ভুবন মাঝি : চৈতন্যের গহিনে রেখে যাওয়া প্রশ্নমালা

তারেক আহমেদ

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকেই এদেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয়। যুদ্ধ চলাকালে সে-সময় যুদ্ধ নিয়ে তৈরি হয় চারটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র, যার মধ্যে স্টপ জেনোসাইড বহির্বিশ্বে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা নিয়ে জনমত তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর কাঙিক্ষত বিজয় অর্জনের পরপরই শত্রম্নমুক্ত বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয়, যার ধারাবাহিকতায় তৈরি হয় ওরা এগারো জন, অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, ধীরে বহে মেঘনা, মেঘের অনেক রং, আগুনের পরশমণি, নদীর নাম মধুমতি, গেরিলা, রেইনকোটের মতো চলচ্চিত্রগুলো। এ-ধারার নতুন সংযোজন সরকারি অনুদানে নির্মিত এবং ফখরুল আরেফীন খান পরিচালিত ভুবন মাঝি চলচ্চিত্রটি।

 

সরকারি অনুদানের চলচ্চিত্র নিয়ে দর্শকমনে তেমন কোনো আগ্রহ থাকে না, কারণ কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কেমন যেন একটা দায়সারা ভাব থাকে অনুদানের চলচ্চিত্র নির্মাণে। কিন্তু ভুবন মাঝির জন্য আলাদা একটি আগ্রহ থেকে যায়, কারণ এর আগে নির্মাতা ফখরুল আরেফীন খানের আলবদর প্রামাণ্যচিত্রটি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।

মুক্তিযুদ্ধনির্ভর চলচ্চিত্র হলেও ভুবন মাঝি শুধু মুক্তিযুদ্ধের  প্রেক্ষাপটেই আবদ্ধ থাকেনি, এ-চলচ্চিত্রটির ক্যানভাস ১৯৭০  থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিসত্মৃত। আমরা এই চলচ্চিত্রটিতে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ের গল্পকে চিত্রায়িত হতে দেখি। একদিকে চলে ১৯৭০-৭১ সালের উত্তাল সময়ের গল্প, ঠিক একই সঙ্গে সমান্তরালভাবে চলে ২০০৪ সালে কুষ্টিয়ায় বাউলশিল্পীদের চুল-দাড়ি কেটে দেওয়াকে  কেন্দ্র করে ঘটতে থাকা ঘটনাপ্রবাহ, এবং ২০১৩ সালে আনন্দ সাঁই নামের এক বাউলশিল্পীর মৃত্যুর পর তাঁর দাফনকে কেন্দ্র করে ঘটে চলা রাজনৈতিক আখ্যান। মুক্তিযুদ্ধনির্ভর চলচ্চিত্রে আমরা বেশিরভাগ সময় দেখতে পাই, শুধু সম্মুখসমর এবং নারীদের ওপর যে অমানবিক অত্যাচার করা হয়েছে, সে-গল্পগুলোই বারবার চলচ্চিত্রের পর্দায় উঠে আসে। এর বাইরেও যে অনেক গল্প আছে, সেগুলো আসলে সে-অর্থে আমাদের  দেশের চলচ্চিত্রে চিত্রিত হয়নি। ভুবন মাঝি চলচ্চিত্রটিতে মুক্তিযুদ্ধ কীভাবে নহির এবং ফরিদা নামের দুই অখ্যাত মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে সে-গল্প বলা হয়েছে।

