যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে ভেবে

আহমেদ মুনির

 

এক

যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে ভেবে

কতকাল আগে

গান গেয়ে উঠেছিল পাখি

মাটি খুঁড়ে দেখি তার তীরবিদ্ধ

শরীরে এখনো রয়ে গেছে

সুরের বেদনা।

এই বেদনার পথ ধরে

হেঁটে গেছে দেশান্তরী মানুষের দল

এক যুদ্ধ থেকে আরো এক যুদ্ধে

যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে ভেবে।

 

স্মৃতির আপেল তার বীজ

ছড়িয়েছে ঝিরির কিনারে

ঝিরির কিনারে এসে তবু

জল স্পর্শ করার আগেই

যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।

 

এই ইতিহাস লেখা হয়ে গেছে কবে

আবারো কি লেখা হবে,

যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে ভেবে লেখা হবে!

 

বালির গভীরে কবে

শিকড় ছড়ালো গাছ

যুদ্ধ থেমে গেছে ভেবে।

আর জলের আড়ালে মাছ,

মাছের ভেতরে মাছ হয়ে

আমাদের সব উচ্চারণ ঘিরে

তখন শব্দের জন্ম হয়েছিল

যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে ভেবে।

 

দুই

শূন্যে ছুড়ে দেওয়া এই কথাগুলো

পুলসিরাতের পুল পার হয়ে

কী করে পৌঁছবে তোর কাছে!

যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে ভেবে

যে-গান বেজেছে বেহালায়

তার সুর পড়ে যাচ্ছে নিচে

পুলসিরাতের নিচে

দাউদাউ আগুনের মধ্যে।

তবু ঠান্ডা শেওলার মতো

লেগে আছি নিজেরই শরীরে

ঘুমন্ত সন্তান পাশে,

তার চুলে হাত রেখে

তোর সঙ্গে কথা বলি

যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে ভেবে।

 

তিন

ঢের কথা হলো আমাদের শীতে,

ঢের কথা হলো বসন্ত বাতাসে

যখন বরফ গলছিল আর

চেস্টনাট গাছে বাসা বাঁধা

কোকিল গলায় রক্ত তুলে ডাকছিল।

 

তখন তো যুদ্ধ থেমে গেছে ভেবে

আমাদের পুকুরঘাটের অন্ধকার

মুঠো করে দেখিয়েছিলাম তোকে।

আর সেই অন্ধকার থেকে

একটা জিন তার লম্বা হাত বাড়িয়ে দিয়েছে

আমাদের ঘুমের ভেতর।

বোবায় ধরেছে আমাদের

ডাকছি কেবলি পরস্পরকে

যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে ভেবে।

 

 

চার

বধির হাওয়ার কাছে তবু তুই বল

কী কী রান্না করেছিস আজ

তোরও কী কলঘরে পড়ে টুপটাপ জল?

যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে

যুদ্ধের বরফ তবু থেকে যায়

আরো একটা যুদ্ধ হবে বলে!

সেই বরফ সরিয়ে তোর দিকে দেখি,

সুপারি বাগানে যাই

অথচ সুপারি বাগান উজাড় হয়ে গেছে কবে

তবু একদিন ছিল, এই কথা ভেবে যাই,

সুপারির খোসা ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে দেখি

ভেতরে কঠিন ফল, নরমের ভেতরে কঠিন

তারও ভেতরে নরম বেদনার শাদা শাঁস।

 

পাঁচ

এখন তো অ্যাসফ্যালটের সুপারি গাছে

ছেয়ে গেছে সমস্ত শরীর

দাঁড়াতে পারি না তবু যেতে হচ্ছে

ঘূর্ণি বাতাসের পিছুপিছু

এক যুদ্ধ থেকে আরেক যুদ্ধের দিকে।

এক পরিহাস শেষে শুরু হয়

আরো এক পরিহাস

খুঁজতে খুঁজতে তবু

এতদূর এসেছ টেলেমেকাস,

যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে ভেবে!