বাংলা সাহিত্যে একজন নতুন ঔপন্যাসিকের আবির্ভাব

হাসান আজিজুল হক

কাজী রাফির লেখার মাঝে আমি প্রতিভার স্বাক্ষর পাই। কালি ও কলম পুরস্কারের চূড়ামত্ম পবের্র একজন বিচারক হিসেবে, আমি তার প্রথম উপন্যাস ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। খুব মুগ্ধ হয়েছিলাম। এই লেখকের নাম আগে কোনোদিন তো শুনিনি। তার লেখাও পড়িনি। সেই উপন্যাসটা পড়ার দেড় বছর পর গ্রন্থটার (ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা উপন্যাসের) জন্য আমি কিছু প্রশসিত্ম বাক্য রচনা করেছিলাম। যেভাবেই হোক তার কিছু ফল হয়েছে। তার মানে এই নয় যে, ওই বইটি পুরস্কৃত হয়েছে বলে এই বইটি (ত্রিমোহিনী) লেখা হয়েছে। এটা আমি বুঝতে পারছি যে, লেখককে অনুপ্রাণিত করেছে পুরস্কার, তাকে এটা বুঝিয়েছে যে, তুমি তোমার কাজ নিয়ে এগিয়ে যাও, আমরা তোমার পেছনে আছি। পুরস্কার সব সময় লেখকের মাথায় থাকে না, প্রতিভাবান লেখকের পুরস্কার থাকে পায়ের তলায়। আমরা লেখকদের চার শ্রেণিতে বিভাজন করতে পারি। লেখক হতে হলে লেখায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে অর্থাৎ এই শ্রেণির লেখকদের ‘দক্ষ লেখক’ বলা যায়। দক্ষতার সঙ্গে যাঁরা উত্তরসূরির কাছে বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শন করেন তাদের বলা যায় ‘ক্লেভার’ রাইটার। আর যাঁরা তাঁদের লেখায় সময়কে মনুষ্য এবং মানুষের অনুভূতিকে ধারণ করতে পারেন তাদের ‘ইন্টেলিজেন্ট’ বলা যেতে পারে। তার চাইতেও যাঁরা উপরে তাঁদের ‘ট্যালেন্টেডরাইটার বলা যায়। কিন্তু যাঁদের মতন আর কেউ হয় না, তাঁদেরকে বলে ‘জিনিয়াস। আমি আজ প্রথমেই ঘোষণা করে দিই যে, ‘ঔপন্যাসিক হিসেবে বাংলাদেশে এবং বর্তমান বাংলা সাহিত্যে একজন জিনিয়াসের আবির্ভাব ঘটেছে। সেই জিনিয়াসের নাম কাজী রাফি।’

লেখকের মাথা কখনোই নত হবে না। যিনি লেখক তার মাথা কিছুতেই নত হয় না। আর নত না হওয়াই হচ্ছে একজন লেখকের প্রধান গুণ। কাজী রাফি সেই ব্রত মেনে নিয়েছে এবং সে কোথাও নতি স্বীকার করেনি, হার কোথাও স্বীকার করেনি। কোথাও কম্প্রোমাইজও করেনি। কখনো মনে করেনি যে, এটা করলে অমুক খুশি হবে। উচিত কথায় চাচি বেজার। উচিত কথা নিমের পাতা। উচিত কথা যদি নিমের পাতাও হয় তবে তোমাকে তা গিলতে হবে। তা না হলে তোমার জ্বর সারবে না। তো এই ব্রত নিয়ে কাজী রাফি সাহিত্যক্ষেত্রে নেমেছে।

