প্রয়াত জনকের সঙ্গে ইহজনম

হুমায়ূন মালিক

সহসাই তার মনে হয়, একজন নয় তাকে তাড়া করছে অনেকে। প্রথমে তো শাবান মণ্ডলের পোলা মবিন চেয়ারম্যান তার দিকে পিস্তল তাক করেছিল, আর ও দৌড়াতে শুরু করে। এখন তাকে ছাপিয়ে অনেক মানুষের পায়ের, গলার আওয়াজ – দৌড়ের মধ্যেই মমতাজ একবার মাথা ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা নেয় – এরা কারা! দেখে কুরুক্ষেত্রের অর্জুনের মতো সে বিস্মিত – চেনা-অচেনার ভিড়ে তার জ্ঞাতিগোষ্ঠী-পাড়াপড়শির বদ, লোভাতুর আদলগুলোও, তাদের নেতৃত্ব যেন ধরে রাখছে মবিনই। দ্রুত চোখ ফিরিয়ে সামনে তাকাতেই দেখে, তার বাবা বা ছেলেদের হাতে নিহতদের পাপাত্মা এরই মধ্যে তার পথ জুড়ে মরণ খাদ কেটে তাতে তার পতন উদ্যাপনের অপেক্ষায়।
এবার দিশাহীন মমতা বোবাধরা মানুষের মতো নিজের মধ্যে ছোটে। ছুটতে ছুটতে সহসাই চোখে পড়ে
তার বাঁয়েই গোরস্তানের খোলা গেট। এই গোরস্তানে তার বাবা আছে। বাবাই তো তার প্রধান, হয়তো একমাত্র, এবং শেষ ভরসা। শত্র“র ছোঁয় ছোঁয় ধরে ধরে হাত ফসকে ও গোরস্তানে ঢুকে পড়ে।
নিরাশ্রয় এক নারীর কবরে বসবাসের খবর পড়েছিল কাগজে। আমৃত্যু এখানেই থাকবে এমন এক ইচ্ছায় মেগেটেগে খাবার-দাবার নিয়ে সমাধির ভাঙা পথে সে তার গর্তে ঢোকে। একসময় গোররক্ষক তার খোঁজ পেয়ে তাকে বের করে দেয়। কিন্তু এখানে তার – মমর বাবা আছে, প্রভাবশালী এক গোরবাসী।
তুমি কোথায় বাবা? খুঁজতে-খুঁজতে, খুঁজতে-খুঁজতে…
খুঁজতে-খুঁজতে কখন যে ও গোরস্তানের জাগতিক সীমা ভেদ করে তার অন্দরে এসে পড়ে!
যাক, এখন আপাতত বাবার আশ্রয়, অতঃপর তার আশীর্বাদে শত্র“র হাত থেকে পরিত্রাণের প্রয়াস নেওয়া।
কিন্তু বাবা যে কেমন আছে? তাকে আশ্রয়দান বা উদ্ধার করার মতো অবস্থায় আছে তো! নাকি ও নিজেই গোর আজাবে – ত্রাহি ত্রাহি দশায়?
শরিয়াপন্থী কারো কারো দাবি – মৃত ব্যক্তির কোনো ক্ষমতাই নাই, পাপাত্মা কী পুণ্যাত্মা, তার জীবিত মানুষের অপকার-উপকার দূরে, আপনার জন্যই কিছু করার নাই। কিন্তু মারফতিদের বিশ্বাস, তার মুর্শিদ স্থান বদল করলেন মাত্র – আছেন হায়াতেই এবং আগের মতোই, ক্ষেত্রবিশেষে আগের চেয়ে ক্ষমতাধর। এতকাল তার বাবাকে তার মনে হয়েছে ওই হায়াতুম মুর্শিদের মতোই ক্ষমতাধর এবং এই গোরস্তানবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে সুখী ও সম্মানী। কিন্তু তিনি যে বেনামাজি, বেরোজদার ছিলেন! তার তো নামাজ-রোজা না করারই কথা, যেহেতু তিনি পুলিশ ছিলেন – জনচেতনে ব্যাপারটা এমনই। তারা একজন ওসিকে ঘুষখোর, জুলুমবাজ, অত্যাচারী হিসেবে ভাবতেই অভ্যস্ত। কিন্তু তার বাবাকে তেমন ভাবার পক্ষে তাদের কাছে তেমন কোনো প্রামাণ্য দলিল, এমনকি শোনাকথার জোগানও ছিল না। তবে বাবা নিছক ধর্ম-কর্মে উদাসীন নন, নাস্তিকও, এমনকি তার বেতন-ভাতাদির সঙ্গে অর্জিত সম্পদের অঙ্ক মেলাতে গেলে