কবিতা

  • জীবন-শরীর নিয়ে বস্তুত বিপাকে

    হাসান হাফিজ শরীর তো এক প্রকার সরীসৃপই। পুষ্টি ওম শর্করা আমিষ চর্বি েস্নহমার্কা নানারূপ খাদ্য তার চাই, আরো চাই বিপরীত শরীরের লুণ্ঠন কিংবা উপভোগ, রীতিনীতি নৈতিকতা হয়ে ওঠে বাধার প্রাচীর কোনো লঙ্ঘনের ইচ্ছা কাম জেগে ওঠে মনেরই নিভৃত কোণে, যার কোনো ব্যাকরণ ঔচিত্য বা অনৌচিত্য বোধ ইষ্টানিষ্ট জ্ঞানগম্যি নাই… জীবন তো একপ্রকার খোলামকুচিই। বানের প্রবল…

  • তিনটি কবিতা

    হুমায়ুন আজাদ হাত সেই কবে থেকে বাড়িয়ে রেখেছি হাত প্রতিটি রেখায় ভ’রে আছে শূন্যতা কেটেছে হাজার সূর্য এবং রাত দুই হাত ভরে জমে আছে নীরবতা। হাত ভরে আছে ঠান্ডা দীর্ঘশ্বাস হাহাকার করে হৃদয়ে সবুজ ঘাস বাতাসের স্বরে দিনরাত তাকে ডাকে অশ্রুর মতো যে আছে অফেনবাকে। ইচ্ছে করে তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে, ইচ্ছে করে টফির…

  • ব্যক্তিগত জিরো আওয়ার

    খোরশেদ বাহার হেমন্তের এই সকালে কুয়াশা আমার শরীর ছুঁয়ে যায় আমি লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছি যেমন তুমিও দাঁড়িয়ে ছিলে চৌধুরীদের বাড়ির গেটে। তখন ছিল রাসউৎসব, আজ আমি একটি ভিসার জন্যে। কতদিন দেখা হয়নি দুজনের। এবার দেখা হলে বলতাম লাল পাহাড়ের দেশ আর কতদূর সুনীলদা? জানতে চাইতাম হাজার না জানা কথা। মহারাজের গালে পোতা গোলাপ গাছের…

  • মেগাসিটি

    সুজন হাজারী ভোরের সূর্যের দুয়ার খুললে মেগাসিটির ট্রাফিক মোড়ে সিগন্যাল স্ট্যান্ডে সংকেতবাতি জ্বলে ওভারব্রিজের আন্ডারগ্রাউন্ড সিঁড়ির নিচে ব্যথাতুর চাতুর্যে গেঁথে ফেলা অন্ধকার আড়ালে যাপিত জীবন রাত্রির নিষিদ্ধ কাব্য লেখে। অন্ধকার সুবর্ণ আলোর মিছিলে ঢ্যামনার সোহাগ মুছে যায় রমনা পার্কের বেঞ্চিতে বসে উঠতি যুবতীরা খদ্দেরের প্রত্যাশায় চিনাবাদাম চিবায় ভেংচি কেটে বেহায়া পথিকের দৃষ্টি কাড়ে কাছে ডাকে…

  • আনন্দ উড়ান

    মৃণাল বসুচৌধুরী তোমার প্রশ্রয়ে যখন অলস মেঘ আকাশরেখার পাশে জমে থাকা স্বপ্নকণা ছুঁয়ে নেমে আসে আমাদের আয়ুহীন চোখে যখন নিসর্গ থেকে বিন্দু বিন্দু সুখ নিয়ে উড়ন্ত পায়রাগুলো নেমে আসে অন্ধকার ছাদে পরিশ্রান্ত বিমর্ষ শরীরে যখন বৃষ্টির শব্দ ছদ্মবেশী মারীচের তীব্র ছোটাছুটি নির্জন দালান জুড়ে পাখির পালক স্মৃতিজলে অভিমানী ম্লান যখন আপসহীন বিষণ্ন কপালজুড়ে বালিয়াড়ি মরুঝড়…

  • চোখে অনাদি জল

    শিহাব সরকার বিজন পাহাড়ে হেমন্তের হিমকুয়াশা বনপথে একা হাঁটি, দূরে আলোঝলমল সার্কাসে ধুন্ধুমার বাদ্যব্যান্ড অরণ্যমন্দিরে নিভু-নিভু লণ্ঠন, সমস্বর স্তবগান। শুনছো না ঝোপেঝাড়ে পিশাচের কানাকানি ডিস্কোতে মুখোশের আড়ালে দৈত্যদানো, শহরে চলছে খুব সান্ধ্যভাষা, গূঢ় সংকেত ভিড়ের মধ্যে অচেনা মুখ এই জাগে, হারায়। বনের ভিতর জমাট ঠান্ডা, তার চেয়ে ভয় আগুনের পটে রক্তের পিচকিরি অন্ধকারে ক্ষুধার্ত কালো…

