কামরুল হাসান কাইউম
ব্লকআউট/ মনে আছে, মনে নেই, মনে পড়ে, পড়ে না, পড়বে না/ এপারে আলো, ওপারে অন্ধকার, ওপারে অন্ধকার, এপারে আলো/তুমিই আমি, আমিই তুমি, তোমাতে আমাতে বড্ড বেশি পাগলামি।
মাদল ও রাফি দুই বন্ধু, দুই প্রেমিক; থাকে চিলেকোঠায়, মেঘের দেশে। দুজনেই খোঁজে ভালোবাসা, দুজনেই খুঁজে বেড়ায় জীবনকে। মাদল কবি, রাফি চিত্রশিল্পী। মাদলের প্রেমিকা শাল্মলী, যে-আছে স্বপ্নে; রাফির প্রেমিকা মিটি, যে-আছে স্বপ্ন ও বাস্তব দুই জায়গাতেই। মাদলের জগৎ এক কামরাবিশিষ্ট, যার নাম মোকাম। তার আছে এক চিলতে ছাদ, পাশের বাড়ির বালিকা আর এক রঙিন কল্পনার পৃথিবী। যে-পৃথিবীতে আছে শাল্মলী, শকুন্তলা, বাউল ও তার নিজের শৈশব। রাফির কামরার নাম তাহিতি। তাহিতিতে আছে তাহিতিকন্যা, যে গগাঁর তাহিতিকন্যাদের চেয়ে একটু ফর্সা, ল্যুভর মিউজিয়াম মিটি। রাফির যাতায়াতের সীমা আবার তাহিতি পেরিয়েও শাহবাগ, ধানমন্ডি, রাস্তার ফুটপাতে বিস্তৃত। দুই বন্ধুর দুই জগৎ, যাতায়াত ভিন্ন জায়গায়; কিন্তু লক্ষ্যবিন্দু একপ্রান্তে মিলিত হয়। যে-প্রান্তে দাঁড়িয়ে তাদের সম্পর্ক আর বন্ধুত্বেই সীমাবদ্ধ থাকে না, হয়ে যায় আরো বেশি কিছু। দুজন দুজনের মধ্যে খুঁজে নেয় প্রেম। শাল্মলী, মিটি এরা সব সময়ের দায় মেটাতেই বায়বীয় হয়ে যায়। মোটামুটিভাবে এই হচ্ছে ব্ল্যাকআউট ছবির গল্প। যদিও ছবিটি দেখতে খাপছাড়া, গল্পছাড়া লাগে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই খাপছাড়া গল্পই খাপছাড়া তলোয়ারের মতো আঘাত করে প্রথাগত সমাজব্যবস্থাকে, সময়কে সে হত্যা করে পরিণত করে অশরীরী সবুজ ডাইনিতে।
ব্ল্যাকআউটে এই খাপছাড়া গল্প ছাড়া আর কী আছে? আছে প্রেম, আছে ভালোবাসা, আছে স্বপ্ন, আছে বিষম-কাম, আছে সমকাম, আছে অবদমন। তারপরে আছে কবিতা, আছে চিত্রকলা, আছে ভাস্কর্য, আছে অ্যানিমেশন, আছে সংগীত, আছে আলো, আছে অন্ধকার, আছে নেশা – সব মিলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে জীবনের টুকরো টুকরো অংশ।
ছবিটা কি যৌনতার দোষে দুষ্ট? আসলে যৌনতা কি দোষের কিছু? যৌনবাসনা কি থাকতে নেই? নাকি থাকলেও দেখাতে নেই? দেখানো উচিত নয়? ছবিতে দেখানো হয়েছে মিসাইল মানে পুংলিঙ্গ, দেখানো হয়েছে বোতল মানে স্ত্রীলিঙ্গ, দেখানো হয়েছে হস্তমৈথুন, দেখানো হয়েছে পুং-পুং মৈথুন, যেখানে শুধু মনই মৈথুনে অংশ নেয়। যদি কনটেম্পরারি এমন আরেকটা ছবির কথা বলতে হয়, তবে জুলিও মেদেমের রুম ইন রোম ছবিটার কথা বলতে হয়। সেখানেও ভালোবাসার এমন স্বরূপ উদ্ঘাটন করা হয়েছে। জুলিও মেদেম তাঁর রুম ইন রোম ছবিটি বানিয়েছেন ২০১০ সালে আর ব্ল্যাকআউটের নির্মাতা ছবিটি বানিয়েছেন ২০০৬ সালে, তাও আবার ডিজিটাল টেকনোলজিতে। এখানে নির্মাতার সাহসের প্রশংসা করতেই হয়। রুম ইন রোমে ভালোবাসার সুন্দর এক রূপ দেখানো হয়েছে লেসবিয়ানিজমের মাধ্যমে, আর ব্ল্যাকআউটে কি আছে গে-ইজম? না অন্যকিছু?
