সবুজ আকাশ

পারভীন সুলতানা
বাজারের ধোঁয়া ওঠা চায়ের উষ্ণতায় জমিরউদ্দীন টের পায় না – বাইরে শীতের রাত জুতমতো জমাট বেঁধেছে। ইলেকট্রিসিটির হলদে আলো টপকে সে যখন পথ সংক্ষিপ্ত করার তাগিদে ক্ষেতের আল ধরে সামনে অগ্রসর হয়, তখন আসমান-উপচানো চাঁদের পশর থাকে একমাত্র ভরসা। পর্যাপ্ত সার আর ডিপ টিউবওয়েলের পানি খেয়ে-খেয়ে আমন ক্ষেতগুলোর এখন ভরা যৌবন। সবুজ চিকন শরীর ছিঁড়ে ফেঁড়ে ডাঁটালো ধানের শীষের ভারে সমৃদ্ধ গাছগুলো তবু ঋজু ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল প্রান্তরজুড়ে। রাতের মিহিন নির্জনতায় ফজল মিঞা, ধনু শেখ, মোন্নাফ খাঁদের সমস্ত জমিন গলাগলি করে মিলেমিশে একাকার এখন। ধানগাছের সতেজ উচ্চতায় আলগুলো
পর্যন্ত অদৃশ্য হয়ে গেছে। ষাট-উত্তীর্ণ জমিরউদ্দীনের খোলা কান দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া ঢুকে তাকে শীতার্ত করে তোলে – আর এট্টু আগে রনা দেওনের কাম আছিল – কথাগুলো ভাবনায় আসে তার। ঘরে অবশ্য বউ নেই যে, দরজা খুলেই মুখ কালো করে ঝনাৎ করে উঠবে – এতডা দিরং কইরা শীতলা রাইতে কেউ আসে। দিন বিশেক আগে লোকটার স্ত্রী-বিয়োগ হয়েছে। অবশ্য কুড়ি দিনের মধ্যে কাঁচা শোকের ওপর মশারির মতো পাতলা আবরণ পড়ে  গেছে একটা। নির্জনতার জোরালো বাতাসে তা কখনো-সখনো এদিক-ওদিক সরে। বয়সের তুলনায় জমির উদ্দীনের বেঁটে-খাটো শরীরটা শক্তপোক্ত বলা যায়। মূলত স্ত্রীর রুহের মাগফিরাত উপলক্ষে জিয়াফত বিষয়ক কথাবার্তার দরুন আজ সময়ের ব্যাপারে সে বেখেয়াল হয়ে উঠেছিল।
আজকাল সন্ধ্যার পর বাজারে বসে চা খাওয়া ও আড্ডা মারাটা জমির উদ্দীনের কাছে রীতিমতো বিনোদনের পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। ইদানীং এলাকার কিছু বিশিষ্ট লোকজন বা উঠতি ছেলে-ছোকড়ার দল তাকে সালাম-টালাম দেয়। কেউ কেউ সাধাসাধি করে চা’টা-পানটা খাওয়ায়। এর কারণ অবশ্য তার দুই ছেলের কামাই-রুজি। বড়জন টিঅ্যান্ডটির লাইন অপারেটর হয়ে ঢুকলেও ইউনিয়নের নেতা হয়ে ঢাকার খিলক্ষেতে তিনতলা বাড়ি বানিয়ে ফেলেছে। ছোটজন ম্যাট্রিক পাশের পর নেভি ক্যাডেটের ট্রেনিং করে কীভাবে কীভাবে যেন বিডব্লিউটিসিতে হুইল শুকানি হয়ে ঢুকে নানান  কায়দা-কানুনে এখন জাহাজের ফার্স্টক্লাস মাস্টার। জাহাজে থাকে বলে বউ-বাচ্চা বাড়িতেই থাকে। বেতন-টেতন যেমন হোক বাড়তি আয়েই বছর-বছর নতুন জমি-জিরাত কিনছে। বলতে গেলে জমির উদ্দীন এখন সম্পন্ন গৃহস্থ। জংধরা একচালা টিনের ঘর হাফবিল্ডিং হয়ে গেছে। অবস্থা ফিরলেও জীবনযাপনের অভ্যাসে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি জমির উদ্দীনের –
