বসন্তসমাগমে

জগতে বিরল কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা রাতের আকাশের ধ্রম্নবতারার মতো স্বমহিমায় উজ্জ্বল, ভিড়ের মাঝেও স্বতন্ত্র; তাঁরা ইতিহাস সৃষ্টি করেন, যুগের সীমা অতিক্রম করে হয়ে ওঠেন কালজয়ী। গুপ্তবংশীয় সম্রাট বিক্রমাদিত্য বা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বীরপ্রসবিনী ভারতবর্ষের এমনই এক ব্যক্তিত্ব। শুধু বীরত্ব, প্রজাবাৎসল্য বা শিল্পকলা ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতাই নয়, চরিত্রের অদ্ভুত কোমল এক মানবিক দিকের জন্যেও তিনি ইতিহাসে এক দুর্লভ দৃষ্টামত্ম। চতুর্থ শতকের গোড়ার দিকে মহারাজ শ্রীগুপ্তের হাত ধরে সূচনা হয় গৌরবময় গুপ্ত সাম্রাজ্যের, বংশের চতুর্থ পুরম্নষ মহাপরাক্রমী সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের সময়ে একচ্ছত্র মগধ সাম্রাজ্য ছড়িয়ে পড়ে হিমালয় থেকে হিন্দুকুশ, গাঙ্গেয় উপত্যকা থেকে নর্মদা উপকূলে। দীর্ঘ চলিস্নশ বছরব্যাপী তাঁর রাজ্যকালের শেষ অধ্যায়ে আমাদের এই কাহিনির সূত্রপাত।

 

সুবিশাল কক্ষটি অত্যমত্ম নিপুণভাবে সাজানো, মাথার ওপর রেশমি চাঁদোয়া, দেয়ালে ও থামে সূক্ষ্ম কাঠের কারম্নকাজ, ইন্দো-গ্রিক স্থাপত্যের সুদক্ষ নিদর্শন ছড়িয়ে আছে চারপাশে। বাইরে শীতের প্রাক-সন্ধ্যার চাপ-চাপ অন্ধকার, তবু ঘরখানি একরাশ যক্ষেণী দীপদ–র আলোয় উদ্ভাসিত। মনোরম সেই আলোয় চোখে পড়ে চন্দনকাঠের একখানি রাজকীয় পালঙ্ক ও সেই পালঙ্কে আধশোয়া এক অসাধারণ পুরম্নষসিংহ। বয়স ও দায়িত্বভার বলিরেখা এঁকে গেছে মুখে, ক্লামিত্মতে শরীর ঈষৎ শিথিল। তবু তাঁর ব্যক্তিত্বের আভা সম্ভ্রম জাগায়, মস্নান করে দেয় অন্য কারো উপস্থিতি। তিনি পরম ভট্টারক মহারাজাধিরাজ সমুদ্রগুপ্ত, এই পরিণত বয়সেও যিনি শক ও কুষান পররাজ্যলোভীদের কাছে ভয়ের কারণ, মগধ প্রজাকুলের কাছে ঈশ্বরের প্রতিনিধি। তাঁর মুখোমুখি দুটি সুসজ্জিত আসনে বসে আছেন দুই রাজপুরম্নষ, বয়স ও আকৃতিতে পরস্পরের একেবারে বিপরীত। একহারা সৌম্য চেহারা, ঝকঝকে চোখের দৃষ্টি, বয়স্ক মানুষটি মহামাত্য দ্বৈমাতুরদেব; তিনি নীতিশাস্ত্রে প–ত, নিরহংকারী, মহারাজের একামত্ম আস্থাভাজন; বিপদকালের পরামর্শদাতা। অন্যজন নবযুবক, তাঁর মার্জিত সুন্দর মুখখানি তেজ ও বুদ্ধির দীপ্তিতে উজ্জ্বল; সৈনিকের ঋজুতা তাঁর বসার ভঙ্গিতে, ব্যক্তিত্বে দৃঢ়তার ছাপ সুস্পষ্ট। ইনি মগধাপতির দ্বিতীয় পুত্র কুমার চন্দ্রগুপ্ত, মহাদেবী দত্তার সমত্মান। কুমারের জন্মের সময়ে রাজজ্যোতিষ গণনা করে জানিয়েছিলেন শিশুর মহিমাময় ভবিষ্যতের কথা, সে-কারণেই সমুদ্রগুপ্ত তাঁর পিতা মহারাজ চন্দ্রগুপ্তের নামে নামকরণ করেছিলেন পুত্রের। শাস্ত্র, শস্ত্র ও সংগীতবিদ্যায় পারদর্শী কুমার ইতোমধ্যেই পরিচয় দিয়েছেন পরাক্রম ও গভীর রাজনীতিবোধের; মগধবাসীর তিনি প্রিয়পাত্র, পিতার বিশেষ স্নেহধন্য। কয়েকদিন হলো সমুদ্রগুপ্ত ফিরেছেন উত্তর-পশ্চিম সীমামেত্ম যুদ্ধযাত্রা সেরে, কুষানরাজ দেবপুত্র কিপুনদের আগ্রাসন রম্নখতে ছিল এই অভিযান। রণক্ষেত্রের কৃচ্ছ্র ও দীর্ঘ পথশ্রমে শরীর একেবারে ভেঙে পড়েছে, তাই রাজবৈদ্য বামদেবের কড়া নির্দেশে আপাতত তিনি শয্যাবন্দি। ক্লামত্ম শরীর বিশ্রাম চায়, কিন্তু চিমত্মাক্লিষ্ট মন ভবিষ্যতের চিমত্মায় অশামত্ম। উত্তর-পশ্চিমের কুষান, দক্ষিণ-পশ্চিমের শক থাবা বাড়িয়ে আছে সবসময়ে, মগধের এতটুকু অসাবধানতাও দুঃসাহসী করে তুলতে পারে তাদের যে-কোনো মুহূর্তে। এতদিন দৃঢ়ভাবে পরিচালনা করেছেন সাম্রাজ্য, যবন শত্রম্নকে রেখেছেন নিয়ন্ত্রণে; কিন্তু কত দিন? দূরদর্শী সম্রাট জানেন, সময় হয়েছে এই গুরম্নদায়িত্ব যোগ্য হাতে তুলে দেওয়ার।

