রফিক আজাদের কবিতায় ‘গোলাপ’

মুনীর সিরাজ

রফিক আজাদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ অসম্ভবের পায়ে প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে। ১৯৯৬ সালে রফিক আজাদের কবিতাসমগ্র প্রকাশিত হয়। কাব্যগ্রন্থটি পাঠ করলে একজন কবি রফিক আজাদের মন ও মানসিকতার দিক সম্বন্ধে একটি সুস্পষ্ট ধারণা করে নেওয়া যায়। এ-কাব্যগ্রন্থে তাঁর মানসিক ও মানবিক দিক, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, ইতিহাসচেতনা, কবির মনোভূমি, মনোজগৎ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের এক সচিত্র প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায় – যা তিরিশোত্তর বাংলা কবিতার অনুগামী এবং যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের কবি ও কবিতা সম্বন্ধে আমাদের একটি সম্যক ধারণা লাভ করতে সাহায্য করে।

রফিক আজাদের শ্রেষ্ঠ কবিতাগ্রন্থটি ১৯৯০ সালের ২২ জুলাই কবির কাছ থেকে উপহার পাওয়ার পর এক বছরকাল আমার টেবিলের শোভাবর্ধন করেছে এবং অবসর সময়ে বইটি বারবার উঠে এসেছে আমার হাতে। ১৯৯৬ সালে রফিক আজাদের কবিতাসমগ্র প্রকাশিত হওয়ার পর সাম্প্রতিক বাংলা কবিতার ওপর যে একটি প্রবন্ধ আমি লিখে ফেলেছিলাম, তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতাগ্রন্থটি অবলম্বন করে, তা আরো পূর্ণাঙ্গ ও সম্প্রসারিত করার চেষ্টা করেছি এ-প্রবন্ধে। অবশ্যই বলে রাখা প্রয়োজন যে, কবিতাসমগ্রের সামগ্রিক দিক নিয়ে আলোচনা করতে হলে আমাকে আরেকটি গ্রন্থ লেখার অবতারণা করতে হবে। একটি কাব্যগ্রন্থ-সংকলন যা একজন কবির জীবনের তিরিশ বছরের বেশি সময়ের কষ্টার্জিত ফসল, যে-রচনা ১৯৬৪ থেকে ১৯৯৫ সালের অধিক সময় ধরে বিসত্মৃত, সেই সময়ের সামগ্রিক পটভূমির পরিপ্রেক্ষেতে এ-কবিতার আলোচনাও কিছুটা বিসত্মৃত হতে হবে বইকি। কিন্তু কোনো কাব্যগ্রন্থ পড়তে গিয়ে শ্রুতি এবং দৃষ্টিকে তাড়িত করে, যাকে মনে হয় একটি প্রতীকী শব্দ, যা বারবার উঠে এসে একজন কবির মানসপট স্বচ্ছ করে তোলে পাঠকের কাছে, যে-প্রতীক কিছু দূরে দূরে গিয়ে কবিতার শরীরে গেঁথে যায়, প্রতিস্থাপিত হয় বিভিন্ন মোড়কে – তখন সেই একটি প্রতীকী শব্দের অর্থ উপলব্ধি করেও বুঝি একজন কবিকে খুঁজে পাওয়া যায়। আশ্চর্য হওয়ার কোনো কারণ নেই যে, রফিক আজাদ শৈশবের স্মৃতি স্মরণ করতে করতে ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালির সুরে হারিয়ে যান। তারপরই ফেলে আসা স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে নগরায়ণের অস্থিরতায় ডুবে যান এবং তখন তাঁর কবিতায় নাগরিক চিমত্মাচেতনা, আকাঙক্ষা, ঘটন-অঘটন, অনিশ্চয়তা এবং দ্বিধান্বিত মানসিকতাই বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কিন্তু রফিক আজাদের কবিতা পড়তে পড়তে, প্রকৃতির কথা ভাবতে ভাবতে ফুলের খোঁজ করতে গিয়ে যদি বারবার গোলাপের কথাটিই ফিরে ফিরে আসে, সে-প্রবণতার পেছনে অবচেতনে কবির মনে কী ভাব এবং ভাবনা খেলা করেছে, তা নিয়ে ভাবিত হতে হয়।

রফিক আজাদের গোলাপের প্রতি আমার ঝোঁক কেন, তা ব্যাখ্যা করা আমার পক্ষে একটু কঠিন। তবে এ-কথা বলেছি যে, আমার শ্রুতি এবং দৃষ্টিতাড়িত হয়েছে এবং মনের বেদনা, বিক্ষোভ, প্রেম, সুন্দরের প্রকাশ – যে-কোনো গভীরতর কাব্যব্যঞ্জনা সৃষ্টির প্রয়োজনে রফিক আজাদের গোলাপের প্রতি দুর্বলতা আছে, তা নিঃসন্দেহে বলতে পারি। সমগ্র কবিতার একাধিক স্থানে বেলি ও রজনিগন্ধার কথা আছে। ‘কুসুম’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে স্থানে স্থানে; কিন্তু ফুল বলতে কেবলই গোলাপ এবং সেজন্য রফিক আজাদের কবিতার ‘গোলাপ’-গবেষণাই এই প্রবন্ধের নিমিত্ত।