মমর আঙুলেই কেমন যেন ঘুষের টিউমার ঠেকে – তো সেই মানুষ মৃত্যুর পর তেমন এক মর্যাদা কী করে পায়! তা কি মানুষটার জন্য তার এতিমখানা, মসজিদ, মাদ্রাসা, দান-খয়রাত, মিলাদ-মাহফিল ইত্যাদির বদৌলতে! কিন্তু পরপারে বাবা যে পরম শান্তিতে আছেন তা যে ও তার এইসব কর্মকাণ্ড শুরুর আগেই অর্থাৎ বাবার মৃত্যুর পর থেকেই অনুধাবন করে আসছে! এমনকি সে যখন এই গোরস্তানে গাছ-গুল্ম লাগায়, তাতে ফুলফল হয়, তখন রক্তরং কৃষ্ণচূড়া-জবা, বর্ণাঢ্য গোলাপের সৌন্দর্যে, বকুল-বেল-জুঁইয়ের মিষ্টি-কোমল কী কামিনী-গন্ধরাজ-হাøাহেনার তীব্র বাøার মধ্যে তার মনে হয় এরা বাবার মহিমা কিংবা কোনো বৈশিষ্ট্য ধারণে অসমর্থ, এমনকি এতিমখানা, মসজিদ, মাদ্রাসা – তার সব কীর্তি মিলিয়েও সে তার বাবাকে স্পর্শ করতে পারে না, বাবা বাবাই; রক্তে-মাংসে, স্বপ্নে-অঙ্গীকারে। তাজমহলের কারুকর্মে কি মমতাজের অস্তিত্বের কিছু মেলে!
কিন্তু বাবা তুমি যখন হায়াতে তখনই তুমিহীন দুনিয়া – বাবাহীন বাঁচা আমি ভাবতে পারতাম না। তোমার আত্মা এখন নিশ্চয়ই জেনে গেছে তখন আমার বোধে এই সংসারে তুমি নেই অথচ আমি আছি এ অসম্ভব!
তো চট্টগ্রাম থেকে তোমার মৃত্যুর খবর – লাশ এলো, তার দাফন হলো ঠিকই কিন্তু তুমি আমার হায়াতুম মুর্শিদ। আমার ওপর নজর রাখছ, আগাম সংকেত দিচ্ছ আপদে-বিপদে, উদ্ধারের তরিকাও। রবি-শশীর আবির্ভাবের আগাম সুসঙ্কেতও আমি তোমার কাছে পাই, যদিও তার অর্থ উদ্ধার হয় তাদের জন্মের পর।
তোমারই দোয়ায়-ছায়ায়-নজরদারিতে দেখতে দেখতে রবি যুবক, শশী যৌবন ছোঁয়-ছোঁয়।
এরই মধ্যে যুদ্ধ এলো।
রবি-শশীর ভাবগতি থেকে আমার মধ্যে সন্দেহ-দুশ্চিন্তা দানা বাঁধতে থাকে, এরা মুক্তিবাহিনীতে যাওয়ার ধান্ধা করছে।
তোমার ধারণাই ঠিক মম, বাবা নিশ্চিত করেন, ওরা যুদ্ধে যাবে।
না, যাবে না – তুমি এদের সামলাও বাবা।
কেন মা!
কী বলছ বাবা! তুমি নিজের জীবন দিয়াও কি বোঝ না যুদ্ধ কী! যুদ্ধে তাদেরও জীবন যেতে পারে।
তা তাদের কারো তো যেতেই পারে!
বাবা এমন নির্মম কথা উচ্চারণ করতে পারল! তাতে যেন ও ডাঙায় তোলা মাছ – তার মধ্য থেকে আপ্রাণ চেষ্টায় ও বলে, রবি-শশীর বাবা বলে যে তারা পাকসেনা-রাজাকার-শান্তি কমিটির চোখ এড়ায়া যতোটা সম্ভব মুক্তিবাহিনীরে সাহায্য-সহযোগিতা করুক কিন্তু –
কথা শেষ করতে না করতে ও দেখে বাবা এরই মধ্যে অন্তর্ধান করেছে। এর অর্থ কি রবি-শশীর যুদ্ধে যাওয়ার পক্ষে তার অবস্থান বহাল! ও বাবাকে ডাকে, চিৎকার করে ডাকে, কান্নায় ফানা-ফানা হয়ে ডাকে।
একপর্যায়ে বাবাকে হাজির হতে হয়। কিন্তু তার চোখমুখ যেন নির্মম অদৃষ্টের মতো দয়া-মায়াতীত।
মা… তাকে বোবাধরা থেকে মুক্ত করতে পাশের রুম থেকে ডাকে – শশী, মা, মা…
মা মাঝে মাঝে একটু-আধটু সাড়া দেয় কিন্তু বোবাধরা থেকে মুক্ত হয় না। অবশেষে রবি আলস্য ভেঙে তার কাছে ছুটে যায়।
বাবা আমারে কী কইছে জানস!