‘এখন কেমন বোধ করছেন মহারাজাধিরাজ? আমি নিশ্চিত, বামদেবের ঔষধি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তুলবে আপনাকে’, মহামাত্যের সামত্মবনাবাক্যে মস্নান হাসি ফুটে ওঠে অভিজ্ঞ মুখে। ‘বামদেবের ঔষধি অবশ্যম্ভাবীকে রম্নখতে পারবে কি দ্বৈমাতুরদেব? কালের করাল ছায়া ঘিরে ফেলছে আমায় ধীরে ধীরে, সামনে নিরেট অন্ধকার।’ ‘অযথা বিচলিত হবেন না রাজন, পরমেশ্বর আপনাকে চিরজীবী করম্নন।’ ‘যোদ্ধা মৃত্যুভয়ে বিচলিত হয় না মহামন্ত্রিণ, মগধের ভবিষ্যৎচিমত্মা আমায় বিচলিত করে চলেছে দিনরাত। সুযোগ্য হাতে তাকে সঁপে যেতে না পারলে ছারখার হবে এই বিশাল ভূখ-, সে কারণেই আজ স্মরণ করেছি আপনাকে।’

‘পুত্র, তোমার বৈশালী যাত্রা সমেত্মাষজনক ছিল তো?’ সম্রাটের গম্ভীর কণ্ঠস্বর স্নেহরসে কোমল হয়ে ওঠে। ‘বৈশালীতে শামিত্ম বিরাজ করছে পিতা, প্রজারা উপারিক বিরাটসিংহের প্রশাসন-ব্যবস্থায় সুখী।’ ‘শামিত্ম বড় ছলনাময়ী, চন্দ্র, সামান্য অমনোযোগেও নষ্ট হতে সময় লাগে না। মহামন্ত্রিণ, আমার ইচ্ছা মগধ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হোক চন্দ্রগুপ্ত; তার যোগ্যতায় আমার বিশ্বাস আছে। আপনার এ বিষয়ে কী মত?’ ‘এর চেয়ে সুখের আর কিছুই হতে পারে না মহারাজাধিরাজ, শুধু আমি নই, সমসত্ম অমাত্যম-লী আপনার এই সিদ্ধামেত্ম আনন্দিত হবেন, কুমার চন্দ্রের যোগ্যতা সংশয়াতীত।’ ‘বেশ, তবে জ্যোতিষাচার্যের মত নিয়ে দিন স্থির করম্নন, কুমারকে যুবরাজ ঘোষণা করতে চাই আমি রাজ্যবাসীর সামনে। চন্দ্র, আশা করি এ গুরম্নদায়িত্ব নিতে তুমি প্রস্ত্তত?’ ‘শপথ করছি পিতা, আমার প্রাণ থাকতে এই সাম্রাজ্যে পড়বে না কোনো বহিঃশত্রম্নর ছায়া, মগধের বিজয়লাঞ্ছন অসত্মমিত হবে না কোনোদিন।’ কুমারের দৃপ্ত কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হয় নির্জন কক্ষে, তৃপ্তির আভা ফুটে ওঠে সম্রাটের পা-ুর মুখে।