একেবারে প্রথমেই রফিক আজাদের কবিতায় গোলাপ কিছুটা কামগন্ধময় –

গোলাপের গভীর তদমেত্ম

সমর্পিত সূর্যকণা যেন কেবলি উপর্যু্যপরি ঘুরে ফেরে

শিল্পিত পিচ্ছিলে।

 

এবং

 

আমাদেরও হাতগুলি

ক্লান্তিহীনতার এক নির্জন অঙ্গের অন্বেষণে

অবিশ্রান্ত ঘোরে।

 

ক্রমশ তার হাত নির্জন অঙ্গের অন্বেষণে ঘুরতে থাকে। ষাটের দশকের দিগ্ভ্রষ্ট কিছু কবিতায় স্টান্ট ‘সৃষ্টি’ করা, সহসা বাহবা পাওয়া এবং প্রকট যৌনতার প্রকাশে কবিতার উত্তরণের খোঁজ করার একটা প্রবণতা ছিল। এখনো কিছু কিছু কবিতা সে-প্রবণতামুক্ত নয়। অথবা কেউ মনে করতেও পারেন, চোখ-টাটানো যৌনতার প্রকাশ ছাড়া কবিতা ও জীবনের উত্তরণ সম্ভব নয়; কিন্তু ‘গোলাপ’ প্রতীক ব্যবহারে রফিক আজাদ খুব দ্রম্নত সামলে নেন নিজেকে এবং

 

…         …         …         খুলে ফ্যালে

হৃদয়ের, গোলাপের, অলীক শিল্পের নিতম্বের

ভারাক্রান্ত তালা!

 

এ-অবস্থান থেকে গোলাপকে তিনি কেবল মহিমান্বিত করেছেন শিল্পে ও সৌন্দর্যে। তখন থেকে তাঁর মন ‘গোলাপ ও বেদনার প্রমীলাবৃন্দের’ ডাকে সারা দিয়েছে বারবার। শিল্পের খোঁজে তাঁর বেদনার্ত মন কবিতার গভীরে চলে গেছে। কোথায় গেছে কবির মন?

 

গোলাপ ও দীর্ঘশ্বাসের মহিমায়

এক উজ্জ্বল নগরে –

যে নগরে সোনালি শিরায় উপ্ত

সুস্বাদু ও পরিপক্ব আঙুরের মতো

স্বয়ম্ভূ শিল্পের বীজ  

 

গোলাপ প্রতীক ব্যবহৃত দ্বিতীয় কবিতাটিতেই সচেতনতার আভাস পাওয়া যায় এবং তারপর আর ফিরে তাকাননি রফিক আজাদ। গোলাপের দীর্ঘশ^^াসে এক শিল্পীর চেতনার উন্মেষ লক্ষ করা যায় এখান থেকেই। সম্পন্ন জীবন যেমন স্মরণীয় হয়ে থাকে, বিশুদ্ধ গোলাপের গন্ধের মতো কবিও তেমনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকতে চান।

 

গোলাপ ফুটুক এক … নিঃসঙ্গ করুণ,

এবং আমার চেতনার সেই বিশুদ্ধ গোলাপ

মৃত্যুর মতন চিরস্মরণীয় হোক।

 

কিন্তু কাব্যিক সুষমার আড়ালে অবচেতন থাকতে পারেননি রফিক আজাদ। জীবনের বাস্তবতার প্রয়োজনে তাঁর কথায় স্পষ্ট উচ্চারণ শুনতে পাই। জীবন নির্মাণের জন্য কবিতার শৈলীতে আবদ্ধ থেকে কবি থাকবেন দূরতম নক্ষত্রের মতো, এই বিশ্বাস তিনি খ–ত করেছেন কবিতার ভাষায় এবং তারপরও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কবিতার ভুবনে, এটা কম কথা নয়।

 

রুটি ও শব্জীর গন্ধ ওরা বেশি ভালোবাসে। তবু,

‘গোলাপ গোলাপ’ – বলে কান্না করা ওদের স্বভাব,  

 

সৌন্দর্যের প্রতি মানুষের পিপাসা চিরকালীন। শত দুঃখ-দারিদ্রে্যর মধ্যেও মানুষের সৌন্দর্য পিপাসার মৃত্যু হয় না। ক্ষুধার্ত কেউ যদি গোলাপে আগ্রহী হয়, তবে তার জন্য কটাক্ষ এবং বিদ্রূপ করার প্রতি প্রতিবাদ পাওয়া যায় এ-কবিতায়। কবিতা এবং জীবনের রূপ সৃষ্টি করতে গিয়েও কেন কবিকে থমকে দাঁড়াতে হয়, চিৎকার করতে হয় এবং তারপর কবিতা সৃষ্টি করতে না পারার দুঃখ নিয়ে, কবিতাকর্মের দায় অসম্পূর্ণ রেখেই মর্মাহত কবিকে বিদায় নিতে হয়। তার প্রমাণ আমরা অ্যালেন গিন্সবার্গের কবিতায়ও পেয়েছি অত্যন্ত প্রকটভাবে। গোলাপ কি এক পরিপূর্ণ জীবনের প্রতীক, যা কারুকার্যময় করে ফুটিয়ে তোলার মধ্যেই কবিসত্তার বিকাশ ঘটে? চারদিকে অস্থিরতা, অসংগতি, নৈরাশ্য, হানাহানি, বিশ্বাসঘাতকতায় অস্থির কবিচিত্ত গোলাপ ফোটাতে চেয়েও যেন স্থির হয়ে যান এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের মতো অকপটে বলে ফেলেন। ‘এই হাতে হয়তো আর গোলাপ ফুটবে না’। নৈরাশ্যে আক্রান্ত কবির মনে তবু অনুসন্ধান চলতে থাকে গোলাপের অবস্থান জানার জন্য। প্রকৃতির সারবস্ত্ত খোঁজ করতে রফিক আজাদ যেন গোলাপের সন্ধান পেয়ে যান। প্রকৃতি এখানে জীবনের বিকাশের প্রতীকরূপে বিকশিত এবং গোলাপেই তাঁর পরম প্রকাশ – গন্ধে, বর্ণে, সৌন্দর্যে যা অতুলনীয় এবং জীবনের আকাঙক্ষার প্রতিচ্ছবি।