নিশ্চয়ই ভয়ংকর কিছু যা মাকে অশান্তিতে ভোগাবে। সেই শৈশব-কৈশোর থেকে – যত দূর পর্যন্ত তারা মনে করতে পারে, মা আছে তাদের জন্মেরও বহু আগে প্রয়াত তার বাবাকে নিয়ে। মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, তেজগাঁও, বিক্রমপুর, রায়পুরা, পাহাড়তলী – থানায় থানায় তাকে নিয়ে ছোট-বড় কতো আখ্যান। একটা চোর ধরে আনা হলো – ভাতচোর। সুযোগমতো লোকের রান্নাঘরে ঢুকে ভাত চুরি করে – নিজে খায়, বউঝিরে খাওয়ায়। বাবা তাকে কোনো শাসন দূরে থাক হাতে এক মণ চালের টাকা গুঁজে দিয়ে কন, যে কয়দিনের হয় পেট ভরে খাও গে। শমশের দারোগা ডাকাত ধরে আনলে সে দাবি করে বসে, তার বাড়ি ওসি সিরাজদ্দৌলার এলাকায়। কথাটা বাবার কানে এলে বাবা হারামজাদাকে পিটিয়ে শুধু ওসির নামই নয় তার বাপের নামও ভুলিয়ে দিতে বলেন।
শমশের আলী এমন ডাকাত থেকে খুনি-জুলুমবাজ শায়েস্তা করে করে শুধু যে তাদের কাছে এক ত্রাসে পরিণত তাই নয়, একের পর এক পদক-পুরস্কারও পেতে থাকেন। মায়ের ধারণা শেষে পুরস্কারই তাকে পেয়ে যায় – দুর্ধর্ষ ডাকাতদল পাকড়াও করতে গিয়ে তার সর্দারের টেঁটায় বিদ্ধ হন তিনি। ঊরুর মাংস কেটে ওই টেঁটা খোলা গেল কিন্তু তার ক্ষত পচে পচে বছরের মাথায় তার মৃত্যু। মায়ের বাবার দাবি, তিনি শহীদ হয়েছেন। মা যদিও বলেন, মালেকুল-মউত তাকে বাগে নিতে পুরস্কারের লালচে ফেলে কিন্তু তিনিই আবার ধ্যানে পেয়েছেন – শমশের চাচা তার সমাধিতে এমন পরম এক শান্তিতে আছেন যা শুধু মহান কোনো পুণ্যবানেরই প্রাপ্য।
মায়ের এমনসব বয়ানে ঘটনা কখনো প্রত্যক্ষ হয়, তার বাবার সঙ্গে মা-খালা-চাচা-ফুপু, পরপারের আরো অনেকেই আসে – তারা তাদের অতীতসমেত জীবন্ত হয়, বর্তমানের সঙ্গে মিলে বা বেমিলে এক মিশ্র বাস্তবতা তৈরি করে। কখনো সবই রহস্যঘেরা, ধরা দিতে দিতে দেয় না, কখনো মনে হয় এসবও গোরস্তানের গল্প কিংবা ততদিনে এসবও সমাহিত। তবে তারা মায়ের সঙ্গে পরকালেও যাতায়াত শুরু করে, তাতে অভ্যস্ত হয় এবং গোরবাসী তাদের সঙ্গেও বাস্তবে বিচরণ করে।
রবি-শশী জানে আদতে এভাবে মা তার বিগত জীবনে তাদের সঙ্গে যতটা না বসবাস করেছে তার চেয়ে বেশি মৃত নানার সঙ্গে। তাদের বাবা ইংরেজির অধ্যাপক ছাইফুল হকের কাছে মা কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত বা পরামর্শ চাইলে তিনি শেক্সপিয়রের কোন নাটকে কোন চরিত্র কী বলেছে তাই আওড়াতেন। ক্লাসেও নাকি কোনো বিষয়ে তার মতামত জানতে চাইলে সে বিষয়ে কোন সমালোচক কী বলেছেন একের পর এক তা বলে যেতেন – নিজে কোনো মতামতে পৌঁছতে পারতেন না। আর প্রথমে শশীর, এরপর রবির মৃত্যুর পর ওই দুজনার স্মৃতিচারণ করতে করতে তো আলঝেইমারেই ডুবলেন – রেহাই। তা ছাইফুল সাহেবের থাকায় কী না থাকায় মমতাজ নিজে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারলে তাকে তার প্রয়াত পিতার কোনো কাজের নজির বা পরামর্শের দ্বারস্থই হতে হয়। বাবা যদিও বলত সেট্ল হতে না হতেই আবার বদলি, বারবার বদলি আর দায়-দায়িত্বের ঝামেলার জন্য আমার একমাত্র সন্তানের যথার্থ শিক্ষার ব্যবস্থা আমি করতে পারলাম না। কিন্তু মমর বিশ্বাস, কাগজ-কলমে ততদূর এগোতে না পারলেও বাস্তবের সব শিক্ষাই আমি তোমার কাছে পেয়েছি বাবা। তুমি বলেছিলে, কারো তোমার সহযোগিতা লাগলে দাও কিন্তু তার জবরদস্তিকে বরদাশত করো না। তো –
তার ভাইপো কাজল তার এতিমখানা ও গোরস্তানের কয়েকটা গাছ কাটল, মমতা যদিও কিছুদিন আগে তাকে হালের বলদ কিনে গেরস্তি জুড়ে দিয়েছিল; কিন্তু সামান্য কয়টা গাছের জন্য ও ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ বসালো, মনে থানা-আদালত করার প্রস্তুতি, কারণ সে বোঝে তার কর্মকাণ্ডের নাড়া কাটতে এটা ওদের টোকা – হ্যামারিং টেস্ট, এরপর একমাত্র কন্যা হিসেবে পাওয়া বাবার সমস্ত জমিজমা গেলা। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের সালিশেই ভাইপো বোঝে ফুপুর তাগদ – তিনি কতদূর যেতে পারেন। ও জানে, ফুপু যখন থানায় গিয়ে দাবি দেয় – ‘আমি পুলিশের মেয়ে’, তার ব্যক্তিত্ব এমন যে তখন পুলিশ পালটা তারে কয় মা। তো গাছ ফেরত দিয়ে তওবা করে রফা। তবে মমতাজকে আদালতে যেতেই হলো এক একর জমির প্রশ্নে – দেবর তার স্বামীর ভাগে প্রাপ্য শ্বশুরের এই জমি বেচে দখল দিয়ে দেয় মইন্না খাঁকে। এভাবে বাবাকে অনুসরণ করে উপজেলা শহরে বসবাস করে এবং বাবা ও স্বামীর এস্টেট সামলায়। কোনো ক্ষেত্রে তাতেও না কুলালে এস্তেখাড়া করে মা নানাকে স্বপ্নে আনে, তিনি তাকে ইঙ্গিত দেন বা সরাসরি বলেন, এটা করা যাবে/ ওটা করা যাবে না/ সামনে তোমার ঘোর দুর্দিন…
আজ এই অমাবস্যার মধ্যে ওই আত্মা যে তাকে কী দুঃসংবাদ দিয়ে গেল!
বাবা কইল তোরা যুদ্ধে গেছস!
তাইতে, রবি মাকে আশ্বস্ত করতে তৎপর, তোমার এমন ভাইঙ্গা পড়ার কী আছে!
আছে। আমি তখন তোদের খুঁজতে বাইর হইলাম। খুঁজতে-খুঁজতে, খুঁজতে-খুঁজতে দেখি নদী নাকি বিলের ঢালে তোদের দুই ভাইয়ের রক্তমাখা লাশ! আমি যখন তোদের লাশের ওপর পইড়া কান্তে কান্তে বেফানা তখন বাবা আইল, কয় – রবি তুই নাকি মরার সময় তর নানারে কইছস মায়ারে কইও মায়ে যেন আমার ছেলেরে দেখে।
বেবাকই তোমার দুশ্চিন্তার ফল – দুঃস্বপ্ন। পাশের রুম থেকে শশী পরিহাস করে, ভাইয়ার সন্তান দূরে তার তো এহনও বিয়াই হয় নাই।
মা হয়তো অন্ধকারে জাগতিকতায় ফেরেন কারণ তিনি একটু খামোশ থাকার পর বসা থেকে বিছানায় এলিয়ে পড়ে বলেন, তাইলে এই স্বপ্নের মানে কী!
পরদিন সারাদিন তাকে মনে হয় তিনি সেই দুঃস্বপ্ন কিংবা দুঃখদশায়ই।
মায়ের দুঃস্বপ্ন – দুশ্চিন্তা – অমতের কারণে তারা তাকে না বলে যুদ্ধে গেল, তারাই গেল কিংবা নানা তাদের ডেকে নিল!
তারপর এই গোরে?
