সেই নারী : এই শিল্পী মাইকেল এঞ্জেলো

sai nari ai nari
sai nari ai nari

বাংলা রূপান্তর : সৈয়দ শামসুল হক

তুমি যদি পাথরেই গড়া তবে আমার বিশ্বাস
আমার এ-হৃদয়ের আর্তির ছোঁয়ায়
তুমি প্রাণ পেয়ে যেতে, পড়তো নিঃশ্বাস,
দৌড়ে তুমি এসে যেতে আমার দোলায়।
যদি তুমি মৃত তবে ওই ঠোঁটে ভাষাও দিতাম।
অথবা এমন যদি – জন্ম অপেক্ষায়! –
তবে আমি স্বর্গ থেকে তোমাকে তো নামিয়ে নিতাম
অশ্র“পাত করে করে দীর্ঘশ্বাস আর প্রার্থনায়।
কিন্তু তুমি রক্তমাংসে আছো যে সমুখে –
তবে এ হৃদয়-দাস আশা আর করে কোন্ মুখে!

আমি শুধু পায়ে পায়ে সারাদিন ঘুরতেই পারি।
এতে কোনো দুঃখ নেই। উত্তম এটাই!
তুমিও পুতুল নও দর্জির জন্যে যা দরকারি,
কেমন হয়েছে ছাঁট – দেখে নিতে ঘোরাই ফেরাই!
কারণটা বোঝো যদি – বোঝা তো উচিত –
তাহলে নিশ্চয় তুমি একদিন এনে দেবে সুখ।
সাপের দংশনও সারে যদি ওঝা মন্ত্রে অভিজিৎ –
আঙুরের টকে কাটে দাঁতের অসুখ।

নিবেদিতপ্রাণ কে ফেরাবে?
প্রেমের এমন শক্তি – গলে যায় নিষ্ঠুর হৃদয়।
রুক্ষতাও বাষ্প হয় করুণার তাপে –
বিষাদের বিপরীতে আনন্দের জয়।
জগতে নতুন এসে তোমার মতোই
একটি হৃদয় যদি নাই পাই তবে –
আশা আর কই? –
রূপের পিপাসা তবে কোথায় জুড়োবে?
খাপ যদি সরল দৈর্ঘ্যরে
কখনোই নয় সেটি বাঁকা খঞ্জরের॥

তুমিহীন যদি যায় একটিও দিন,
শান্তিহীন বড় স্বস্তিহীন।
যখন তোমাকে দেখি – থাকতে কি পারি?
খাদ্যের সমুখে যেন এক অনাহারী।
এতটাই প্রেম! – যেন আমি
ঊর্ধ্বে ওই তারালোকগামী।
তবে এও জানি যারা এতটাই উদ্বেলিত হয় –
ঊর্ধ্বে উঠে তারাই তো বাক্যহারা হয়।
এ নয় কিছুই নয় – ছন্দ আর মিল।
তুমিই আমার প্রেম, তুমিই নিখিল।

মনে হয় নাম আজ মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভালোমন্দ যাই হোক আমাকে তো সবাই জেনেছে।

কেবল আমিই জানি আমার দুচোখে
তোমার সৌন্দর্য কবে কীভাবে যে ঢোকে।
সরু গলা একটি বোতলে –
এবং পেটটি তার মোটা গোল হলে,
দ্রাক্ষা ঠেসে ঢোকাবার পর
গেঁজিয়ে তা ওঠেই সত্বর।
তেমনি তোমার মূর্তি – প্রাণে এই রূপে।
ভাবতে চাই না আমি, কীভাবে বেরোবে!

ভেবে দ্যাখো, হাপরের ভেতরে বাতাস!
চাপ দিলে বেরোবার পায় অবকাশ।
কিন্তু সেই একই চাপে পরমুহূর্তেই
হাপরের মুখ বন্ধ হয়ে তো যাবেই –
বাতাস আবার তার পেটের ভেতরে!
তুমিও যে এ-চোখের খোলা পথ ধরে
এসেছো গভীরে কবে আমার আত্মার –
দ্যাখো আর পথ নেই বেরিয়ে যাবার!

মাটি ছেড়ে বল ওঠে তাকে লোফালেই –
আমিও আকাশ পাই তুমি তাকালেই!

একটি প্রেমিক আর বন্দনায় তারই
কখনো কি খুশি থাকে রূপবতী নারী?
সারাক্ষণ এই ভয়ে বুক তার কাঁপে,
এমন রূপের খ্যাতি – কবরেই যাবে।

এত যে আমার স্তব আর ভালোবাসা –
গন্তব্যে পৌঁছুবে – সে তো খঞ্জের দুরাশা!
আমার মেধাবী হাত – কাজে তো এলো না –
এত যে কাতর তবু হৃদয় পেলো না।

আকাশে যে সূর্য উঠে রোদ ঢেলে যায় –
শুধু একজন নয়, সকলেই পায়।

সে কোন্ আগুনে তুমি আমার হৃদয়
কীভাবে পোড়াও সেটা বোধগম্য নয়।
আর ওই চাহনিতে আগুন তোমার –
এত ভেজা চোখ আর অশ্র“তে আমার
কবেই নেভার কথা, আর দাবানল
অশ্র“তে সেটাও কবে হয়ে যেতো জল।
কিন্তু কী উপায় বলো জলেই আগুন!
যাই করি – ব্যর্থ হয় – দ্যাখো কী করুণ।
যে-রোগ নিজেই সেধে, চিকিৎসা কী তার?
তবে কি আগুনই ছিলো প্রার্থনা আমার?

হৃদয়ের এও এক পরম বিস্ময়
আগুনেই আগুনের উপশম হয়!