 

প্রকৃতি বিভক্ত হন তিনটি সত্তায় :

উত্তাপে, গোলাপে আর নারীর সৌরভে।  

 

রফিক আজাদের কবিতায় গোলাপ কখনো আভিজাত্যের প্রতীক। সাজানো ড্রইংরুম দেখে মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, এমন মানুষের যেমন অস্বসিত্ম বোধ হয়, সুন্দরের প্রতি অধিকার নিয়ে নিঃসহায় মানুষের মনেও তেমনি যদি ক্লান্তি নেমে আসে, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকে না। গোলাপ প্রতীক তখন কবিতায় ব্যঙ্গোক্তির মতো শোনায়। সুখ আর সমৃদ্ধিতে গা-ভাসানো উঁচুতলার মানুষদের গোলাপের প্রতি ভালোবাসা কবির কাছে এক ধরনের বিলাসিতা এবং সুন্দরের সত্যমূল্য সেই বিলাসিতার অন্তরালে তিরোহিত। তেমন গোলাপের সৌন্দর্য কবির কাম্য নয়। আর গোলাপের পাশে তিনি যা দাঁড় করিয়ে দিলেন, তা নিতান্ত আকস্মিক মনে হতে পারে। কিন্তু সেই কথার মধ্যে সমাজবিচ্ছিন্ন বিলাসী জীবনের প্রতি তীব্র কটাক্ষ প্রকট হয়ে উঠেছে।

 

স্যার, শুধু গোলাপের ছবি এঁকে জীবনটা কাটিয়ে দিলেন,

এবার কিছুদিন গু-গোবর আঁকুন,

আমরা খুব গরীব মানুষ,

একটানা স্বসিত্মহীন ক্লান্তিকর সৌন্দর্যের ছবি

আমাদের চোখে সইবে না স্যার।  

 

রফিক আজাদের কবিতা পড়তে পড়তে আমার এ-ধারণা হয়েছে যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কবিতা ক্রমশ অধিকতর প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। যদিও তাঁর কবিতায় আদর্শিক দিকনির্দেশনা বা সে-ধরনের কোনো দর্শনতত্ত্ব পাওয়া যাবে না, তবু পরিণতির সঙ্গে সঙ্গে যে তা আরো জীবনবোধ এবং ভেঙে গড়ার প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠেছে তা সচেতন পাঠক অবশ্যই বুঝতে পারবেন এবং সেজন্য বিচ্ছিন্নভাবে নয়, আগাগোড়া পড়ে ফেলতে হবে রফিক আজাদের কবিতা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গোলাপের প্রতীকেও সেই প্রতিবাদী চিমত্মা-চেতনা যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তা লক্ষণীয় এবং ‘গোলাপ’ প্রতীক ব্যবহারের ব্যাখ্যা তাঁর কবিতার ক্রমপ্রাগ্রসরতা বুঝে নেওয়ার একটি মানদ- ধরে নেওয়া যেতে পারে।

 

প্রকৃত লালকে ঘিরে ফ্যাকাশে লালেরা সব ষড়যন্ত্রে মাতে।

চতুর্দিকে ফ্যাকাশে লালের প্রভাব বাড়তে দেখে

মেধায় মননে যারা প্রকৃত লালের আদর-তদবির করে

তারা খুব মিটিমিট হাসতে লেগেছে।

নীরবে-নিশ্চুপে তারা দেখে যাচ্ছে গভীর তামাশা,

 – একদিন সবগুলো ভুল লাল বেলুন ফাটাবে।

 

শুধু তাই নয়, বিপস্নবী চেতনার বিজয়ের সঙ্গে সঙ্গে ওই লাল গোলাপের দিকে বাড়ানো হাতের সংখ্যাও যে ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে, সে-কথাও কবি আস্থার সঙ্গে উচ্চারণ করেছেন :

 

ব্যক্তি মানুষের ভেতরের লাল রঙগুলোর দ্রম্নত

সমষ্টির সৃষ্টিশীল মসিত্মষ্ককে বিন্যস্ত হতে দেখি;

লাল গোলাপের দিকে বাড়ানো হাতের সংখ্যা বেড়ে যেতে

দেখি;