রবি-শশী কোথায়! এখন ওদের কে কেমন আছে? খুঁজতে-খুঁজতে, খুঁজতে-খুঁজতে…
মাঝেমাঝেই তিনি টের পান তার পুণ্যি কাজের ফল তার মাসহ গোরস্তানটির সবাই কম-বেশি পাচ্ছে কিন্তু তার বাবা, উদ্দেশ্যের মূলে যিনি, তিনিই বাদ, দুই ছেলেও। পুলিশের জীবনে অনেক গুরুতর পাপ থাকে, এমন কিছু পাপ আছে যার কোনো ক্ষমা বা প্রতিকার নেই কিন্তু তার রবি-শশী! অবশ্য যা বাবার বিশ্বাসের সঙ্গে যায় না, তার ফল তিনি কী করেইবা পেতে পারেন! বাবার যেমন বিশ্বাস তাতে বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই তিনি তার এইসব কাজকে সমর্থন দিতেন না, হয়তো বলতেন – পারলে ইস্কুল-কলেজ কর, এখনো যে এতে তার সায় আছে তেমন বোধ হয় না। অবশ্য বাবার সেইসব ঘাটতির কাফ্ফারা হিসেবেই-না তার এসব করা; কিন্তু তার ফলই যদি তিনি না পান…
যদি না পান তবে তার এত অর্থ, শ্রম অপচয় করা কেন! মমতার কি উচিত কর্মকাণ্ডের গতিপথ বদল করা? এদিকে ও যে জানে এই গোরস্তানে তার বাবাই সবার চেয়ে সুখে আছে! এ তবে তার কোনো ভ্রান্তিবিলাস? বাবা যখন পাহাড়তলী থানায় তখন সে-এলাকায় সশস্ত্র ব্রিটিশবিরোধীদের তৎপরতা বেড়ে যায়, যাদের মধ্যে সূর্য সেন-প্রীতিলতার মতো বিপজ্জনক বিপ্লবী। তার প্রতি ওপরঅলার আলটিমেটাম – এদের শায়েস্তা করতে না পারলে তোমাকেই শায়েস্তা করা হবে। কারণ কর্তৃপক্ষের সন্দেহ, বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামার আগে ওসি সিরাজদ্দৌলাই গোপনে তাদের সব ফাঁস করে। এবার নিশ্চয়ই সে-কারণে তাকে আগে কিছু না জানিয়ে ঊর্ধŸতন কয়েকজন কর্মকর্তার হঠাৎ তাকে নিয়ে অপারেশনে নামা। ধরা এবং মারা পড়ে যাচ্ছে দশ-বারো জনের একটা দল যদি না তিনি তাদের হয়ে লড়ে সরে পড়ার পথ করেন। এমনটা করলে তার স্বপক্ষ পুলিশ তাকে ছাড় দেবে কেন!
এ ট্রেইটর, ব্রিটিশ কর্তারা তার লাশের দিকে তর্জনী তুলে বলে, একে থুথু দাও।
এ বেইমান, তার ডিপার্টমেন্ট বলল, গাদ্দার।
তাদের কাছ থেকে লাশ ছাড়িয়ে তা বাড়ি আনতে আনতে পচেগলে ডুবডোবা।
বাবা, রবি, শশীর কবরে লাগানোর জন্য যখন তিনটা মার্বেল পাথরে এপিটাফ লিখে আনা হলো তখন তা দেখে দইলদ্দি গাজী প্রশ্ন করে, শহিদ মানে তো ধর্মযুদ্ধে জীবন দান – এদের নামের আগে শহিদ লেখা জায়েজ হয় কেমনে!
দখলদার, লুটেরা, খুনি – মমতাজ চ্যালেজ্ঞ করে, এমনসব পাপিষ্ঠের বিরুদ্ধে লড়াই কি ধর্মযুদ্ধ না?
এমন লড়াইয়ের তুলনা হয় না। কিন্তু ধর্ম…
ধর্ষকদের বাধা দেওয়া কি ধর্ম না!
তা দেওয়া নিশ্চয়ই মহৎ কাজ, কিন্তু…
তাইলে যে দুঃসাহসী এদের রুখতে গিয়া জীবন দেয় সে কেন শহিদ হবে না!