ব্ল্যাকআউট ছবিটি কি এদেশের পলিটিক্সকে স্পর্শ করে যায়? নাকি যায় না? মাদল, রাফি বা ব্ল্যাকআউটের অন্যান্য চরিত্র, তারা কি পলিটিক্স নিয়ে আদৌ ভাবে? রাফি আর মাদল তো নিজের সঙ্গে নিজেরা যুদ্ধ করেই সময় পায় না, অন্য কিছু ভাবার এত সময় কই? তবে মিটি কিন্তু মডেল হতে চায়, তাও আবার পেইন্টিংয়ের মডেল কিন্তু নয়, বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল। সবাই তো আর ফাতেমা না। ফাতেমাকে নিয়ে আবার একটি ছড়া মনে পড়ে গেল –
ভালোবাসা মিছে
ঘুরি তোমার পিছে
তোমার চেয়ে ফাতেমা ভালো
রাফির কাছে মাদলই ভালো।
যাই হোক মিটি হতে চায় প্রোডাক্ট, বিকোতে চায় নিজেকে। কিন্তু কথা হলো, এই প্রোডাক্ট হতে তাকে পরোক্ষভাবে কে পেছন থেকে সামনে ঠেলে দেয়? এই গ্লোবালাইজেশনের যুগে নারীকে কীভাবে উপস্থাপন করা হয়? এছাড়া রাফি ও দাদুর কথোপকথনে দাদু পরোক্ষভাবে জানিয়ে দেয় সমাজে তার অবস্থান। একই সঙ্গে নির্মাতা নিজেকে অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবেও উপস্থিত করেছেন এ-ছবি নির্মাণের মধ্য দিয়ে। ফাহমিদুল হক তাঁর বাংলাদেশের ডিজিটাল চলচ্চিত্র বইয়ে তারেক মাসুদের উদ্ধৃতি দিয়েছেন – ‘থার্ড ওয়ার্ল্ডের একজন ক্রিয়েটারকে একই সঙ্গে অ্যাক্টিভিস্টও হতে হয়, কারণ অনেক কিছুই এখানে রেডি নেই।’ সেই অ্যাক্টিভিস্ট চরিত্রে নির্মাতা আক্রমণ করেছেন সামাজিক ট্যাবুকে। তাঁর দুই চরিত্র রাফি ও মাদল এরা ঠিকমতো বাড়িভাড়া দিতে পারে না। খুব একটা সচ্ছল পর্যায়ে নেই, তবু তারা দ্বারস্থ হয় না কোনো প্রতিষ্ঠানের; নিজেদের জগৎ নিয়ে, নিজেদের কাজের মাধ্যমে তারা এগিয়ে যায় একধরনের প্রতিষ্ঠানহীনতার দিকে।
ব্ল্যাকআউট কি বর্তমান সময়ের পালস ধরতে পেরেছে? এই উত্তর-আধুনিককালে জীবনব্যবস্থা কী রকম? যান্ত্রিক, না অযান্ত্রিক? ঋত্বিক কুমার ঘটক তাঁর অযান্ত্রিক (১৯৫৮) চলচ্চিত্রটি বানিয়ে যান্ত্রিক সময়কে ভেংচি কেটেছেন। যদি বলা হয়, ব্ল্যাকআউট ছবির নির্মাতাও তাই করেছেন তাঁর ছবির মাধ্যমে, তবে কি তা বাড়িয়ে বলা হবে? ব্ল্যাকআউট ছবিতে দেখা যায়, মাদল ও রাফির চিলেকোঠার বাসায় বাবুইপাখির বাসা, তারা থাকে মেঘের রাজ্যে, দেয়ালে মরা ফড়িং লাগিয়ে রাখে যন্ত্রদানবের আগ্রাসন বোঝাতে। এই ছবিতে বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহারের আধিক্যকেও তুলে ধরা হয়েছে। তরুণ সমাজ মোবাইল ফোনকে কীভাবে ব্যবহার করছে তাও দেখানো হয়েছে। এছাড়াও সাউন্ড ও লাইটিংয়ের ব্যবহারের মাধ্যমেও নির্মাতা বলেছেন, জ্যাঁ জ্যাক রুশোর মতো তিনিও এই বর্বর যান্ত্রিকতাকে গ্রহণ করতে পারেন না। তাই তো আউটডোরের দৃশ্যে এই যান্ত্রিকতার নয়েজ প্রকট হয়ে ধরা পড়ে। যখন এই ইট-কাঠ-কংক্রিটের শহর ঢাকাকে তিনি দেখান তাঁর ফ্রেমে, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজে – ‘সময় কেনো এতো বড়ো/ মুহূর্ত কেনো এতো ফাঁকা…।’
এই হাহাকার কিসের জন্য? তখন আরো প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয়, কেনইবা মাদলের রাতদেখা রোগ সারে না? কেনইবা তার শৈশবের বাউল আর ফিরে আসে না, শোনায় না আর সে তার সেই অদ্ভুত পুরনো সুর? আর কেনইবা লাভবার্ড বন্দি থাকে খাঁচায়? ব্ল্যাকআউট ছবিটিতে নিঃসঙ্গতাকে ধরতে পারারও একটি ব্যাপার রয়েছে। তাই তো পাশের বাড়ির বালিকাও তার নিঃসঙ্গতা কাটাতে মাদলের সঙ্গে তার সময়কে ভাগ করে নেয়। আর কবি আবুল হাসান বোধহয় ওই বালিকাটির জন্যই তার ‘নিঃসঙ্গতা’ কবিতাটি লিখেছেন – ‘অত কিছু চায়নি বালিকা/ অত শোভা, অত স্বাধীনতা/ চেয়েছিল আরও কিছু কম…/ একটি জলের খনি/ এনে দিক তৃষ্ণা এখনি/ একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী’।