আমি মনে করি, কাজী রাফির ত্রিমোহিনী একটি মহৎ উপন্যাসের জায়গায় গিয়েছে। এটাকে একটা মহাকাব্যিক উপন্যাস বলা যায়। এটা সত্যিই এক মহাকাব্যিক উপন্যাস এবং এটাও ঠিক (উপন্যাসের) হোমওয়ার্কে ইলিয়াস কী লিখেছিলেন তার কোনো প্রমাণ নেই, কারণ তিনি (উপন্যাসের খসড়ার প্রস্ত্ততি হিসেবে) কিছু লেখেননি। তিনি চারণ কবির মতো গান গেয়ে বেড়াতেন। আমি কিন্তু এরকম গায়ক দেখেছি। হারিদের মধ্যে, হারি মানে যাদের মহিলারা সমত্মান প্রসব করায়, দাইমা। হারিদের মধ্যে একজন ছিলেন যিনি ভোরবেলায় উঠে খঞ্জনি বাজিয়ে গান গাইতে গাইতে চলে যেতেন ‘আমার দিনগুলো বৃথা গেল, রাত্রি গেল নিভে, হরি দাও হে তব’ – আপনমনে গেয়ে চলে যেতেন। এই যে খঞ্জনি বাজিয়ে লোকটা গান গেয়ে আমাদের আনন্দ দিত ভোরবেলায়, এই টিম টিম কণ্ঠে গাইতে গাইতে তার চলে যাওয়া, এই নিমণ শ্রেণির মধ্যে আরো নিমণ শ্রেণির লোকটাকে আমি কী চোখে দেখব?

সেজন্যই বলছি, যা মানুষকে উত্তরণ করায়, যা মানুষকে সর্বাগ্রে স্থান দেয় সেটাই মানুষের মহৎ কর্ম এবং আমি যদি বিশ্বাস করি যে, কাল নিরবধি অর্থাৎ কালের শেষ নেই। বিশ্ব বিশাল, নিরবধি, মানুষ আমার স্বজন – তা নির্দিষ্ট করার জন্যই একটা জায়গায় দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে হয়; সেখানেই ইতিহাসের দ্বারস্থ হতে হয়।

কাজী রাফির ত্রিমোহিনী ইতিহাসগ্রন্থ নয়। এটা একটা উপন্যাস। কবিতা লিখলেই তা কাব্য হয় না। ইতিহাস আর উপন্যাস এক জিনিস নয়। এই দুয়ের মাঝে এক রসায়ন থাকতে হবে। একটা কেমিস্ট্রি থাকতে হবে। এই সংমিশ্রণকে আলাদা আলাদা করা যাবে না। এই রসায়নকর্মটা যে করতে পারে না, তার লেখক হওয়া চলে না। যে বাসত্মবকে অবাসত্মবের সাথে মেলাতে পারে না, সে বাসত্মবের পেছনে পরাবাসত্মব দেখতে পায় না। বাসত্মবের পেছনে, গভীরে আরো কত বাসত্মব আছে এটা যে দেখতে পায় না, সে বাসত্মববাদী লেখক নয়। তার মানে কি এই যে, বাসত্মববাদী লেখক হলে আমরা সবাই প্রতিদিন যা দেখছি তা-ই লিখব? তা লিখলেই হয়। কিন্তু তাতে কি ঔপন্যাসিক হওয়া যায়? সবাই ঔপন্যাসিক হয় না কেন? এজন্য যে, সবাই জীবনের গভীরে বাসত্মবতা-অবাসত্মবতার সংমিশ্রণ দেখতে পায় না। চোখের আকৃতি ছোট-বড় দিয়ে সুন্দর বিবেচনা হতে পারে। কিন্তু সাহিত্য বিবেচনা হয় না।

সেজন্যেই আমি বলছি, কাজী রাফি যে অবাসত্মব কল্পনার জগতে বাসত্মব জগৎ থেকে ইতিহাসের ছায়া এনেছে তা এক মহাকাব্যিকতা পেয়েছে এবং আরো একটি বিষয়, সেটা যদি আমি বলি, এটা একটা ছেলেমানুষের কথকতা হবে তা হয়তো – খুব সম্ভবত যে স্থান নদীবহুল এবং যেখানে বনজঙ্গল সন্নিবেষ্টিত সুন্দর প্রকৃতি আছে সেখানে কথাসাহিত্য জন্মায় না। কথাসাহিত্যের জন্য বিসত্মৃত ভূখ-, বিসত্মৃত জনপদ দরকার। এই বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ সেই এলাকা। সেজন্যে আমাদের প্রধান কথাসাহিত্যিকদের প্রায় সবার জন্ম উত্তরবঙ্গে। সে আমি, শওকত আলী, সৈয়দ শামসুল হক বা মঞ্জু সরকারই বলি আর ভুবনবিখ্যাত আখতারম্নজ্জামান ইলিয়াসের কথাই বলি, তাদের সবাই এই ভূমিতেই জন্মেছে। আমার মনে হয়, কথাসাহিত্য হচ্ছে বিশাল জনপদের কাহিনি – আমাদের রাঢ় এলাকা এরকম। হয়তো এর চেয়েও ঊষর। এর চাইতে রম্নÿ, অন্যরকম। কিন্তু সেখানে কেউ নিচু কণ্ঠে গান গায় না। গানটা এত উঁচু কণ্ঠে ধরে যে, গলাটা বিকৃত হয়ে যায়। তবু তাদের কণ্ঠ দূর থেকে শোনা যায়। কারণ উঁচুগ্রামে গাইতে গিয়ে তার কণ্ঠ চিকন হয়ে যায় এবং বাউলদের গলা যদি আপনি শোনেন, আমাদের আমত্মর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাউলদের গলাটাও লক্ষ করবেন, খুব চিকন ।