হয়তো যুক্তিতে কুলিয়ে উঠতে পারছে না বুঝে দইলদ্দি শেষে ‘শহিদ শব্দটা আজকাল যত্রতত্র ব্যবহার করে লোকে এর মাহিত্বরেই খাটো কইরা ফালছে’ বলতে বলতে কেটে পড়ে। তবে সে ছাড়াও আরো লোকের কথা মমতার কানে আসে যারা বলে যে, ঘুষখোর সিরাজ দারোগা আর সর্বহারা রবি শহিদ হয় কেমনে! কিন্তু…
শহিদ শশীউল হকের এপিটাফে যখন লোকজনের চোখ পড়ে তখন তাদের চেতনে জেগে ওঠে বাইষা স্কুলে মিলিটারি ক্যাম্প, হানাদারদের আশপাশের পাড়াগাঁয় লুটপাট – গরু-ছাগল-বউ-ঝি টেনে-হেঁচড়ে নেওয়া থেকে ঘরে-গাদায় আগুন, খুন-খারাবি। এবং এরই মধ্যে তাদের ওপর ব্রহ্মপুত্রের দিকটা বাদে ত্রিমুখী হামলা। তো নদের ওই অরক্ষিত ঢাল বেয়ে পাকসেনা, রাজাকার যে-পারে থানা-ক্যাম্প সেদিকে পালাচ্ছে, পেছনে মারা পড়ছে একের পর এক পাকসেনা, তাদের দোসর। মুক্তিসেনাদের মধ্যে একমাত্র তারই জীবন যায় যে কিনা কয়েকটি গ্র“প জোড়া দিয়ে এমন এক কৌশলী অভিযান ফাঁদে যাতে নিজেদের কোনো প্রাণনাশ ছাড়াই বিজয় সম্ভব। যার জন্য শুধু এমন এক নাজাত – বিজয় নয় ত্রাসে পাকসেনারা আর এ-তল্লাটমুখীও হয়নি এবং এভাবে যে জনচেতনে এক ত্রাতা হয়ে আছে তার এপিটাফে শহিদ শব্দটি দেখে তাদের চোখ অনাবিল এক শ্রদ্ধায় বাঙ্ময় হয়।
তারা এও বলাবলি করে যে, পরকালে শশী শহিদের দরজা পাবে।
স্বাধীনতার পর রবিও যথারীতি অস্ত্র জমা দেয়। কিন্তু মা একদিন দেখে ফেলে তার হাতে একটি এসএলআর। তোর হাতে এইটা কেন?
আমার যুদ্ধ যে শেষ হয় নাই মা।
মা খুব রাগারাগি করে, উদ্বেগ-আতঙ্কে দিশাহারা।
দিনে দিনে এটা আরো বাড়ে যখন প্রথমে মাঝেমধ্যে কয়েক দিন, পরে লাগাতার কয়েক মাস মা রবিকে দেখে না। শেষে লোকের কানাঘুসাই তার কাছে সত্য মনে হয় যে, তার একমাত্র ছেলে একটা কমিউনিস্ট পার্টির সশস্ত্র গ্র“পের নেতৃত্বে। তার এমন অস্ত্রবাজি চাষাভুসারাও পছন্দ করে না, কারণ এভাবেই এরা নাকি এমন এক সমাজ কায়েম করবে যেখানে আয়-রোজগার করে সম্পদ বানানো যাবে না; তবে এর মধ্যে তারা রবির প্রতি খুশিও হয় যখন শোনে যে, তার চরমপন্থীরা শ্রেণিশত্র“র নামে অর্থপিশাচ অমুক মহাজন কী যক্ষ তমুক জোতদারকে খতম করেছে।
একসময় মমতাজ এমন খবরও পায়, মবিন মণ্ডল নাকি পালটা রবিকেই শ্রেণিশত্র“ মনে করে। রবি তার বাবা সাবান মণ্ডলকে মারুক বা না-ই মারুক তার মতো কোনো মুক্তিসেনাই তো তা করেছে। তো মবিন তাকে খতম লাইনে ফেলার জন্য ওঁৎ পেতে আছে। সে কিংবা তার লোকেরা তাকে বাগে পেলে হয়।
কথাটা শোনার পর মমতাজ বাবার কবরে যায়। রবিকে তুমি রক্ষা করো বাবা – ও-ও যদি খুন হয় সংসারে আমার আর কে থাকে, বাঁচার কী অর্থ থাকে?
তার হায়াতুম মুর্শিদ খামোশ।
তবে দিনে দিনে তার ইঙ্গিত আসে – তোমার যুবরাজ থাকলো।
বাবা নিশ্চয়ই জানে মমর আরো দুই মেয়ে আছে – সায়লা-রাহেলা, তাদের ছেলে-মেয়েও আছে। কিন্তু মমতাজের রাজতান্ত্রিক বোধ-বিশ্বাসে রবির সাত বছরের ছেলে জয়নুল হক বিজয়ই যুবরাজ।
যখন সিনেমা হলে হলে সিরিজ বোমা ফাটে, নাস্তিক তরুণ লেখক কোরবানি হয়, মন্দির-প্যাগোডায় ধ্বংসযজ্ঞ, মবিন মণ্ডল যেন চাঁন-তারা পতাকার পুনরুত্থান ঘটিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত। এরই মধ্যে একদিন যুবরাজের সামনে তার পিতার লাশ আসে। লাশ দেখে যুবরাজ বোবা। মমতাজ তাকে কথা বলাতে-কাঁদাতে কান্নায় দিশাহীন, কিন্তু সে দিনের পর দিন বাকহারা।