এই চলচ্চিত্রে রঙের ব্যবহারকে কীভাবে পাই? ছবির বেশিরভাগ জুড়েই আছে মাদল ও রাফির অবদমিত কামনা-বাসনার চিত্রায়ণ। আমাদের কালচারে লাল রং কিন্তু কামনার রং হিসেবে বিবেচিত হয়। এবং একজন বিবেচক শিল্পী হিসেবে ব্ল্যাকআউটের নির্মাতা রঙের সদ্ব্যবহারই করেছেন। কামনা যখন তুঙ্গে, তখন দেখি লাল রঙের টোন। আবার লালের পরে নীলকে খুঁজে পাই ভালোবাসা প্রকাশে। এই ছবিতে রয়েছে লাল রঙের ছড়াছড়ি। মিটির পোশাকে লাল রঙের আধিক্য, মাদলও পরে লাল রঙের ধুতি, শাল্মলীর পোশাকও থাকে লাল রঙের, আবার যখন মাদল ও রাফি বলনৃত্য করে, তাদের পেছনের ক্যানভাসের রংও থাকে লাল। জয় হোক লালের, জয় হোক ব্ল্যাকআউটের।
ব্ল্যাকআউট কি একটি সুররিয়ালিস্ট ফিল্ম? আর সুররিয়ালিস্ট হলোই বা কেন? এখনকার সময়ে সুররিয়ালিস্ট ট্রিটমেন্ট কী দরকার? ব্ল্যাকআউটের মূল চরিত্র মাদল ও রাফি বাস্তব ও পরাবাস্তব অবস্থার মধ্যে দোদুল্যমান। কখন যে তারা বাস্তবে অবস্থান করে আর কখনই যে বা স্বপ্নে চলে যায়, মাঝে মাঝে তার খেই হারিয়ে ফেলতে হয়। সুররিয়ালিস্টের এমন চমৎকার ও ব্যাপক ট্রিটমেন্ট বোধকরি আমাদের দেশে অন্য কোনো চলচ্চিত্রে করা হয়নি। কনটেম্পরারি দুটি চলচ্চিত্রে যেমন থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার ও গেরিলাতে ক্ষুদ্র চেষ্টা করা হয়েছিল; কিন্তু ব্ল্যাকআউটে সালভাদর দালির ‘গলিত সময়’কে যেভাবে ধরা হয়েছে, আমাদের দেশের কনটেম্পরারি অন্য কোনো ছবি তার ধারেকাছেও নেই। ঘুরেফিরে আবার সে-প্রশ্ন, পরাবাস্তবতার এতো দরকার কী? বোধহয় দরকার আছে, না হলে মাদল ও রাফির জন্য এ-সময়ে, এ-সমাজে টিকে থাকা খুবই কষ্টকর হতো।
সংগীতের ব্যবহার কি এ-ছবিতে নতুন কোনো মাত্রা যোগ করেছে? সংগীতের মাধ্যমে কি সময়কে ধরার চেষ্টা আছে? সংগীত ও ছবির সমন্বয়ই বা কতটুকু হয়েছে? ব্ল্যাকআউটে সংগীতের ব্যবহারে আছে অভিনবত্ব, আছে সময়কে ধরার চেষ্টা। সংগীতের ব্যবহার এ-ছবিকে দ্যোতনাময় করে তুলেছে। অর্ণবের কণ্ঠে যখন ‘সময় সবুজ ডাইনি’ শুনি তখন যেন মনের ভেতর সবচেয়ে কনিষ্ঠতম জানালার পাল্লাটাও দমকা হাওয়ায় বাড়ি খেয়ে যায়। কানে বাজে এক অতিপরিচিত সুর এক অপরিচিত ঢঙে। কিংবা কফিল আহমেদ যখন গায় ‘আগুনে খাই আগুনে ঘুমাই’ আবার আজারবাইজান-ইরানিয়ান সংগীতশিল্পী আশিক হাসান ইস্কান্দারের মিউজিকের আর্তি অথবা ডন ম্যাককিলনের ভ্যান গঘের জন্য গান ‘স্ট্যারি স্ট্যারি নাইট’ ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজে তা ওইসব মুহূর্তকে মুহূর্তেই বিমূর্ত করে তোলে।
এই ছবিতে নির্মাতা কীভাবে চিত্রকলাকে ব্যবহার করেছেন? ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড, ফোরগ্রাউন্ড, টাইটেলে চিত্রকলার ব্যবহারে রয়েছে প্রাচুর্য। অনেক সময় চিত্রকলাই যেন এই ছবির একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে ওঠে। অনেক স্পর্ধার সঙ্গে নির্মাতা ব্যবহার করেছেন ভ্যান গঘ, সালভাদর দালি, পাবলো পিকাসো, লিওনার্দো দ ভিঞ্চির সব মাস্টারপিস। আপেল ও আঙুরকে ব্যবহার করেছেন স্টিললাইফ হিসেবে, সময়ের জড়তার মতো করে। নির্মাতার এ-স্পর্ধাকে নিঃসন্দেহে স্যালুট করা যায় তাঁর এমন সাবলীল উপস্থাপনার জন্য।