‘আর একটি বিষয়ে আশু চর্চার প্রয়োজন মহারাজ’, প্রসঙ্গে আসার আগে মহামাত্য চকিতে একবার দেখে নেন কুমারকে, প্রসন্নতা ভরে ওঠে তাঁর চোখে। ‘সনকনিকরাজ মার্ত-দেব কুমার চন্দ্রের সঙ্গে তাঁর কন্যার বিবাহপ্রস্তাব পাঠিয়েছেন; কুমারী ধ্রম্নবা সুলক্ষণা ও চতুঃষষ্টি কলায় পারদর্শিনী; মগধের রাজবধূ হবার অযোগ্য তিনি নন।’ চিমত্মামগ্ন সম্রাট কিছুটা সময় নেন উত্তর দিতে, অবশেষে জানান নিজের সিদ্ধামত্ম, ‘এই অনিশ্চয়তার সময় সনকনিকরাজের আনুগত্য আমাদের কাছে মূল্যবান, আপনি আমার সম্মতি জানিয়ে পত্র পাঠান মহামন্ত্রিণ।’ ক্লামিত্মতে চোখ বোজেন অসুস্থ সম্রাট, মুখে নেমে আসে প্রশামিত্ম। ধীরে ধীরে কক্ষ ত্যাগ করেন মহামাত্য; কুমার বসে থাকেন কিছুকাল শয্যাপাশে, অদূরের কোনো সুখকল্পনায় তরম্নণ মুখখানি তাঁর স্বপ্নময়। বসন্তের হাতছানি আকাশে-বাতাসে, ফুলে-ফুলে ভরে গেছে প্রাসাদ-অমত্মঃপুরের বাগান। ঝলমলে ময়ূরদম্পতি ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিকে-ওদিকে, কোকিলের কুহুতানে চারিদিক মাতোয়ারা। বাগানের ঠিক মাঝখানটিতে একটি ছোট্ট বাহারি পুকুর মসৃণ লাল পাথর দিয়ে ঘেরা, যার স্ফটিকস্বচ্ছ জলে ফুটে আছে থোকা-থোকা রক্তকমল। বাঁধানো পাথরের বেদিতে আধশোয়া একটি নারীমূর্তি, পেলব পা দুখানি তাঁর আলতো করে ছুঁয়ে আছে জল। চাঁপা রঙের অমত্মরীয় একাকার হয়ে গেছে উজ্জ্বল গায়ের রঙে, কালো চুলের চূড়াবন্ধ ঘিরে আছে মুখখানি, যেন কোনো শিল্পীর অনিন্দ্য সৃষ্টি, চোখ ফেরানো দায়। নারী নবযৌবনা, শরীরী ভঙ্গিতে তাঁর রাজকীয় আভিজাত্য, শুধু চোখদুটি এখনো ছেলেমানুষিতে ভরা; আপন খেয়ালে হঠাৎই একটু ঝুঁকে জলে ছায়া ফেলেন তিনি। ‘এ মুখ দেখে নিজেকে ভুলবেন কুমার চন্দ্রগুপ্ত, তুমি নিশ্চিত থাক দেবী’ – রসিকতা করে কিছুদূরে বসা সুন্দরী মাধবসেনা, কুমারী ধ্রম্নবার প্রিয়সঙ্গিনী। রাজকুমারী ছিটিয়ে দেন জল কপট রাগে। ‘চন্দ্রগুপ্ত বীরশ্রেষ্ঠ, সমসত্ম আর্যাবর্তে তাঁর খ্যাতি, তুমি ভাগ্যবতী’, মাধবসেনার কথায় এখন আর নেই একটু আগের চপলতা। ‘তুমি এত কী করে জানো মাধবে?’ ধ্রম্নবার মিষ্টি স্বর আবেগে কেঁপে ওঠে, চোখে ছায়া ফেলে স্বপ্নের ঘোর। সম্রাটের অসুস্থতা বেড়ে চলে দিনে-দিনে, কুমার চন্দ্রগুপ্তের অভিষেকের প্রসঙ্গ চাপা পড়ে যায়; মগধ রাজপুরী যেন কোনো মহা আশঙ্কায় সত্মব্ধ হয়ে দিন গোনে। অবশেষে বামদেবের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে সমুদ্রগুপ্ত যাত্রা করেন অনমত্মলোকে। তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র রামগুপ্ত সিংহাসনে বসেন স্বাভাবিক উত্তরাধিকারবলে; অমাত্যম-লী অন্যায় জেনেও নীরব থাকেন, চন্দ্রের অলিখিত যৌবরাজ্য মগধের আইনে যে মূল্যহীন। রাজ্যাভিষেক হয়ে যেতেই মার্ত-দেবকে ডেকে পাঠান রামগুপ্ত, ‘বিবাহের দিন স্থির করম্নন রাজন, স্বর্গীয় পিতার ইচ্ছে পূরণ করতে আমি একামত্ম আগ্রহী।’ ‘কিন্তু আমার কন্যা কুমার চন্দ্রের বাগ্দত্তা, আপনার নয়।’ ‘আপনার কন্যা পিতার উত্তরাধিকারীর বাগ্দত্তা, চন্দ্রগুপ্তের নয়’ – রূঢ়তা ফুটে ওঠে রামগুপ্তের স্বরে। ‘এ ব্যাপারে আপনার অসম্মতিকে আমি রাজদ্রোহ বলে ধরে নেব।’ নবীন সম্রাটের অন্যায় দাবির কাছে আত্মসমর্পণ করেন করদ রাজ্যাধিপতি। বিয়ের দিন স্থির হয় অবিলম্বে বর্ষা ঋতুর শেষে এসেছে শরৎ, সুনীল আকাশে শ্বেতশুভ্র মেঘের িআঁকিবুঁকি, ঝলমলে সূর্যের আলোয় স্বর্ণাভ চারদিক; তবু তারই মাঝে কখনো বা এক টুকরো কালো মেঘ দেখা দেয় ঈশান কোণে, এক পশলা বৃষ্টিতে মনে করিয়ে যায় সদ্যগত শ্রাবণের কথা। সনকনিক প্রদেশে সেদিন উৎসবের পরিবেশ, ফুলে-ফুলে সেজেছে রাজপুরী, রাজপথের স্থানে-স্থানে নবনির্মিত তোরণ রঙিন পতাকায় ঝলমলে, নগরের গৃহস্থপলিস্নতে ছড়িয়ে পড়েছে রাজকীয় বিয়ের উত্তেজনা। কুমারী ধ্রম্নবার অঙ্গে নববধূ বেশ; পরনে লাল ঘাঘরি, সোনালি উত্তরীয়, গলায় স্বর্ণহারের সঙ্গে চাঁপা ফুলের মালা, মুক্তাজালিকা-ঘেরা খোঁপাটিতে রক্তকদম ফুল, সিঁথিতে পদ্মরাগমণি; অপরূপ সাজে তিনি যেন মূর্তিমতী ঊষা। মধবসেনা অলকাতিলক এঁকে চলেছে নিবিষ্টমনে অনিন্দ্যসুন্দর মুখখানিতে, পদ্ম কোরকের মতো চোখদুটি আধবোজা; ‘একবার চোখ মেলে চাও সখী, ভালো করে দেখি’ – পরম আদরে চিবুক স্পর্শ করে বলে ওঠে সে। স্নেহসম্ভাষণে কেঁপে ওঠে চোখের পাতা, রাজকুমারী চেয়ে দেখেন গভীর দৃষ্টি মেলে, নীরব অশ্রম্ন ভিজিয়ে দিয়ে যায় সযত্নে িআঁকা তিলকলেখা। বাইরে সোনা-রোদ মস্নান হয়ে হঠাৎ নামে অঝোর বর্ষণ। রাত্রি গভীর, নিসত্মব্ধ চারিধার, উৎসবক্লামত্ম মগধ রাজপুরী গভীর ঘুমে অচেতন। শুধু একটি কক্ষে জ্বলছে দীপ, বেদনাবিধুর মুখখানি স্পষ্ট নয় সে-আলোয়, শ্বেতশুভ্র পট্টবস্ত্রে বীরশ্রেষ্ঠ আজ নবীন তপস্বী। বীণা হাতে কুমার চন্দ্র আত্মমগ্ন সুরের ইন্দ্রজালে, যার করম্নণ রাগিণীতে জেগে ওঠে বঞ্চিত হৃদয়ের অব্যক্ত যন্ত্রণা।মগধ সাম্রাজ্যের পশ্চিম সীমামেত্ম পাহাড়ঘেরা পরিবেশে অরিপুরা একটি বিচ্ছিন্ন গ্রাম, আর সেই পাহাড়ের চূড়ায় প্রাচীন অরিপুরা দুর্গ। সীমামত্মবর্তী হলেও পাহাড়ের খাড়াই উচ্চতা ও দুর্ভেদ্য জঙ্গল দুর্গটিকে দিয়েছে প্রাকৃতিক সুরক্ষা, ফলে শামিত্মকালে মাত্র কয়েকশো সৈন্য নিয়ে  দুর্গ পাহারায় থাকেন দুর্গাধীশ বিশাখসেন। কয়েকদিন হলো দুর্গ পরিদর্শনে এসেছেন মহারাজাধিরাজ রামগুপ্ত, সঙ্গে নবপরিণীতা রাজবধূ, সঙ্গে এসেছে মুষ্টিমেয় কিছু দেহরক্ষে; পরিদর্শন নামেই, আসল উদ্দেশ্য পাটলিপুত্রের ব্যসত্মতাকে দূরে রেখে নিশ্চিমেত্ম অবসর যাপন। রামগুপ্ত বিলাসী রাজপুরম্নষ, আরামে বড় হয়েছেন; রাজ্য-চালনার গুরম্নদায়িত্বে ক্লামিত্ম বোধ করেন সহজেই। তাই অমাত্যম-লীর শ্যেনদৃষ্টির বাইরে এই নির্জন দুর্গে অবাধ বিনোদন রূপ নেয় স্বেচ্ছাচারিতায়; বিশাখসেন চেষ্টা করেও সীমামত্মবিষয়ক আলোচনায় সম্রাটকে আকৃষ্ট করতে পারেন না। ‘মহাক্ষত্রপ রম্নদ্রসেন সৈন্যবাহিনী নিয়ে ঘাঁটি গেড়েছেন সীমামেত্মর অতি কাছে, শকরাজ স্বভাব-চতুর, কোনো দুরভিসন্ধি আছে তাঁর, এই আমার বিশ্বাস।’ একদিন সন্ধ্যাবেলা উদ্বিগ্ন বিশাখসেন ছুটে আসেন সম্রাটের কাছে। ‘আপনি শীঘ্র মহাদেবীকে নিয়ে দুর্গ ত্যাগ করম্নন মহারাজ; দুর্গের সৈন্যসংখ্যা আপনার সুরক্ষার পক্ষে যথেষ্ট নয়। কুমার চন্দ্রের কাছে সাহায্যের আশায় খবর পাঠিয়েছি আমি।’ ‘চন্দ্রগুপ্ত সীমামত্ম রক্ষা করবে, আর আমি চোরের মতো দুর্গ ত্যাগ করব হীন যবনের ভয়ে! আমাকে প্রজাদের কাছে অপদস্থ করাই আপনার অভিসন্ধি?’ রামগুপ্ত গর্জে ওঠেন। ‘আমি ক্ষমাপ্রার্থী মহারাজ, তবু মহাদেবীর উপস্থিতিতে আশঙ্কা বোধ করছি, আপনি আর-একবার বিবেচনা করম্নন আপনার সিদ্ধামত্ম।’ ‘আমার সিদ্ধামত্ম পরিবর্তিত হবে না দুর্গাধীশ, মগধাপতির সাথে শত্রম্নতা শক শৃগালের সাধ্যাতীত।’ সম্রাটের কণ্ঠে তাচ্ছিল্যের সুর ব্যথা দেয় অভিজ্ঞ সেনানীকে। রাত্রির অন্ধকারে রম্নদ্রসেনের সৈন্য ঘিরে ফেলে অরিপুরা গ্রাম, শকাধিপতি নিজে বাছাই করা রক্ষেদল নিয়ে ঘাঁটি গাড়েন পর্বতমূলে। পরদিন ভোরে বার্তা নিয়ে আসে দূত মগধাপতির কাছে, ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ, নতুবা বিনাশ।’

