কবিতা

  • চুপ শব্দটি এখানেই পোহায় রোদ

    সাজেদুল আউয়াল   উদ্যানের বৃহৎ বৃক্ষগুলোর দিকে তাকাতেই দেখি ডালে ডালে দুলছে থমথমে দুপুরের নীরব নির্জনতা। হঠাৎ কে যেন বলে উঠলো : হল্ট, হাত তোলো! থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ি।   কে যেন হাতকড়া পরালো হাতে; এঁটে দিলো মুখে কুলুপ – বললো : ভুলে যাও তোমার নাম, মুখের ভাষা, যা কিছু শেখানো হয়েছে তোমাকে সম্যক জ্ঞান…

  • অদাহ্য

    শতরূপা সান্যাল   সমুদ্রের ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভেসে আসে যেমন কাছিম বালি খোঁড়ে ডিম দেয় তার পর ভেসে যায় ফের যখন সময় হয় কাছিম শিশুরা ডিম ভাঙে কীভাবে সময় হয় জানি না কী করে পায় টের।   ভেসে আসা জীবনের বৃত্তটুকু পরিপূর্ণ হয় জলে স্থলে সেতু গড়ে ডানা মেলা প্রাণের অঙ্কুর কী দিয়ে পোড়াবে তাকে? ধ্বংস…

  • এ আমি অন্য কেউ

    খালেদ হোসাইন   আজকাল আমাকে আর আমার মতো দেখাচ্ছে না। সবাই ভাবছে, আমি অন্য কেউ। নন্দ অন্যভাবে চুল ছাঁটছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে চমকে উঠছি – দোলনচাঁপা গাছে ফুটে থাকছে বেলি বা জুঁই।   অন্য একটা ডাইনিং টেবিলে বসে অন্য-কারো ব্রেকফাস্ট করছি।   বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকছে অন্যগাড়ি। ড্রাইভারের নাম পিয়াস নয়, আবুল। আমি ওকে তালবাগানে যেতে…

  • ওঠো, আমার নাওয়ে ওঠো

    বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর   ওঠো, আমার নাওয়ে ওঠো আমরা অনেকদূর যাব পদ্মা পেরিয়ে মেঘনা পেরিয়ে।   সারারাত নাওয়ে বাতি জ্বলবে ঝড় এলে বাদাম নামিয়ে দেব তুমি আমার পাশে গুটিসুটি হয়ে বসে থাকবে আর মাটির চুলায় ভাত বসিয়ে দেবে।   ওঠো, আমার নাওয়ে ওঠো আমরা অনেকদূর যাব অনেক অনেক নদী পেরিয়ে ছোটবড়ো নদী পেরিয়ে তোমার গলা…

  • সিসিফাস

    আহমেদ বাসার   ওই তো দেখা যাচ্ছে নীল পাহাড়-চূড়া, খুব বেশি দূরে নয় তবে, ক্লান্ত নদদ্বয় তোমরা সক্রিয় থাকো আর কিছুক্ষণ, মাথার ওপর সেই বিকট পাথর বড় বেশি পতনোন্মুখ, দুহাতে রেখেছি ধরে যদিও অজস্রবার বিশ্বাসঘাতক প্রপঞ্চে পড়েছে গড়িয়ে এ বিশাল পাহাড়, একের পর অনন্ত শূন্য দিতে দিতে উঠেছি, নেমেছি আবার একের আগে অজস্র শূন্য দিতে…

  • ফেরা

    মিজানুর রহমান বেলাল   স্মৃতিফসিল নিয়েই নাটোর স্টেশনে দাঁড়িয়ে – একা বাঁ-পাঁজরে খামচি কাটে – ঘুম হারানো রাত ঘামফুল ঘ্রাণ নিয়ে দেখি – লোকাল ট্রেনের নীরবতা   দেখি – কংক্রিটের কদমফুলে হলুদ আলোর সার্কাস স্টেশন মাস্টারের হাতে – সবুজ জোনাকির দৃশ্যকল্প ধাতব ধূসর রেল আর চাকার যাবজ্জীবন চিৎকার সময় হারানো হরিণের ছোটাছুটি – বদলে যায়…

  • বৃষ্টি, আজ কেন হবে লাশ?

