বৈশাখ

মারুফুল ইসলাম

 

সোনার পালঙ্কে শুয়ে আছে ঠাকুরমার ঝুলির কন্যা

বাঁধভাঙা চুলে তার কী বাহার

ঢেউ তোলে রূপকাহিনির বন্যা

মেঘের ঘোড়ায় চড়ে আসবে কি ডালিম কুমার

কালবোশেখের উড়মত্ম কেশরে

তীরহারা স্বপ্নের দুরমত্ম পারাপার

বেদেনির দীঘল কড়ির জাদুমন্ত্রবলে

গাঙের বাতাস হারিয়েছে পথ

বলো পান্থ, কোন দিগমেত্ম ঠিকানা লিখেছে তোমার

অবিশ্রামত্ম দিব্যরথ

 

এই মৃত্তিকার রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রেম তার

বুনেছে জীবন-বীজ

বাহুবন্ধে অলঙ্কার বিশ্বাসের প্রাচীন তাবিজ

তাকে আমি পাঠ দিই প্রথম ভালোবাসার

ধনধান্যপুষ্পভরা আমাদের সোনার বাংলার

 

এখানে চাঁদের বুড়ি থুত্থুড়ি চরকায় সুতো কেটে যায়

জ্যোৎস্নার সাগর ফুলে-ফেঁপে ওঠে

উঠোনে উঠোনে মাদুরের বিছানায়

শীতলপাটির কারুকার্যে বর্ণময় নিয়মিত নিদ্রার আবেশ

অজস্র প্রাণের স্পর্শে রংধনু হয়ে

জেগে থাকে এই বাংলাদেশ

 

নদীর ভেতরে নদী

তার আকাশে আকাশে পালতোলা পাখি

নৌকোর গলুই ঢেউয়ে ঢেউয়ে বেঁধে রাখে রাখি

কাকে বলে প্রেম আর কার নাম প্রীতি

এসো হে বিশ্ববাসী, নিয়মনীতি পাশে রেখে

দেখে যাও সোঁদাগন্ধময় রীতি

 

 

নিমেষে আর্য-অনার্য ভুলে

বাউল বাদাম তুলে

নিজেকেই ছেড়ে দাও নিজে

একতারার একাকী তারে দেখে নাও

কী করে প্রাচীন পঙ্ক্তিমালা বৃষ্টিজলে ভিজে

আমি তার নিরুদ্বিগ্ন আঁচলের প্রামত্ম ছুঁয়ে যাই

ইতিহাসের উদ্বিগ্ন আড়ালে হারাই

আহা এই চিরচেনা আকুল আখড়ায়

সকলেই কী আশ্চর্য ঠাকুরের সংগীত শোনায়

 

কে কবে শুনেছে বলো ষড়ঋতু মুছে গেছে

নিসর্গের নির্লিপ্ত নয়নে

কে কবে দেখেছে বলো জাফলং হারিয়েছে

শূন্যপ্রাণ পাথরের বনে

জল তার বেহালার আনন্দ ও বেদনার

সুর খোঁজে প্রতিটি পার্বণে

কালের তুলি বর্ণালি জীবনের ছবি আঁকে

অপরূপ রূপের অঙ্গনে

 

এদেশের নামে প্রেম, রঙে প্রেম, প্রাণে প্রেম, মনে প্রেম

মানচিত্রে প্রেমপূর্ণ ছবি

কাহ্নপা চ-ীদাস মধুসূদন লালন হাছন

রবীন্দ্রনাথ নজরুল জীবনানন্দ জসীম করিম

এ-মাটির প্রেমমগ্ন কবি

 

ঘুম ভেঙে শুনি সেই চিরপ্রেমময় ডাক

এসো হে বৈশাখ