‘কুমার চন্দ্রগুপ্তের উপস্থিতি এখন একমাত্র ভরসা, মহারাজ, আর তার জন্য চাই সময়। প্রলম্বিত করা প্রয়োজন রম্নদ্রসেনের বশ্যতাচুক্তি।’ বিশাখসেনের প্রস্তাবে এবার রাজি হতে দ্বিধা করেন না মগধাপতি, বিপদকালে মুছে যায় তাঁর আগের ঔদ্ধত্য। বার্তার উত্তরে বেশ কিছু সোনা ও দুশো রণহস্তি উপহার পাঠানো হয় রম্নদ্রসেনের শিবিরে রাজদম্পতির মুক্তিপণ হিসেবে। পরদিন শক শিবির থেকে আসে আর এক বার্তা, সম্রাটের অনুমতি নিয়ে বিশাখসেন খুলে দেখেন সে-পত্র। ধীরে-ধীরে লাল হয়ে ওঠে যোদ্ধার ভাবলেশহীন মুখ, ছুড়ে ফেলে দেন তিনি লিপি অসহায় ক্রোধে; সম্রাটের উপস্থিতি ভুলে যান কিছু সময়ের জন্যে।

‘মগধাপতি অতিবিনয়ী, তাই কয়েকটি সোনার পেটি আর রণহস্তি দিয়ে নিজের মূল্যায়ন করেছেন; আমার প্রত্যাশা কিছু বেশি। তাঁর কাছে যে পরম রত্নটি আছে শুধু সেটি পেলেই এই মুহূর্তে অরিপুরা ছেড়ে চলে যেতে আমি প্রস্ত্তত। মহাদেবী ধ্রম্নবার অভ্যর্থনায় আমি নিজে উপস্থিত থাকব কাল ভোরে, নতুবা ধ্বংস হবে অরিপুরা দুর্গ, বিনষ্ট হবেন রামগুপ্ত।’ রম্নদ্রসেনের লিপি অতি ধীরে পাঠ করেন রামগুপ্ত, পা-ুর হয় তাঁর মুখ অজানা আশঙ্কায়।