– তার ঘরে তিনসেরি ভাতের ডেকচিতে এখনো ইরি-ফাইভ এইট ধানের মোটা-মোটা চালই রান্না হয়।
– গরুর ঘাস-বিচালি কাটার কামলাটা না এলে জমির উদ্দীন নিজেই এ-কাজটা করে। তখন তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই, সে এ-বাড়ির কর্তা।
– দুই-তিনটা তোলা পাঞ্জাবি (পাজামা পরতে এখনো সে সংকোচ বোধ করে) থাকলেও ছেলের বাসায় বা কোনো কুটুমবাড়িতে যাওয়া ছাড়া এগুলো পরা হয় না। বাজারে যাওয়ার সময় পুরনোগুলোই ব্যবহার করে।
হাঁটতে-হাঁটতে হাত বাড়িয়ে কয়েকটা ধান ছিঁড়ে টিপে দেখে জমির উদ্দীন। চুউচ করে সাদা দুধ বেরোয় খানিকটা, নাহ্ পুরুষ্ট হইতে আরো কিছু সময় লাগবো! অভিজ্ঞ কৃষকের বুঝতে কষ্ট হয় না, দুধটা পাঞ্জাবির হাতায় মুছতে গিয়ে একটু ইতস্তত করে সে – চাঁদের ফর্সা আলোয় পাঞ্জাবির প্রায় হলদে হয়ে যাওয়া রংটা চোখে ধাক্কা খায়। – জবর মইলা হইছে কুর্তাখান। কাইল ধুইতেই হইবো। কথাটা না ভেবে পারে না জমির। ধানের দুধে তর্জরী আর বুড়ো আঙুল দুটো চটচটে হয়ে উঠলে মুখের গর্তে আঙুল পুরে চুষে নেয় সে। চিকনা একটা স্বাদে জিভের ডগা চনমন করে ওঠে। আশপাশের খন্দগুলোর প্রায় সব জমিন তাদের নিজের। ফসল উঠলে শ-মণ ধানের কম উঠবে না। মনটা হঠাৎ করে সাহসী হয়ে ওঠে। বাজারে যাওয়ার জন্য  চিকন কাপড়ের সাদা একটা পাঞ্জাবি বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। এতক্ষণ ধরে চা-দোকানের টিউবলাইটের নীল দেওয়া ফর্সা আলোয় এই বদসুরত ময়লা কুর্তা পরেই যে সে গালগল্প করে এসেছে, এটা ভেবে শরমিন্দা হয় জমির উদ্দীন। লজ্জাটাকে ঢোক দিয়ে গিলতে গিয়ে সে টের পায় জিহ্বায় ধানের দুধ লেগে থাকায় একটু আগে খেয়ে আসা চায়ের স্বাদটা নষ্ট হয়ে গেছে। এবং চায়ের উষ্ণতা নাকি ধানের চিবানো স্বাদটা বেশি মজাদার এই নিয়ে খানিকটা দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। কিন্তু পুবদিক থেকে আসা কুয়াশাভারী একটা ঠান্ডা বাতাস জমির উদ্দীনের দুই কানে, গালে বেশুমার শীত ঢেলে কাঁপন ধরালে তার বুড়ো হাড্ডি কনকনিয়ে কেঁদে ওঠে। এইসব ফালতু ভাবনায় মগ্ন থাকতে চাইলেও ঠান্ডা বাতাস রেহাই দেয় না লোকটাকে – আবারো একটা ঝাপটা মেরে আশপাশেই ওড়াউড়ি করে। মাফলার না আনার অনুশোচনায় আরো টিট্টির করে কাঁপে সে। এর হাত থেকে উদ্ধার পাওয়ার