এই যে, বিশাল জনপদ আর ঊষর প্রামত্মর, এই ঊষর প্রামত্মরই হচ্ছে কথাসাহিত্যের জন্য উর্বর ভূমি এবং এখান থেকে আমরা একটার পর একটা ঔপন্যাসিক পাচ্ছি এই বাংলাদেশে। শওকত আলী, সৈয়দ শামসুল হক, আখতারম্নজ্জামান ইলিয়াস আর এরই ধারাবাহিকতায় এখন পেয়েছি তাদের যোগ্য উত্তরসূরি কাজী রাফিকে। কাজী রাফিকে সহস্র অভিনন্দন। সে ত্রিমোহিনীতে ইতিহাস ব্যবহার করেছে, ইতিহাস নিয়েছে; কিন্তু উপন্যাসে ইতিহাস মেশামেশির যে ব্যাপারটা তা সে খুবই সফলতার সাথে ব্যবহার না করলেও সে ইতিহাস উলটে দেয়নি, বিকৃত করেনি। ত্রিমোহিনী উপন্যাসে ইতিহাসের যেটুকু বাঁক তা ঔপন্যাসিকের স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে। সম্রাট অশোক বঙ্গদেশে এসেছে কি না, ভীম তার গদাটা ছুড়ে ফেলেছে কিনা – এসব ইতিহাস আর পুরাণের ব্যাপার। কিন্তু অশোক নামে এক সম্রাটের যে অসিত্মত্বই ছিল – এটা কবে প্রথম জানা গেছে? আমাদের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, আমাদের বঙ্কিমচন্দ্র – এঁরা কেউই কিন্তু অশোকের নাম পর্যমত্ম জানেন না। পরে যদিও জানা গেছে সেটাও ১৯২২ সালের পর।

সেই অশোক পু-্রবর্ধনে এসেছিলেন কিনা, আমি যদিও ধরে নিই, তিনি এসেছিলেন – রাজকার্য প্রত্যক্ষ করেছেন, তাহলে অসুবিধা কোথায়? হ্যাঁ, অশোকের এখানে একবার পায়ের ধুলা পড়েছে। গৌতমবুদ্ধের একবার পায়ের ধুলা পড়েছিল। পু-্রবর্ধন – বলা যায় এই সভ্যতার একেবারে প্রাণকেন্দ্র ছিল। এটা মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, বিশাল বিশাল সভ্যতার উত্থান এবং অবক্ষয় দুই-ই এই মহাস্থানগড়ে হয়েছে। কাজেই এর যে ইতিহাস, এই ইতিহাসকে অবলম্বন করে উপন্যাসসহ আরো অনেক কিছু রচিত হতে পারে। রচিত হয়েছেও অনেক। গ্রামবাংলার লোকের মুখে মুখে তা চালু আছে। যেমন বেহুলার গান, বৈষ্ণব গান। কাজী রাফি ত্রিমোহিনী উপন্যাসে সেরকম ইতিহাসের ছায়া এনেছে, যার সঙ্গে যোগ করেছে রসের মেশাল। সাহিত্যের মেশাল। ফলে সেটা সত্যের চাইতে সত্যতর, ধ্রম্নবের চাইতে ধ্রম্নবতর – এটা মনে রাখতে হবে।