‘মহাদেবী যাবেন কাল, সঙ্গে যাবে তাঁর পরিচারিকার দল, আপনি সংবাদ পাঠান দুর্গাধীপ।’ প্রবীণ সেনানী মূক-বিস্ময়ে চেয়ে থাকেন, অবিশ্বাস্য মনে হয় সম্রাটের নির্দেশ।

‘এই কি ক্ষত্রিয়ের উপযুক্ত কাজ আর্যপুত্র? প্রাণভয়ে আশ্রয় নিতে চান পত্নীর িআঁচলে?’ ক্রোধে-অপমানে গর্জে ওঠেন মহাদেবী দুঃসংবাদ শুনে। ‘নিজের প্রাণ বাঁচাতে কুললক্ষ্মী বিসর্জন দেয় যে, মগধ সিংহাসন তার জন্যে নয়!’ রাজমহিষীর ধিক্কার বিচলিত করতে পারে না সম্রাটকে। ‘দয়া করম্নন আর্যপুত্র, আমাকে এ কঠিন শাস্তি দেবেন না’ – অবশেষে সব গর্ব ভুলে লুটিয়ে পড়েন তিনি স্বামীর পায়ে অসহায় আর্তিতে। নিঃশব্দে স্থান ত্যাগ করেন রামগুপ্ত, রাজমহিষীর করম্নণ কান্না মাথা খুঁড়ে ফেরে প্রাণহীন প্রসত্মর প্রাচীরে।

সেদিন রাতের অন্ধকারে নিঃশব্দে, পাহাড়ের পিছনভাগের চড়াই বেয়ে দুর্গে প্রবেশ করেন চন্দ্রগুপ্ত, সঙ্গী মাত্র বিশজন যোদ্ধা। মধ্যরাতের নিসত্মব্ধতায় দুর্গ-মন্ত্রণালয়ে শুরম্ন হয় গোপন আলোচনা, সেখানে উপস্থিত শুধু দুর্গাধীপ ও দুই রাজভ্রাতা। বিশাখসেন পরিস্থিতি বর্ণনা করেন কুমারের কাছে, রামগুপ্তের সিদ্ধামত্ম জানাতে গিয়ে কেঁপে ওঠে তাঁর কণ্ঠস্বর। দীপের সীমিত আলোয় ঢাকা পড়ে চন্দ্রগুপ্তের অভিব্যক্তি, ধীর পায়ে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ান কুমার, নিথর চোখে চেয়ে থাকেন তারাহীন রাতের আকাশে। দুর্গপ্রাকারের আর একটি জানালায় এক জোড়া সজল চোখ ঠিক তেমন করেই চেয়ে থাকে আকাশপানে কী এক নিদারম্নণ একাকিত্বে।

পুবের আকাশে সদ্য লেগেছে রক্তিম ছোঁয়া, সুপ্তিভঙ্গের আলস্যে প্রকৃতি তখনো নিসত্মব্ধ; দুর্গ প্রাকার থেকে বেরিয়ে আসে কাপড়ে ঢাকা কতগুলি রং-বেরঙের শিবিকা। সর্পিল গতিতে পাহাড়ি পথ বেয়ে নেমে আসে তারা নীরব শোভাযাত্রায়। দলটির শুরম্নতে মহার্ঘ রেশমি চাঁদোয়া-মোড়া শিবিকাটির গাঢ় নীল রং ও রাজকীয় মাগধী লাঞ্ছন থেকে সহজেই চেনা যায় রাজমহিষীর চতুর্দোলা। মহাদেবীর আগমনবার্তা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে শক শিবিরে; রম্নদ্রসেন নির্লজ্জ আগ্রহে পারিষদসহ এগিয়ে আসেন পাহাড়ের বহির্তোরণ-মুখে। ‘সুস্বাগতম দেবী, শক শিবির আজ আলোকিত হবে আপনার রূপের ছটায়, ধন্য ভাগ্য আমার’ – উচ্ছ্বসিত শকাধিপতি তুলে ধরেন শিবিকার আড়াল। মুহূর্তের মধ্যে মহাদেবী নয়, বেরিয়ে আসেন কুমার চন্দ্র উন্মুক্ত কৃপাণ হাতে, সেইসঙ্গে বেরিয়ে আসে এক-এক দুর্ধর্ষ মগধ যোদ্ধা বাকি শিবিকাগুলি থেকেও; তাদের মিলিত রণ-হুঙ্কারে কেঁপে ওঠে চারদিক। কয়েক পলকে ছত্রখান হয় হকচকিত শক সৈন্য, রম্নদ্রসেনের প্রাণহীন দেহ লুটিয়ে পড়ে ধুলায় চন্দ্রগুপ্তের তরবারির অব্যর্থ আঘাতে। দলনেতার মৃত্যুসংবাদে দিশেহারা হয়ে পড়ে শক সৈন্য, কিছু দূরে সুযোগের অপেক্ষায় লুকিয়ে থাকা মগধ সেনা চন্দ্রগুপ্তের নেতৃত্বে শিকারি বাঘের মতো পিছু নেয় তাদের। মনোবলহীন শকসেনা পরাজিত হয়, ক্রোধোন্মত্ত চন্দ্রগুপ্ত আক্রমণ করেন রম্নদ্রসেনের মালব রাজ্য, অবশেষে বশ্যতা স্বীকার করে শান্তি ফেরায় ক্ষত্রপ রাজপরিবার।