একমাত্র উপায় দ্রুত পা চালানো। এই কাজটা করার সঙ্গে সঙ্গে জমির উদ্দীন অতিদ্রুত গায়ের জাম্পারখানার হাত দুটো লম্বা করে তাতে হাতের তালু দুটো ঢুকিয়ে আজান দেওয়ার মতো দুকান বরাবর চেপে ধরে। ঠান্ডা কিছুটা বাগে আসতেই আবার ভাবনার হিজিবিজি শুরু হয় – স্ত্রীর মৃত্যুশোক কাঁচা থাকতেই জমির উদ্দীন ছেলেদের কাছে প্রস্তাব তুলেছিল – বাবা সকল তুমরার মা একজন নেকদার জেনানা আছিল, তাঁর আত্মার শান্তির জইন্য একটা দোয়াখায়েরের আয়োজন করতে হইব। লোকজন যতো বেশি হইবো মৃতের আত্মার মাগফেরাতের জন্য আল্লার দরবারে ততো বেশি হাত উঠবো। রুহের উপরে শান্তি নাজাত হইবো। বড় ছেলে একটু আপত্তি তোলে এতে – বাবা, এইসব দাওয়াত, চল্লিশা কইরা লোকজন খাওয়ানো – ধর্মে এর কোনো নির্দেশ নাই, তারচেয়ে এতিমখানায় বাচ্চাদের খাওয়া পাঠায়া দিলে বেশি ভালো হয়। কথাটা শুনে জমির উদ্দীন উষ্মায় জ্বলে উঠলেও তা সংযত রেখে বুঝদার ভঙ্গিতে বলে – তুমরার মারে চিনে এই এলাকার মানুষ, তার জইন্য দরদ আছে এই গেরামি মানুষের, এতিমখানার পোলাপানরা দোয়ার কী বুঝে? এলাকার মানুষজন যতোটা খাস দিলে দরদের সঙ্গে আল্লাহপাকের কাছে হাত পাতবো ছুটকা-ছুটকা বাইচ্চা-কাইচ্চা তার কী বুঝবো? আমি যা কই হুনো, বড় একটা দোয়াখায়েরের জইন্য মিলাদের ব্যবস্থা করো। বিষয়টা স্পর্শকাতর বলে ছেলেরা আর আপত্তি করে না।
গরু জবেহ হইতেছে দুই-দুইডা। ভাত রান্ধা হইবো দুই মণ চাউলের। বাড়িতেই পরেশ ময়রা ১০০ পাতিল দই পাতবো। দেড়শোখানা মুরগির রোস্ট আর ২০ কেজি চিকন আতপ চাউলের পুলডি রান্ধা হইবো বিশিষ্টজন ও আলেমগণের জইন্য। এছাড়া ২৫ কেজি মাষকলাই ডাইল পাকানো হইবো সঙ্গে শউলমাছ তো থাকবই…। এই সমস্ত সুখকর ভাবনা ঘুরেফিরে নাচন জুড়ে জমির উদ্দীনের মগজের মধ্যে। সেই বোধ রক্তপ্রবাহের মতো ছড়িয়ে পড়ে মনের অলিগলিতে। গাঢ়, তৃপ্তিময় ভাব ওঠা শ্বাস-প্রশ্বাসে তার কাছাকাছি বওয়া বাতাসও যেন উষ্ণ হয়ে ওঠে। বাড়ির উঠানে লাল, নীল, সাদা, সবুজ রঙের প্যান্ডেল বাঁধাছাঁদার দৃশ্যটা কল্পনা করে জমির উদ্দীনের ঘাড় আবেগে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে খানিকটা। মরহুমা স্ত্রীর জীবিত ছবিটা কল্পনায় চোখের সামনে ভেসে উঠলে জমির আবেগপ্রবণ হয়ে তার অদৃশ্য উপস্থিতিকে স্বীকৃতি দিয়ে তার উদ্দেশে বলা শুরু করে – তজেরন, তুমি বড় নসিবওয়ালি গো। পুলারা তুমার রুহের শান্তির লাইগা কত খরচাপাতি, কত পেরেশানি কবুল কইরা নিছে – যেন হাওয়ার