যখন রা ফুটলো তখন বলে, আরো একটা যুদ্ধ হবে, কুরুক্ষেত্র…। হয়তো এ তার যাত্রা-নাটকে শোনা ডায়ালগ আওড়ানো কিন্তু মমতাজের ধন্ধ লাগে, বড়বাপ কি তার বাপ-চাচার মতো তাকেও ডাকছে! খুনির ছেলে – ছেলের ছেলে – তার ছেলে নিশ্চয়ই খুনের তৃষ্ণাই বহন করে। শহিদের উত্তরাধিকার হয়তো তার চারপাশে আত্মদানের পটভূমিই নির্মাণ করে।
কত রাজা-সম্রাটের বংশধারা সাধারণে মিলে গেছে কিংবা প্রতিপক্ষের তরবারিতে বিনাশ, তাই তিনি তা তার মোনাজাতের মধ্যে তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে দিতে বাবা-মা, দাদা-নানা, তাদের বাপ-দাদাসমেত সব পূর্বপুরুষ, এমনকি বিজয়ের পূর্বপুরুষের ঊর্ধŸক্রম অনুসরণ করে যতদূর পারেন যান – তোমরা বিজয়ের জন্য আশীর্বাদ করো সে যেন তোমাদের রক্তধারাকে সগৌরবে বহন করতে পারে।
মবিন মণ্ডলদের বিজয়কে শত্র“র যুবরাজ বলে টার্গেটে রাখার কথা।
রবি খুনের পর তার শ্বশুর-শাশুড়ি তাদের মেয়েটাকে অন্যত্র বিয়ে দিতে নিয়ে যেতে চাইলে বিয়ের জন্য না হলেও বউ চলে যেতে চায়, এই আতঙ্কে যে, খুনিরা তাকেও খুন বা অপহরণ করল বলে, মমতাজও এমন যুবতীর ফেরার পথে বাধা হতে চায় না কিন্তু সে যে বিজয়কে ছাড়া যেতেও নারাজ।
তার সন্তানের জন্য এই দ্যাশ বউও নিরাপদ বোধ করে না।
মমতাজ জানে বিজয়ের শত্র“ শুধু মবিন মণ্ডলই না, এক ঘর সংখ্যালঘুর বিষয়-সম্পত্তির মতো তার এই গোরস্তানের ফলবাগান থেকে এতিমখানা, মাদ্রাসা, ফসলি জমিসহ সমস্ত ওয়াকফ এস্টেট, বাড়ি-পুকুর-ক্ষেত-খলার দিকে শ্যেনদৃষ্টি তার চাচাতো ভাই, দেবর, পাড়াপড়শি, এমনকি তার গর্ভজাত কন্যাদেরও।
বিজয়কে যেন এরা কেউ কিছু করতে না পারে অন্তত এই আশীর্বাদের জন্য বাবা তোমার সঙ্গে আমার দেখা হওয়া চাই। কিন্তু যে নিজেকেই রক্ষা করতে পারে না সে অন্যকে কী রক্ষাকবচ দেবে। উপরন্তু রবি-শশীকে তো তিনিই মৃত্যুর পথে ডেকে নিলেন – নাকি! তো বিজয়কে?
যুবরাজকে তারই বাঁচাতে – বাঁচাতেই হবে, বাবা এবং মবিন মণ্ডলের হাত থেকে।
আমি তোমাকে এমন দীক্ষা দেব যে তোমার যুদ্ধে বিজয় তুমি জয়ী হবে, বলি না। ইমাম হোসেইনের মতো অসহায়, করুণ, নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে সত্যের মহিমা ধারণ নয়, অন্যায়ের খুনে তুমি গাজি হবে। তো গোরস্তান থেকে বেরোনোর সিদ্ধান্ত নেয় ও।
বেরোনোর পথ খোঁজে। পায় না। খুঁজতে-খুঁজতে, খুঁজতে-খুঁজতে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করে এ তার পরকাল থেকে ইহকালে ফেরার চেষ্টা। মবিন মণ্ডল বা তার মতো কেউ কিংবা তার বাবা সাবান মণ্ডল বা তার মতো কোনো দুরাত্মা তা না হতে দিতে তৎপর – মরিয়া।
সহসাই ও টের পায়, সে এমন এক কবরের সামনে যেটিতে কারো আজাব হচ্ছে। এ কি বাবা, রবি না শশী… এক নূরের সত্তা তাকে হাতের ডাণ্ডা দিয়ে এমন এক বারি দিলো যে তার দেহ ভূমিতে সত্তর হাত সেঁধিয়ে গেল কিন্তু তাতেও তার মরণ হয় না, নূরের অন্য হাত পুনরাঘাতের জন্য তাকে তুলে আনছে। এমন আজাবে এরই মধ্যে বিধ্বস্ত, বিকৃত, কিম্ভুত হয়ে পড়লেও সহসাই লোকটাকে চিনতে পারে মমতাজ – এ যে সাবান মণ্ডল। লোকজনের ধারণা সে বেহেশতে যাবে। সে তবে মসজিদ-মাদ্রাসা-ওয়াজ-নসিয়ত, এমনকি তার জীবন দিয়েও তার পাপ মওকুফ করাতে বা চাপা দিতে পারেনি।
দৃশ্যটা দেখতে দেখতে আতঙ্কে তার শরীর হিম। তাকে যে আরো কত ভয়াল, বীভৎস অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়!
