যেখানে হলো না যাওয়া

আহমেদ মুনির

যেখানে হলো না যাওয়া, তারই পথ ধরে

অবিরাম যাত্রা আমাদের

মাঝে থেমেছি বিরান গ্রামে

ডাকঘরে ফেলেছি হলুদ খাম

ঠিকানার ঘর তবু ফাঁকা

ভুলে গেছি সবই

কোন বাড়ি প্রাপকের নাম।

আমরা যেখানে যাব, মানে যেতে চাই

অথচ কখনো হবে না যাওয়া;

এই সত্য মৃত কুমিরের মতো

পড়ে আছে পথে

পথে পথে তার সাদা হাড়

তারই ফাঁক গলে আমরা চলেছি

মেরুরেখা পার হয়ে গেছি

পৃথিবীর এক তল থেকে অন্য তলে

যেখানে অনচ্ছ চাঁদ

তোমার বিহবল

কম্পমান প্রেমিকের মতো জ্বলে।

 

 

দুই

যে রকমভাবে গাছ ছাদের নাগাল

না পেয়ে থমকে যায় কোনো

বারান্দার কাছে

যে রকমভাবে তার ছায়া

ধুয়ে দেয় তাপক্লিষ্ট বাড়ির হৃদয়

তেমনি আমরা যা পারিনি

অর্থাৎ আমরা যেখানে পারিনি যেতে

সেই ব্যর্থতারও কী রয়েছে

কোনো বিশল্যকরণী ছায়া?

পরিপক্ব হওয়ার বাসনা নিয়ে

যে ফল জীবনব্যাপী ঝুলে আছে গাছে

সকল করুণ নাটকের সমাপ্তির মতো

তারও রয়েছে অমিত্মম দশা

চরাচরজুড়ে আজ সেই শোক শুধু জেগে আছে

 

 

তিন

এমনকি পাখিদেরও আছে

ভবিষ্যৎ ভাবনা

বুকের ব্যথার মতো তাকে

সঙ্গে করে চলতে চলতে

রাত্রির কিনারে এসে থেমে গেছে

আমাদের গাড়ি

যেখানে স্বপ্নের ভেতরে নিজেরই

অজামেত্ম আমরা ঝরে গেছি

 

চার

যেখানে হলো না যাওয়া তারই

পথ ধরে যেতে যেতে দেখি

মানুষের কীর্তি দাঁড়িয়ে রয়েছে

পথে পথে বিষণ্ণ একাকী

মাথা নিচু বালকের মতো

পিরামিডগুলো ক্ষয়ে গেছে

নত মুখে বিকেলের আলো

তার পাশে আমাদের ছায়া

আজ দীর্ঘতর মনে হলো

 

পাঁচ

যেখানে হলো না যাওয়া সেই

জায়গার নাম মনে নেই

তবু আমরা চেয়েছি যেতে

পরিত্যক্ত বাড়ি

যেভাবে আবার

ফিরে চায় গৃহস্থালি;

সেই পথে দূর থেকে ভেসে

আসা গান আমাদের পাশাপাশি চলে

বাদকের কথা ভেবে মন

বিষাদে আচ্ছন্ন হয়ে আসে

তাকে নয় কেউ

লোকে তার এস্রাজকে ভালোবাসে।