  • রেলব্রিজে একা

    হারিসুল হক আস্তে আস্তে কমে আসছে চোখের জোর। বাঁ-চোখে অত আর ভালো দেখতে পাই না ক্রমে ক্রমে ডানটাও যাবে হয়তো বা (যাবার কি কোনো রোডম্যাপ, দিনক্ষণ ঠিকঠাক থাকে) আর অত দেখেই কী লাভ সুনীলদা – শুধু কষ্ট শুধু কষ্ট সহস্র বঞ্চনার নদী আমাদের ঘিরে বসতবাড়ির উঠোন জুড়ে খালি উইঢিপি অরণ্যে একাকী কাক মগডালে ঠোঁট  ফাঁক…

  • লসঅ্যাঞ্জেলেসের পথে

    কাইয়ুম চৌধুরী কুয়াশা কেটে যাওয়া রোদ মাখা শস্যক্ষেত যতদূর চোখ যায় দ্রুত অতিক্রম করে যাই জলপাই বাগান হেমন্ত হাওয়ায়। দূর পাহাড়ের সারি সোনালি তৃণে ঢাকা মুক্ত আকারে নীলাভ সবুজে জল টলটল তুলির ডগায় স্বচ্ছ রঙেতে আঁকা। সারি তোলা দ্রাক্ষাকুঞ্জ সমান্তরালে অপস্রিয়মাণ তৈরি করে উল্লম্বরেখা সিঞ্চিত জলধারা ঘূর্ণায়মান। বাড়িঘর, নদীনালা বিদ্যুৎ টাওয়ার, গোলাবাড়ি দিগন্তছোঁয়া চারণভূমি হলুদ…

  • না, শোকগাথা নয় (সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে উৎসর্গিত)

    অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত কখনোই তুমি চাওনি তোমার মৃত্যুসংবাদ চৌদিকে চাউর হয়ে যাক, সেজন্যেই বুঝি তোমার চলে-যাওয়ার সময়টায় পর-পর চারদিন জুড়ে কলকাতায় কোনো কাগজ বেরোয়নি, বেরোলেও বিলি হয়নি, আর হকারের সেই অপ্রত্যাশিত ছুটির উল্লাসে সুন্দরবনের আশেপাশে সপরিবারে বেরিয়ে পড়েছিল সবুজে সুনীলে পিকনিকের মহানন্দে Ñ তুমি যেরকম চেয়েছিলে। আমি তখন এলাহাবাদে প্রবাসী বাঙালিদের পূজার মণ্ডপে তোমার কবিতা নিয়ে…

  • কূজন

    পিয়াস মজিদ মেঘ ও রৌদ্রের গ্রন্থিমূলে বয়ে যায় কত কবরদ্যোতনা। সে হাওয়ার কূলেই তো যাবতীয় কৃষ্ণ জাগরী, স্বপ্নের দ্গি¦লয়। এমন ঈমনকল্যাণ-বসন্তভৈরবী! তবু রাত্রি দুপুরের রাগ ওই তো আমার অনন্ত নিদ্রাবেদিতে। কাননে কাননে জলকরবীর ঢেউ; পুষ্পবহ্নি বেজে ওঠে কারো সুবাসিত করতলে। বন্দরে ভিড়ল রক্তমুখী চাঁদনী।

  • বোট স্টেশন ফায়ার স্টেশন

    জলধি হালদার এই জলপ্রান্তরের গোধূলিসন্ধিতে দুরকম ঘণ্টি বাজে একটি লাগাতার, একটি সেভেন শর্ট ওয়ান লং। ঘণ্টি বেজে উঠলেই জাহাজের আনিতে স্পষ্ট রবিনসন ক্রুশো। বুকে লাইফ জ্যাকেট বেঁধে দৌড় দৌড়। বোটের প্ল্যাগ এঁটে, ল্যাসিং খুলে স্টার্নসিট, বোম্যানেরা তৈরি হারবার পিন সরিয়ে বকের গলার মতো ডেভিট ঝুঁকে পড়ে জলের দিকে। আনিতে গোঁফদাড়িওলা ঝাঁকড়াচুলো ক্রুশো আপন মনে হাসছে।…

  • প্রিয়ভাষিণীর টিয়ে

    মারুফ রায়হান একটা নিষ্পত্র গাছে বসেছিল কি মিষ্টি টিয়েটি উজাড় বৃক্ষের দেশে কবিমন সবুজরহিত বীজ বন্ধ্যা হলে বুঝি মৃত্যুথাবা, বিস্তৃত বিপন্ন সুগন্ধে ভরুক মৃতপুষ্প – চেয়েছিল বৃক্ষসখা বাতাস বিনষ্ট হলে, বিষ মিশ্লে স্নেহার্দ্র মাটিতে মুছে যাবে উদ্ভিদের সুপ্রকাশ – জন্মইতিহাস মেঘে মেঘে ডানা মেলা পাখির ঠিকানা দৃঢ় ডাল বাঁচে যদি প্রাজ্ঞ গাছ, সুরও জাগে টিয়ের…