বিশব শিশুর খেলা

স্বদেশ রায়

গাঢ় অন্ধকারে দূরতম সমুদ্রবুকে ঝড়ো হাওয়া আর মেঘের
ডানায় ঢেউগুলো উঠলো ফুলে, তাদের মাথায় মাথায়
তখন এক একটি কেশর ফোলানো সিংহ
তাদের কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে এলো মহাকালের সিংহনাদ
বাতাসে বাতাসে ছড়িয়ে পড়লো মহাকালের সেই শব্দতরঙ্গ
পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়গুলো করলো মাথা নত
আর গভীর অন্ধকার তাকে জানালো অভিবাদন
সূর্যের আলো তখনো জানেনি মহাকালের শব্দ
ভেসে যাচ্ছে বাতাসে, অথচ অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা
সবুজ বনরাজির পত্রপলস্নব হলো শিহরিত, স্পন্দন বয়ে
গেল বিছানায় একামত্ম আপন নরনারীর শরীরে শরীরে
সকালের সূর্য এসে ওই গর্জনোন্মুখ সমুদ্র-ঢেউয়ের
মাথায় ছড়িয়ে দিলো তাঁর নবীন আলোর কিরণ-ছটা
আরো কিছু আলো রেখে গেল সন্ধ্যায় চাঁদের জন্যে
চতুর্দশীর রাতে চাঁদ ওই আলো ছড়িয়ে দিলো
সমুদ্রের বুকে, পাহাড়ের চূড়ায়, কয়েকটি রশ্মি জানালার
পর্দা ভেদ করে এসে পড়ল প্রেমিক যুগলের বিছানায়
মহাকালের শব্দের সঙ্গে তখন সূর্যের আলোর হলো মিতালী
পৃথিবীমাতা তখন বসলেন যোগাসনে,
বললেন, মহাকালের শব্দের সঙ্গে কালের
শব্দ মিলিয়ে নাও গভীর ধ্যানমগ্ন প্রেমময় হৃদয় দিয়ে
সমুদ্রের পাড়ে থাকা সুমিষ্ট কণ্ঠের শঙ্খশাদা পাখিটি
তখন নীড়ে দয়িতার পালকে পালক রেখে চঞ্চু কাঁপিয়ে,
শরীর নাচিয়ে উঠল ডেকে, সমুদ্রের বাতাসে আর জলের
শব্দে সে রাগিণী ছড়িয়ে পড়ল দিগমেত্ম, ভেসে গেল
উদাসী এক রাগের শব্দে ও স্বরে, ‘আপন ভোলো’
‘আপন ভোলো’।