 

পাটলিপুত্রের রাজপথ লোকে লোকারণ্য, নগর তোরণগুলি উৎসব-সাজে বর্ণময়। পান্থশালায়, নগরচত্বরে লোকমুখে ঘুরে ফিরছে শুধু একটি নাম, ‘কুমার চন্দ্রগুপ্ত’। শক বিনাশ করে তিনি নতুন করে জয় করেছেন মগধবাসীর হৃদয়, হয়ে উঠেছেন ‘শকারি’। বিজয়ী সেনার সঙ্গে নগরে প্রবেশ করেন কুমার, জেগে ওঠে জয়ধ্বনি, বিজয় তূর্য বাজে তোরণে-তোরণে; পুরনারীরা মঙ্গলশঙ্খে অভিবাদন জানায় বীরশ্রেষ্ঠকে। রাজ-অমত্মঃপুরে মাধবসেনা বয়ে নিয়ে আসে কুমার চন্দ্রের আগমনবার্তা, বহুদিন পরে মহাদেবীর মস্নান মুখখানি ভরে ওঠে হাসিতে, ভিজে ওঠে চোখের পাতা অপার্থিব আনন্দে।

অমাত্যম-লী দ্বৈমাতুরদেবের নেতৃত্বে স্বাগত জানান কুমারকে মগধ রাজসভাগৃহে; ‘চন্দ্রগুপ্তের জয়’ উচ্ছ্বাসধ্বনিতে মুখর হয় সভাস্থল। ‘মগধের জয়’ কুমার প্রতিসম্ভাষণ করেন প্রসন্ন গাম্ভীর্যে। ‘রামগুপ্ত সিংহাসনের অনুপযুক্ত, কাপুরম্নষতায় কলঙ্কিত করেছেন তিনি মগধ রাজকুল। মগধবাসীর স্বার্থে আপনার হাতে উঠুক রাজদ-, এই সকলের ইচ্ছা’ – কুশলবিনিময় শেষে মহামাত্য জানান অমাত্যম-লীর সিদ্ধামত্ম, নীরব থাকেন কুমার বহুক্ষণ। ‘আপনাদের সিদ্ধামেত্ম আমি সম্মানিত, তবু ভ্রাতার অনুমতি ছাড়া এ-দায়িত্বগ্রহণ আমার পক্ষে অসম্ভব; মার্জনা করম্নন আমায়।’ ধীর অকম্পিত স্বরে রাজমুকুট ফিরিয়ে দেন চন্দ্রগুপ্ত।

সম্রাটের নিজস্ব বিশ্রামকক্ষে অস্থিরভাবে পদচারণা করছেন রামগুপ্ত, এলোমেলো তাঁর বেশভূষা, উত্তেজনায় আরক্ত মুখ, চোখের দৃষ্টিতে অস্বাভাবিকতা; বাইরের প্রবল জয়ধ্বনি প্রাচীর ভেদ করে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে নির্জন ঘরটিতে, সম্রাট দুই করতল দিয়ে সবলে বন্ধ করতে চান মস্তিষ্কে শব্দের প্রবেশ। কিছু পরে, সেবক এসে জানায়, কুমারের আগমনবার্তা। ‘জয় হোক মগধাপতির’, কুমার চন্দ্র কক্ষে প্রবেশ করেন, আগেকার গস্নানির রেশমাত্র ধরা পড়ে না তাঁর কণ্ঠস্বরে। থমকে দাঁড়ান রামগুপ্ত, ভুলে যান প্রতিসম্ভাষণ; কুমার এগিয়ে যান আমত্মরিক আগ্রহে। আচমকা তরবারি কোষমুক্ত করে ঝাঁপিয়ে পড়েন সম্রাট কুমারের ওপর, আঘাত করেন বুকে উন্মত্ত আক্রোশে। শোচনীয়ভাবে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় তরবারি; চন্দ্রগুপ্ত আত্মরক্ষার তাগিদে প্রত্যাঘাত করেন যোদ্ধার স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষিপ্রতায়; বীরের শিক্ষিত অসি আমূল বিঁধে যায় রামগুপ্তের বুকে। বিমূঢ় বিস্ময়ে চেয়ে থাকেন কুমার ঘটনার আকস্মিকতায়।