আর বাবাকেই যে কী অবস্থায় দেখতে পায়। তার রবি, শশী? শশী অপারেশন বাইষায় মরার আগে কাকে মেরেছে – তারা আদতেই কে কেমন মানুষ ছিল! আর রবির শ্রেণিশত্র“!
তাদের এমন কোনো আজাব দেখার মতো সামর্থ্য তার কই! গোরস্তানের সীমা ভেদ করে ও জাগতিকতায় ফেরার জন্য ছোটে। কিন্তু হিম-শরীর ছোটার কোনো শক্তি না পেয়ে ঘুমের মধ্যে বোবায় আক্রান্তের মতো নিজের মধ্যে দৌড়ায়।
শান্ত হ।
সহসাই সামনে মাকে দেখে ও, বলে, বিজয়ের জন্য আমাকে যেতে হবে মা।
তোর বাবাকে দেখে যা।
এতক্ষণ ধরে তো সে চেষ্টাই করলাম!
আয়, আমি দেখাই।
কিন্তু বাবাতে কী ভরসা মা!
আছে।
কিন্তু বাবা নিজেকে, আমার রবি-শশীকে যে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিল মা। বিজয় –
কিন্তু কোথায় নেয় তা তো দেখবি!
নিশ্চয়ই। কিন্তু কোথায় তারা? বাবাকে, রবি-শশীকে খুঁজে খুঁজে আমার যে নাভিশ্বাস…
ওই দেখ –
ও দেখে গ্রহ-নক্ষত্র, সপ্তাকাশের ওপারে কী এক অসীমের বিস্তৃতি নিয়ে জান্নাতুল ফেরদাউসের অপার মহিমা।
দেখ, তোমার পিতা-পুত্রদের বরণের জন্য শ্রেষ্ঠ জান্নাত আজ কেমন সেজেছে!
এমন আনন্দ সংবাদে তার পরিতাপও হয় যদি আজ সঙ্গে বিজয় থাকতো! তবে এই ঘটনা তো ও তাকে বলতে পারে, বলা উচিত। কিন্তু এর মর্ম সে কী বুঝবে – সাত বছরের যে বিজয় কিনা এমন গল্প শুনতে চায় যাতে পাখোয়াল অশ্ব বা নারী থাকতে পারে, তবে তা সত্যি হতে হবে। বস্তুত মিথ্যা কোনো গল্প তিনি তাকে বলতেও চান না যদি তাতে র্বোরাক কিংবা পরী থাকেও। এও তো অবিশ্বাস্য অথচ তার স্বচক্ষে দেখা নিরেট বাস্তব এক ঘটনা। তাই এটা যদি তিনি রবিকে বলেন, আর তা তার স্মৃতিতে থেকে যায় তবে নিশ্চয়ই এর মর্মার্থও একদিন ও উপলব্ধি করতে পারবে। কিন্তু এ যে তাকে ওই পথে হাঁটার প্রেরণা দিতে পারে। আর যদি তা না বলেন তবে এর ভার তিনি কী করে বইবেন? উপরন্তু তার বাবা, চাচা, বড়বাপের এই অর্জনের কথাইবা ও জানবে কী করে! এটা বিজয়কে না বলা মানে তাকে বঞ্চনা করা।
আজ শুধু সাজা না, বড়মা তার মেয়ে মমতাজকে বলে চলে, জান্নাতুল ফেরদাউস আজ এক উৎসবে মেতেছে।
ফেরদাউসের উৎসবের অন্দরমহলটা দেখার জন্য মমতাজ দৃষ্টি তার ভেতরে প্রসারিত করার চেষ্টা করে কিন্তু দৃষ্টি শহীদের সুসজ্জিত তোরণে আটকে যায়। তোরণ দেখেই যেন ও অভিভূত!
ও দেখে বাবার নেতৃত্বে¡ রবি-শশী শহিদের দরজার কাছাকাছি পৌঁছতেই তার দরজা স্বাগত ভঙ্গিতে খুলে গেল। বিনাবিচারে তারা ঢুকছে জান্নাতে! আনন্দে অভিভূত মমতাজের মনে ধন্ধ জাগে, মা এ যদি স্বপ্ন বা কুহক হয়!
স্বপ্ন হোক কী কুহক, মা তাকে বলে, যদি পরকাল থাকে – যদি নাও থাকে অন্তত শহিদের কোটায় এ তোমার বাবাদের প্রাপ্য।