ব্ল্যাকআউট ছবিতে ঘোড়ার ছড়াছড়ি। ইমেজে ঘোড়া, সাউন্ডে ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনি, বাসার কলিংবেলেও হ্রেষাধ্বনি, ডায়ালগে আবার ঘোড়া। ঘোড়াকে এখানে ব্যবহার করা হয়েছে তারুণ্যের রূপে, গতির রূপে, শৌর্যের রূপে। ছবির এন্ডিং টাইটেলে দেখা যায়, একটি ঘোড়া নেমে আসছে উপত্যকা থেকে, এ যেন গ্যেঁটের সেই সাদা ঘোড়া। শুধু ঘোড়াই নয়, ঈগলকেও এ-ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে রূপকার্থে। এ যেন মৃত সময়েরই প্রতিচ্ছবি। অদ্ভুত মেটাফোর চাঁদ ঢেকে যাচ্ছে ঈগলের পাখার নিচে। এই ঈগল কিসের প্রতীক?
ব্ল্যাকআউট ছবির দুই প্রধান চরিত্র হচ্ছে মাদল ও রাফি। এ-দুজনের জীবনের একটা অংশের চিত্রায়নই এ-ছবির মূল উপপাদ্য। এ-ছবিতে নারীর অবস্থান কোথায়? এ-ছবির মূল দুই নারী চরিত্র হচ্ছে মিটি ও শাল্মলী। দুজনের মধ্যে মিটি নিজেকে সবসময় সাজিয়ে-গুছিয়ে ম্যানিকুইনি করে রাখে। মিটির অবস্থান থেকে মিটিকে ঠিক রাফির প্রেমিকা হিসেবেও পাওয়া যায় না। তার একটাই স্বপ্ন, সে হতে চায় প্রোডাক্ট। শেষ পর্যন্ত সে-গগাঁর তাহিতি থেকে বালিদ্বীপে উড়াল দেয় শুটিংয়ের জন্য। আর শাল্মলীকে পাওয়া যায় শুধু মাদলের স্বপ্নে, তাও আবার সে চেহারা মনে করতে পারে না, তার প্রেমিকা রূপে। সে প্রেমের দেবী ভেনাস। এখন মাদল ও রাফি নারীকে কীভাবে দেখে? দুজনের দৃষ্টিতেই নারী প্রেমিকা। তাই তো মাদল ও রাফি তাদের সংলাপের মাধ্যম জানান দেয় – ‘মধ্যরাতে হিটলারকে কমান্ড করত ইভা ব্রাউনের স্তন।’
মাদল ও রাফি দুজনেই নারীকে প্রেমিকা হিসেবে পেতে চায়। এ প্রেম কি শুধুই জৈবিক প্রেম? তাহলে নারী কি শুধুই কামনার বস্ত্ত? ব্ল্যাকআউট কি নৈরাশ্যবাদী চলচ্চিত্র নাকি আশাজাগানিয়া চলচ্চিত্র? মাদল ও রাফি তারা দুজন ছবির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটা ঘোরের মধ্যে থাকে। একজন খোঁজে শাল্মলীকে, আরেকজন মিটির পেছনে ছুটে বেড়ায়। কিন্তু শেষে তারা সেই ঘোর থেকে বের হয়। একদিনের মধ্যেই রাফি ভুলে যায় মিটিকে। মাদল ও রাফির কাছে আগের সবকিছুই ব্ল্যাকআউট হয়ে যায়। তারা নিজেদের নিয়ে নতুন তাড়নায় মেতে ওঠে। এমন সময় চলচ্চিত্রকার দেখান নতুন সূর্যোদয় স্টিল ফটোগ্রাফির মাধ্যমে। ছবির শুরু থেকেই মাদলকে বিষাদগ্রস্ত দেখা যায়। এমনকি সে কফিল আহমেদকে বলেও যে, তার কিছুই ভালো লাগে না। কিন্তু ছবির শেষে এসে যেন তার চেহারায় সেই আগের মতো বিষণ্ণতাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। ছবির একেবারে শেষে মাদল ও রাফির মস্তিষ্ক থেকে সব ভ্যানিশ হয়ে যায়, সব ব্ল্যাকআউট।
ব্ল্যাকআউটে কি কনভেনশনাল ন্যারেশনে গল্পে বলা হয়? ব্ল্যাকআউটে কি জীবনকে সরলরৈখিকভাবে দেখা হয়? রাফি এবং মিটি যখন স্কাল্পচার এক্সিবিশনে থাকে, তখন মিটির কথার প্রত্যুত্তরে প্রত্যেক আর্টিস্টকে শিশু হিসেবে অভিহিত করে। শিশুদের আচরণ হয় শিশুসুলভ, থাকে সরলতা। ব্ল্যাকআউটে নির্মাতা আনকনভেনশনাল ন্যারেশনে সরলভাবে কি সময়কে তুলে ধরতে পেরেছেন? সহজ কথা যায় না বলা সহজ করে – শিল্পীরাই পারেন এই অসাধ্য সাধন করতে। ব্ল্যাকআউটে নির্মাতা কতটা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই না একে একে সামনে তুলে আনেন ফ্রয়েড, ভ্যান গঘ, দালি, আহমদ ছফাকে। আমাদের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে আহমদ ছফার প্রয়োজন – নির্মাতা শুধু সাবটাইটেলে একটি শব্দের মাধ্যমে তা বুঝিয়ে দেন। নির্মাতার আনকনভেনশনাল ন্যারেশনে পাই অনেক এক্সট্রিম ক্লোজআপ শট। নির্মাতা কি এসব শটের মধ্য দিয়ে মানুষের ভেতরের সত্তাকে তার মৌখিক অভিব্যক্তি দিয়েই প্রকাশ করতে চেয়েছেন?