আমি এই উপন্যাসটি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। ভালো লেগেছে। এর পথ এবং প্রশসত্ম রাজপথ এবং রাজপথ থেকে বেরিয়ে পুনরায় এত অসংখ্য অলিগলি পথ – কাজেই একটু ধন্ধে পড়তে হতে পারে। কারণ নানাদিকে উপন্যাসটির বিসত্মৃতি। আমি অস্ট্রেলিয়ায় একবার একটা বই পেয়েছিলাম। বইটার নাম ছিল Hundred and fifty walkways in Australia, থালার মতো দেশ তো, কিনারে সব শহর, মাঝখানে কিছু নাই, সব ফাঁকা। এখানকার পুরনো আদিবাসী যারা, আমাদের পূর্বপুরম্নষ, তারা এখনো থাকে। তবে ঘেরাও অবস্থায় থাকে। কিন্তু এখানকার সাধারণ হবি (শখ) হচ্ছে যে, ওইসব কাঁচা পথে বনজঙ্গলের ভেতর দিয়ে হাঁটাহাঁটি করা । ১৫০টা walkways-এর তথ্য বইটা দেয়। ত্রিমোহিনী যদি পড়া যায় তাহলে বোঝব এটা শুধু তিন মোহিনী নয়, অথবা এর তিন মাথা এক জায়গায় নয়, এ হলো অজস্র মাথা। কাজী রাফির সৃষ্ট এই জগতে পথ হারিয়ে ফেলতে হয়। আর এতে এমন স্বাদ দেওয়া আছে, এমন ‘বর’ দেওয়া আছে, এর এক মাথা কাটলে সঙ্গে সঙ্গে আর একটা মাথা তৈরি হয়ে যাবে। অর্থাৎ বইটা জীবিত থাকবে। বইটা কোনোদিন মরবে না। এই বইটা মরবে না।

আমি এজন্য সাহিত্যজগতে তাকে আমন্ত্রণ জানাই। সে লিখুক। আরো মহৎ সাহিত্য সে সৃষ্টি করম্নক। পৃথিবীর সাহিত্যে সে জায়গা করে নিক। তাতে আমাদের অহংকার বাড়বে বৈ কমবে না। জায়গা করে নিক সে পৃথিবীর সাহিত্যে। এই বইয়ের অনুবাদ হোক। এই বই সারা পৃথিবীতে জানান দিক যে, খুব বড় করে কল্পনা করার, ইতিহাসকে বড় করে তোলার মতো ঔপন্যাসিক আমাদেরও আছে। যে ইতিহাস বিবরণ তথ্যে নয়, ইতিহাস আর সাহিত্যের মধ্যে যে তফাৎ (তা ধারণ করে)। ইতিহাসের জগৎ তথ্যে পরিপূর্ণ। সাহিত্যের জগৎ মনুষ্য দ্বারা পরিপূর্ণ, সাহিত্য জগতের সর্বত্র শুধু মনুষ্য আর মনুষ্যত্ব। এর চেয়ে অধিকতর বড় কিছু নেই, এটাকে আমরা ধ্রম্নব বলে মানি, আমরা যাই-ই পড়ি না কেন, তা আধ্যাত্মিকতা অথবা সাহিত্য হোক তা শেষ পর্যমত্ম মানুষেরই কাজে লাগে। একটা গরম্ন বা ছাগলের আধ্যাত্মিকতা নেই। স্রষ্টা তা তাদের দেননি। আমাদের সবই আছে। কেন? কারণ আমরা মানুষ। আমরা চিমত্মা এবং কল্পনা এভাবে করতে পারি এবং সেই চিমত্মা এবং কল্পনাকে বাসত্মবে পরিণত করতে পারি।

