বিশ্বাস-অবিশ্বাসের গল্প

শহীদ কাদরী

 

সেদিন দুপুরবেলা

অন্যমনে ছিলাম ব’সে মন্দির-চত্বরে

আমার কৈশোরের এক

ছায়াচ্ছন্ন দিনে।

 

এয়ারগানের ছর্রাবেঁধা নিহত কাকের কলকাতাকে

স্মৃতির একটি গুচ্ছে

মিলিয়ে নিয়ে,

সংহত ক’রে,

বসেছিলাম আমরা তিনজন (আমি,

জাহাঙ্গীর আর সুকুমার)।

আবাল্য অবাধ্য কথক আমি নতুন

 

বন্ধুদের শোনাচ্ছিলাম কলকাতার ফুটপাথ থেকে ফুটপাথে

ঘুরে ঘুরে আমার (জন্মদিনে পাওয়া)

এয়ারগান কত-না চড়ুই আর কাকাতুয়া নির্দ্বিধায়

শিকার করেছে।

 

 

আর সূর্যটাকে সেদিন

মনে হয়েছিল একটা লাল বিশাল ললিপপ্ (নিউ-

মার্কেট থেকে কেনা) – আমার মুখে এই

উক্তিটা শুনে জাহাঙ্গীর উঠলো ব’লে ‘আর

গুল-তাপ্পি মারিস না-তো’ আর আমি যেই বলতে গেছি

‘ঠিক্ বলেছিস্!’ অমনি চোখজোড়াটা

আটকে গ্যালো বটগাছের নিচে,

দেখি, একটা মরা শালিক

টেলিভিশনের অ্যান্টেনার মতো

শূন্যে দু’পা তুলে

 

নিশ্চিন্তে রয়েছে প’ড়ে।

আর লাইন দিয়ে সারিসারি লাল পিঁপড়ে

শালিকটার চোখের মণি খুঁটেখুঁটে খাচ্ছে!

কোথাও কোনো বেদনার চিহ্ন নেই,

না-নৃত্যরত গাছের পাতায়, না-গগনমন্ডলের অসীম

নীলিমায়

এ-ভাবেই আমার বিশ্বাসগুলো

পাখির চোখের মতো খুঁটেখুঁটে

খেয়ে ফেলেছে দুপুর-বেলার সেই লাল পিঁপড়েগুলো।