কবিতা

  • আমরা, জলে-স্থলে-ছায়াপথে

    সংকীর্ণ কক্ষে নয়, রয়েছি কক্ষপথে, পৃথিবীমঞ্চে পৃথিবী ছাড়িয়ে ওই আকাশগঙ্গায়ও মঞ্চে আমরা দুজনই কুশীলব মনুষ্যদর্শকে নেই আগ্রহ আমাদের শুনবে ও দেখবে সৃষ্টিজগৎ আর অদৃশ্য ক্ষুদ্র প্রাণ এমনকি সাগ্রহে লক্ষ করবে গ্রহ-তারকারাজি স্থলভাগে আমাদের মঞ্চ চারদিক খোলা বাতাস ছাড়াও আমাদের ছুঁয়ে যায় মৃদুমন্দ আলো কখনোবা স্পর্শকাতর অন্ধকার, অবাক নৈঃশব্দ্য আমরা কী বলব, বা বলি! জ্বলে ওঠে…

  • জঞ্জাল 

    এত আবর্জনা জমছে!          বলতে পারছিনে!                   ফেলতেও পারছিনে! দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে –        আবর্জনার মধ্যে বসবাস!                 আবর্জনা ফেলল কে? জানার পরও তা বলতে পারছিনে! পরিবেশ এতটা        অসহনীয় হয়ে উঠছে! পরিচ্ছন্নতার দিনগুলো চলে গেল!     ঝকমকে থাকার দিনগুলো চলে গেল!      পরিমার্জিত থাকার দিনগুলো চলে গেল! ধোপদুরস্ত থাকবে শুধু বিশেষ এলাকার মানুষ? আস্তাকুঁড়…

  • পরিমাপ

    সে তার জীবনকে মেপেছিল ফেসবুক-ইন্টারনেটে মধ্যরাতে আকাশে আকাশে তারার নাচন অসংখ্য অজানা ঘাতক ছুরি হাতে ঘোরে –           হৃৎপিণ্ডে হৃৎপিণ্ডে ঝড়ের কাঁপন; সবকিছু বিজ্ঞানের রহস্যের আদি অন্ত বলে জানি। কিন্তু সে হেঁটেছে বাঙালির আদি অন্ত বলে জানি; কিন্তু সে হেঁটেছে বাঙালির অন্তরের জলাভূমি ঘেঁষে – সে দেখেছে শস্যক্ষেত লাউয়ের মাচা ছিন্নভিন্ন           করে গড়ে ওঠা…

  • দূতকুমার

    ধর্মগ্রন্থের মতো দেহ সংরক্ষণ করতে অতীতে ইচ্ছে হলে নতুন ভাষার শিহরণে মেলে ধরতে মধ্যরাত আবার রেহালে রেখে দিতে দিনের পর দিন অতীতে তোমরা ছিলে এমনই অপঠিত গ্রন্থের অক্ষর দূর থেকে আমরা রেহাল হতে চাইতাম বজ্রের গতির অলক্ষে রক্ষা করতে ধীরে ধীরে গড়ে তোলা তোমাদের দ্রাক্ষাবন আমরাও ঝড়ের আগে যেতাম বোশেখ মেলায় প্রতিশ্রুতির লাগাম চড়িয়ে কিনে…

  • পাথরের ঘুম

    মন্ত্রমুগ্ধ হই আমি, ভালোবাসি বলে মনের ভেতরে খুব ভাংচুর চলে বুকে রেখে ভাঙা কাঁচ পা ফেলে চলি অযুত অবহেলায় নিজে নিজে জ্বলি পড়ে থাকা ছাই কেউ দেখে না তো চোখে বিষাদ পতাকা ওড়ে অনিশেষ শোকে সেই শোক পাথরের মতো হয় ভারি শোক ভেঙে আমি আর জল হতে পারি? ক্ষয় হতে শুরু হয় মনের গোপনে সেই…

  • ব্যর্থ মানচিত্র

    বাতাসের শরীর বেয়ে ভেসে আসা ডানা ভাঙা পাখির আর্তনাদ স্তব্ধ করে বেদনায় লীন হয় বিষণ্ন গোলাপ মহাকালের বুকে সবুজ ফসলের বিরান মাঠ ফিরে কি পাবে হারানো সৌন্দর্য পোড় খাওয়া প্রাস্তর কাঁদে বিরহ শোকে বুকে আগুন নিয়ে তবু কেউ সেচ হয় জীবন জুড়ে শুধু আলো-আঁধারের খেলা ধূসর মরুবুক জলের প্রত্যাশায় বৃষ্টির জন্য অনন্ত অপেক্ষা পলেস্তারা খসা…