চলচ্চিত্রটির প্রেক্ষাপট শুরু হয়েছে ১৯৭০ সালে। সত্তরের নির্বাচনের কিছুকাল আগে নহির (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) ডিগ্রি পড়তে কুষ্টিয়া শহরে আসেন। দেশজুড়ে তখন চলছে নির্বাচনী হাওয়া এবং বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের লড়াই। তবে এসব নহিরকে স্পর্শ করে না, রাজনীতি নিয়ে তার কোনো আগ্রহ নেই। তার সব আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে থিয়েটার এবং প্রেমিকা ফরিদা (অপর্ণা ঘোষ)। ফরিদা একজন রাজনীতি-সচেতন নারী। তিনি থিয়েটার-পাগল নহিরের হাতে তুলে দেন ছয় দফা দাবির বুকলেট। সময় গড়িয়ে  যেতে থাকে, পরিস্থিতি আরো উত্তাল হয়ে ওঠে। ফরিদা নহিরকে যুদ্ধে যেতে বলে। কিন্তু নহির ভীতুপ্রকৃতির মানুষ, যুদ্ধে যেতে তার ভয় করে। একসময় ফরিদার প্রেরণাতেই নহির যুক্ত হন রাজনীতির সঙ্গে এবং ক্রমেই জড়িয়ে পড়েন যুদ্ধে। ঘটনাচক্রে, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল, মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত গাইবার দায়িত্ব পড়ে নহিরের ওপর এবং সেখানেই তাঁর সুযোগ তৈরি হয় কলকাতায় গিয়ে ‘আকাশবাণী’তে গান গাইবার। নহির কলকাতা যান এবং সেখানে গিয়ে দেখতে পান বাঙালিদের সর্বাত্মক যুদ্ধের প্রস্ত্ততি নিতে। তিনিও যাওয়ার প্রস্ত্ততি নেন এবং যুক্ত হন সশস্ত্র যুদ্ধে। যুদ্ধে যুক্ত হলেও মানবিকতার জন্য মানুষ হত্যা করতে তাঁর হাত কাঁপে। এক পর্যায়ে জানতে পারেন, তাঁর প্রেয়সী ফরিদা ধর্ষিত হয়েছে আসলাম রাজাকারের দ্বারা। পুরো যুদ্ধে গুলি না চালালেও এবার কাঁপা-হাতে গুলি করেন রাজাকার আসলামকে। অন্যদিকে সমান্তরালে এগিয়ে চলে নির্মাতা সোহেলের গল্প। ২০০৪ সালে কুষ্টিয়া গিয়ে যিনি ক্যামেরায় ধারণ করে এনেছিলেন বাউল আনন্দ সাঁইয়ের গল্প। ২০০৪ সালে কুষ্টিয়ায় বাউলদের চুল-দাড়ি কেটে দেয় মৌলবাদীরা। ২০১৩ সালে বাউল আনন্দ সাঁইয়ের মৃত্যুকে ঘিরে ফের শুরু হয় মৌলবাদীদের নানা ষড়যন্ত্র। তিনি যেহেতু গান-বাজনা করতেন এবং গান-বাজনা যেহেতু ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম তাই তাঁর জানাজা পড়তে দেওয়া হবে না বলে দাবি তোলে মৌলবাদীরা।

সমান্তরালভাবে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ের গল্প চলতে থাকলেও একসময় গল্পের সুতো এক হতে থাকে। দেখা যায় নহিরই যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের বাউল আনন্দ সাঁই। যুদ্ধের পর ফরিদা আর কুষ্টিয়া শহরে ফিরে আসেননি, মৌলবাদীদের পেছনে থেকে বাউলদের চুল-দাড়ি কেটে দেওয়ার পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন একাত্তরের রাজাকার আসলাম, যাকে সে-সময় গুলি করা হলেও সৌভাগ্যক্রমে সে বেঁচে যায়।

ভুবন মাঝি যেমন একজন সাধারণ মানুষের বিদ্রোহী হয়ে-ওঠার গল্প, ঠিক তেমনি এটাও আমাদের সামনে তুলে ধরে যে, একদিকে যখন মুক্তিযোদ্ধা বাউলদের চুল-দাড়ি কেটে নেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি তখনো বহাল-তবিয়তে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে স্বাধীন বাংলার মাটিতে।

এ-চলচ্চিত্রের অভিনয় নিয়ে খুব একটা বলার প্রয়োজন নেই। ওপার বাংলায় পরমব্রত অনেক বছর ধরেই নানামুখী চরিত্রে বেশ দাপটের সঙ্গেই অভিনয় করছেন। এপার বাংলায় তাঁর মুক্তিপ্রাপ্ত (অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ভয়ংকর সুন্দর) প্রথম চলচ্চিত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এখানেও তিনি তাঁর প্রতিভার ছাপ রেখেছেন। একজন ভীতু ছেলে থেকে সাহসী মুক্তিযোদ্ধায় যে-রূপান্তর, সেটি তিনি তাঁর অসাধারণ অভিনয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। অন্যদিকে অপর্ণা ঘোষ তাঁর অভিনয়প্রতিভা দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের প্রথমসারির অভিনয়শিল্পী হয়ে উঠেছেন। সুতপার ঠিকানার পর এই চলচ্চিত্রটিতেও তিনি তাঁর নামের প্রতি সুবিচার করেছেন। এর পাশাপাশি মাজনুন মিজান, কাজী নওশাবা, মামুনুর রশীদসহ বাকিরাও তাঁদের নিজ নিজ চরিত্র বেশ ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