এর বেশি কিছু আজ আমি আর বলতে চাই না,

বলার দরকার নেই।  

রফিক আজাদের কবিতায় লাল গোলাপ ব্যবহৃত হয়েছে বিপস্নবের প্রতীক রূপেও।

সারারাত জেগে থেকে গোলাপের জেগে ওঠা দেখি,

এই মতো ধৈর্য-শ্রম-নিষ্ঠা-ইচ্ছা ছাড়া অনিবার্য

ঐ লাল গোলাপের উত্থানের কথা কেউ ভাবতে পারে না।

লাল যে অবর্ণনীয় সে কথাটি মানুষেরা খুব বুঝে গেছে;

একমাত্র রক্তের লাবণ্যে তাকে বর্ণনা সম্ভব।  

 

এই লাল রং বা বিপস্নবের অনিবার্যতার কথা বলেই রফিক আজাদ বসে থাকেননি, মার্কসীয় বিপস্নবকে প্রতিহত করার জন্য প্রতিবিপস্নবী চক্রের লাল পতাকা ব্যবহারের দুষ্টবুদ্ধির প্রতি হুঁশিয়ারিও উচ্চারিত হয়েছে কবিতাটিতে। নকল লালের সমস্ত দুরভিসন্ধিও যে একদিন পরাজিত হবে, সে-সম্ভাবনার কথাও উচ্চারিত হয়েছে এ-কবিতায়। এ-কবিতাটিতে লক্ষণীয় যে, রফিক আজাদের শ্রেষ্ঠ কবিতায়  প্রকাশিত একই কবিতায় ‘নকল লালে’র পরিবর্তে কবিতাসমগ্রে ফ্যাকাশে লাল ব্যবহার করেছেন। ‘ফ্যাকাশে লাল’ শব্দ দ্যোতনায় অধিক শ্রুতিমধুর হলেও ‘নকল লালই’ ছিল সঠিক প্রয়োগ। ‘নকল লাল’ কথাটি থেকে গেলে কাব্যের কোনো হানি ঘটত না এবং কবিতার অর্থটিও দাঁড়িয়ে থাকত ঋজু টানটান হয়ে। ‘রক্তের লাবণ্য মানে গভীর সবুজ এক রঙ’ বলতে রফিক আজাদ যা বোঝাতে চেয়েছেন, তা কিছুটা ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেত।

 

কবিতা ও সুন্দরের প্রতি মানুষ যেন ক্রমশই নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ছে। আমাদের দৈনন্দিন পরিশ্রমী অনটনের জীবন ক্রমেই কাব্যহীন হয়ে পড়ছে। নীরস ছন্দপতনের গাদ্যিক শুষ্কতাই যেন ক্রমশ সুন্দরের ওপর হস্তক্ষেপ করছে। ‘গদ্য’ শব্দটি এখানে কবিতায় গাদ্যিক ভাষার আগ্রাসন বা কবিতার রূপহীনতা মনে করলে ভুল করা হবে। ‘গদ্য’ এখানে জীবনের অসংগতির প্রতীক বা সম্ভাবনার সুশৃঙ্খল জীবনের অন্তরায় এবং যা জীবনচেতনা এবং সৌন্দর্যের হানি ঘটায়।

 

আমাদের গোলাপ বাগানে গদ্যের বাহিনী

অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা করেছে।  

 

কবিতার ভুবনে ‘গোলাপ’ এখানে সম্ভাবনা এবং জীবনবাদী চিমত্মাচেতনার ছন্দোময় রূপায়ণের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। জীবনের অসংগতির কথা বলতে গিয়ে, অসংগতির কারণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে, কবিতাকেও তাই দাঁড়াতে হয় খড়্গ হাতে। গোলাপ যদি গদ্যাক্রান্ত, তবে কবিতা সেখানে জীবনবাদী যুদ্ধাস্ত্র এবং সে-কবিতায় এ-কথাই খুব স্বাভাবিকভাবে এসে যায় যে-

 

আর কোনো রকমের গদ্য সহ্য করা হবে না;

এইটেই যেন হয় এদেশের সর্বশেষ গদ্য কবিতা।  

 

গোলাপ স্পর্শ করতে লোভ হয় সকলেরই। স্পর্শ পাওয়ার জন্যই বুঝি গন্ধে এবং বর্ণে সুন্দর গোলাপ। স্নায়ুর অধীন মানুষের দেহ এবং মনও স্পর্শকাতর। প্রেম এবং ভালোবাসার জন্য উন্মুক্ত কবি স্পর্শের লোভেই ফুটে থাকতে চান গোলাপের মতো।

 

তোমার স্পর্শের লোভে ফুটে আছি

যেন বা গোলাপ।১০ 

 

কিন্তু বিক্ষত বেদনাহত কবির কথা কে ভাবে? গোলাপ ফোটাতে যে চায় তাকে তো কাঁটার আঘাতে জর্জরিত হতেই হয়। কিন্তু কণ্টকাকীর্ণ কবির দুঃখ ভাগ করে নিয়ে নিজেকে বিক্ষত করতে চাইবে না কেউ। ভালোবাসার কাঙাল, প্রেম যার কাছে বিমুখ, সেই কবির কলমেই নিঃসৃতি হতে পারে –