ব্ল্যাকআউট কি অটোবায়োগ্রাফিক্যাল সৃষ্টি হতে পারে? এর নির্মাতা টোকন ঠাকুর ব্যক্তিজীবনে একজন কবি ও চিত্রশিল্পী। তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ব্ল্যাকআউট। এই ব্ল্যাকআউটে মূল দুটি চরিত্রের একজন কবি ও আরেকজন চিত্রশিল্পী। শিল্প, জীবন ও সমাজকে নির্মাতা যেভাবে দেখেন, সেভাবেই যেন পোর্ট্রেট করেছেন তাঁর প্রথম চলচ্চিত্রে। ব্ল্যাকআউট দেখে মনে হয়, আমি যেন সংগীতের দ্যোতনার ঘোরে পড়ছি। আবার কখনো মনে হয়, এটা যেন কবিতা নয়, পেইন্টিং। কিন্তু সবশেষে সবকিছু ছাপিয়ে ব্ল্যাকআউট আক্ষরিক অর্থে হয়ে ওঠে আমাদের দেশে নতুন ধারার একটি চলচ্চিত্র।
আমাদের এই বর্তমান সময়ে ব্ল্যাকআউটের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? ব্ল্যাকআউট ছবিটি ডিজিটাল টেকনোলজিতে তৈরি। ছবিটি কেন ডিজিটাল প্রযুক্তিতে তৈরি তা নিয়ে বাহাস উঠতে পারে। কারা ডিজিটাল ছবি তৈরি করবেন? কেন করবেন? ডিজিটাল চলচ্চিত্র সম্পর্কে ২০০৩ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে একটি সেমিনারে সামিরা মাখমলবাফ বলেছেন – ‘সিনেমাকে সবসময় রাজনীতির কৃপায় চলতে হয়েছে, বিশেষ করে পূর্বে, পশ্চিমে দারস্থ হতে হয়েছে পুঁজির, আর পৃথিবীর বাদবাকি জায়গায় মনোযোগ দিয়েছে সৃষ্টিশীলতার দিকে। এই বিংশ শতকে সর্বত্র শক্তির খামখেয়ালি প্রদর্শনীতে একজন শিল্পীর স্বাতন্ত্র্য আর সৃজনশীলতা ভুগেছে বেশি পরিমাণে। একবিংশ শতকে প্রবেশের আগে পরিস্থিতি আমূল বদলে গেছে প্রযুক্তির আশ্চর্যজনক আবিষ্কারে; সময় আসছে যেখানে, শিল্পীরা পেয়ে যাবে সব বাধাকে অতিক্রম করার রসদ। নিকট ভবিষ্যতে ক্যামেরা কাজ করবে কলমের মতো করে আয়েশিভাবে। এটি চলে আসবে শিল্পীর সম্পূর্ণ অধিকারে, তার হাতের তালুর মধ্যে।’
ফাহমিদুল হক তাঁর বই বাংলাদেশের ডিজিটাল চলচ্চিত্রে ডিজিটাল চলচ্চিত্রের সম্ভাবনায় এর নন্দনতাত্ত্বিক ও ব্যয় সুবিধাকেই মোটা দাগে উল্লেখ করেছেন। ব্ল্যাকআউটের নির্মাতা যেন এই সুবিধাকেই ব্যবহার করেছেন দক্ষ হাতে। আমাদের সমাজ কতটুকু প্রস্ত্তত এ-ছবিটা গ্রহণ করতে? আদৌ গ্রহণ করা উচিত কিনা? এই ছবিতে সেক্সারসাইজ করা দরকার কিনা সে-ব্যাপারে মাদল রাফিকে একটা প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। এ-প্রশ্নটা আসলে কাকে করা? রাফিকে, না আমাদের সোসাইটিকে? বার্ট্রান্ড রাসেল তাঁর বিবাহ ও নৈতিকতা বইয়ে সেক্সের শিক্ষার প্রসঙ্গ বিষয়ে যে-আলোচনা করেছেন, ব্ল্যাকআউট ছবির নির্মাতা সেক্সারসাইজ শব্দটি দিয়ে সে-প্রসঙ্গকে কি আরেকবার উস্কে দিতে পারেন না?