  • প্রজন্ম

    আলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তোমার কল্পনা বারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, তবু কেন আলো হতে চাও! কল্পনার শেকড় প্রোথিত করো মাটির গভীরে যেখানে জলের  বুকে ভেসে বেড়ায় বক-সাদা পাথর যার একপিঠে লেখা আছে তোমার জীবনবৃত্তান্ত; কল্পনার দাড়িতে পাথর বেঁধে টেনে তোলো মাটির ওপরে, সময় থাকতে অপর পিঠে লিখে ফেল আগামী প্রজন্মের ভাগ্যলিপি, পুঁতে দাও তাকে মাটির বুকে,…

  • হৃদয়পুর ট্রেন এক্সপ্রেস

    লোহা-লক্কড়ে চড়ে নিজেকে উড়ালপঙ্খির শূন্য জানালার পাশে প্রিয় বন খেলে যায় সাতগুটিবাঘ। বাঘ তো হিংস্র নয় মনের বাঘের চেয়ে – চলো ঘুরে আসি বনের কাছে গিয়ে … বন মানে আমাদের পাড়ার উত্তর দিকে মাথায় ঝুঁটিবেঁধে যে মেয়েটা কল্পে পরী সাজে। সে আমাকে শয়তান জিন ভেবে মাঝে মাঝে ঘোড়ায় চড়ে – লোহা-লক্কড়ের ট্রেনের চেয়ে ঝোপজঙ্গল অনেকটা…

  • মুথাঘাস

    অনেক কিছুই বদলে যাচ্ছে – যেমন বদলে গেছে আমার চুলের রং আয়নার সামনে দাঁড়ালে দেখি বদলে যাচ্ছে চেহারার আদল, আঁতকে উঠি এই যাঃ, বুড়ো হয়ে যাচ্ছি তো! এখানেই শেষ নয়, এই তো সেদিন আগারগাঁও মোড়ে গিয়ে চোখ আমার রীতিমতো ছানাবড়া –  মস্ত বড় পরিবর্তন  হৃদয়হরা  কী শ্রীহীন ছিল একদা, আর এখন সর্বাঙ্গে যৌবনের দোল হেমন্তের…

  • মুমূর্ষু শরৎ সাক্ষ্য দেবে

    বইছে উতল হাওয়া-বুকে নিয়ে অর্থহীন গান রোদেরা দোকান গুটিয়ে চলে যাচ্ছে দক্ষিণখণ্ডে; মুমূর্ষু শরৎ সাক্ষ্য দেবে বয়স বাড়ছে আমাদেরও তবুও কেউ কাউকে মান্যতা দিচ্ছি না! এভাবেই, সরে যাওয়া ভালো – যেমন সরে গেছে আমাদের আত্মীয়তা ও জিদ, ধনুকের ছিলার মতো পিঠ বাঁকা করে অসাড় কার্তিকের দেশে! বিনিদ্র সন্ন্যাসী এক মার্জনা ঘোষণা করে মাঝরাত, জাগিয়ে দেয়…

  • কাছে এলে অন্য কেউ 

    যখন সে যায় তার ছায়া সঙ্গে যায়, অবশিষ্ট    থাকে পাথরশূন্যতা  নীল মায়া স্মৃতির কঙ্কাল, ভালোবাসা তরল জিনিস  গলে যায়  শীতভোরে যেভাবে শিশির কলাপাতা  থেকে নিশ্চুপ গড়িয়ে পড়ে ধুলোর কার্পেটে, ঘাসে; শরীর এবং মন নদীর প্রতিভা নিয়ে ছোটে অন্য দুপুর যেভাবে অন্য গল্প ঠোঁটে হেঁটে যায়  হেমন্তের বিকেলের মাঠে  যেখানে খুব নিবিড় জমে থাকে গত…

  • জন্মদৃষ্টি

    ভ্রƒণগর্ভে যেখানে যাই চোখ ফেলে আসি পথের জন্মদাগ কোথায় লুকিয়ে আছে সব দেখতে পাই কখন সন্তের বেশে দস্যু হানা দেবে বন্ধুরা ঈর্ষায় শান দেয় কোন কামারশালায় পাথরের ঘোড়া ঘুমের দরোজা ভেঙে  কোন লগ্নে স্বপ্ন খেয়ে যায় মাতৃগর্ভে শুয়ে সব দেখতে পাই মেঘের তৈরি চোখ অশ্রুসূর্য প্রদক্ষিণ করে বন্ধু কিংবা শত্রু যারা কতটুকু জানে হয়তো জানার…