 

কাঁটায় বিক্ষত হবে

তোমার আঙুল

এই ভয়ে তোলনি গোলাপ?১১  

 

ভালোবাসার গোলাপ খুঁজে কবি কেবল তা হারিয়েছেন, এই তাঁর দুঃখ। কবির মনোজগতের প্রেমের যে-গোলাপ, তা ধরাছোঁয়ার বাইরে ফুটে আছে সুন্দর কোনো অঞ্চলে। সেই গোলাপ কোনোদিনও পাওয়া হবে না তাঁর, সেই তাঁর বেদনা ও আক্ষেপ।

 

 

কতো দূর কোন বিদেশে কার বাগানে

গোলাপ ফুটে আছো?

…    …    …

 

এই জীবনটি ব্যর্থ হলো তোমার সঙ্গে

হলো না আর দেখা১২

 

গোলাপ যখন কোনো সুশ্রী সুমার্জিত নারীর প্রতীক, আবহমান যে-নারী মহীয়সী, সম্ভ্রম যার মানুষের বিবেকের প্রতিরূপ, সেই নারী যখন উন্মোচিত হয় ফ্যাশন প্যারেডে, বাণিজ্যিক প্রয়োজনে অর্থের বিনিময়ে যখন তার দেহজ রূপ অনেকের চোখের শৃঙ্খলিত ফুল, যাদের কবি প্রবীণ শকুন বলে উলেস্নখ করেছেন, তখন সেই নারী যা কবির কাছে গোলাপের মতো সুন্দর – তাতে আর মহিমা থাকে না। তাকে স্পর্শ করার জন্য নতজানু হতে হয় না, যেমন আমাদের অবনত হতে ইচ্ছে করে মহিমাময়ী নারীর কাছে; বরং উন্মুক্ত সেই গোলাপের নির্লজ্জ প্রকাশ দেখে কবির চোখই লজ্জায় আনত হয়ে আসে।

 

গোলাপ, তোমাকে ঘিরে – ষড়যন্ত্রে মেতেছে মানুষ,

প্রকাশ্যে তোমাকে আজ ন্যাংটো করে ফ্যাশন-প্যারেডে

নামিয়েছে কারা?…

… তুমি আজ বাগানের নিভৃতির চেয়ে

প্রকাশ্যে মেলার শোভা! আজকাল নতজানু হয়ে

তোমাকে ছোঁয়ার কোনো লোক নেই,

… নির্লজ্জ আলোয় তুমি ঝলমলে

অনুষ্ঠানে অসংখ্য চোখের সামনে শৃঙ্খলিত ফুল,

গোলাপ তোমাকে ঘিরে অন্ধকার ঘনীভূত হলো।১৩  

 

নারী যেখানে পণ্য, বণিক সভ্যতার ভোগের উপকরণ, সেও এক গোলাপ প্রতীকে প্রকাশিত এবং সেই ভোগবাদী সভ্যতার প্রতি এই কবিতা নিঃসন্দেহে প্রতিবাদী।

রফিক আজাদ নারীকে দেখতে চেয়েছেন প্রেরণাদায়িনীর মহতী আচ্ছাদনে। সেই প্রেরণার মদিরা আকণ্ঠ পান করে আশা করছেন যে, তার সামনে খুলে যাবে কবিতার বিশাল জগৎ। ইতিহাসে এমন ঘটনা তো কম নেই যে, সুন্দরী নারীর, প্রেরণাদায়িনীর উৎসাহে মহীয়ান হয়েছেন অনেক পুরুষ এবং পৃথিবীর ইতিহাসের খাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখে রেখে গেছেন নিজের নাম। সেই অন্তর্লোকের বাসনার কথাটিও ‘গোলাপ’ প্রতীকে ফুটিয়ে তোলেন রফিক আজাদ।

 

সে স্পর্শ করা মাত্র প্রতিটি পৃষ্ঠা থেকে

বসরাই গোলাপের গন্ধ বেরুতে থাকবে!

অবশেষে, এই চুম্বনরহিত ঠোঁটে

সে তার ঠোঁট মেলাতেই সৌগন্ধম–ত

আমার ওষ্ঠ থেকে অবিরল ধারায়

নিঃসরিত হতে থাকবে গালিবের গজলের মতো

কালজয়ী অনিঃশেষ পঙ্ক্তিসমূহ১৪

 

প্রেমসিক্ত কবি যদি উষ্ণ আবেগে রোমন্থন করে কবিতার বাণী উচ্চারণ করতে চান, তবে সে-চাওয়াটুকু অন্যায় আবদার মনে করার কোনো কারণ নেই।

 

‘সৌন্দর্যের অর্থনীতি’ কবিতায় গোলাপের প্রতীকে সাধারণ মানুষের কথা ফুটে উঠেছে। প্রতিটি মানুষের সুন্দর হয়ে-ওঠার সম্ভাবনার সঙ্গে কবি গোলাপকেই তুল্যমূল্য করেছেন। তবে অবশ্যই নিপীড়িত নিঃসহায় মানুষকে বাগানে নিঃসঙ্গ অধোমুখী ফুলের মতো ফুটে থাকলে চলবে না। যেখানে অনেক ফুল, সেখানেই ফুটতে হবে গোলাপকে এবং সংগঠনগতভাবে সমস্ত গোলাপ মিলে।