সব ধরনের দর্শক কি ব্ল্যাকআউট দেখতে পারবে? ব্ল্যাকআউট ছবিটিতে নির্মাতা যেসব বিষয় যেভাবে ডিল করেছেন, তাতে মনে হয় না সমাজকে বিচ্ছিন্নভাবে ঠুনকো একটি ধাক্কা দেওয়ার জন্য তিনি তাঁর এত মেধা খরচ করেছেন। তিনি চাইলে ছবির বিষয়গুলো আরো অনেক বেশি উন্মুক্তভাবে প্রকাশ করতে পারতেন। কিন্তু বোধহয় তিনি অবদমনকে অবদমনের স্তরে রেখেই প্রকাশ করেছেন তাঁর ছবির বিষয়, এর পেছনে বোধহয় দর্শকদের কথাও মাথায় ছিল। এখানে তারেক মাসুদের একটি উদ্ধৃতি দেওয়ার লোভ সামলাতে পারছি না। এই উদ্ধিৃতিটিও ফাহমিদুল হকের বাংলাদেশের ডিজিটাল চলচ্চিত্র বইটি থেকে নেওয়া। উদ্ধিৃতিটি হচ্ছে – ‘সমাজে যা ঘটছে তার জন্য তখন আমাকে রিঅ্যাক্ট করতে হচ্ছে না। আই উড বি অ্যা হ্যাপিয়েস্ট পারসন। এরকম একটা এক্সপেনসিভ মাধ্যমে ওই ধরনের পারসোনাল ছবি বানানো আমি কতটা অ্যাফোর্ড করতে পারি? এটা আরেকটা চ্যালেঞ্জ আমি দেখতে পাচ্ছি। নেহায়েত মাস্টার প্রবেশনাল প্র্যাকটিস হিসেবে সেলফ অবসেশনটা এক্সপ্রেস করছি… আমার বিকলন, আমার ইন্ডিভিজুয়াল সাবজেক্টিভ ক্রাইসিস, ডিসপেয়ার – এসবের দিকে আমিও যেতে চাই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারি না। আমি ভাবি যে, আই হ্যাভ সার্টেন অবলিগেশন। এটা হয়তো একসময় দরকার হবে না।’ তারেক মাসুদ হয়তো তাঁর ভবিষ্যতের কোনো চলচ্চিত্রের বিষয় হিসেবে এ-বিষয়গুলো তুলে ধরতেন। এটা তাঁর দর্শনের ব্যাপার। কিন্তু টোকন ঠাকুর এ-চ্যালেঞ্জটাকে যেন আগেই গ্রহণ করে নির্মাণ করেছেন ব্ল্যাকআউট। নির্মাতার সাহস আছে বটে! এবার সবাই ছবি দেখুক। যে বোঝে নিজ দায়িত্বে বুঝুক আর যে বুঝবে না তার জন্য – ‘ঘোড়ায় পাড়ে ডিম/ সেই ডিমের আইসক্রিম/ যে খায় তার মাথায় ধরে/ এরেই বলে ড্রিম কিংবা ঝিম…।’
ব্ল্যাকআউট কি সেন্সরের সনদ পাবে, নাকি পাবে না? এবার সেন্সরের বিষয় একটা কেসস্টাডি দিয়ে শুরু করি। কেসস্টাডিটি ধার নেওয়া। নির্মাতা মানজারেহাসিন মুরাদ চলচ্চিত্র পত্রিকা ম্যুভিয়ানার প্রথম সংখ্যায় ডিজিটাল চলচ্চিত্রবিষয়ক একটি প্রবন্ধে এই কেসস্টাডিটির ওপর আলোকপাত করেছেন। প্রাসঙ্গিকভাবেই কেসস্টাডিটি এখানে তুলে দিচ্ছি –
আশির দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক সাড়াজাগানো মামলা হয়। মামলাটি সে-দেশের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। মামলাটি ছিল একটি চলচ্চিত্রকে নিয়ে। চলচ্চিত্রটিতে নর-নারীর যৌন কর্মকান্ডের খোলামেলা দৃশ্য অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে যে-অঙ্গরাজ্যে চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছিল সে-রাজ্যের চলচ্চিত্র রেটিং বোর্ড ছবিটিকে পর্নোগ্রাফি ফিল্ম হিসেবে রেটিং করেছিল। ছবিটির পরিচালক-প্রযোজক বোর্ডের এ-সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে সেই অঙ্গরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন। সেখানেও বিচারক পরিচালক-প্রযোজকের বিপক্ষে রায় দেন। অনন্যোপায় পরিচালক দেশটির সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হন। নাটকীয়ভাবে তিনি বিচারকদের বেঝাতে সমর্থ হন যে, দর্শকের মনে যৌন উত্তেজনা জাগ্রত করতে বা দর্শকের এ-ধরনের দৃশ্য দেখার আকাঙ্ক্ষাকে প্রশমিত করতে অথবা কোনো কোনো কূট বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য হাসিলের মানসে নয়, ছবিটির বিষয়, বিষয়ের উপস্থাপনা এবং চলচ্চিত্র কাঠামোর গরজেই