তবে একটু আলাদা করেই বলতে হয় এই চলচ্চিত্রের সংলাপের কথা। বর্তমানকালে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যেমন ভালো গল্পের অভাবে ভুগছে, একইভাবে ভুগছে ভালো সংলাপের অভাবে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ভুবন মাঝি। এ-চলচ্চিত্রের সংলাপ বেশ বলিষ্ঠ ও সাবলীল। কোনো জায়গায় সংলাপ আরোপিত বলে মনে হয়নি। কিছু সংলাপ তো মনে থাকবে অনেকদিন। যেমন, গড়াই নদীর তীরে বসে ফরিদাকে নহিরের বলা – ‘মরতে খুব ভয় করে ফরিদা। যেখানে কিছু নেই, সেখানে যেতে আমার ইচ্ছে করে না’; ফরিদাকে নহিরের চিঠিতে লেখা – ‘এই প্রথম মনে হলো বাংলা আমার দেশ। এই পতাকা আমার’; কিংবা নহিরকে বলা ফরিদার – ‘দেশের এরকম অবস্থায় বীররা যদি এরকম রেললাইনের উপর বসে থাকে তাহলে চলবে?… বীরদের লড়াই করতে হবে’।

গান এবং আবহসংগীত বেশ মানানসই। কলকাতার  দোহার ব্যান্ডের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী কালিকাপ্রসাদ এ-চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার চার দিনের মাথায় গত ৭ মার্চ তিনি ভারতের বর্ধমানে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এ-চলচ্চিত্রের ‘আমি তোমারই নাম গাই’ গানটি ইতোমধ্যে মানুষের মুখে মুখে ফিরছে। গানটির কথা, সুর ও সংগীতায়োজন করেছিলেন কালিকাপ্রসাদ। এ ছাড়া পরমব্রতের কণ্ঠে ‘পদ্মা নদীর নৌকা ভিড়ল হুগলী নদীর চর’ গানটিও চলচ্চিত্রের আবহের সঙ্গে বেশ মানানসই হয়েছে।

চলচ্চিত্রের দৃশ্যধারণও ছিল বেশ দৃষ্টিনন্দন। রানা দাশগুপ্ত বেশ দক্ষভাবেই তাঁর ক্যামেরায় চিরসবুজ বাংলার মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য  শৈল্পিকভাবে তুলে ধরেছেন।