 

নৃশংসতার বিরুদ্ধে এক্ষুনি তারা একত্রে দাঁড়াবে!১৫  

 

বাগানে একাকী নও,

বাগানে তুমিও অনেকের মধ্যে এক গর্বিত কুসুম;১৫  

লক্ষ করার মতো ব্যাপার যে, কবি ইঙ্গিতে সমন্বিত সমাজের সার্বিক মঙ্গলের কথা বলেছেন এ-কবিতায় এবং সেই অর্থনীতিই যা সকলে সমানভাবে ভাগ করে নিতে পারে। বাগানে প্রস্ফুটিত শত গর্বিত ফুলের মধ্যে গোলাপও একটি, যে-গোলাপ একক সত্তার অহংকারী নয়, সেই গোলাপকেই আকাঙক্ষা করেছেন কবি।

আগেই উলেস্নখ করেছি যে, রফিক আজাদের সামগ্রিক কবিতার পটভূমি এ-প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয়বস্ত্ত নয়। কবিতাসমগ্র বইটি থেকে সেই কবিতাসমূহের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে, যেখানে ‘গোলাপ’ ভিন্ন ভিন্ন অর্থে প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। কবিতাসমগ্রের শুধু দুটি স্থানে ‘বকুল’ এবং দুটি স্থানে ‘রজনিগন্ধা’ ফুলের উলেস্নখ আছে। সমগ্র কবিতায় আর কোনো ফুলের নাম কোথাও নেই। বিভিন্ন কবিতায় ‘কুসুম’ শব্দটির বারবার উলেস্নখ চোখে পড়ে। তবে একটি প্রতীকের ব্যবহার বিশেস্নষণ করে একজন কবিকে চেনা যায় কিনা, এই প্রবন্ধ সেই প্রতিপাদ্য প্রমাণের প্রচেষ্টা বলা যাতে পারে, যা পরিসংখ্যানের সংখ্যাতত্ত্ব দিয়ে না হলেও ধারণাটি বিজ্ঞান-মানসজাত বলা যেতে পারে এবং কাব্য বিশেস্নষণের ক্ষেত্রে এর মধ্যে একটি তাত্ত্বিক সূত্রও খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। কবি শামসুর রাহমানের কবিতা পড়তে পড়তে ‘ঘোড়া’ ও ‘অশ্ব’ এই শব্দদ্বয়কে বারবার ফিরে আসতে দেখা যাবে। এ-ধরনের প্রবণতার পেছনে কবির মানসিকতা বুঝতে পারার এবং বিশেস্নষণ করার যথেষ্ট সুযোগ আছে বলেই আমার মনে হয়।

দৈনিক বাংলা অফিসে বসে একদিন কবি শামসুর রাহমানকে বলতে শুনেছিলাম – A rose is a rose is a rose, গোলাপই কেবল গোলাপের প্রতীক হতে পারে। খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ শতাব্দীতে কবি Sappho of Lesbos লিখেছিলেন –

 

A queen for all their world of flowers,

The rose would be the choice…

 

আড়াই হাজার বছরের আগের কবিও গোলাপকে ফুলের রানি বলতে ভুল করেননি। – শেক্সপিয়র গোলাপের গুণকীর্তন করতে লিখেছেন চমৎকার সনেট, বলেছেন – The rose looks fair…। ঝরে পরা গোলাপের গন্ধও যে অতি চমৎকার সে-কথাও শেক্সপিয়র স্মরণ করেছেন – of their sweet deaths are sweetest odour made।

 

কবি রফিক আজাদের কবিতাসমগ্রের পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত সংস্করণ প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালে।

এই সংস্করণের দ্বিতীয় মুদ্রণ প্রকাশিত হয় মার্চ ২০১৬ সালে কবির মৃত্যুর কিছুদিন আগে। পরিমার্জিত এবং পরিবর্ধিত মুদ্রণে বর্ষণে আনন্দে যাও মানুষের কাছে, কণ্ঠে তুলে আনতে চাই, বিরিশিরি পর্ব এবং হৃদয়ের কীবা দোষ গ্রন্থ কয়টি সংযোজিত হয়।

 

এই গ্রন্থ কয়টিতেও সমস্ত ফুলের মধ্যে ‘গোলাপের’ই প্রাধান্য। প্রেমিকার উদ্দেশেই কবি বলেছেন –

 

ফেলে রেখে গিয়েছিলে ভুলে

খোঁপার গোলাপ

সারারাত জেগে আমি পাহারা দিয়েছি

তোমার সৌরভ

…   …    …

ভাগ্য বলে আমি তাই

ঘ্রাণে পাই সুভাসিত অনন্য গোলাপ।১৬

 