তিনি এ-ধরনের দৃশ্য পরিকল্পনা করেছেন, যা তাঁর মতে যৌক্তিক। ছবিটিকে পর্নোগ্রফি ফিল্ম হিসেবে রেটিং না করে স্বাভাবিকভাবে রেটিং করতে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিলে সাংবাদিকরা তদানীন্তন প্রধান বিচারপতিকে প্রশ্ন করেন – এ-ছবি যদি পর্নোগ্রাফি না হয়, তাহলে কোন ছবিকে পর্নোগ্রাফি বলবেন? জবাবে বিচারক মহোদয় যা বলেছিলেন তার সারাংশ হচ্ছে : কোন ছবি পর্ণোগ্রাফি, কোনটি নয়, তা কোনো নীতিমালায় ফেলে বিচার করা শক্ত। মানুষের যৌক্তিক আচরণের স্বাভাবিক প্রকাশের যে-অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে তার আলোকেই এ-জাতীয় বিষয়ের বিচার করাটা জরুরি। আর সেটা যদি আমরা করতে পারি, তাহলে আমাদের কোনো আইন বা নীতিমালার প্রয়োজন হয় না। অতএব দায়িত্ব এবার সেন্সর বোর্ডের।
এবার নতুন চলচ্চিত্রের প্রসঙ্গ। আইজেনস্টাইন নতুন সিনেমা সম্পর্কে বলেছেন, নতুন সিনেমাকে আক্ষরিক অর্থেই নতুন বিষয় তুলে আনতে হবে। পুরনো বিষয়কে নতুন করে তুলে আনা নতুন সিনেমা নয়। নতুন সিনেমা হবে নতুন বিষয়ে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ব্ল্যাকআউট সে-অর্থে নতুন সিনেমাই। এ-ছবিতে আর্টের যেসব ফর্ম নিয়ে নিরীক্ষা করা হয়েছে, এ-ছবির আগে আমাদের এখানে অন্য কোনো ডিজিটাল ছবিতে এত নিরীক্ষা হয়নি। গ্রাফিক্স, স্টিল ফটোগ্রাফ, পেইন্টিং, সুররিয়ালিজম এসব ব্যাপার আমাদের এখানে এর আগে কোনো ডিজিটাল ফিল্মে এত ব্যাপকভাবে কোনো নির্মাতা ব্যবহার করার সাহস দেখাননি।
এবার শিরোনাম প্রসঙ্গ। ব্লাকআউট যে নতুন ধারার চলচ্চিত্র তা আগেই উল্লেখ করেছি। আবার এ-ছবিটা একটা কবিতাও। শতবর্ষের চলচ্চিত্র বইয়ে ফিল্মের মধ্যে কবিতা প্রবন্ধে শঙ্খ ঘোষ লিখেছেন – ‘যা কিছু আমাদের আচ্ছন্ন করে দেয়, তার সঙ্গে কবিতা বা গানের তুলনা করার একটা অনায়াস অভ্যাস আমাদের আছে। কোনো কোনো গদ্য লেখা পড়ে আমরা বলে উঠি অনেক সময়ে কবিতার মতো।’ ব্ল্যাকআউটকে আমার তেমনি মনে হয় একটি কবিতা। শব্দ ও ছবি দিয়ে যেন নির্মাতা তৈরি করেছেন লিরিকের পর লিরিক। শঙ্খ ঘোষ আরো লিখেছেন – ‘শব্দ দিয়ে ছবি তৈরি করে কবিতা। ছবি দিয়ে শব্দ তৈরি করে ফিল্ম। কবি যদি যোগ্য হন তাঁর ব্যবহৃত শব্দের ভিতর দিয়ে ছবিটিকে ঠিক-ঠিক দেখতে পান পাঠক, প্রায় ছুঁতে পান যেনো।’ নির্মাতা টোকন ঠাকুর যেন সেই যোগ্য কবির মতোই দৃশ্য রচনা করেছেন তাঁর ব্ল্যাকআউটে। ব্ল্যাকআউট হয়ে ওঠে নতুন চলচ্চিত্রের প্রথম কবিতা।
যে-গাই দুধ দেয়, তার লাথি খেতেও খারাপ লাগে না। ব্ল্যাকআউটে মিটি তার অভিনয়-দক্ষতা দিয়ে উতরে যেতে পারেননি। কিছু এক্সট্রিম ক্লোজআপে তার মৌখিক অভিব্যক্তি নীরস মনে হয়েছে। ছবিতে একপর্যায়ে রাফি ধ্রুব এষের বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে দেখা যায়; কিন্তু পরের শটেই আবার দেখা যায় সে ধ্রুব এষের সঙ্গে কথা বলছে। এখানে অনেকের মনে হবে এডিটিংয়ে ভুল রয়েছে, কিন্তু এ-দৃশ্যকে কি এভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না যে, নির্মাতা শট ডিভিশনেও একটা নিরীক্ষা করতে চেয়েছেন? তিনি সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী না গিয়ে একটু ভিন্নভাবে, ভিন্নপথে হেঁটেছেন? আর এজন্যই কি রাফি ধ্রুব এষের বাসা থেকে বেরিয়ে ঠিক তাই ভাবছিল যা ধ্রুব এষের বাসায় ঘটেছে। এটা কি আসলে এডিটিংয়ে ভুল, নাকি নির্মাতার ইচ্ছে করে রাখা? নাকি নতুন কোনো নিরীক্ষা?
