শোকগাথা

তারিক সুজাত

 

এক

ঘুম ও জাগরণের মাঝে

দূরত্ব কতোটুকু?

কেউ বলবে

এক চুলও না,

আমি জানি মহাদেশ!

– আমরা কি জেগে আছি?

 

দুই

পতাকায় আচ্ছাদিত মুখ,

অজস্র কণ্ঠে একই গান

তবু কেন আত্মায় মর্মরিত সুরে

তোমাকে পাই না দেশ!

তোমার শিয়রে

এই পোড়া দেহখানি রাখি।

 

এইমাত্র আগুনে পুড়েছে যে

সে তো তোমারই সন্তান,

দুফোঁটা অশ্রু দাও মা

 

 

 

 

তোমার কোলে এই জন্মে যেন

আরো এক ফোঁটা বাঁচি।

 

 

তিন

এতো আলো

কালো অন্ধকার কারাগারে,

মুক্ত প্রান্তরে

ছোপ ছোপ দাগ আহত প্রহরের

এরই মাঝে

সূর্যাস্ত সূর্যোদয়…

 

তুমি দেশ,

তোমাকে বিবস্ত্র করে যারা

তাদের ছদ্মবেশ যেন

উন্মোচিত হয় প্রজন্মান্তরে।

 

তোমার সন্তান আজ

তার প্রতিবিম্ব দেখে

রক্তমাখা ভাতে!

চার

এখানে জন্মভূমি

আমার ঠিকানা!

উত্তরপুরুষ জেনো

এ-মাটিতেই

আমাকে হত্যা করেছে

আমার স্বজাতির ভাই কোনো।

এ যেন খেলাঘর –

হত্যা হত্যা খেলা!

ট্রেনলাইন থেকে সন্তর্পণে

খুলে নেয়া হলো ফিশপ্লেট,

ধাবমান ট্রেন –

কক্ষচ্যুত নক্ষত্রের মতো

গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে অন্ধকার গহবরে…

মুহূর্তেই একপাল নর-নারী

মাংসপিন্ডের স্তূপে পরিণত হলাম,

মৃত্যুর ছায়ার নিচে দেখলাম

কালো রাজনীতির ভয়াল থাবায়

খুলে যাচ্ছে একটি জাতির মেরুদন্ড!

মৃত আমি নিজেকে প্রশ্ন করি

‘মা তোর বদনখানি মলিন হলে’

আজো কেন নয়নজলে ভাসি?

এখানে জন্মভূমি

আমার ঠিকানা!

তোর পুণ্যে জন্ম নিয়ে মা

এই মাটিতেই যেন আরো একবার মরি।

 

পাঁচ

চিরদিনের ‘তোমার আকাশ তোমার বাতাস’

যে সুরে বাজতো প্রাণে

সে-সুরে আবার বাজি

এসো ভাই, এসো বোন

একই মায়ের ললাট ছুঁয়ে

একসঙ্গে বাঁচি।

 

নম নম নম বাংলা

সালাম বাংলাদেশ…