অথচ কী আশ্চর্য, জাহাঙ্গীর চারুকলায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেননি!

চিত্রপটে জলরঙে নীলাভ আলো-অাঁধারির ভেতর জ্যামিতিক ফর্ম – কখনো ত্রিভুজ, কখনো চতুর্ভুজ রূপে উত্থাপন করেছেন শিল্পী গোপাল চন্দ্র সাহা। তাঁর চিত্রকর্মের শিরোনাম – ‘ডানার সৌন্দর্য’। মরমিয়া বাউলগানের ভাব নিয়ে সুমন বৈদ্য এঁকেছেন ‘পাখি কখন জানি উড়ে যায়’। মো. জাহাঙ্গীর আলম গন্ধরাজ ফুলের পাপড়ি আর দলের অনুরূপ অবয়বকে জলরঙে বড় করে চিত্রপটে তুলে এনেছেন। শিরোনাম দিয়েছেন – ‘বসন্ত’। এর প্রকাশধরনে নতুনত্ব দর্শককে আকৃষ্ট করে।

বিকাশ আনন্দ সেতু এঁকেছেন ‘আত্মানুসন্ধান’। তিনি যেন এক উদ্ভিদবিজ্ঞানীর দৃষ্টিতে চিত্রপটে নানা উদ্ভিদ তুলে এনে তার ইতিহাসের বয়ান করেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্যকলার শিক্ষক মমতাজ পারভিন নারী-অধিকারকে নিজের চিত্রকর্মের বিষয় করেছেন। গণপরিবহনে নারীযাত্রীর জন্য আলাদা বাসের ভেতরে ও বাইরের পরিবেশটিকে মজা করে তুলে ধরেছেন। পূর্ণিমা মন্ডল ফুল আর ক্যাকটাসের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে কয়েকটি ফিগার যুক্ত করেছেন, যার শিরোনাম রেখেছেন ‘ক্যাকটাসের সাথে মানুষ’। বিষয় ও উপস্থাপন মনোযোগ কাড়ে। ইস্কান্দার মির্জা এঁকেছেন ‘পুরনো ঢাকার ঘোড়া’। জলরঙে বাস্তবানুগ ধারার ভালো কাজের উদাহরণ হতে পারে এটি। তবে প্রাচ্যকলা ঘরানার কাজের সঙ্গে মিলের চেয়ে অমিলটাই বেশি। মুস্তাকিনা তারিনের ‘শান্তির প্রার্থনা’ শীর্ষক চিত্রের চিত্রপটের কেন্দ্রে লতাপাতায় জড়ানো গ্রেনেড, তার ভেতর থেকেও যেন বেরিয়ে এসেছে জীবনের সম্ভাবনা। সৃজনশিল্পীদের শান্তিবাদী মনোভাবকেই ধারণ করেছে এই ছবি। অমিত নন্দী পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ব্যান্ডপার্টিকে তাঁর চিত্রপটে তুলে এনেছেন। সুস্মিতা সাহা রিমি নান্দনিক ছন্দে ‘ফুল’ এঁকেছেন।

প্রায় সবাই জলরঙেই এঁকেছেন। অ্যাক্রিলিক রঙের উদ্ভবের পর একসঙ্গে এতগুলো জলরং-ছবি খুব একটা দেখা হয় না আমাদের। তার মধ্যে ঐতিহ্য বহনকারী প্রাচ্যকলাকে নতুন ধারায় সমকালীন ও প্রাসঙ্গিক করে তোলার এ-প্রয়াস বেশ উৎসাহব্যঞ্জক বটে। প্রাচ্যচিত্রকলা অনুশীলন দলের কর্মপ্রয়াস সার্থক হলে আমাদের চারু শিল্পাঙ্গন আরো বেশি স্বকীয় ও সমৃদ্ধ হবে।