আমি খুঁজি, তুমি খোঁজ, আমরা খুঁজি আমাদের/ কি খুঁজি জানি না, কেনো জানি না, মনে নেই/ কেনো মনে নেই, সেটাই মনে নেই/ ব্ল্যাকআউট সব…/ নতুন করে খুঁজবো, কি খুঁজবো/ ভালোবাসা।
ব্ল্যাকআউট ছবিতে রণজিৎ দাশের একটি কবিতার পাঁচটি লাইন ব্যবহার করা হয়েছে। কবিতাটির নাম সময়, সবুজ ডাইনি। লাইন পাঁচটি হলো – ‘সময়, সবুজ ডাইনি/ পৃথিবীর উপকণ্ঠে থাকো/ নাবিকের হাড় দিয়ে/ সন্ধ্যার উঠোনে তুমি/ ভাঙা জাহাজের ছবি অাঁকো।’
ব্ল্যাকআউট ছবিতে নির্মাতা এই পাঁচটি লাইনকে গান ও কবিতা দুভাবেই ব্যবহার করেছেন। ব্ল্যাকআউটকে লাইনবন্দি করতেই বোধহয় রণজিৎ দাশ এই কটি লাইন লিখেছিলেন। আর এজন্যই মনে হয় মাদলও কবিতাটি খাতা বা এমএস ওয়ার্ডে না লিখে ফটোশপে লেখে।
কলা খাবে, কলা? কী কলা? হরেক রকমের কলা, যে-কলা খেতে চাও। মানে? চিত্রকলা, সংগীতকলা, নাট্যকলা আরো কত… খাবে? খাবো। তবে খাও। কীভাবে? মনে মনে। কীভাবে? মনে মনে, আর মনে মনে না পারলে গাছ লাগিয়ে খাও। কারণ – Art is a good food যদি হজম হয়।
এক পলকে ব্ল্যাকআউট
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা – টোকন ঠাকুর; শব্দ – শায়ান চৌধুরী অর্ণব ও সামির আহমেদ; সংগীত – শায়ান চৌধুরী অর্ণব; ভিডিওগ্রাফি ও সম্পাদনা – সামির আহমেদ; আর্ট ডিরেক্টর – আবদুল হালিম চঞ্চল; অভিনয় - তানভীর হাসান, রাহুল আনন্দ, তিনা, সারা, কফিল আহমেদ, ধ্রুব এষ, বাপ্পী আশরাফ, বর্ষা বিভাবরী, বেলায়েত হসেন, জুয়েনা, ফেরদৌস মিতুল, মমিন আলি মৃধা, বিমল বাউল, এম আজাদ চৌধুরী, আবদুল হালিম চঞ্চল, মোহাম্মদ লাবু মিয়া, প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক, মীর আদনান আলী, আলিফ সানী, তোফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়া, রাজীব আশরাফ, হুমায়ন কবীর, জাহাদুদ্দীন প্রমুখ। সহকারী প্রযোজনা – সাইকেল ফ্রেম, ইনসমনিয়া ও আস্তাবল এবং প্রযোজনা – ভার্মিলিয়ন রেড।
সহায়ক গ্রন্থ
১। চলচ্চিত্র কাগজ ম্যুভিয়ানা, প্রথম সংখ্যা, সম্পাদনায় বেলায়াত হোসেন মামুন।
২। বাংলাদেশের ডিজিটাল চলচ্চিত্র : নতুন সিনেমার সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ, ফাহমিদুল হক।
৩। শতবর্ষের চলচ্চিত্র, সম্পাদনায় নির্মাল্য আচার্য্য ও দিব্যেন্দু পালিত।
৪। বিবাহ ও নৈতিকতা, বার্ট্রান্ড রাসেল।
৫। রুশোর সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট, অনুবাদ সরদার ফজলুল করিম।
৬। গদারবিষয়ক প্রবন্ধের বই, গদার।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.