সঙ্গে কথা বলে লোকটা। দিলের মধ্যে আল্লাহপাকের দরবারে শোকর জানানোর তীব্র একটা তাগাদা টের পায় সে। জাম্পারের হাতায় ঢোকানো করতল দুটো বের করে দোয়ার জন্য ওপরে ওঠায়। তার মেলে রাখা ১০ আঙুলের ডগা ভিজিয়ে কুয়াশাভারী বাতাস যাওয়া-আসা করলে দোয়া অবস্থাতেও তীব্র শীত অনুভব করে। তখনই ধানক্ষেতের চিরল অন্ধকারে একটা সড়সড় শব্দ হয়। এতে প্রচণ্ড ভয় পায় জমির। তজেরননেসার রুহ কী শোকরানা জানান দিলো? কিন্তু প্রিয়তমা স্ত্রীকে যেন চোখের সামনে দেখতে না হয় এ-আশঙ্কায় চোখ বন্ধ করে অভ্যস্ত পথে আন্দাজে হাঁটা শুরু করে। ভয় তাড়ানোর উপায় হিসেবে আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করতে গিয়ে জমির উদ্দীন আচমকা টের পায়, জিভটা দুই সারি দাঁতের মাঝখানে আটকে আছে। অস্থির ভয়ে বন্ধ দুচোখের পাতা খুলে যায় তার। সে দেখে আমনক্ষেতের সবুজ প্রান্তরে ভরা যৌবনময়ী তজেরননেসা দাঁড়িয়ে আছে। মুখে লেপ্টানো শরমের বেগুনি একটা আভা। এই দৃশ্য দেখে, জমির উদ্দীন প্রীত হওয়া তো দূর, আতঙ্কে বয়সী দুপায়ে ভর দিয়ে প্রাণপণ দৌড়ানোর চেষ্টা চালায়। কিন্তু পায়ের পাতা কই তার? শীতের খটোমটো শুকনা আইলে এতো প্যাঁক-কাদা আসলো কী কইরা? দুই পা-ই কাদায় গেঁথে আছে। নিজেকে বড় অসহায় লাগে। তজেরনকে ডাক দেবে নাকি? বলবে নাকি, বিবিজান মেহেরবানি করো, আমার নজরের সামনে থাইকা অদৃশ্য হও। বাঁইচা থাকতে তুমারে যত গালিগালাজ আর মাইর-ধইর করছি তার লাইগা মাফ করো, তুমার এই জিন্দারূপ আমার সহ্য হইতেছে না। মিনতি করি…। সম্ভবত তজেরনের সুরত ব্যথিত হয় এতে। মিহিন কুয়াশার ভেতর অদৃশ্য হয়ে যায়। পাগুলো আবার শুকনো ক্ষেতের আলে খুঁজে পায় জমির উদ্দীন। তবে কাদার ফাঁদ থেকে উদ্ধার পেতে না পেতেই আরেক আপদের আবির্ভাব ঘটে। তিন-চারটা কালো মিশমিশে চামচিকা অ্যারোপ্লেনের মতো তার মাথার ওপর চক্কর দেওয়া শুরু করে। কাছের কোনো গাছ থেকে ঠিক তখনই কর্কশ গলায় তক্ষক ডেকে উঠলে জমির উদ্দীনের জ্ঞান লোপ পাওয়ার উপক্রম হয়। তবে এ-সময় জিভটা দাঁতের ফাঁক থেকে উদ্ধার পাওয়ায় জমির উদ্দীন উন্মাদের মতো দরুদ-কালাম পড়তে শুরু করে।
শেয়ালের ডাকে সে সুরা পড়া বন্ধ করে। তার ভয় পাওয়া অনিয়ন্ত্রিত কৌতূহলী চোখ দেখে, ভরা আমনক্ষেতের পেট বরাবর হেঁটে যাচ্ছে দুইটা ধাড়ি শিয়াল। ওগুলোর গন্তব্যস্থল গ্রামের গোরস্তানের দিকে। যেখানে বিশদিন আগে তজেরনকে কবর দেওয়া হয়েছে। একটা কাঁটাওয়ালা ভয় কলিজা খামচে ধরলে জমির উদ্দীন দৌড় শুরু করে।