চাঁদেরও কলঙ্ক আছে বলে একটি কথা প্রচলিত আছে। ভুবন মাঝির ক্ষেত্রেও এ-কথাটি প্রযোজ্য। ভালো গল্প, অভিনয়, সংলাপ, সংগীত, দৃশ্যধারণ সবকিছুর পরও কোথাও যেন একটা ‘নেই’ সুর ধ্বনিত হয়েছে। প্যারালালি ভিন্ন ভিন্ন সময়ের গল্প বলা চলচ্চিত্রের  ক্ষেত্রে খুবই কঠিন বিষয়। আমাদের দেশের চলচ্চিত্রে আমরা এ-ধরনের ফিল্ম ট্রিটমেন্ট খুব একটা দেখি না। পরিচালক এ-বিষয়ে এই ছবিতে উতরে যেতে পারলেও প্রথমদিকে বিচ্ছিন্নভাবে তিনটি ভিন্ন সময়ের গল্প বলার মাঝের ট্রানজিশনগুলো অনেক জায়গাতেই খাপছাড়া বলে মনে হয়েছে। এ ছাড়া পর্দায় যখন ভিন্ন সময়ের গল্প  দেখতে পাই, তখন নিচে সময় এবং স্থান দেখিয়েছেন। যতবার সময়ের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন, ঠিক ততবার তিনি নিচে লেখাটি  দেখিয়েছেন – এটি একটু অতিরিক্ত মনে হয়েছে। প্রথম দু-একবার দেখানোর পর চরিত্রগুলো পরিচিত হওয়ার পর আমার মনে হয় না আর কোনো প্রয়োজন ছিল বরং বারবার দেখানোটা চোখে লেগেছে। শিল্প-নির্দেশনা এবং কস্টিউম এই দুটি বিষয়েই বেশ ঘাপলা  চোখে পড়েছে। প্রায় প্রতিটি দৃশ্যে, এমনকি যুদ্ধ চলাকালেও, পরমব্রতের গায়ে ঝকঝকে পোশাক বেশ দৃষ্টিকটু লেগেছে; দেয়াল লিখনের ফন্ট দেখেও সে-সময়ের লেখার ফন্টের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। অর্থের অপ্রতুলতার কারণে হয়তো অনেক কিছু সাধ থাকলেও সাধ্য ছিল না পরিচালকের পক্ষে, তবু উদ্বাস্ত্ত শিবিরে রেডক্রসের মাত্র তিনটি তাঁবু দেখিয়ে এর বিশালতাটিই নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। আবার একইভাবে, নহির যখন বাসার ছাদে দাঁড়িয়ে নদীর ওপারের দাঙ্গা দেখছিল, সে-দৃশ্যটিও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠেনি। ‘শ্যালো ডেফত অব ফিল্ড’ দিয়ে নদীর ওপার যতটাই ব­vর রাখা হোক না কেন, জ্বলন্ত অগ্নিকু-গুলো যে ঘরবাড়ির আকারের হয়ে ওঠেনি  সেটা দর্শকচোখকে ফাঁকি দিতে পারেনি। তাছাড়া কখনো অভিনয়শিল্পীর স্বল্পতা, কখনো আয়োজনের স্বল্পতাসহ নানাবিধ দুর্বলতা ঢাকতে আলো কমিয়ে  দৃশ্যধারণ করা হয়েছে, যা বৃথা প্রয়াস বই কিছু নয়। তবে ভুবন মাঝির সবচেয়ে বড় যে-দুর্বলতা তা বোধহয় চলচ্চিত্রটির অতিমাত্রায় থিয়েট্রিক্যাল হয়ে যাওয়া। মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহ চিত্রের অতিক্ষুদ্র অংশই দেখানো হয়েছে। অধিকাংশ বিষয়ই দু-চারটা সংলাপ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। একইভাবে আরো অনেক বিষয়ই সংলাপ দিয়ে পার করে দেওয়ার একটা প্রয়াস লক্ষ করা যায় এই চলচ্চিত্রটিতে।

যে-কোনো ধরনের ঐতিহাসিক চলচ্চিত্র নির্মাণ সবসময় একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। ইতিহাস বিকৃত করা বা স্পর্শকাতর বিষয়কে সঠিকভাবে উপস্থাপন না করতে পারার একটা চ্যালেঞ্জ সব সময় তাড়া করে বেড়ায়। এদিক দিয়ে পরিচালক ফখরুল আরেফীন খান উতরে গেছেন। পুরো চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার কোনো ছন্দপতন ঘটেনি কিংবা বিচ্যুতি ঘটেনি। বাঙালির মুক্তির ছয় দফা  থেকে শুরু করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কুষ্টিয়া লংমার্চ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গণজাগরণ – সবকিছুই গল্পের গাঁথুনিতে একই সুতোয় সুচারুভাবে বাঁধতে পেরেছেন। কিছু ছোটখাটো সমস্যা থাকার পরও প্যারালাল বা নন-লিনিয়ার স্টোরিটেলিংয়ের দিক থেকেও ভুবন মাঝিকে সফলই বলা চলে।

আপাতদৃষ্টিতে ভুবন মাঝি মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র হলেও এর ব্যাপ্তি শুধু ’৭১ সালে সীমাবদ্ধ থাকেনি। মুক্তিযুদ্ধ আসলে শুধু সম্মুখসমরে অস্ত্রহাতে যুদ্ধ নয়; মুক্তিযুদ্ধ একটি চেতনা, একটি আদর্শ, একটি দর্শন। মুক্তিযুদ্ধের যে-আদর্শ তাকে বাঁচিয়ে রাখা, তাকে সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগ করা আরো বড় যুদ্ধ, যে-যুদ্ধটি স্বাধীনতার পর থেকেই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। স্বাধীনতার ৪৬ বছরে এসেও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে এখনো বারবার বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা দেশে যখন ধর্মের নামে বাউলের মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়, বাউলের একতারা ভেঙে দেওয়া হয়, তখন মনের ভেতর প্রশ্ন জাগে – আসলেই কি মুক্তিযুদ্ধের বিজয় এসেছে? নাকি শুধু ‘যুদ্ধের’ বিজয় এসেছে, ‘মুক্তি’ এখনো মেলেনি! এমনই এক প্রশ্নের নাম ভুবন মাঝি! r