এই কবিতায় গোলাপ প্রেমের প্রতীক। মানুষের মনোরঞ্জন এবং তোষামোদের জন্য ফুল উপহার দেওয়া একটি রীতি অবশ্যই। একটি সুবিধা পাওয়ার জন্য কিংবা ব্যবসায়িক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য কোটি কোটি টাকা ঘুষ দিতেও অনেকে দ্বিধা করেন না। এমনকি সুবিধাভোগী ক্ষমতাধর ব্যক্তির পিতামাতার দাফনের জন্যও ব্যাংকঋণের বিরাট অংশ খরচ করতে কোনো দ্বিধা হয় না। সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড থেকে ফুল নিয়ে এসে কফিন সাজিয়ে দেওয়ার এক ‘নয়া উদ্যোগ’ গ্রহণ করতে সুবিধাভোগী যেন একপায়ে খাড়া। তার চেয়েও বেশি-

 

যদি চান

খাটি বসরাই গোলাপ আনবো –

যদি চান হাফিজ ও খৈয়ামের সিরাজেই যাবো

আনবো শিশির সিক্ত তাজা সব সুগন্ধি গোলাপ১৭  

 

সমাজের অবক্ষয়ের চরম প্রকাশ ঘটেছে এ-কবিতায়। সে-অবক্ষয়ের তোষামোদী ভাষার প্রকাশ – গোলাপ উপহার। আর কাকে সেই উপহার দেওয়া হচ্ছে? রাজাকার পিতার সমত্মানভাগ্যের পরিহাসে আঙুল ফুলে কলাগাছ। আর তাকে তোষামোদ করছে নব্য ব্যবসায়ী এক মুক্তিযোদ্ধার সমত্মান। এমনি তীব্র এবং তীক্ষন কটাক্ষ রফিক আজাদের এ-কবিতায়। কবি রফিক আজাদ নিজেকে তুলনা করছেন এক তুচ্ছ বনফুলের সঙ্গে। তার তুলনা শুধু ঘাঁটফুল কিংবা ক্ষুদ্র ঘাসফুলের সঙ্গে। নিতান্তই অযত্নে বেড়ে ওঠা তুচ্ছজন্ম তাঁর। নীরবে ঝরে যাবেন তুচ্ছ ঘাসফুলের মতো সবার অগোচরে। নিজের সম্বন্ধে এমনই তাঁর ধারণা। এর চেয়ে বেশি তিনি কিছুই আশা করতে পারেন না। গোলাপের কথা তিনি ভাবতেই পারেন না। এতটা কুলীন তিনি হয়ে উঠতে পারেননি।

 

গোলাপের নাম নেওয়ার আগে

আমার জিহবা তো খসে যাওয়ারই কথা

টিকটিকির লেজের মতন

তাই গোলাপের প্রদর্শন অনুষ্ঠানে যাবো না কখনো।১৮  

 

গোলাপ এখানে উচ্চবিত্তের প্রতীক, আভিজাত্যের প্রতীক। সেই আভিজাত্যের সঙ্গে মিশে যাওয়া একেবারেই খাপছাড়া ব্যাপার। নিভৃতচারী কবি নিজেকে নিতান্ত অকুলীন ভেবে সরিয়ে রাখতে চান গোলাপের সান্নিধ্য থেকে। প্রেমিক কবি রফিক আজাদ গোলাপের মধ্যে খুঁজতে চেয়েছেন উদারতাকে, ভালোবাসাকে। তাই কাঙিক্ষত প্রেমিকের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হলে প্রেমিকের মন তো বিদীর্ণ হয়ে যাওয়ারই কথা।

 

মাথাটি আমার যেন আর ঠিক নেই – হতবুদ্ধি

তাকাই এখন বলো কার দিকে – তুমি না গোলাপ?১৯  

অতএব গোলাপ তো এখানে প্রেমিকার মহত্ত্বের প্রতীক, যে-প্রেমে আচ্ছন্ন হতে চেয়েছিলেন কবি।

অতএব সেই গোলাপের প্রতীক প্রেমিকাও কি প্রতারক হতে পারে? প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যান কবি।

 

কবি রবার্ট হেরিক (১৮৯১-১৯৭৪) গোলাপের গুণকীর্তন করে বলেছেন-

 

Gather ye rosebuds while ye may,

Old time is still a-flying;

And this same flower that smiles today

Tomorrow will be dying.

 

লক্ষ করার মতো যে, শত শত বর্ষ ধরে গোলাপের যে-বর্ণনা, তা তার সৌন্দর্যের এবং চমৎকার গন্ধেরই বর্ণনা – সুন্দর এবং সৌরভের প্রতীকই ছিল গোলাপ।

কিন্তু রফিক আজাদ ‘গোলাপ’ প্রতীক ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন মাত্রায়। তাঁর কবিতায় ‘গোলাপ’ প্রতিবাদ, বিপস্নব, ছন্দ, সৌন্দর্য, সৌরভ, প্রেরণাদায়িনী নারী, লাঞ্ছিত নারী, প্রেম, আকাঙক্ষা, সাধারণ মানুষ, সমন্বিত অর্থনীতি, সংগঠন ইত্যাদি বহুমাত্রিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