    সাখাওয়াত টিপু   কে তুমি কোমল জল, বলো : বরফের কলা বৃষ্টি যেন বিঁধে আছে মিকাইল, গাঙুরের ফলা না উত্তুরে, বহুদূরে এখন কেবল গাইবে বাতাস লাল হয়ে ইতিহাসে ভেসে যাবে মানুষের লাশ!   আজ ঝড়ে বর্ণ মুছে যায়, কে তুমি সুসুপ্ত চোরাটান খোলা মুনাফার মতো ঝরে ঝরে যাও, কি একাকী প্রাণ! না হয় চিনবো পরে,…

  • বসে আছি

    শতরূপা সান্যাল   বহু বহু চান্দ্রমাস এভাবেই পথ চেয়ে আছি অগ্নিভুক কাল বসন্ত খেয়ে গেছে অর্জুনের বীথি তোমার পায়ের চিহ্ন রেখে গেছে অনিরুদ্ধ দাগ তারাদের গুঁড়ো দিয়ে কবে ভরবে এই শূন্য সিঁথি।   পড়ন্ত রোদের লাল এখনো এ-জানালায় আসে এখনো বাতাসে ভেসে আসে দূর যূথীর সুবাস আর আসে মন খারাপের কিছু দূরাগত গান এভাবেই পথ…

  • কাঁটা

    সেলিম মাহমুদ   সাবধানে পথ চলো, পথ যেন না হয় পিচ্ছিল। কাঁটা, ঝোপঝাঁড় থাকলেও সাথে না থাকুক সীমা-লঙ্ঘনের কাঁটাতার। বড় বৈরিতায় বয়স বাড়ছে আজকাল না পাচ্ছি বন্ধন, না কোনো প্রণোদন। ইলিশের কাঁটা নিজেই গলার কাঁটা হয়ে ভয় দেখাচ্ছে রসনা-বাসনায়।   কেমন যেন শরীর-সওয়া এক গা-ঘিনঘিনে পরিস্থিতি নিয়ে উদ্যাপন করছি সেরা, মরা দিনগুলি!

  • সুন্দরের জন্মরহস্য

    নাজমীন মর্তুজা   জন্ম ও মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে সে চোখ জুড়ে নিঃস্বতার অভিব্যক্তি, বৃষ্টির ধারাপাত। হিরণ¥য় রৌদ্রে পুড়ে গেছে নবীন জীবনের কোমলতাটুকু তবু শরীরময় সুন্দরের আর্তনাদ। প্রশ্ন করি কতবার খ- খ- হয়েছো পুরো একটা রাতে?   ভাষাহীন চুপচাপ তার ঠোঁটজোড়া দিনের সূর্য যত দ্রুত নেমে যায় তত গভীর থেকে উঠে আসে কঠিন অন্ধকার।  …

  • বন

    শুভাশিস সিনহা   ভেবেছি বনের মাঝখানে গাছ হয়ে ছলে ভানে ঝড়ে জলে শীতল-শীতল শিহরণে নিজের ভেতর থেকে কোনো এক পরশন টের পাওয়া যাবে, ছুঁতে গিয়ে আঙুলে অনুভূতির মরা-ভাষা পাঠে ভুল করে ভয়ে-ডরে পালানোর প্রেমরাত ভরিয়ে রেখেছে দেহ, মনের কোটরে পুরে রাখা পাখি, গান শেখে নি কখনো, শুধু সুর পেলে বাতাসে বাতাসে ঠোঁটে তার যাতনার শিস,…

  • আলোছায়া

    চঞ্চল শাহরিয়ার   রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণী সুবাতাস বয়ে আনে। আনে ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের রোদমাখা দিন। কিশোরবেলার মায়াময় জলের তরঙ্গ, হুমায়ূন আহমেদ আর সুনীলের গল্প। পৌষের মিষ্টি সকাল।   ট্রেন তুমি লেট করো। আরো একবার দেখে নিই রঙিন চাদরে মোড়া তরুণীর সৌন্দর্যের আলোছায়া।