বাড়িতে ঢুকে অসহিষ্ণু হাতে দরজায় ধাক্কা দেয় সে। কিছুক্ষণের মধ্যে ছোট ছেলের বউ ঘুমভাঙা বিরক্ত হাতে দরজা খুলে দেয়। পুত্রবধূর ক্ষোভ-বিজবিজে মুখের দিকে তাকিয়েও স্বস্তি আসে তার। ষাট পাওয়ার বাল্বের হলুদ আলোয় জমির উদ্দীন দেখে তার সাত এবং নয় বছরের নাতি দুজন বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। সেদিকে তাকিয়ে মিইয়ে পড়া সতেজতা আবার সবুজ হতে থাকে। শীতের জন্য সমস্ত দরজা-জানালা বন্ধ। এই ভেবেও ডরলাগা ভাবটা কাটতে শুরু করে। কেবল সিলিংয়ের একটা ফুটো দিয়ে বাইরের একটুখানি চাঁদের আলো অনুমতির অপেক্ষা না করে ঘরে ঢুকে পড়েছে। জমির উদ্দীনের ভয়-খাওয়া চোখ তা সহ্য করতে পারে না – ‘কাইলই পুটিং মাইরা ফুটা বন্ধ করতে হইব।’ এ-সিদ্ধান্তে অটল থেকে সে ছেলেবউকে বলে – আইজ লাইট জ্বালায়া ঘুমাই। জব্বর শীত পড়ছে। শ্বশুরের কথায় বউ বিস্মিত না হয়ে পারে না। ঘর কবরের মতো অন্ধকার না বানিয়ে যে-লোকটা কোনোদিন ঘুমায় না, তার মুখে আজ এ কী কথা! তবে এ নিয়ে কিছু বলার ধৈর্য তার নেই। ঘুমের ভারে চোখ বুঁজে আসছে।
জমির উদ্দীনের খাটের পাশেই আরেকটা চৌকিতে নাতিরা ঘুমাচ্ছে। দুজনই মাশাল্লাহ নাদুসনুদুস আর সুন্দর ঢঙের। ওদের অসম্ভব দুষ্টমি আর দুরন্তপনায় জমির উদ্দীন প্রায়ই রাগারাগি করে। ওদের বুকের শ্বাস-প্রশ্বাসের ছন্দোবন্ধ ওঠানামা, ঘুমের ঘোরে  এপাশ-ওপাশ মোড়ামুড়ি সবই জমির উদ্দীনের জমে যাওয়া রক্তে আবার উষ্ণতা তৈরি করে। দাদা হলেও নাতিদের খুব একটা প্রশ্রয় দেয় না জমির। অতি প্রশ্রয়ে ‘ঘাড়ে উঠে’ যাওয়ার অজুহাতে খুব একটা কাছেও ঘেঁষতে দেয় না। কিন্তু নিজের বিছানা শূন্য রেখে পা টিপে-টিপে আজ ওদের দিকেই এগিয়ে যায়। সুরা পড়ার মতো তার ঠোঁট বিড়বিড় করে – ও সোনা চান্দেরা, তগোর মাইঝখানো আইজ আমারে এট্টু শুইতে দে। বৃদ্ধ তার খসখসে করতল দুটো দুনাতির মাথায় আলতো করে স্থাপন করে। ছেলে দুটো আধবোজা পাপড়ি মেলে তাকায়। তবে ঘুমে জেরবার ওদের চোখগুলো আবার ঘুমের কুহকে ডোবে। জমির উদ্দীন বেলাজের মতো এই ঘুমজাগা চোখকে উপেক্ষা করে দুই শিশুশরীরের পাশ ঘেঁষে শুয়ে পড়ে। প্রসারিত দুই হাত হালকাভাবে নাতি দুজনের শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যস্ত বুকের ওপর রাখে। ক্রমশ গভীর হওয়া নির্জন রাতের স্থবিরতা আর ভয় লাগে না তার কাছে। লালশালু কাপড়ের তুলোভরা ওমের নিচে তিনটা হৃদপিণ্ড সমানতালে ওঠানামা করে