যৌনতার মাত্রাতিরিক্ত প্রকাশের আতিশয্যে ‘গোলাপ’ একবার কলুষিত হয়েছে রফিক আজাদের কবিতায়। এছাড়া গোলাপ প্রতীক ব্যবহারের মধ্যে কবি রফিক আজাদের সে-সত্তা খুঁজে পাওয়া যায়, তা মূলত একজন প্রতিবাদী কবির কণ্ঠস্বর। সামাজিক অনাচার, অন্যায়, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক শোষণ, অর্থনৈতিক ভেদাভেদ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের অসংগতির প্রতি তাঁর লেখা প্রতিবাদের এবং প্রতিকার খোঁজার ভাষায় উজ্জ্বল। প্রয়াত কবি রফিক আজাদকে লাল গোলাপের শুভেচ্ছা জানাই, তাঁর উচ্চকণ্ঠ, বলিষ্ঠ এবং সাহসী উচ্চারণের জন্য।

 

তথ্যসূচি

 

১. ‘শিল্প ও অন্বেষণের হাতগুলি’, অসম্ভবের পায়ে, কবিতাসমগ্র,

প্রথম সংস্করণ ১৯৯৬, পৃ ২৪।

২. ‘আলোকিত অন্তর্ধানে এক উন্মাদ’, অসম্ভবের পায়ে,

কবিতাসমগ্র, প্রথম সংস্করণ ১৯৯৬, পৃ ২৪-২৫।

৩. ‘নৈশ প্রার্থনা’, অসম্ভবের পায়ে, কবিতাসমগ্র, প্রথম সংস্করণ

১৯৯৬, পৃ ৩৬।

৪. ‘ক্ষুধা ও শিল্প’, অসম্ভবের পায়ে, কবিতাসমগ্র, প্রথম সংস্করণ

১৯৯৬, পৃ ৩৮।

৫. ‘এখন আমার হাত’, সমস্ত সুন্দর, কবিতাসমগ্র, প্রথম

সংস্করণ ১৯৯৬, পৃ ১৪৯।

৬. ‘প্রকৃতির তিন সত্তা’, সমস্ত সুন্দর, কবিতাসমগ্র, প্রথম

সংস্করণ ১৯৯৬, পৃ ১৫৪।

৭. ‘চাদরবিষয়ক দৃষ্টি-আকর্ষণী প্রসত্মাব’, সমস্ত সুন্দর,

    কবিতাসমগ্র, প্রথম সংস্করণ ১৯৯৬, পৃ ১৬৭।

৮. ‘লাল গোলাপের দিকে বাড়ানো হাতের সংখ্যা’, সমস্ত সুন্দর,

    কবিতাসমগ্র, প্রথম সংস্করণ ১৯৯৬, পৃ ১৮০-১৮১।

৯. ‘গদ্যের গহীন অরণ্যে হারিয়ে যাওয়া আমি এক দিগ্ভ্রান্ত

পথিক’, হাতুড়ির নিচে জীবন, কবিতাসমগ্র, প্রথম সংস্করণ

১৯৯৬, পৃ ২৫৪-২৫৭।

১০. ‘শাশ্বতীর প্রতি’, হাতুড়ির নিচে জীবন, কবিতাসমগ্র, প্রথম

সংস্করণ ১৯৯৬, পৃ ২৩৯।

১১. ‘অযান্ত্রিক’, পরিকীর্ণ পানশালা আমার স্বদেশ, কবিতাসমগ্র,

প্রথম সংস্করণ ১৯৯৬, পৃ ২৭১।

১২. ‘গোলাপ, ফুটে আছো?’, পরিকীর্ণ পানশালা আমার স্বদেশ,

      কবিতাসমগ্র, প্রথম সংস্করণ ১৯৯৬, পৃ ২৭৩।

১৩. ‘গোলাপ তোমাকে ঘিরে…’, খুব বেশি দূরে নয়, পরিকীর্ণ 

     পানশালা আমার স্বদেশ, কবিতাসমগ্র, প্রথম সংস্করণ ১৯৯৬,

পৃ ৩০৬।

১৪. ‘কোনো এক নারীর জন্যে’, খুব বেশি দূরে নয়, কবিতাসমগ্র,

প্রথম সংস্করণ ১৯৯৬, পৃ ২৯৯।

১৫. ‘সৌন্দর্যের অর্থনীতি’, খুব বেশি দূরে নয়, কবিতাসমগ্র,

প্রথম সংস্করণ ১৯৯৬, পৃ ৩০৮।

১৬. ‘পাহারাদার’, বর্ষণে আনন্দে যাও মানুষের কাছে,

     কবিতাসমগ্র, পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত সংস্করণ (২০০৭),

দ্বিতীয় মুদ্রণ ২০১৬, পৃ ৫১।

১৭. ‘নয়া উদ্যোগ’, বিরিশিরি পর্ব, কবিতাসমগ্র ২০১৬,

পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত সংস্ককরণ (২০০৭), দ্বিতীয় মুদ্রণ

২০১৬, পৃ ৪০৭।

১৮. ‘নীরবেই ঝরে যাবো বনফুল’, বিরিশিরি পর্ব, কবিতাসমগ্র,

পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত সংস্করণ (২০০৭), দ্বিতীয় মুদ্রণ

২০১৬, পৃ ৪৩৩।

১৯. ‘পর্ব : ২, ৩৪’, হৃদয়ের কীবা দোষকবিতাসমগ্র ২০১৬,

পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত সংস্করণ (২০০৭), দ্বিতীয় মুদ্রণ

২০১৬, পৃ ৪৬১। r