স্বপ্নহীনতার দিনলিপি

জাহিদ হায়দার

 

আমি দেখেছি,

জন্মান্ধরাই রূপকথা আর রৌদ্রের কবি।

আমাকে বলেছে,

মেঘেরা মলন দেয় নীলের শস্যকে;

ভোরের নদীরা জানে,

প্রথম স্বপ্নের জন্মদিন কবে।

 

তোমাকে না দেখেই কেবল অন্য মুখে শুনে,

তোমার পুরাণ সারাদিন বলে গেল তারা।

 

কে প্রথম স্বপ্ন দেখেছিল,

নারী, না পুরুষ? নাকি এক সাপ?

স্বপ্নকথা বলেছিল ঘুম ভেঙে গেলে,

হয়তো বা গোলাপের মৃত্যু দেখে।

 

অমরাবতী বলেছিল ভৈরবীস্বরে,

রাত্রির বেহালায় সে-গল্প বলেছিল নদী

: যাও, সম্মুখে নীলগিরি আছে,

নক্ষত্রের স্মৃতিরৌদ্র আছে;

রোপণ করেছি বৃক্ষ,

উচ্চতম ডাল থেকে এনে দাও আপেলের মধু।

 

তুমি কি কখনো করেছ বহন

জাগরণ আর ক্ষয়িষ্ণু ছায়ার ভার?

কী যে অপরূপ কঠিনের গান!

 

এই দুঃখদেশে তুমি কি প্রান্তিক,

তুমি কি সমার্থশব্দকোষ?

 

সকালের লাল ঝর্ণা শুনছে না,

গলগল উচ্ছ্রবন কাঙালক্রন্দন;

পাল তোলে অাঁধারের শীত,

আলোর হঠাৎ ক্ষণদ্যুতি;

শূন্যতার দরজায় নেড়ে যাচ্ছি কড়া।

 

প্রান্তিক! কোন দিক নয়?

যারা পথ করে হাঁটে,

ছেঁড়ে বনফুল;

বেদনার মুখে সামান্য হাসে,

সেই স্বপ্নপুর, সূর্যের লক্ষণ কতদূর?

 

যখন শেখাওনি অক্ষর,

আমাদের ভালোবাসতো নদী,

বনভূমির সবুজ নীরবতা।

কেন যে দেখালে রাত্রির শিয়রে পূর্ণ চাঁদ?

আমি কোনো ঢেউয়ে কখনো লিখিনি বিদায়।

 

কত বিমূর্ত ভাঙলে দেখা যাবে রূপ?

কুঁড়ায় বাঁচার শস্যধ্বনি কারা?

কেঁচোর সঙ্গে বন্ধুসুলভ কথা বলে কার কণ্ঠস্বর?

তাদের সত্য ইতিহাস তুমি কখনো শোনোনি।

 

বীজের সকাল পিষে যায় রক্তমাখা চাকা,

কখনো যায় না পিষে উচ্চতার শীতলতা;

যাপিত ক্ষতের দিকে তোমার সাবলীল না-দেখা;

আর বিস্ময়হীনতার রাজসিক অবহেলা।

 

যারা বলে গেল, তোমাকে শাশ্বতী,

এই পাতাঝরা মাঙ্গলিক;

বলে গেল, এই সূর্যোদয় তিমিরের চুলো,

তারা নিয়ে গেছে সব দেখার পদবি।

 

না জাগরণে, না ঘুমের ভেতর

আমি কোনো স্বপ্ন দেখিনি;

ক্ষত, শুধু ক্ষত, শূন্যতার নাচ

আর আতঙ্কের দূতাবাস।

 

আমি চেয়েছি এমন একটি বাগান,

শুধু যার একটি গোলাপ

আমার স্বপ্নের ভার

ভোরের জন্যে বহন করতে পারে।

 

একবার বলে যাবে,

কী রূপ দেখেছিলে স্বপ্নের?

আমি জানি, স্বপ্ন দেখাও আমার শ্রমের অভিজ্ঞতা।

 

আমাকে কেন বারবার বলা হয়,

অন্যের স্বপ্নের বাথান দিয়ে একাকী হেঁটে যেতে?

এপ্রিল-জুন ২০১৪