আজকে বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি তা হয়তো সুখকর নয়। আমরা মনে করছি, দেশটা রসাতলে যাচ্ছে নাকি? দেশটা কি রসাতলে যাচ্ছে? প্রত্যেক দিনের হিসাব করলে সেরকমই মনে হয়। কিন্তু একবার কাজী রাফির মতো লেখক যদি পাওয়া যায় তাহলে মনে হয়, না এখনো আছে (সবকিছু ফুরিয়ে যায়নি) এ… খ… নো আছে। পরশুরামের এক গল্পে আছে যে, একজন নাসিত্মক আর আসিত্মক দুই বন্ধু, তাদের পরস্পর খুব ঝগড়া লাগত। একজন বলত, ঈশ্বর নাই আর একজন বলত ঈশ্বর আছে। একদিন নাসিত্মকের মৃত্যু হলে তার পিছু পিছু যখন আসিত্মকরা যাচ্ছে তখন নাসিত্মক তার খাটের ওপর থেকে হঠাৎ দাঁড়িয়ে বলছে -‘আছে, আছে, সব আছে।’ অর্থাৎ নাসিত্মক বলছে, আছে। সব আছে।

আমরাও মনে করি (ভূশ–র কাক হয়ে) সব ভালো থাকুক। জীবিত ও মৃত; সব হাজির থাকুক। মৃতও জীবিত হোক। জীবন্মৃতও পূর্ণ জীবন লাভ করম্নক। এই সাহিত্যের কাছেই এটা সম্ভব। আর কোনো কিছুতে, কোথাও সেটা সম্ভব নয়। ত্রিমোহিনীর সবচেয়ে গুরম্নত্বপূর্ণ জায়গা এটাই যে, তা মনুষ্যত্বকে বুকে ধারণ করে। এই সভ্যতা শুধু অট্টালিকা বা মাটির নিচে চাপা থাকা ভস্ম-ভগ্ন (কোনো ইতিহাস শুধু) নয়, এটা মনুষ্যত্ব জগতে পরিপূর্ণ এবং সেই মানুষ, যে সকলের মধ্যে অমর, A human being, a mortal man। যে মাঝখানে নয়, সকলের সাথে এক, সেই-ই হচ্ছে অসাধারণ ব্যক্তি। অসাধারণ কে? সবচাইতে সাধারণ যে ব্যক্তি। সকলের সাধারণ গুণগুলোকে যে হজম করে বসে আছে, সে-ই হচ্ছে সত্যিকারের অসাধারণ মানুষ – যার মধ্যে ষড়রিপু আছে, যার মধ্যে কাম-ক্রোধ-হিংসা, লোভ-মোহ আছে, আছে যার মৃত্যু।

মেঘ বলেছে যাব যাব। চলে যাব সবাই। কিন্তু ‘তোমার কাছে এবার আমি মরণ হতে যেন জানি – গানের সুরে’। ত্রিমোহিনী সেরকম এক উপন্যাস। মহামূল্যবান সম্পদ এই বইটি। এ যখনাহাঁকবে, এ যখন ডাকবে, আপনার অত্যমত্ম দুর্লভ, সংকটাপন্ন অথবা অত্যমত্ম আশঙ্কাজনক মুহূর্তে, আপনি দেখবেন আপনাকে সামত্মবনার প্রলেপ দেবে গ্রন্থটি। সাহিত্য মানুষকে কল্পনাময় শামত্মতার স্থানে নিয়ে যায় – কাজী রাফির এই গ্রন্থটি আমাদের সেরকম একটি জায়গায় নিয়ে গিয়েছে।

বাংলাদেশের সাহিত্য পুষ্ট হচ্ছে। অনেকেই ভালো লিখছে। মানুষের গল্প অফুরান। মানুষের গল্প কোনোদিন শেষ হবে না। কাজী রাফির সৃষ্টিতে, তার লেখনীতে, তার গল্প-উপন্যাসে মানুষের এই অফুরান গল্প তাদের প্রেম-ভালোবাসা হয়ে, তাদের স্বদেশভূমি হয়ে, তার স্বপ্ন-কল্পনার উপাখ্যান হয়ে একদিন ছড়িয়ে পড়বে পৃথিবীময় – এই প্রত্যাশা। আপনারা সকলেই ভালো থাকুন। r

 

(বগুড়া ‘শুদ্ধস্বর’ আয়োজিত ২২ মে ২০১৫ তারিখে কাজী রাফির ত্রিমোহিনী উপন্যাসের আলোচনা অনুষ্ঠানে হাসান আজিজুল হক কর্তৃক প্রদত্ত বক্তব্য)