রাজ-অমত্মঃপুর মোহহীন শূন্যতায় নিসত্মব্ধ, অনাড়ম্বর পুজোর ঘরটিতে সদ্য স্বামীহারা ধ্রম্নবাদেবী যেন তপঃক্লিষ্টা যোগিনী, চোখদুটি তাঁর শামত্ম সমাহিত। ‘কুমার চন্দ্র দেখা করতে চান দেবী’, মাধবসেনার স্বরে জেগে ওঠে প্রসত্মরমূর্তি চঞ্চল হয় চোখের তারা।

‘আমি ক্ষমাপ্রার্থী দেবী; আপনার এই দুর্ভাগ্য আজ আমারি কারণে।’ গভীর মর্মবেদনায় অস্পষ্ট শোনায় কুমারের কণ্ঠস্বর। ‘আপনি আমার ত্রাতা, যবনের লালসা থেকে রক্ষা করেছেন একদিন; আর আজ, মুক্তি দিয়েছেন প্রেমহীন দাম্পত্যের অসম্মান থেকে’ – ধ্রম্নবাদেবীর অসংকোচ উত্তর অদ্ভুত সারল্যমাখা। ‘মনে কোনো কষ্ট রাখবেন না কুমার, আমার কাছে চিরকাল আপনিই মহারাজাধিরাজ, মগধ সিংহাসনের অধিকারী।’ হৃদয়ের সমসত্ম আবেগ বাঁধা পড়ে ধ্রম্নবার কণ্ঠস্বরে, ভ্রমরকৃষ্ণ চোখদুটি টলমল করে গভীর অনুরাগে। পুলকে বিস্ময়ে কুমারের সুন্দর মুখে ফুটে ওঠে স্বর্গীয় অভিব্যক্তি। ‘আর হৃদয় সিংহাসনের অধিকার দেবী?’ শব্দহীন ব্যঞ্জনায় বলা হয়ে যায় অব্যক্ত কত কথা; নিসত্মব্ধতা ভঙ্গ করে প্রাসাদ উদ্যানে গেয়ে ওঠে কোকিল, বসমত্ম সমাগমের বার্তা ভেসে আসে তার কুহুতানে।

বিক্রমাদিত্য উপাধি ধারণ করে চন্দ্রগুপ্ত মহিমান্বিত করেন মগধ সিংহাসন, ধ্রম্নবাদেবীকে বিয়ে করেন তিনি মহাদেবীর মর্যাদায়। দুটি অবহেলিত হৃদয়ের মিলনোৎসবে মাতোয়ারা হয় আপামর মগধবাসী। মহাদেবী ধ্রম্নবা তাঁর সংবেদনশীলতা আর শৈল্পিক চেতনায় যোগ্য সহধর্মিণী হয়ে ওঠেন সম্রাটের, স্নেহ ও প্রীতিময় তাঁদের সখ্য আজো কিংবদমিত্ম ইতিহাসে।

তাঁর রাজ্যকালে চন্দ্রগুপ্ত (দ্বিতীয়) গান্ধারের কুষান এবং মালব ও সৌরাষ্ট্রের শকরাজ্য গুপ্ত সাম্রাজ্যের সীমাভুক্ত করেন। শামিত্ম ও সুশাসনের কারণে তাঁর রাজত্বকাল গুপ্ত সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগ হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত। বিক্রমাদিত্যের সুবিখ্যাত নবরত্নসভা, কালিদাস যার অন্যতম সভ্য, পরিচয় দেয় শিল্প ও সাহিত্যে সম্রাটের গভীর আগ্রহের। ধ্রম্নবাদেবীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে উপাখ্যানের উলেস্নখ পাওয়া যায় বিশাখদত্তের কাব্য নাট্যদর্পণেও। r

 

লেখকের টীকা : কাহিনির সমুদ্রগুপ্ত, রামগুপ্ত, চন্দ্রগুপ্ত, ধ্রম্নবাদেবী, মাধবসেনা ও রম্নদ্রসেন ঐতিহাসিক চরিত্র, ঘটনাবলি ইতিহাস থেকে নেওয়া। আমার কল্পনাজাল শুধু তাকে নাটকীয়তা দিয়েছে পাঠকের মনোরঞ্জনের জন্যে।